عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم صنفان من أهل النار لم أرهما قوم معهم سياط كأذناب البقر يضربون بها الناس ونساء كاسيات عاريات مميلات مائلات رؤوسهن كأسنمة البخت المائلة لا يدخلن الجنة ولا يجدن ريحها وإن ريحها ليوجد من مسيرة كذا وكذا.
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুই শ্রেণীর জাহান্নামী যাদেরআবির্ভাব এখনো হয় নি। এক শ্রেণী, যাদের হাতে গাভীর লেজের মত চাবুক থাকবে। তা দ্বারা তারা লোকদের প্রহার (জুলুম) করবে। আরেক শ্রেণী, এমন কিছু নারী যারা পোষাক পরেও নগ্ন, যারা (পরপুরুষকে) আকর্ষণকারী ও (পরপুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট। যারা বুখতী উটের হেলানো কুঁজের মত মাথা বিশিষ্ট। এরা জান্নাতের সুবাস পর্যন্ত পাবে না। অথচ জান্নাতের সুবাসঅনেক অনেক দূর থেকেও পাওয়া যায়।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২১২৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ৮৬৬৫
এখানে বলা হয়নি যে, তারা বিবস্ত্র। বলা হয়েছে তারা বস্ত্র পরিহিতা। তারপর আবার বলা হয়েছে, তারা নগ্ন অর্থাৎ তারা এমনবস্ত্র পরিধান করেছে, যেন তারা নগ্ন। এর কারণ হল, বস্ত্র পরিধানের উদ্দেশ্য অপ্রকাশযোগ্য অঙ্গ আবৃত রাখা, পরপুরুষের দৃষ্টিথেকে আড়াল করা । এখন পোশাকের দ্বারা সে উদ্দেশ্যই যদি হাসিল না হয় তাহলে এই ব্যক্তি যেন বস্ত্র পরিধান করেও বিবস্ত্র, নগ্ন।
এই হাদীসে নারীর পোষাক, চাল-চলন, আচার-আচরণ, অঙ্গভঙ্গী যেন শালীন ও মার্জিত হয় অশালীন ও উগ্র না হয় সে বিষয়েসতর্ক করা হয়েছে। কারণ, অশালীন পোষাক ও উগ্র চলাফেরা পুরুষকে অন্যায়ের প্রতি প্রলুব্ধ করে এবং নারীকে বিপদেরমুখে ঠেলে দেয়। উভয়ের ধ্বংস ডেকে আনে।
আর শালীন ও মার্জিত পোষাক ও চাল চলনের শরয়ী রূপই হলো পর্দা, যা নারী পুরুষ উভয়কে কিছু বিষয় থেকে বেঁচে থাকতেবলে, কিছু বিষয় পালন করতে বলে। এবং এক্ষেত্রে পরস্পরের সহায়তা কামনা করে। আর বিরত থাকা, পালন করা ওসহায়তা এই তিন ক্ষেত্রে নারী পুরুষের যেই সীমালংঘন করে তাকেই শরীয়ত অপরাধী বলে গণ্য করে।
এ হাদীসে উল্লিখিত চিত্রটি এই তিন বিষয়েরই চূড়ান্ত সীমালংঘন। ফলে ধমকিটাও অনেক কঠিন।
এ হাদীসের দ্বিতীয় অংশের কয়েকটি শব্দ থেকে আমরা নারীর পোশাক ও চাল চলন বিষয়ে বা বলতে পারি পর্দা বিষয়েরউল্লেখযোগ্য কয়েকটি মূলনীতি পাই।
১. নারীর পোশাক এমন অাঁটসাঁট হতে পারবে না, যার কারণে দেহাবয়ব ফুটে ওঠে। এবং এমন পাতলা হতে পারবে না, যারদরুন শরীর দেখা যায় বা এমন খাটো হতে পারবে না যার কারণে শরীরের
বিভিন্ন অংশ প্রকাশ হয়ে পড়ে।
২. পোশাক, আচার-আচরণ, ভাব ভঙ্গী, কথাবার্তা এমন হতে পারবে না যা পরপুরুষকে আকর্ষণ করে। সাথে সাথে নারীরসাজ-সজ্জা পরপুরুষের সামনে প্রদর্শন করা যাবে না। তা কেবলই স্বামী ও মাহরামদের সামনে প্রকাশযোগ্য।
৩. নিজের আচার আচরণ, ভঙ্গী বা উচ্চারণ দ্বারা নিজের আকৃষ্ট হওয়ার বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা যাবে না। এতে যার অন্তরেব্যাধি আছে সে অন্যায়ের প্রতি প্রলুব্ধ হবে।
আর এ অবস্থার দায় নারীর একার নয়। অভিভাবক পুরুষ বা মা-বাবা এ দায় এড়াতে পারেন না। ছোট থেকে শিশুর লালনপালনে তাদের অবহেলার কারণে বা কখনো তাদের ইচ্ছায়ই সন্তান অভ্যস্ত হয় অশালীন পোশাকে। কখনো সোসাইটিতেনিজের অবস্থান ফুটিয়ে তুলতে বা সন্তানের আবদার রক্ষা করতেও মা-বাবা এমনটি করে থাকেন। তাদের কাছে প্রশ্ন, সন্তানযদি জ্বলন্ত অংগার হাতে নেয়ার আবদার করে বা ইলেক্ট্রিক তারে হাত দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে তারা কি তার এআবদার পূরণ করবেন? তখন যেভাবে তাকে রক্ষা করবেন, আখেরাতের আগুন থেকেও সেভাবে রক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রেলক্ষ্যণীয়, অনেক মা বাবা সন্তান ছোট বলে, এমন কি দশ বছরের মেয়েকেও উগ্র ও অশালীন পোশাক পরান। ফলেঅপ্রত্যাশিত কোনো বিপদ ঘটে বা পরিণত বয়সেও সন্তান আর ঐ পোশাক ছাড়তে চায় না। সুতরাং আগ থেকেই এ ব্যাপারেসতর্কতা কাম্য।
আর হাদীসের এ নির্দেশনা নিছক নির্দেশনা নয়; বরং নারীর রক্ষাকবচ। ইভটিজিং ও এ জাতীয় বিপদের বড় একটি কারণহাদীসের এই তিন নির্দেশনা অনুযায়ী না চলা। কারণ যতই শ্লোগান দেওয়া হোক যত নিরাপত্তারই ব্যবস্থা করা হোক, নারী এনির্দেশনাগুলো পালন থেকে যতটা বিচ্যুত হবে তত বিপদের সম্মুখীন হবে। কারণ, নারীর নিরাপত্তা বা বিপদ থেকে রক্ষাকরতেই আল্লাহ এ সকল নির্দেশনা দিয়েছেন। আর বোঝা মনে করে যদি না মানা হয় তাহলে দুনিয়ার ক্ষতি তো আছেইআরও আছে আখেরাতের আযাব।
এক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও মিডিয়াও দায় এড়াতে পারে না। রাষ্ট্রের পোষাকশিল্প নিয়ন্ত্রণ না করা এবং সমাজে মিডিয়ার অশ্লীলতার বীজবপন করা বহুলাংশে দায়ী। তাদেরকে শুধু একটি আয়াত মনে করিয়ে দিতে চাই (অর্থ) যারা মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়েদিতে চায় তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।-সূরা নূর (২৪) : ১৯
সবশেষে আবার স্মরণ করি, যে নারীর অবস্থা এমন (যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে) সে জান্নাতের ঘ্রাণ পর্যন্ত পাবে না। সুতরাংপ্রতিটি নারীরই প্রতিজ্ঞা হোক, ‘‘আমি এমন হব না।’’ আর প্রতিটি মা বাবার প্রতিজ্ঞা হোক ‘‘আমার সন্তান এমন হবে না।’’
No comments:
Post a Comment