/ যারা বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের তৈরী,

@ আসুন দেখি, তাদের প্রমাণগুলো কি সত্যি :
:
:
1/ যারা বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের তৈরী তারা সাধারণত সূরা মায়েদার ১৫ নং আয়াত দ্বারা দলীল প্রদান করেন।
:
আয়াতটিতে বলা হয়েছে, قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ
:
" তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হ’তে ‘নূর’ এবং স্পষ্ট গ্রন্থ এসেছে "

(সূরা মায়েদা, আয়াত-১৫)।
:
কুরআনের সব চেয়ে বড় মুফাসসির হলেন স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা। তিনি ‘নূর’ শব্দটিকে কি কি অর্থে ব্যবহার করেছেন এবং তাঁর প্রিয় হাবীব মুহম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যাখ্যায় কি বলেছেন তা জানা আমাদের জন্য অতীব যরূরী।
:
দুঃখজনক হ’লেও সত্য যে, যারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নূরের তৈরী প্রমাণ করতে চান তারা উক্ত আয়াতটি পেশ করেন। কিন্তু আয়াতটির তাফসীর করার ক্ষেত্রে তারা আল্লাহ এবং মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেওয়া ব্যাখ্যাকে সম্পূর্ণভাবে বর্জন করেন।
:
মহান আল্লাহ ‘নূর’ দ্বারা কি বুঝিয়েছেন তা আমরা নিম্নোক্ত আয়াতে কারীমাসমূহ দ্বারা অনুধাবন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
:
আয়াত-১ : আল্লাহ বলেছেন, اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ

" যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের ওলী। তিনি তাদেরকে যুলুমাত তথা অন্ধকার হ’তে নূরের প্রতি বের করেন "

(সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-২৫৭)।
:
:
 হাফেয জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী বলেছেন, {الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجهُمْ مِنْ الظُّلُمَات} الْكُفْر {إلَى النُّور} الْإِيمَان
:
অর্থাৎ নূরের প্রতি বলতে ঈমানের প্রতি বের করে এনেছেন (তাফসীরুল জালালাইন পৃঃ ৫৬)।
:
 অত্র আয়াত দ্বারা দু’ টি বস্তু জানা গেল-
:
(ক) এখানে নূর দ্বারা ঈমানকে বুঝানো হয়েছে। এর মানে কিন্তু এই নয় যে, ঈমান নামের একটি বস্তু আছে যেটিকে আল্লাহ ‘নূর’ দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।
:
:
আয়াত-২ : আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেছেন, وَآتَيْنَاهُ الْإِنْجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ আর আমি তাকে ইনজীল দান করেছি। যেখানে আছে হেদায়াত এবং নূর (সূরা আল-মায়েদা, আয়াত-৪৬)।
:
আয়াত- ৩ : কুরআনে বলা হয়েছে, الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّورَ ث সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি আসমান এবং যমীন সৃষ্টি করেছেন। এবং অন্ধকার ও নূর (আলো) সৃষ্টি করেছেন (সূরা আন‘আম, আয়াত-১)।
:
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহেমাহুল্লাহ বলেছেন, {وَجَعَلَ} خَلَقَ {الظُّلُمَات وَالنُّور} أَي كُلّ ظُلْمَة وَنُور
:
অর্থাৎ তিনি প্রতিটি অন্ধকার এবং আলো সৃষ্টি করেছেন (তাফসীরুল জালালাইন, অত্র আয়াতের তাফসীর দ্রঃ)।
:
এখানে সাধারণ আলো, চাঁদ-সূর্যের ইত্যাদির আলোর কথা বলা হয়েছে।
:
:
:
2/ তাদের মতে রাসূল সাঃ নাকি গায়েব জানতো,
দলিল :
:
'
" তিনি সেই ফেরেশতাকে প্রকাশ্য দিগন্তে দেখেছেন।"
:
[সূরা তাকভীর, আয়াত :23]
:
:
@ রাসূল (সাঃ) ফেরেস্তা দেখতেই পারেন , কারণ তিনি ছিলেন রাসূল আর নবী-রাসূলের কাছে ফেরেস্তা আগমণ করে,
:
এ আয়াত দিয়ে কীভাবে প্রমাণ হয় যে, রাসূল (সাঃ) গায়েব জানতেন  ??
:
:
@ মহান আল্লাহ বলেন :
:
1/ " আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান।
.
আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য। "
:
:
[সূরা আল আ’রাফ , আয়াত সংখ্যা : 188]
:
:
2/ " বলুন, আল্লাহ ব্যতীত নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কেউ গায়বের খবর জানে না এবং তারা জানে না যে, তারা কখন পুনরুজ্জীবিত হবে। "
:
[সূরা নমল, আয়াত সংখ্যা : 65]
:
:
@ অতএব কুরআনের আয়াত অনুযায়ী বুঝা যায়, রাসূল (সাঃ) গায়েব জানতো না,
:
মহান আল্লাহ রাসূল (সাঃ) কে যতটুকু জানাতেন, তিনি ততটুকুই জানতেন,
:
:
:
:
3 নং অংশের ক্ষেত্রে যুক্তি  :
:
@ তাদের মতে নবী (সাঃ) নাকি হাজির নাজির, দলিল হল (সূরা আহযাব, আয়াত : 45)
:
:
মহান আল্লাহ বলেন :
:
" হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। "
:
[সূরা আল আহযাব, আয়াত সংখ্যা : 45]
:
:

@ এ আয়াত কি তাদের যুক্তি প্রমাণ করে ??
:
রাসূল (সাঃ) কে আল্লাহ রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন এবং তিনি এসেছেন 1400 বছর আগে,
:
এখানে সে সময়ে আগমণকেই বুঝানো হচ্ছে,
:
:
:
4 নং অংশের যুক্তি : মিলাদ নাকি জায়েয,
:
@ এখন দেখবো, ঐ আয়াতে কী আছে,
:
মহান আল্লাহ বলেন :
:
" আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর। "
:
[সূরা আল আহযাব, আয়াত সংখ্যা : 56]
:
:
এই আয়াত কীভাবে মিলাদকে সমর্থন করে ?
:
আপনারাই বলুন, মিলাদ যেখানে শেখ সাদির কবিতা
:
  --- " বালাগাল উলা বি কামালিহী " -

পড়ে শুরু করা হয়, 😎
:
:
আমরা নামজে দরূদে ইব্রাহিম পড়ি, এর মাধ্যমে রাসূল সাঃ এর জন্য দু'আ করি,
:
:
তবে মিষ্টি বিতড়ন করা, শেখ সাদির কবিতা পড়া,
:
---  এগুলোতো বিদাত,
:
:
:

যে সকল সময়ে নামায পড়া নিষিদ্ধ।

যে সকল সময়ে নামায পড়া নিষিদ্ধ।

নামায ইসলামের অন্যতম একটি মৌলিক স্তম্ভ। আল্লাহর নৈকট্য লাভের অনেক বড় একটি মাধ্যম। পবিত্র কুরআনে প্রায় বিরাশি জায়গায় নামাযের কথা বলা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, নামাযে দাঁড়ালে আমার দেহ মন জুড়িয়ে যায়, আমার চোখ শীতলতা পায়।
দিন রাতে সব মিলিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া  ফরয। এছাড়া আরো কিছু ফযীলতপূর্ণ নফল নামাযের  কথা হাদীসে উল্লেখ আছে। দিন বা রাতের বিভিন্ন মুহূর্তে তা আদায় করা হয়ে থাকে। এর বাইরে একজন মুসলিম যত খুশি ব্যক্তিগত নফল নামায আদায় করতে পারে। যার কোনো সীমারেখা নির্ধারিত নেই। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় কিছু সময় এমন আছে যখন নামায পড়া একদম হারাম। আর কিছু সময় এমন আছে যাতে নির্ধারিত কিছু নামায পড়া মাকরুহ। নিচে এ সময়গুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।
এক হাদীসে পাওয়া যায় তিন সময়ে নামায পড়া নিষেধ। সাহাবী উকবা বিন আমের জুহানী রা. বলেন, তিনটি সময়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নামায পড়তে এবং মৃতের দাফন করতে নিষেধ করতেন। সূর্য উদয়ের সময়; যতক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়। সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত। যখন সূর্য অস্ত যায়। [সুবুলুস সালাম ১/১১১, সহীহ মুসলিম ১/৫৬৮]
এই হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী নামাযের নিষিদ্ধ সময় তিনটি।
১.    সূর্য যখন উদিত হতে থাকে এবং যতক্ষণ না তার হলুদ রঙ ভালোভাবে চলে যায় ও আলো ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরজন্য আনুমানিক ১৫-২০ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়।
২.    ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়; যতক্ষণ না তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ে।
৩.    সূর্য হলুদবর্ণ ধারণ করার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
উল্লিখিত তিন সময়ে সব ধরণের নামায পড়া নিষেধ। চাই তা ফরয হোক কিংবা নফল। ওয়াজিব হোক বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এ সময়ে শুকরিয়ার সিজদা এবং অন্য সময়ে পাঠকৃত তিলাওয়াতের সিজদাও নিষিদ্ধ। তবে এই সময়ে জানাযা উপস্থিত হলে বিলম্ব না করে তা পড়ে নেয়া যাবে। ঠিক তদ্রুপ কেউ যদি ওই দিনের আসরের নামায সঠিক সময়ে পড়তে না পারে তাহলে সূর্যাস্তের আগে হলেও তা পড়ে নিতে হবে। কাযা করা যাবে না। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাকাত পড়তে পারল সে পুরো আসরের নামাযই পেল। [নায়লুল আওতার ২/২১]
অন্য হাদীসে আরো দুটি সময়ে নামায পড়ার নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ফজরের নামাযের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোনো নামায নেই। আসরের নামাযের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো নামায নেই। [সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৮২৭]
এই দুই সময়ে কোনো ধরণের নফল নামায পড়া জায়েয নেই। তবে আসরের নামাযের পর সূর্য লালবর্ণ ধারণের আগ পর্যন্ত কাযা নামায পড়া যাবে। এরপর আর কাযাও পড়া যাবে না। অবশ্য এই দুই সময়ে জানাযা নামায পড়া যাবে।
এছাড়া আরো কিছু সময় আছে যখন নফল নামায পড়া মাকরুহ।
১. ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর থেকে ফরয নামাযের আগ পর্যন্ত ফজরের দুই রাকাত নামায ছাড়া অন্য কোনো নফল নামায পড়া মাকরুহ। হযরত হাফসা রা. বলেন, ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংক্ষিপ্ত দুই রাকাত নামায ছাড়া আর কোনো নামায পড়তেন না। সহীহ ইবনে হিব্বানে এই হাদীসের ভাষ্য হল, ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরযের আগে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ছাড়া আর কোনো নামায পড়তেন না। [আবু দাউদ ২/৫৮, সহীহ মুসলিম ১/৫০০, নাসবুর রায়াহ ১/২৫৫] তবে এ সময়ে কাযা নামায পড়া যাবে।
২. মাগরিবের নামাযের পূর্বে। ফিকহে হানাফী এবং ফিকহে মালেকীর মতে মাগরিবের ওয়াক্ত হওয়ার পর ফরয নামাযের আগে কোনো নফল নামায পড়া জায়েয নেই। উকবা বিন আমের রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিরন্তর আমার উম্মত কল্যাণ বা ফিতরাতের ওপর থাকবে, যতদিন তাঁরা নক্ষত্ররাজি পুরোপুরি বের হয়ে আসা পর্যন্ত মাগরিব নামাযকে বিলম্ব না করবে। [নায়লুল আওতার ২/৩]
অবশ্য ফিকহে শাফেয়ী মতে এই সময়ে দুই রাকাত নামায পড়া সুন্নতে গাইয়ে মুয়াক্কাদা। আর ফিকহে হাম্বলী মতে এই সময়ে দুই রাকাত নামায পড়া জায়েয আছে বটে তবে তা সুন্নত নয়। হযরত আনাস রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ে সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাযের আগে আমরা দুই রাকাত নামায পড়তাম। তিনি আরো বলেন, আমরা মদীনায় থাকতাম। মুয়াজ্জিন মাগরিবের নামাযের আজান দিলে সাহাবীরা সকলেই মসজিদের বিভিন্ন খুঁটির দিকে ছুটে যেতেন এবং দুই রাকাত করে নামায পড়তেন। এতো অধিক সংখ্যক লোক এই দুই রাকাত নামায পড়তো যে, অপরিচিত কোনো লোক মসজিদে এলে সে মনে করতো মাগরিবের নামায বুঝি পড়া হয়ে গেছে। [সহীহ মুসলিম ১/৫৭৩] অন্য হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মাগরিবের পূর্বে তোমরা দুই রাকাত নামায পড়। তৃতীয়বারে তিনি বলেন, যার এটা পড়তে মন চায়।’ কারণ মানুষ এটাকে সুন্নত হিসেবে গ্রহণ করুক; তা তিনি পছন্দ করতেন না।
৩. ইমাম যখন খুতবা দেয়ার জন্য নিজের জায়গা থেকে উঠেন। এ সময় কোনো নফল নামায পড়া জায়েয নেই। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জুমার দিন ইমাম সাহেব খুতবা দেয়ার সময় যদি তুমি তোমার পাশের লোককে বল ‘চুপ কর’ তাহলেও তুমি অনর্থক কাজ করলে। [সুবুলুস সালাম ২/৫০]
ফিকহে শাফেয়ী ও হাম্বলী মতে যদি ইমামের সাথে তাকবীরে উলা ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে এই সময়ে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়ার অবকাশ আছে। তবে শুধু নামাযের ওয়াজিবগুলো আদায়ের মাধ্যমে তা সংক্ষিপ্ত সময়ে শেষ করতে হবে। মুসল্লী যদি কাবলাল জুমার সুন্নত না পড়ে থাকে তাহলে তাহিয়্যাতুল মসজিদের সাথে তারও নিয়ত করে নিবে। বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দুই রাকাত নামায পড়ার আগে যেন সে না বসে।
হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত, সাহাবী সুলাইক আল গাতফানী মসজিদে নববীতে এলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি বললেন, সুলাইক! দাঁড়াও এবং দুই রাকাত নামায পড়। তবে নামাযটা একটু সংক্ষিপ্ত করো।
৪. ঈদের নামাযের আগে ও পরে ঘরে ও ঈদগাহে এবং নামাযের পরে শুধু ঈদগাহে নফল নামায পড়া মাকরুহ। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ঈদের দিন দুই রাকাত নামায পড়েছেন। তার আগে ও পরে কোনো নামায পড়েন নি। [সুবুলুস সালাম ২/৬৬] হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের নামাযের আগে কোনো নামায পড়তেন না। নামায শেষে ঘরে ফিরে এলে দুই রাকাত নফল পড়তেন। [সুবুলুস সালাম ২/৬৭]
৫. ফরয নামাযের ইকামত দেয়ার সময়। ফিকহে হানাফী মতে এ সময় সব ধরণের নফল নামায পড়া মাকরুহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফরয নামাযের ইকামত দেয়া হলে আর কোনো নামায পড়ার সুযোগ নেই। তবে ফজরের সুন্নতের ক্ষেত্রে এর একটু ব্যতিক্রম আছে। কারো যদি তাশাহহুদে শরীক হওয়ার মাধ্যমেও জামাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে জামাত শুরু হলেও ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামায পড়া যাবে। কারণ এ নামাযের গুরুত্ব অত্যধিক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারাটা জীবন অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এ নামায আদায় করেছেন। তিনি বলেন, ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামায দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছুর চেয়ে উত্তম। [সহীহ মুসলিম]
সাহাবায়ে কেরামও গুরুত্বের সাথে এ নামায আদায় করতেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু মূসা রা. বলেন, আমাদের মসজিদে একবার আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. তাশরীফ আনলেন। তখন ইমাম ফজরের নামায পড়ছিলেন। তিনি একটি খুঁটির কাছে ফজরের সুন্নত আদায় করলেন। কারণ তিনি আগে সুন্নত পড়তে পারেননি। [মাযমাউয যাওয়ায়েদ২/২২৪]
আবু উসমান আনসারী রা. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. যখন মসজিদে পৌঁছলেন তখন ইমাম ফজরের নামাযে ছিলেন। ইবনে আব্বাস রা. আগে সুন্নত পড়তে পারেননি; তাই প্রথমে তিনি দুই রাকাত সুন্নত পড়লেন এরপর জামাতে শরীক হলেন। [ত্বহাবী ১/২৫৬]
আর যদি সুন্নত পড়তে গেলে জামাত না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সুন্নত না পড়েই জামাতে শরীক হতে হবে। অবশ্য ফিকহে হাম্বলীর মতে ফজরের নামাযের আগে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত পড়তে না পারলে ফরযের পরেও তা আদায় করা যাবে। কায়স বিন ফাহ্দ রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা থেকে বের হলে নামাযের ইকামত দেয়া হলো। আমি তাঁর সাথে ফজরের নামায আদায় করলাম। এরপর তিনি আমাকে পুনরায় নামায পড়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে বললেন, কায়স! কী হলো তোমার? তুমি কি একসাথে দুই নামায পড়ছো? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আগে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত পড়তে পারিনি। তখন তিনি বললেন, আচ্ছা! তাহলে ঠিক আছে। [আল মুস্তাদরাক ১/২৭৪;২৭৫] ইমাম তিরমিযী রহ. যদিও হাদীসটিকে মুরসাল বলেছেন কিন্তু পাশাপাশি এর সহীহতর সনদ আছে বলেও উল্লেখ করেছেন। [জামে তিরমিযী ১/৯৬]
৬. যদি ফরয নামাযের সময় খুবই অল্প থাকে, যখন সুন্নত পড়তে গেলে যথাসময়ে আর ফরয পড়া যাবে না তখনও ফরয ছাড়া ভিন্ন কোনো সুন্নত নফল পড়া মাকরুহ।
৭. আরাফার দিন যোহর ও আসরের মাঝে ও আসরের পরে এবং মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার মাঝে ও এশার পরে নফল নামায পড়া মাকরুহ।
তাছাড়া পেশাব পায়খানার প্রচ- চাপ ও বায়ু নিঃসরণের প্রবল প্রয়োজন নিয়ে নামায পড়া ঠিক নয়। তদ্রুপ কারো প্রচ- ক্ষুধা লেগেছে, খাবারও সামনে উপস্থিত আছে, যদি মনে হয় খাবার না খেলে নামাযে মন বসবে না; তাহলে এক্ষেত্রেও খাবার না খেয়ে নামায পড়া ঠিক নয়। বরং এসব প্রয়োজন সেরে নিবিষ্ট মনে নামায আদায় করা উচিত। আর সব নামাযই ওয়াক্তের শুরুতে আদায় করা উত্তম।

হাদীস শরীফের কতিপয় মাসনুন দোয়া,

হাদীস শরীফের কতিপয় মাসনুন দোয়া

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং সালেহীন (রহ.)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি মুত্তাকীনদের জন্য নির্ধারিত।

আল্লাহ তা’য়ালার সন্তোষ ও মহব্বত অর্জনের জন্য যারা সাধনা করতে চান, তাদেরকে অবশ্যই জীবনের প্রতিটি কাজকে ইবাদাতে পরিণত করতে হবে আর প্রতিটি মুহুর্তকেই আল্লাহর জিকিরে পরিণত করতে হবে। নিয়মিত মাসনুন দোয়ার সেই মহান লক্ষ্যে পৌছার একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ মাত্র। সহজে আমলযোগ্য কয়েকটি ছোট ছোট মাসনুন দোয়া সবার বিবেচনা ও আমলের জন্য হাদীসের দলিলসহ পেশ করা হল-

১) যে কোন কাজের শুরুতে ও শেষে দোয়াঃ যে কোন কাজ আল্লাহর নামে শুরু করা উচিৎ। অন্যথায় শয়তান তাতে অংশীদার হয়ে যায়। যে কোন কাজ সফলতার সাথে শেষ করার পর আল্লাহর প্রশংসা করা উচিৎ। অন্যথায় শয়তান তার ফলাফলের মাঝে রিয়া ও কিবির নামক দুটি বিধ্বংসী রোগের অণুপ্রবেশ ঘটায়। কোন আমল বা কাজের জন্য নির্দিষ্ট দোয়ায়ে মাসনুন জানা না থাকলে প্রত্যেক কাজের শুরুতে- بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ  বা সংক্ষেপে অন্তত بِسْمِ اللهِ  বলা এবং শেষে-  اَلْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْن বা সংক্ষেপে অন্তত اَلْحَمْدُ للهِ বলা। এতে কাজে আল্লাহর সাহায্য, রহমত ও বরকত পাওয়া যায়।

কাজ সম্পাদনের কতিপয় আদব : কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের নিয়ত করা, বিছমিল্লাহ... বলে আল্লাহর নামে শুরু করা, আল্লাহর হুকুম মোতাবেক করা, রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ মোতাবেক করা, সাহাবাগনের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) নমুনায় করা, সততা ও আমানতদারীর সাথে চাকুরী বা পেশাগত কাজ সম্পাদন করা, কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের হক সম্পর্কে লক্ষ্য রাখা, শিরক-রিয়া-কিবির-জাহিলিয়াত-নাফসানিয়াতমুক্ত হওয়া, সফল হলে শেষে আলহামদুলিল্লাহ.. বলা, ব্যর্থ হলে শেষে ইন্না লিল্লাহ.. পড়া, কাজের মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য তওবা-ইস্তিগফার করা।

২) আজান শুনে পাঠ করার দোয়াঃ হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি আযান শুনে বলে-

اَللّهُمَّ رَبَّ هذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدَانِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدًانِ الَّذِيْ وَعَدْتَّه

(হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের তুমিই প্রভু! তুমি মুহাম্মাদ (স) কে অসীলা বা বিশেষ নৈকট্য ও মর্যাদা দান কর এবং তাকে তোমার ওয়াদাকৃত প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও)- তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে। -(তিরমিযী : হাসান ও সহীহ, বুখারী, আবু-দাউদ, নাসাই ও ইবনে মাজাহ)

অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আযান শুনে বলবে-

أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُوْلُه رَضِيْتُ بِاللّهِ رَبًّا وَّبِمُحَمَّدٍ رَّسُوْلًا وَّبِالْإِسْلَامِ دِيْنًا

(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তার কোন শরীক নাই আর মুহাম্মাদ (স) তার বান্দা ও রসুল। আমি আল্লাহকে প্রভু হিসাবে, মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রসূল হিসাবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি)- তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (তিরমিযী : হাসান ও সহীহ)

আযানের জবাব দেওয়াঃ  হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুয়াজ্জিন যখন আল্লাহু আকবার , আল্লাহু আকবার বলে তখন তোমাদের কেউ আল্লাহু আকবার , আল্লাহু আকবার বলল। তারপর মুয়াজ্জিন যখন আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লালাহু বলে, তখন সেও আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লালাহু বলল। অতঃপর মুয়াজ্জিন যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ বলে, তখন সেও আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ বলল। পরে মুয়াজ্জিন যখন হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ বলে, তখন সে লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলল। এরপর মুয়াজ্জিন যখন হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ বলে, তখন সেও লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলল। তারপর মুয়াজ্জিন যখন আল্লাহু আকবার , আল্লাহু আকবার বলে, তখন সেও আল্লাহু আকবার , আল্লাহু আকবার বলল, তারপর মুয়াজ্জিন যখন লা ইলাহা ইল্লালাহু বলে, তখন সেও লা ইলাহা ইল্লালাহু বলল। -এসবই যদি সে বিশুদ্ধ অন্তরে বলে থাকে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -(মুসলিমঃ ২/৭৪৯)

৩) পায়খানায় প্রবেশকালীন দোয়াঃ হযরত আনাস ইরনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানায় প্রবেশের সময় বলতেন-

اَللّهُمَّ إِنّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ

(হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে নিকৃষ্ট পুরুষ ও স্ত্রী জ্বীন বা শয়তানের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই)- বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ ও নাসাই।

৪) পায়খানা থেকে বের হওয়ার সময় পাঠ করার দোয়াঃ হযরত আইশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানা থেকে বের হওয়ার সময় বলতেন :  غُفْرَانَكَ (হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি)- তিরমিযী।

অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানা থেকে বের হওয়ার সময় বলতেন :

اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ أَذْهَبَ عَنِّي الْأَذى وَعَافَانِيْ

-(ইবনে মাজাহ)। দুটি দোয়া একত্রে মিলিয়ে পাঠ করলে উভয় হাদীসের আমল করা হয়।

ইস্তিঞ্জার আদব : ইস্তিঞ্জার জায়গায় প্রবেশের আগে বিসমিল্লাহসহ দোয়া পাঠ করা। পায়ে জুতা-সেন্ডেল রাখা। মাথা ঢেকে রাখা। বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা। বসে ইস্তিঞ্জা করা, দাড়িয়ে বা হাটতে হাটতে না করা। ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা। পানি দিয়ে শৌচ করা। ডান পা দিয়ে বের হওয়। বের হয়ে দোয়া পাঠ করা। বের হয়ে সম্ভব হলে অজু করা।

ইস্তিঞ্জায় নিষেধ : কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে বসা এবং প্রবল বাতাসের দিকে, চন্দ্র-সূর্যের দিকে বা অপেক্ষাকৃত উচু জায়গার দিকে মুখ করে বসা নিষেধ। চলাচলের রাস্তায়, গোসলখানায়, গোরস্থানে, গর্তের ভিতরে বা ছায়াদার ফলবান গাছের নীচে ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ। ইস্তিঞ্জায় বসে তিলাওয়া করা, মুখে জিকির-দুরূদ-দোয়া পাঠ, কথা বলা, সালাম দেয়া বা জবাব দেয়া, খাওয়া বা পান করা, লেখা-পড়া করা নিষেধ। কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম, নবীজির নাম অংকিত টুপি, রুমাল ও আংটি নিয়ে ইস্তিঞ্জায় প্রবেশ নিষেধ। হাড়, কয়লা, কাগজ, কাঁচ, গাছের পাতা, খাদ্য-দ্রব্য, শুকনা গোবর, ব্যবহৃত ঢিলা কুলুখ হিসাবে ব্যবহার করা নিষেধ। বিনা ওজরে ডান হাতে শৌচ করা ও জমজমের পানিতে শৌচ করা নিষেধ।

৫) ওজুর শুরুতে বিছমিল্লাহ... পাঠঃ হযরত রাবাহ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আবু সুফিয়ান ইবনে হুআইতিব থেকে তার দাদীর সুত্রে, তিনি তার পিতার (সাইদ ইবনে যায়েদ) সুত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (সাইদ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি অজুর শুরুতে বিছমিল্লাহ ( بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ ) বলা -(বুখারী, মুসলিম, তিরমিজী, নাসাই, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)

৬) ওজুর শেষে পাঠ করার দোয়াঃ ওজুর পর কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ : হযরত ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি ভালো করে ওযু করে এবং ওযুর পর কালিমায়ে শাহাদাত (‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লা-হু ওয়াহদাহু- লা- শারী-কালাহু- ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু-ওয়া রসূ-লুহূ) পড়ে- [অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন কোন ইলাহ নাই, তিন এক, তার কোন শরীক নাই। আমি  আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,  মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল।]- তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে তখন যেটি দিয়ে খুশি সেটি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। -[বুখারী ও মুসলিম]

তিরমিযীর বর্ণনায়ঃ হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করার পর বলে-

أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُوْلُه اَللّهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ

(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তার কোন শরীক নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,মুহাম্মাদ (স) তার বান্দা ও রসূল। হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারীগণের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারী গণের অন্তর্ভুক্ত করুন)- তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হয়। সে ইচ্ছামত যে কোন দরজা দিয়েই প্রবেশ করতে পারবে। -(তিরমিযী)

অজুর আদব : অজুর জন্য নিয়ত করা, মিসওয়াক করা, বিছমিল্লাহ...পাঠ করা, দুই হাত কবজিসহ তিনবার ধোয়া, তিনবার কুলি করা, তিনবার নাকে পানি দেওয়া, সমস্ত মুখমন্ডল তিনবার ধোয়া, ঘন দাড়ি থাকলে খিলাল করা, ডান ও বাম হাতের কনুইসহ তিনবার ধোয়া, মাথা-দুই কান-গর্দান একবার মাছাহ্ করা, টাখনুসহ ডান ও বাম পা তিনবার ধোয়া, আংগুলী খিলাল করা এবং অজু শেষে কলেমা শাহাদাতসহ দোয়া পড়া।

৭) বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় পড়ার দোয়াঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি তার বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় বলে :

بِسْمِ اللّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّهِ

(আল্লাহর নামে বের হলাম এবং আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আল্লাহ ছাড়া অকল্যাণ রোধ বা কল্যাণ হাসিল করার শক্তি কারো নাই)- তাকে বলা হয় তোমাকে হেদায়াত দেয়া হয়েছে, যথেষ্ট দেয়া হয়েছে এবং হেফাজতের ব্যবস্থা করা হয়েছে আর শয়তান তার থেকে দুরে চলে যায়। (তিরমিযী, আবু দাউদ ও নাসাই) আবু দাউদ পরে আরও বৃদ্ধি করেছেন- শয়তান অন্য শয়তানকে বলে, তুমি এর উপর কেমন করে নিয়ন্ত্রন লাভ করবে যাকে হেদায়াত দান করা হয়েছে, যথেষ্ট দেয়া হয়েছে এবং হেফাজতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

৮) বাড়ীতে প্রবেশ করার সময় পড়ার দোয়াঃ হযরত আবু মালেক আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন কোন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করে তখন সে যেন বলে-

بِسْمِ اللّهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللّهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا

(আমরা আল্লাহর নামে বাড়ীতে প্রবেশ করলাম, আল্লাহর নামে বাড়ী হতে বের হয়েছিলাম আর আমরা আমাদের প্রভু আল্লাহর উপর ভরসা রাখি)- অতঃপর ঘরের বাসিন্দাদেরকে সালাম করবে।  (আবু দাউদ)

ঘরে প্রবেশ ও বের হওয়ার আদব : বের হওয়ার সময় ঘরের সবাইকে সালাম করা, দোয়া পড়া, বাম পা দিয়ে বের হওয়া, বাহিরে থাকাকালীন আল্লাহকে স্মরণ রাখা, রাস্তায় চলাকালীন পথের হক আদায় করা, চোখ ও জিহ্বার হিফাজত করা, বাহিরের কাজে সততা রক্ষা করা, সংশ্লিষ্ট সবার হক আদায় করা, সবার সাথে উত্তম ব্যবহার করা, ফিরে এসে ঘরে প্রবেশ কালীন ঘরের বাসিন্দাদের সালাম করা, অনুমতি গ্রহন করা, ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা ও দোয়া পড়া।

৯) মাসজিদে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার দোয়াঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন তোমাদের কেহ মাসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন বলে-

اَللّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

-(হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও)। আর যখন মাসজিদ থেকে বের হবে তখন সে যেন বলে-

اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ

(হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি)- মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাই ও ইবনে মাজাহ।

মাসজিদের আদব: প্রবেশকালীণ বিছমিল্লাহ্....পাঠ করা, রসূলের (স) উপর দুরূদ পাঠ করা, প্রবেশের দোয়া পাঠ করা, ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা, নফল ই’তিকাফের নিয়ত করা, কাউকে জায়গা থেকে না সরিয়ে খালি জায়গায় বসে পড়া, ইবাদাত ও জিকিরে রত থাকা, তর্ক-বিতর্ক বা শোরগোল না করা, উচ্চস্বরে কথা-বার্তা না বলা, অন্যকে বসার সুযোগ করে দেওয়া, দোয়া পাঠ করে বের হওয়া, বাম পা দিয়ে বের হওয়া, ঢুকতে ও বের হতে ঠেলা-ধাক্কা না করা।

১০) আহারের শুরুতে পাঠ করার দোয়াঃ হযরত আইশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন তোমাদের কেউ আহার করে তখন শুরুতে যেন আল্লাহর নাম নেয়। (অর্থাৎ বলে)-

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ

আর শুরুতে আল্লাহর নাম নিতে ভুলে গেলে (স্মরণ হওয়া মাত্র) যেন বলে :

بِسْمِ اللّهِ أَوَّلَه وَآخِرَه

(প্রথম ও শেষে আল্লাহর নামে)- তিরমিযী : হাসান ও সহীহ এবং আবু দাউদ।

১১) আহারের সময় পাঠ করার দোয়াঃ হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা কাউকে আহার করালে সে যেন বলে-

اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْرًا مِّنْهُ

(হে আল্লাহ! এ খাদ্যে আমাদেরকে বরকত দাও এবং আমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম খাদ্য আহার করাও) আর আল্লাহ কাউকে দুধ পান করালে সে যেন বলে-

اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ

(হে আল্লাহ আমাদেরকে এ দুধে বরকত দাও এবং আমাদেরকে এর চেয়ে অধিক দান কর)। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন : একই সাথে পান ও আহারের জন্য যথেষ্ট হওয়ার মত দুধের বিকল্প কোন খাদ্য নাই। -(তিরমিযী : হাসান, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)

১২) আহারের শেষে পাঠ করার দোয়াঃ হযরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আহার শেষ করতেন বা কিছু পান করতেন তখন বলতেন-

اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مُسْلِمِيْنَ

(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে আহার করিয়েছেন, পান করিয়েছেন ও মুসলমানদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন) -তিরমিযী: হাসান, আবুদাউদ।

অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত মুয়ায ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি আহার শেষ করার পর বলে-

اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنِيْ هَذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنّيْ وَلَا قُوَّةٍ

(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে আহার করিয়েছেন, আমাকে রিজিক দিয়েছেন, আমার তা হাসিল করার প্রচেষ্টা বা শক্তি ছাড়াই)- তার পূর্বাপরের গুনাহসমূহ মার্জনা করে দেওয়া হয়।- আবুদাউদ ও তিরমিযী।

খাওয়ার আদব : ছুন্নাত তরিকায় বসা, দস্তরখান বিছানো, হাত ধৌত করা, বিছমিল্লাহ.. বলে শুরু করা, ডান হাতে খাওয়া, নিজের সামনে থেকে খাবার গ্রহন করা, একত্রে খেতে বসলে সাথীদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া, অন্যের প্লেটের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে না তাকানো, ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া, মাঝে মাঝে আলহামদুলিল্লাহ বলা, কথা-বার্তা কম বলা, গল্প-গুজব-হাসি-ঠাট্টা না করা, মনে মনে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের শুকুর করা, শেষে হাত ধোয়া ও দোয়া পাঠ করা।

১৩) বাজারে গিয়ে পাঠ করার দোয়াঃ হযরত সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সুত্রে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে লোক বাজারে গিয়ে বলে-

لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ حَيٌّ لَّا يَمُوْتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

(আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তার কোন শরীক নাই, তিনিই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, সব প্রশংসা তারই জন্য, তিনিই জীবন ও মৃত্যু দান করেন, তিনি চিরঞ্জীব, কখনো মৃত্যুবরন করবেন না, সমস্ত কল্যাণ তারই হাতে এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান)- আল্লাহ তার জন্য এক লক্ষ নেকী লিখেন, এক লক্ষ গুনাহ মাফ করেন এবং তার জন্য জান্নাতে একখানা ঘর তৈরী করেন। (তিরমিযী)

বাজারের আদব : বাজারে গিয়ে দোয়া পাঠ করা, সালাম দেওয়া ও সালামের জবাব দেওয়া, সবার সাথে উত্তম ব্যবহার করা, বেঁচা-কেনার মধ্যে সততা বজায় রাখা, মাপে কম-বেশী না করা, অন্যের দাম-দস্তুর করা অবস্থায় বাড়িয়ে দাম না বলা, মালামালে কোন ত্র“টি থাকলে গোপন না করে তা প্রকাশ করে দেয়া, মূল্য ঠিক হয়ে যাওয়ার পর ২/১ টাকা কম-বেশী না করা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাজার থেকে ফিরে আসা।

১৪) সফরের শুরুতে ও ফিরে এসে পড়ার দোয়াঃ হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে রওনা হয়ে বাহনে আরোহন করে তিনবার তাকবীর বলতেন। অতঃপর বলতেন :

سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هذَا وَمَا كُنَّا لَه مُقْرِنِيْنَ وَإِنَّا إِلى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ

(অতীব পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি একে আমাদের নিয়ন্ত্রনাধীন করেছেন, অন্যথায় আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আমরা অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যাব) অতঃপর তিনি বলতেন :

اَللّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِيْ سَفَرِيْ هذَا مِنَ الْبِرِّ وَالتَّقْوى وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضى اَللّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا الْمَسِيْرَ وَاَطْوِ عَنَّا بُعْدَ الْأَرْضِ اَللّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ وَالْخَلِيْفَةُ فِي الْأَهْلِ اَللّهُمَّ اصْحَبْنَا فِيْ سَفَرِنَا وَاخْلُفْنَا فِيْ أَهْلِنَا

হে আল্লাহ! আমার এ সফরে আমি তোমার কাছে পূন্য, তাকওয়া এবং তোমার পছন্দনীয় কাজ করার তৌফিক প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ! সফরটি আমাদের জন্য সহজতর করে দাও এবং পথের দূরত্ব আমাদের জন্য সংকুচিত করে দাও। হে আল্লাহ! সফরে তুমিই আমাদের সাথী এবং পরিবার-পরিজনে আমাদের প্রতিনিধি। হে আল্লাহ! এ সফরে তুমি আমাদের বন্ধু ও আমাদের পরিবার-পরিজনের তদারককারী হয়ে যাও) অতঃপর তিনি ফিরে এসে বলতেন :
         
آيِبُوْنَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ

(ইনশাআল্লাহ! আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, ইবাদাতকারী এবং আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী)- তিরমিযী, মুসলিম, নাসাই ও আবু দাউদ।

অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত আল-বারাআ ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর থেকে ফিরে এসে বলতেন :

آيِبُوْنَ تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ

(আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদাতকারী, আমাদের রবের প্রশংসাকারী)- তিরমিযী : হাসান ও সহীহ, আহমাদ।

১৫) কোন স্থানে যাত্রা বিরতীকালে দোয়াঃ হযরত খাওলা বিনতে হাকিম আস-সুলামিয়্যা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : কোন ব্যক্তি যখন কোন স্থানে অবতরণ করে বলে-

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

(আমি আল্লাহর কাছে তার পরিপূর্ণ বাক্যের উসীলায় আশ্রয় প্রার্থনা করি, তার সমস্ত সৃষ্টির অনিষ্টতা থেকে)- সে উক্ত স্থান ত্যাগ করা পর্যন্ত কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারে না। (তিরমিযী : হাসান ও সহীহ)

১৬) কোন সম্প্রদায় থেকে ক্ষতির আশংকা হলে দোয়াঃ হযরত আবু মুসা আল-আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ  হওয়ার আশংকা করতেন তখন বলতেন :

اَللّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِيْ نُحُوْرِهِمْ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ

(হে আল্লাহ! আমরা তোমাকেই তাদের মুখোমুখী করছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি)- আবু দাউদ ও নাসাই।

১৭) উঁচুতে উঠতে ও নীচে নামতে দোয়াঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার বাহিনী যখন উচুঁ ভূমিতে উঠতেন তখন اَللّهُ اَكْبَرُ বলতেন এবং নীচের দিকে নামতেন তখন سُبْحَانَ اللّهِ   বলতেন।- বুখারী, তিরমিযী ও  আবু দাউদ।

১৮) উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দোয়াঃ হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তির কিছু উপকার করা হয় এবং এর জবাবে সে বলে-

جَزَاكَ اللّهُ خَيْرًا

(অর্থাৎ- আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিন), সে পুরোপুরি তার প্রশংসা ও বিনিময় দান করল। (তিরমিযী)

১৯) বিপদগ্রস্থ বা রোগাগ্রস্থ ব্যক্তিকে দেখে দোয়াঃ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্থ বা ব্যাধিগ্রস্থ লোককে দেখে বলে-

اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ عَافَانِيْ مِمَّا ابْتَلَاكَ بِه وَفَضَّلَنِيْ عَلى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيْلًا

(সমস্ত প্রসংসা আল্লাহর জন্য যিনি তোমাকে যে ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছেন তা থেকে আমাকে নিরাপদে রেখেছেন এবং তার বহু সংখ্যক সৃষ্টির উপর আমাকে মর্যাদা দান করেছেন)- সে কখনো উক্ত বিপদ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে না। -তিরমিযী : হাসান।

২০) শরীরে যে কোন ব্যথা অনুভব করলে পড়ার দোয়াঃ হযরত আবু আব্দুল্লাহ উসমান ইবনে আবুল আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি নিজের শরীরে যে ব্যথা অনুভব করছিলেন সে সম্পর্কে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অভিযোগ করেন। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : তোমার শরীরে যে স্থানে ব্যথা হচ্ছে সেখানে তোমার ডান হাত রাখ এবং তিনবার বিসমিল্লাহ পড়, তারপর সাতবার এ দোয়াটি পড়-

أَعُوْذُ بِعِزَّةِ اللّهِ وَقُدْرَتِه مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ

(আমি আল্লাহর মর্যাদা ও কুদরতের মাধ্যমে আশ্রয় চাচ্ছি সেই জিনিষের অনিষ্টতা থেকে, যা আমি অনুভব করছি এরং যার আধিক্যকে আমি ভয় করি)- ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা, আবু দাউদ, তিরমিযী ও আহমাদ।

২১) রোগীর জন্য ঝাড়-ফুঁকের দোয়াঃ হযরত আইশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পরিবারের কোন রোগীকে দেখতে গেলে তার শরীরের উপর ডান হাত বুলাতেন এবং বলতেন :

اللّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ مُذْهِبَ الْبَأْسِ اِشْفِ أَنْتَ الشَّافِيْ لَا شَافِيَ إِلَّا أَنْتَ شِفَاءً لَّا يُغَادِرُ سَقَمًا

(হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রভু! বিপদ দুরীভূত কর, রোগ মুক্তি দান কর, তুমিই রোগমুক্তি দানকারী, তুমি ছাড়া রোগ থেকে মুক্তি দান করার আর কেহ নাই, এমন রোগ মুক্তি যার পরে আর কোন রোগ থাকে না)- বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ ও আহমাদ।

২২) রোগীকে দেখতে যেয়ে রোগীর জন্য পড়ার দোয়াঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি এমন কোন ব্যক্তিকে দেখতে যায়, যার মৃত্যু নিকটবর্তী নয় (বলে মনে হয়), অতঃপর তার কাছে সাতবার বলে-

أَسْأَلُ اللّهَ الْعَظِيْمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ أَنْ يَّشْفِيَكَ

(বিশাল আরশের প্রভু মহান আল্লাহর কাছে আমি প্রার্থনা করছি, তিনি তোমাকে রোগ মুক্তি দান করুন), তবে আল্লাহ তাকে সেই রোগ থেকে মুক্তি দান করেন। -আবু দাউদ, তিরমিযী ও হাকেম।

২৩) বিপদে অস্থির হলে পাঠ করার দোয়াঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কেউ যেন বিপদে পতিত হয়ে মৃত্যু কামনা না করে। সে যদি একান্ত বাধ্য হয়ে কিছু বলতে চায় তাহলে যেন (এরূপ) বলে-

اَللَّهُمَّ أَحْيِنِيْ مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِّيْ وَتَوَفَّنِيْ إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِّيْ

(হে আল্লাহ! আমাকে ঐ সময় পর্যন্ত জীবিত রাখুন, যতক্ষন আমার জীবন আমার জন্য কল্যাণকর হয় আর আমাকে মৃত্যু দান করুন যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হয়)- বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী।

২৪) মৃত্যু পথযাত্রীকে তালকীনঃ হযরত আবু সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : তোমরা মৃত্যু পথযাত্রীকে لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ   - এর তালকীন কর। -(মুসলিম)

অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তির শেষ কথা হয় لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ - সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -আবু দাউদ ও হাকেম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

২৫) মুসিবতের সময় পাঠ করার দোয়াঃ হযরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি : কোন ব্যক্তির উপর কোন বিপদ এলে যদি সে বলে-

إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ - اَللّهُمَّ أَجِرْنِيْ فِيْ مُصِيْبَتِيْ وَأَخْلُفْ لِيْ خَيْرًا مِّنْهَا

(আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমাদেরকে তারই দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! বিপদে আমাকে সওয়াব দান করুন এবং যা হারিয়েছি তার বদলে তার চাইতে ভাল বস্তু দান করুন)- মহান আল্লাহ তাকে তার বিপদের প্রতিদান দেন এবং সে যা কিছু হারিয়েছে তার বদলে তার চাইতে উত্তম বস্তু দেন। -(সহীহ মুসলিম)

২৬) কবর জিয়ারতের দোয়াঃ হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনার কবর স্থানের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি কবরবাসীদের দিকে মুখ করে বললেন :

اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُوْرِ يَغْفِرُ اللّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالْأَثَرِ

(হে কবরের অধিবাসীগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদেরকে ও তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। তোমরা তো আমাদের পূর্বসূরী আর আমরা তোমাদের উত্তরসুরী)- তিরমিযী: হাসান

২৭) বিপদের সময় পাঠ করার দোয়াঃ হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপদের সময় দোয়া করতেন :

لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ الْحَلِيْمُ الْحَكِيْمُ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمُ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ رَبُّ السَّموَاتِ وَالْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمُ

- (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তিনি পরম সহিষ্ণু ও মহা জ্ঞানী। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তিনি মহান আরশের প্রভু।  আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তিনি আকাশমন্ডলী, জমীন ও মহাসম্মানিত আরশের প্রভু)- বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাই ও ইবনে মাজাহ।

২৮) হাঁচি সংশ্লিষ্ট পাঠ করার দোয়া সমূহঃ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কেহ হাঁচি দিলে বলবে-   اَلْحَمْدُ لِلّهِ (সমস্ত প্রসংশা আল্লাহর জন্য)।  অতঃপর তার সাথী শুনে বলবে- يَرْحَمُكَ اللّهُ (তোমার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক) তঃপর যার জন্য বলা হল সে যেন বলে- يَهْدِيْكُمُ اللّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ   (আল্লাহ তোমাদের হিদায়াত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করুন) -বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী : হাসান ও সহীহ।

২৯) নতুন চাঁদ দেখে পড়ার দোয়াঃ হযরত তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন চাঁদ দেখে বলতেন :

 اَللّهُمَّ أَهْلِلْهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَالْإِسْلَامِ رَبِّيْ وَرَبُّكَ اللّهُ

(হে আল্লাহ! চাঁদটিকে আমাদের জন্য বরকতময় (নিরাপদ), ঈমান, নিরাপত্তা ও শান্তির বাহন করে উদিত কর। হে নবচাঁদ! আল্লাহ আমারও প্রভু তোমারও প্রভু) - তিরমিযী : হাসান, আহমাদ, হাকেম ও দারেকুতনী।

৩০) নতুন কাপড় পরিধানের দোয়াঃ হযরত মুয়াজ ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি নতুন কাপড় পরিধান করে সে যেন বলে-

    اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ كَسَانِيْ هذَا الثَّوْبَ وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّي وَلَا قُوَّةٍ

(যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে এই পোষাক পরিধান করিয়েছেন এবং আমার শক্তি সামর্থ্য ব্যতীতই তিনি তা আমাকে দান করেছেন), তাহলে তার পূর্বাপরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া  হবে। (তিরমিযী ও আবু দাউদ)

৩১) স্থলপথে বাহনে আরোহণকালে পাঠ করার দোয়াঃ হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে রওনা হয়ে বাহনে আরোহণ করে তিনবার তাকবীর বলতেন। অতঃপর বলতেন :

سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِيْنَ وَإِنَّا إِلى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْن

(অতীব পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি একে আমাদের নিয়ন্ত্রনাধীন করেছেন, অন্যথায় আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আমরা অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যাব)

৩২) জলপথে বাহনে আরোহণকালে দোয়াঃ হযরত নুহ আলাইহিস্সালাম মহাপ্লাবনের সময় জাহাজে আরোহণকালে এই দোয়া পড়েছিলেন :

بِسْمِ اللّهِ مَجْرهَا وَمُرْسَاهَا إِنَّ رَبِّيْ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ

(আল্লাহর নামেই এর গতি ও স্থিতি, নিশ্চয়ই আমার প্রভু ক্ষমাশীল ও দয়াময়)
৩৩) লাইলাতুল কদরে পাঠ করার দোয়াঃ হযরত আইশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই তাহলে সে রাতে কি বলব? তিনি বললেন : তুমি বল-

اَللّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ

(হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাকারী, ক্ষমা করাই পছন্দ কর, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দাও) - ইবনে মাজাহ, আহমাদ, তিরমিযী ও হাকেম।

৩৪) ক্রোধের উদ্রেক হলে দোয়াঃ হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দুই ব্যক্তি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে পরস্পরকে ঝগড়া করে। এমনকি তাদের একজনের চেহারায় ক্রোধের ছাপ ফুটে উঠে। তখন নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- নিশ্চয়ই আমি এমন একটি বাক্য অবহিত আছি, যদি এ লোকটি তা উচ্চারন করত তবে অবশ্যই তার ক্রোধ চলে যেত। তা হল-

أَعُوْذُ بِاللّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

(আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই)- তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাই ও মুসনাদে আহমাদ।

৩৫) দেনা থেকে মুক্তির দোয়াঃ হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। একটি চুক্তিবদ্ধ দাস তার কাছে এসে বলে, আমি আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধে অপারগ হয়ে পড়েছি। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। তিনি বলেন, আমি তোমাকে এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দিব যা আমাকে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর সীর (সাবীর) পর্বত পরিমান দেনাও থাকে তবে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি বলেন, তুমি বল :

اَللّهُمَّ اكْفِنِيْ بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَأَغْنِنِيْ بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ

(হে আল্লাহ! তোমার হালাল দ্বারা আমাকে তোমার হারাম থেকে দুরে রাখ এবং তোমার দয়ায় তুমি ভিন্ন অপরের মুখাপেক্

পর্দা : বিধান ও কল্যাণ,

পর্দা : বিধান ও কল্যাণ

পর্দা-বিধান ইসলামী শরীয়তের পক্ষ থেকে সাধারণভাবে সমাজ-ব্যবস্থার এবং বিশেষভাবে উম্মতের মায়েদের জন্য অনেক বড় ইহসান। এই বিধানটি মূলত ইসলামী শরীয়তের যথার্থতা, পূর্ণাঙ্গতা ও সর্বকালের জন্য অমোঘ বিধান হওয়ার এক প্রচ্ছন্ন দলিল। পর্দা নারীর মর্যাদার প্রতীক এবং ইফফাত ও পবিত্রতার একমাত্র উপায়।
অনেকে মনে করেন, পর্দা-বিধান শুধু নারীর জন্য। এ ধারণা ঠিক নয়। পুরুষের জন্যও পর্দা অপরিহার্য। তবে উভয়ের পর্দার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। যে শ্রেণীর জন্য যে পর্দা উপযোগী তাকে সেভাবে পর্দা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যে কোনো ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিই কুরআন-সুন্নাহর পর্দা সম্পর্কিত আয়াত ও হাদীসসমূহ গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে এই বাস্তবতা স্বীকার করবেন যে, ইসলামে পর্দার বিধানটি অন্যান্য হিকমতের পাশাপাশি নারীর সম্মান ও সমাজের পবিত্রতা রক্ষার জন্যই দেওয়া হয়েছে। এজন্য এই বিধানের কারণে প্রত্যেককে ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। কৃতঘ্ন হয়ে এ বিধান সম্পর্কে অযথা আপত্তি করা উচিত নয়।
আকবর এলাহাবাদী বলেন-
প্রাশ্চাত্যের ও প্রাশ্চাত্য প্রভাবিত পুরুষদের অন্তরে পর্দা পড়ে যাওয়ার কারণে তারা এই বাস্তবতা অনুধাবন করতে না পারলেও আজকের পশ্চিমা নারীরা এ বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছে। আর এই বিধানটিই তাদেরকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার মাধ্যম হয়েছে।’
আমি পূর্বেই বলেছি, নারী-পুরুষ উভয়ের পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায় হল ইসলামের পর্দা বা হিজাব বিধান। এই বিধানের অনুসরণের মাধ্যমেই হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। পর্দার এই সুফল স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
ذلكم اطهر لقلوبكم وقلوبهن
  এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩)
সুতরাং মানবসমাজকে পবিত্র ও পঙ্কিলতামুক্ত রাখতে পর্দা-বিধানের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে বর্তমান সমাজের যুবক ও তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা ও নারীজাতির নিরাপত্তার জন্য পর্দা-বিধানের পূর্ণ অনুসরণ এখন সময়ের দাবি।
পর্দা-বিধান কুরআন মজীদে
পর্দার বিধানটি ইসলামের একটি অকাট্য বিধান। কুরআন মজীদের অনেকগুলো আয়াতে এই বিধান দেওয়া হয়েছে। সুতরাং কোনো ঈমানদারের পক্ষে এই বিধানকে হালকা মনে করার সুযোগ নেই। এখানে কয়েকটি আয়াত সংক্ষিপ্ত আলোচনাসহ তুলে ধরা হল।
এক.
يا ايها النبى قل لازواجك وبناتك ونساء المؤمنين ...
  হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব : ৫৯)

আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যখন তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন যেন মাথার উপর থেকে ওড়না/চাদর টেনে স্বীয় মুখমন্ডল আবৃত করে। আর (চলাফেরার সুবিধার্থে) শুধু এক চোখ খোলা রাখে।-ফাতহুল বারী ৮/৫৪, ৭৬, ১১৪
ইবনে সীরিন বলেন, আমি (বিখ্যাত তাবেয়ী) আবীদা (সালমানী রাহ.)কে উক্ত আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, কাপড় দ্বারা মাথা ও চেহারা আবৃত করবে এবং এক চোখ খোলা রাখবে।
দুই.
واذا سألتموهن فسئلوهن من وراء حجاب ...
তোমরা তাঁদের (নবী পত্নীদের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। তোমাদের কারো জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া সংগত নয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনো বৈধ নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা ঘোরতর অপরাধ। (সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩)
এই আয়াত থেকেও বোঝা যায়, নারীর দেহের কোনো অংশই পর্দা-বিধানের বাইরে নয়। উম্মুল মুমিনীনগণের আমলও তা প্রমাণ করে।
এই আয়াতে যখন পর্দার বিধানকে সাহাবায়ে কেরাম ও উম্মুল মুমিনীনদের জন্যও অধিকতর পবিত্রতার উপায় বলা হয়েছে তখন উম্মতের আর কে আছে যে এই বিধানের বাইরে থাকতে পারে?
তিন.
قل للمؤمنت يغضنن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن الا ما ظهر منها
তরজমা : (হে নবী!) মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আভরণ প্রদর্শন না করে। (সূরা নূর : ৩১)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, ‘সাধারণত যা প্রকাশিত’ অর্থ হচ্ছে কাপড়।-তাফসীরে তাবারী ১৮/১১৯
এই ব্যাখ্যা অনুসারে প্রতীয়মান হয় যে, গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে নারীর মুখমন্ডলসহ পূর্ণ দেহ আবৃত রাখা অপরিহার্য।
চার.
وليضربن بخمرهن على جيوبهن
তরজমা : তারা যেন গ্রীবা ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে। ... (সূরা নূর : ৩১)
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন,
يرحم الله نساء المهاجرات الأول، لما أنزل الله : وليضربن بخمرهن على جيوبهن شققن مورطهن فاختمرن بها.
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা প্রথম শ্রেণীর মুহাজির নারীদের প্রতি দয়া করুন। আল্লাহ তাআলা যখন
وليضربن بخمرهن على جيوبهن
আয়াত নাযিল করলেন তখন তারা নিজেদের চাদর ছিঁড়ে তা দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করেছিলেন।-সহীহ বুখারী ২/৭০০
উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন-‘ফাখতামারনা’ অর্থ তারা মুখমন্ডল আবৃত করেছেন।-ফাতহুল বারী ৮/৩৪৭
আল্লামা আইনী রাহ. বলেন-‘ফাখতামারনা বিহা’ অর্থাৎ যে চাদর তারা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন তা দিয়ে নিজেদের মুখমন্ডল আবৃত করলেন। (উমদাতুল কারী ১৯/৯২)
আল্লামা শানকীতী রাহ. বলেন, এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, উপরোক্ত মহিলা সাহাবীগণ বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে মুখমন্ডল আবৃত করারও আদেশ করেছেন। তাই তারা আল্লাহ তাআলার আদেশ পালনার্থে নিজেদের চাদর ছিঁড়ে তা দিয়ে মুখমন্ডল আবৃত করেছেন।

পাঁচ.
ولا يضربن بارجلهن ليعلم ما يخفين من زينتهن وتوبوا الى الله جميعا ايه المؤمنون لعلهم تفلحون
(তরজমা) তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর :  ৩১)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, পরপুরুষকে আকৃষ্ট করে এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকা ঈমানদার নারীর কর্তব্য। কারণ পরপুরুষকে নুপুরের আওয়াজ শোনানোর উদ্দেশ্যে সজোরে পদবিক্ষেপ যখন নিষেধ করা হয়েছে তখন যে সকল কাজ, ভঙ্গি ও আচরণ এর চেয়েও বেশি আকৃষ্ট করে তা নিষিদ্ধ হওয়া তো সহজেই বোঝা যায়। মুসলিম নারীদের জন্য এটি আল্লাহ রাববুল আলামীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
পর্দার বিধান হাদীস শরীফে
১. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
নারী হল সতর তথা আবৃত থাকার বস্ত্ত। নিশ্চয়ই সে যখন ঘর থেকে  বের হয় তখন শয়তান তাকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে। আর সে যখন গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করে তখন সে আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে।-আলমুজামুল আওসাত, তবারানী
এই হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয়।
২. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে। (সহীহ বুখারী ৪/৬৩, হাদীস : ১৮৩৮)
কাযী আবু বকর ইবনে আরাবী বলেন, নারীর জন্য বোরকা দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত রাখা ফরয। তবে হজ্বের সময়টুকু এর ব্যতিক্রম। কেননা, এই সময় তারা ওড়নাটা চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিবে, চেহারার সাথে মিলিয়ে রাখবে না। পরপুরুষ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখবে এবং পুরুষরাও তাদের থেকে দূরে থাকবে। (আরিযাতুল আহওয়াযী ৪/৫৬)
৩. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত কাপড় ঝুলিয়ে রাখে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। তখন উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে মহিলারা তাদের কাপড়ের ঝুল  কীভাবে রাখবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক বিঘত ঝুলিয়ে রাখবে। উম্মে সালামা বললেন, এতে তো তাদের পা অনাবৃত থাকবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে এক হাত ঝুলিয়ে রাখবে, এর বেশি নয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪১১৭; জামে তিরমিযী ৪/২২৩; সুনানে নাসাঈ ৮/২০৯; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১১/৮২
ইমাম তিরমিযী বলেন, এই হাদীসে নারীর জন্য কাপড় ঝুলিয়ে রাখার অবকাশ দেওয়া হয়েছে। কারণ এটিই তাদের জন্য অধিক আবৃতকারী।
৪. ওকবা ইবনে আমের জুহানী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-তোমরা নারীদের নিকট যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনসারী সাহাবী আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! স্বামী পক্ষীয় আত্মীয় সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি বললে, সে তো মৃত্যু। -সহীহ বুখারী ৯/২৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২১৭২; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৭১; মুসনাদে আহমাদ ৪/১৪৯, ১৫৩
এই হাদীসে বেগানা নারী-পুরুষের একান্ত অবস্থানকে নিষেধ করা হয়েছে এবং এ প্রসঙ্গে স্বামী পক্ষীয় আত্মীয়-স্বজন যেমন দেবর-ভাসুর ইত্যাদির সাথে অধিক সাবধানতা অবলম্বনকে অপরিহার্য করা হয়েছে।
৫. হযরত আয়েশা রা. ইফ্কের দীর্ঘ হাদীসে বলেছেন-আমি আমার স্থানে বসে ছিলাম একসময় আমার চোখ দুটি নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল এবং আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল আসসুলামী ছিল বাহিনীর পিছনে আগমনকারী। সে যখন আমার অবস্থানস্থলের নিকট পৌছল তখন একজন ঘুমন্ত মানুষের আকৃতি দেখতে পেল। এরপর সে আমার নিকট এলে আমাকে চিনে ফেলল। কারণ পর্দা বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগে সে আমাকে দেখেছিল। সে তখন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলে ওঠে, যার দরুণ আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং ওড়না দিয়ে নিজেকে আবৃত করে ফেলি।
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, আমি ওড়না দিয়ে আমার চেহারা ঢেকে ফেলি।-সহীহ বুখারী ৫/৩২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৭৭০; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩১৭৯

৬.  উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম। উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা.ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম উপস্থিত হলেন। এটি ছিল পর্দা বিধানের পরের ঘটনা। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার সামনে থেকে সরে যাও। আমরা বললাম, তিনি তো অন্ধ, আমাদেরকে দেখছেন না?! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখছ না?-সুনানে আবু দাউদ ৪/৩৬১, হাদীস : ৪১১২; জামে তিরমিযী ৫/১০২, হাদীস : ২৭৭৯; মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৬; শরহুল মুসলিম, নববী ১০/৯৭; ফাতহুল বারী ৯/২৪৮
৭. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম তখন আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা অতিক্রম করত। তারা যখন আমাদের সামনাসামনি চলে আসত তখন আমাদের সকলেই চেহারার ওপর ওড়না টেনে দিতাম। তারা চলে গেলে আবার তা সরিয়ে নিতাম।-মুসনাদে আহমাদ ৬/৩০; ইবনে মাজাহ,
হাদীস: ২৯৩৫
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখা আবশ্যক।
৮. আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, আমরা পুরুষদের সামনে মুখমন্ডল আবৃত করে রাখতাম। ...-মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৫৪
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, সাহাবা-যুগের সাধারণ মহিলারাও গায়র মাহরাম পুরুষ থেকে নিজেদের চেহারা আবৃত করতেন। কারণ আসমা বিনতে আবি বকর রা. এখানে বহুবচন ব্যবহার করেছেন। যা প্রমাণ করে উম্মুল মুমিনগণ ছাড়া অন্য নারীরাও তাদের মুখমন্ডল আবৃত রাখতেন।
৯. ফাতিমা বিনতে মুনযির রাহ. বলেন, আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রা.-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখতাম।-মুয়াত্তা, ইমাম মালেক ১/৩২৮; মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৫৪
হযরত ওমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-যখনই কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে একান্তে সাক্ষাত করে তখন তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান।-জামে তিরমিযী
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, একজন মহিলা পর্দার পিছন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে একটি কাগজ দিতে চাইল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাত গুটিয়ে নিলেন (কাগজটি নিলেন না এবং) বললেন, আমি জানি না, এটা কি পুরুষের হাত না নারীর। মহিলা আরজ করলেন, ‘নারীর হাত।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি যদি নারী হতে তাহলে নিশ্চয়ই নখে মেহেদী থাকত।’-সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসায়ী
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, পীর-মুর্শিদ ও উস্তাদের সাথেও পর্দা করা অপরিহার্য।
হযরত উমাইমা বিনতে রুকাইকা রা. থেকে বাইয়াত সংক্রান্ত একটি দীর্ঘ হাদীসে আছে যে, নারীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের প্রতি আমাদের নিজেদের চেয়েও মেহেরবান। সুতরাং আপনার হাত মোবারক দিন, আমরা বাইয়াত হই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি নারীদের সাথে হাত মিলাই না। (যা মুখে বলেছি তা মেনে চলাই তোমাদের জন্য অপরিহার্য)।-মুয়াত্তা মালিক
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আল্লাহর কসম! বাইয়াতের সময় তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) হাত কখনো কোনো নারীর হাত স্পর্শ করেনি। তিনি শুধু মুখে বলতেন, তোমাকে বাইয়াত করলাম।-সহীহ বুখারী ২/১০৭১

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
দুই শ্রেণীর দোযখী এখনও আমি দেখিনি। (কারণ তারা এখন নেই, ভবিষ্যতে আত্মপ্রকাশ করবে) এক শ্রেণী হচ্ছে ঐ সকল মানুষ, যাদের হাতে ষাঁড়ের লেজের মতো চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে। (দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে) ঐ সকল নারী, যারা হবে পোশাক পরিহিতা, নগ্ন, আকৃষ্ট ও আকৃষ্টকারী; তাদের মাথা হবে উটের হেলানো কুঁজের ন্যায়। এরা জান্নাতে যাবে না এবং জান্নাতের খুশবুও পাবে না অথচ জান্নাতের খুশবু তো এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে।-মুসলিম ২/২০৫, হাদীস : ২১২৮
এই হাদীসে বেপর্দা নারীদের প্রতি কঠিন হুঁশিয়ারি শোনানো হয়েছে। সুতরাং তাদের মৃত্যুর আগেই তাওবা করে পর্দার বিধানের দিকে ফিরে আসা কর্তব্য।
উপরের আলোচনা থেকে জানা গেল যে, কুরআন মজীদে ও হাদীস শরীফে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পর্দার বিধান দেওয়া হয়েছে। এই বিধান মেনে চলা সকল ঈমানদার নারী-পুরুষের জন্য অপরিহার্য। এবার ঐ সকল নিকটাত্মীয়দের কথা উল্লেখ করছি, যাদের মাঝে পর্দার হুকুম নেই। এরা ছাড়া অন্য সকলের সাথেই পর্দা করতে হবে।
যাদের সাথে পর্দা নেই
মাহরাম পুরুষের সাথে নারীর পর্দা নেই। মাহরাম পুরুষ দ্বারা উদ্দেশ্য হল এমন পুরুষ আত্মীয়, যার সাথে বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে কোনো অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয নয়। যেমন-পিতা, ভাই ইত্যাদি।
আর যে পুরুষের সাথে বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে সাময়িক প্রতিবন্ধকতা (যেমন-নারীর বোন বা এমন নারীর বিবাহে থাকা, যাদের দু’জনকে বিবাহসূত্রে একত্র করা জায়েয নয়) দূর হওয়ার পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয সে হল গায়র-মাহরাম। তার সাথে পর্দা করা ফরয।
পুরুষের জন্য মাহরাম ও গায়র-মাহরাম নারী
একজন পুরুষের মাহরাম নারী হল এমন নারী, যার সাথে তার বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে কোনো অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয নয়। যেমন-মা, মেয়ে ইত্যাদি।
পক্ষান্তরে যে নারীর সাথে তার বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে সাময়িক প্রতিবন্ধকতা (যেমন-নারীর অন্য পুরুষের বিবাহে থাকা) দূর হওয়ার পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয সে হল গায়র-মাহরাম।
মাহরামের প্রকারভেদ
সাধারণত তিন ধরনের সম্পর্ককে শরীয়ত মাহরাম হওয়ার কারণ সাব্যস্ত করেছে। যথা : ক) বংশীয়/ঔরসজাত সম্পর্ক। খ) দুধ সম্পর্ক ও গ) বৈবাহিক সম্পর্ক।
বংশগত সম্পর্কের কারণে মাহরাম নারীর বংশ সম্পর্কিত মাহরাম পুরুষগণ হলেন-১. পিতা, দাদা-নানা ও তদোর্ধ্ব পুরুষ। ২. পুত্র, পৌত্র ও তদস্তন পুরুষ। ৩. ভাই-সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়। ৪. ভ্রাতুষ্পুত্র ও তদস্তন পুরুষ। ৫. ভাগ্নে (সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোনের ছেলে)। ৬. চাচা।
৭. মামা।
আল্লাহ তাআলার বাণী-
ولا يبدين زينتهن الا لبعولتهن او ابآئهن او ابآء بعولتهن او ابنآئهن او ابنآء بعولتهن او اخوانهن او بنى اخوانهن او بنى اخوتهن او نسائهن او ما ملكت ايمانهن او التبعين غير اولى الاربة من الرجال او الطفط الذين لم يظهروا على عورت النساء
(তরজমা) তারা যেন নিজেদের আভরণ প্রকাশ না করে তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যারা যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত অন্য কারো নিকট। (সূরা নূর (২৪) : ৩১)
পুরুষের বংশ সম্পর্কিত মাহরাম নারীগণ হলেন-
১. মা ২. কন্যা ৩. ভগ্নী ৪. ফুফু, ৫. খালা ৬. ভ্রাতুষ্পুত্রী ৭. ভাগ্নী।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
حرمت عليكم امهتكم وبنتكم واخوتكم وعمتكم وخلتكم وبنت الاخ وبنت الاخت.
(তরজমা) তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, কন্যা, ভগ্নী, ফুফু, খালা, ভ্রাতুষ্পুত্রী, ভাগ্নী। ... (সূরা নিসা (৪) : ২৩)
দুধ সম্পর্কের কারণে মাহরাম দুগ্ধপানের কারণেও মাহরাম সাব্যস্ত হয়ে থাকে। দুধ মা, দুধ কন্যা, দুধ বোন ইত্যাদি নারীগণ পুরুষের মাহরাম পরিগণিত হবেন। অনুরূপভাবে দুধ পিতা, দাদা ও তদোর্ধ্ব পুরুষ, দুধ পুত্র ও তদস্তন পুরুষ, দুধ ভাই ইত্যাদি পুরুষ নারীর মাহরাম হিসেবে গণ্য হবেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
حرمت عليكم امهتكم ... وامهتكم التى ارضعنكم واخوتكم من الرضاعة
(তরজমা) তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা ... দুধ-মা, দুধ বোন। ... (সূরা নিসা : (৪) : ২৩)
বিখ্যাত মুফাসসির আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ কুরতুবী রাহ. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
একজন নারী যদি কোনো শিশুকে দুধ পান করায় তাহলে সে দুগ্ধ পানকারীর জন্য হারাম হয়ে যায়। কারণ সে তার মা। তেমনি দুধমার মেয়ে, বোন হওয়ার কারণে; দুধমার বোন, খালা হওয়ার কারণে; দুধমার মা, নানী হওয়ার কারণে; দুধমার স্বামীর অন্য পক্ষের কন্যা, বোন হওয়ার কারণে; স্বামীর বোন, ফুফু হওয়ার কারণে; স্বামীর মা, দাদী হওয়ার কারণে ঐ শিশুর জন্য হারাম হয়ে যায়। তেমনি দুধমার ছেলে-মেয়ের সন্তানাদিও হারাম হয়ে যায়। কারণ তারা তার ভাই-বোনের
সন্তানাদি। (তাফসীরে কুরতুবী ৫/৭২)
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আবুল কুয়াইসের ভাই আফলাহ (যিনি আয়েশা রা.-এর দুধ চাচা) একবার আমার নিকট আসার অনুমতি চাইলেন। আমি অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানালাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে আসার পর তাঁকে ঘটনাটি জানালাম। তিনি আমাকে অনুমতি প্রদানের আদেশ করলেন।
মুসলিমের রেওয়ায়েত অনুযায়ী, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তার সাথে পর্দা করো না। কেননা, বংশীয় সম্পর্কের দ্বারা যা হারাম হয়, দুধ সম্পর্ক দ্বারাও তা হারাম হয়।-সহীহ বুখারী ৮/৩৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৪৪; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৪৭; সুনানে নাসায়ী ৬/৯৯
বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে মাহরাম
মাহরাম সাব্যস্ত হওয়ার তৃতীয় কারণ হল বিবাহ। বৈবাহিক সম্পর্কের দ্বারাও নারী-পুরুষ একে অপরের মাহরাম সাব্যস্ত হয়। নারীর বিবাহ সম্পর্কীয় মাহরাম পুরুষ হল স্বামীর পিতা (শ্বশুর), স্বামীর অন্য পক্ষের পুত্র ইত্যাদি। তেমনিভাবে নিজের শাশুড়ি, স্ত্রীর গর্ভজাত অন্য পক্ষের কন্যা ইত্যাদি নারীও পুরুষের জন্য মাহরাম গণ্য হবে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وحرمت عليكم امهتكم ... وامهت نسائكم وربآئبكم التى فى حجوركم من نسائكم التى دخلتم بهن ...
(তরজমা) তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, ... শাশুড়ি ও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের সাথে সংগত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত কন্যা, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে।... (সূরা নিসা : ২৩)
ইমাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ কুরতুবী রাহ. বলেন-বিবাহ সম্পর্কীয় মাহরাম নারী চার প্রকার : ১. স্ত্রীর মা (শাশুড়ি) ২. স্ত্রীর কন্যা ৩. পিতার স্ত্রী (সহোদর মা, সৎ মা) ও ৪. পুত্রবধু। (তাফসীরে কুরতুবী ২/৭৪)
উল্লেখ্য, শাশুড়ি বলতে স্ত্রীর মা, দাদী-নানী এভাবে উপরের দিকের সকলকে বোঝাবে। তবে স্ত্রীর খালা, ফুফু অর্থাৎ খালা শাশুড়ি, ফুফু-শাশুড়ি মাহরাম নয়। এঁদের সাথে পর্দা আছে। একই কথা নারীর ক্ষেত্রে। স্বামীর পিতা, দাদা ও নানার সাথে পর্দা নেই। তবে স্বামীর চাচা, মামা অর্থাৎ চাচা-শ্বশুর, মামা-শ্বশুরের সাথে পর্দা আছে।
উপরের আলোচনা থেকে পর্দার বিধান পালন সম্পর্কে আমরা যা পেয়েছি তা হচ্ছে-
এক. পর্দার বিধান পালন করার অর্থ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করা, যা মুমিনের জন্য অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলার ইরশাদ-
وما كان لمؤمن ولا مؤمنة اذا قضى الله ورسوله امرا ان يكون لهم الخيرة من امرهم ومن يعص الله ورسوله فقد ضل ضلالا بعيدا.
(তরজমা) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অবকাশ থাকবে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে স্পষ্টতই পথভ্রষ্ট হবে। (সূরা আহযাব (৩৩) : ৩৬)
দুই. পর্দার বিধান মেনে চলা হচ্ছে ঈমানের দাবি। কেননা আল্লাহ তাআলা পর্দা-বিধানের ক্ষেত্রে শুধু ঈমানদার নারীপুরুষকেই সম্বোধন করেছেন।
তামীম গোত্রের কয়েকজন নারী উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর নিকট আগমন করল, যাদের পরনে ছিল পাতলা কাপড়। উম্মুল মুমিনীন তাদেরকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘তোমরা যদি মুমিন নারী হও তাহলে এ তো মুমিন নারীর পোশাক নয়। আর যদি মুমিন না হও তাহলে তা ব্যবহার করতে পার।’ (মাআলিমুস সুনান ৪/৩৭৬)
এক নববধুকে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর নিকট আনা হল, যার পরনে ছিল রঙ্গিন কিবতী চাদর। তখন উম্মুল মুমিনীন রা. বললেন, ‘যে নারী এ রকম পোশাক পরিধান করে তার তো সূরা নূরের প্রতি ঈমান নেই।’ (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/২৪৪)

তিন. পর্দাপালন হল সতর।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-নিশ্চয়ই আল্লাহ অধিক লাজুক ও পর্দাশীল। তিনি লজ্জা ও পর্দাকে পছন্দ করেন। (আবু দাউদ, হাদীস : ৪০১২, ৪০১৩; সুনানে নাসাঈ ১/২০০; মুসনাদে আহমদ ৪/২২৪
আল্লাহ তাআলা পিতা আদম ও হওয়া আ.-এর প্রতি পর্দার নেয়ামতকে বর্ণনা করে ইরশাদ করেছেন-
ان لك الا تجوع فيها ولاتعرى
(তরজমা) তোমার জন্য এ-ই রইল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্তও হবে না এবং নগ্নও হবে না।-সূরা ত্বহা (২০) : ১১৮)
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বর্ণনা করে ইরশাদ করেছেন-
يبنى ءادم قد انزلنا عليكم لباسا يورى سوءتكم وريشا ولباس التقوى ذلك خير.
(তরজমা) হে বনী আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশ-ভূষার জন্য আমি তোমাদেরকে পরিচ্ছদ দিয়েছি এবং তাকওয়ার পরিচ্ছদ এটাই সর্বোৎকৃষ্ট।- সূরা আ’রাফ (৭) : ২৬)
চার. পর্দা হল নারী-পুরুষ উভয়ের হৃদয়ের পবিত্রতার উপায়। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তা ঘোষণা করেছেন।
পাঁচ. পর্দা হল ইফফাত তথা চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার উপায়। এই ইফফত ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুআর অংশ। তিনি দুআ করতেন-
أسألك الهدى والتقى والعفة
অন্য রেওয়ায়েতে
إني أسألك الهدى والتقى والعفاف
অর্থ : (হে আল্লাহ!) আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি হেদায়েত, তাকওয়া ও ইফফত (চারিত্রিক পবিত্রতা)।-সহীহ মুসলিম (কিতাবুয যিকর; জামে তিরমিযী (দাওয়াত অধ্যায়); ইবনে মাজাহ (দুআ অধ্যায়); মুসনাদে আহমদ ১/৪১১, ৪১৬ ও ৪৩৬
এই পবিত্রতা হচ্ছে জান্নাতী নারীদের একটি গুণ। আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন আয়াতে এর দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
আল্লাহ তাআলা তাদের অসাধারণ রূপের বর্ণনা দেওয়ার সাথে সাথে একথাও বলেছেন যে, তারা নির্ধারিত গৃহে অবস্থান করবে এবং নিজ স্বামী ছাড়া অন্যের দিকে দৃষ্টিপাত করবে না। তো তাদের সৌন্দর্যের পাশপাশি তাদের পবিত্রতারও প্রশংসা করেছেন। সুতরাং রূপ-সৌন্দর্যের সাথে যদি ইফফাত ও সতীত্ব থাকে তবে এরচেয়ে উত্তম আর কী হতে পারে?!! আর পর্দাই হল সতীত্ব রক্ষার উপায়।

মাসিক আল-কাউসার

শরিয়তের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য,

শরিয়তের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য ও লা-মাযহাবি ফিতনা।

👉নারী পুরুষের শারীরিক গঠন, সক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদী নানা বিষয়ে যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে। যেমন-
১-পুরুষ ও মহিলা উভয়ের উপরই হজ্ব ফরয। কিন্তু মহিলাদের জন্য পথ খরচ ছাড়াও হজ্বের সফরে স্বামী বা মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি শর্ত।
২-ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য মাথা ঢাকা নিষেধ। অথচ মহিলাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় মাথা ঢেকে রাখা ফরয।
৩-ইহরাম খোলার সময় পুরুষ মাথা মুন্ডায়। কিন্তু মহিলাদের মাথা মুন্ডানো নিষেধ।
৪-হজ্ব পালনকালে পুরুষ উচ্চ আওয়াজে তালবীয়া পাঠ করে, পক্ষান্তরে মহিলাদের জন্য নিম্ন আওয়াজে পড়া জরুরী।
৫-পুরুষের উপর জুমআ পড়া ফরয, মহিলাদের উপর নয়।
৬-নামাযে সতর্ক করার মত কোন ঘটনা ঘটলে সতর্ক করার জন্য পুরুষের তাসবীহ পড়ার হুকুম করা হয়েছে। কিন্তু মহিলাদের তাসফীক করা তথা হাতে শব্দ করার বিধান।
৭-ইমাম ও খতীব শুধু পুরুষই হতে পারে, কোন নারী হতে পারেনা।
৮-আজান শুধু পুরুষই দিবে, কোন নারীকে মুয়াজ্জিন বানানো জায়েজ নয়।
৯-পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আর মহিলাদের ঘরে নামায পড়াই উত্তম বলা হয়েছে।
১০-সতর। পুরুষের সতর হল নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত। আর পরপুরুষের সামনে নারীদের সতর হল প্রায় পুরো শারীরই ঢেকে রাখা ফরয।
নারী-পুরুষের মাঝে এরকম পার্থক্যসম্বলিত ইবাদত সমূহের অন্যতম হল নামায। তাকবীরে তাহরীমার জন্য হাত উঠানো, হাত বাঁধা, রুকু, সেজদা, প্রথম ও শেষ বৈঠক ইত্যাদী ক্ষেত্রগুলোতে পুরুষের সাথে নারীর পার্থক্য রয়েছে। তাদের সতরের পরিমাণ যেহেতো বেশি তাই যেভাবে তাদের সতর বেশী রক্ষা হয় সেদিকটিও বিবেচনা করা হয়েছে ক্ষেত্রগুলিতে। মুসলিম উম্মাহর প্রায় দেড় হাজার বছরের অবিচ্ছন্ন আমলের ধারা তাই প্রমাণ করে। বিষয়টি প্রমাণিত রাসূলে কারীম সাঃ এর হাদিস, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের ফতোয়া ও আছারের মাধ্যমে।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস, সাহাবায়ে কেরামের আছার এবং মুজতাহিদ ইমামগণের সিদ্ধান্ত সকল বিষয়ে এ কথাটা আছে যে, নারীর নামাযের কিছু বিষয় পুরুষের নামাযের চেয়ে আলাদা। কিছু হাদীস উল্লেখ করছি।
ইমাম আবু দাউদ রাহ. তাঁর কিতাবুস সুনানের কিতাবুল মারাসীলে বিখ্যাত ইমাম ইয়াযিদ ইবনে আবী হাবীব রাহ.-এর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেন যে,
أن النبى مر على امرأتين تصليان فقال : اذا سجدتما فضما بعض اللحم الى الأرض، فان المرأة ليست فى ذلك كالرجل.
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুইজন মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তারা নামায পড়ছিল। তিনি তাদের বললেন, “যখন তোমরা সিজদা করবে তোমাদের শরীরের কিছু অংশ, (মানে পিছনের অংশ) মাটির সাথে মিলিয়ে রাখবে। কারণ নারী এই বিষয়ে পুরুষের মত নয়। ”-মারাসীলে আবু দাউদ, হাদীস৮৭; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ৩২০১; মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার, বায়হাকী, হাদীস ৪০৫৪
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষকেও সিজদার নিয়ম শিখিয়েছেন, নারীকেও সিজদার নিয়ম শিখিয়েছেন। পুরুষকে সম্বোধন করে বলেছেন, সবগুলো অঙ্গ যেন ফাঁকা ফাঁকা থাকে। দুই বাহু যেন পাঁজরের সাথে মিলে না থাকে। কনুই যেন মাটিতে বিছানো না থাকে। পেট যেন উরুর সাথে মিশে না থাকে। এভাবে পুরুষকে সিজদা শিখিয়েছেন। আর নারীকে বলেছেন
فان المرأة ليست فى ذلك كالرجل ‘নারী এই বিষয়ে পুরুষের মত নয়’।
ইমাম আবু দাউদ রাহ. হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। হাদীস-বিচারের নীতি অনুসারে এটি দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। বিখ্যাত লা-মাযহাবী মুহাদ্দিস - নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান রাহ. সহীহ বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থ ‘আওনুল বারী’তে লিখেছেন, এই হাদীস সকল ইমামের উসুল মোতাবেক দলীল হওয়ার উপযুক্ত। অর্থাৎ এটা নির্ভরযোগ্য দলীল। আরেকজন গায়রে মুকাল্লিদ মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল আমীর আল ইয়ামানী بلوغ المرام -এর ভাষ্যগ্রন্থ سبل السلام-এ হযরত বারা ইবনে আযিব রা.-এর হাদীস, যে হাদীস সহীহ মুসলিমে আছে, ‘যখন তুমি সিজদা করবে তখন তোমার দুই হাতের পাতা মাটিতে রাখ আর দুই কনুই মাটি থেকে উপরে রাখ’। এই হাদীস আলোচনা করার সময় বলেছেন, ‘এই হাদীসে আছে পুরুষের নামাযের হুকুম। নারীর নামাযের পদ্ধতি আলাদা, যা আবু দাউদের এই হাদীসে বর্ণিত হয়েছে’। তো তার মতেও ইমাম আবু দাউদ রাহ.-এর বর্ণিত হাদীসটি গ্রহণযোগ্য এবং দলীল হিসাবে উপযুক্ত। এ জন্য তিনি এই হাদীসের ভিত্তিতে পুরুষ ও নারীর নামাযের পার্থক্য বর্ণনা করেছেন।

দ্বিতীয় হাদীস : ইমাম বায়হাকী রাহ. তাঁর ‘আসসুনানুল কুবরা’গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إذا جلست المرأة في الصلاة وضعت فخذها على فخذها الأخرى وإذا سجدت ألصقت بطنها في فخذيها كأستر ما يكون لها وإن الله تعالى ينظر إليها ويقول يا ملائكتي أشهدكم أني قد غفرت لها.
“নারী যখন নামাযে বসবে তখন তার এক উরু অন্য উরুর উপর রাখবে। আর যখন সিজদা করবে তখন তার পেটকে উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। আল্লাহ পাক ঐ নারীর দিকে তাকান এবং বলেন, হে ফিরিশতাগণ! আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি যে, আমি তাকে মাফ করে দিয়েছি”। -সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ৩১৯৯
এই হাদীসেরও সনদ হাসান পর্যায়ের, নির্ভরযোগ্য পর্যায়ের।
তৃতীয় হাদীস : ইমাম তবারানী রাহ. ‘আলমুজামুল কাবীর’গ্রন্থে হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর রা. থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন,
يا وائل بن حجر ! إذا صليت؛ فاجعل يديك حذاء أذنيك، والمرأة تجعل يديها حذاء ثدييها.
“হে ওয়ায়েল! যখন তুমি নামায পড়বে তখন তোমার দুই হাত কান বরাবর উঠাবে। আর নারী তার হাত উঠাবে বুক পর্যন্ত।”-মুজামে কাবীর, তবারানী, হাদীস২৮
তো এই হাদীসে নামাযে হাত তোলার ক্ষেত্রে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থক্য নির্দেশ করেছেন। এটিও হাসান পর্যায়ের হাদীস।
এ সমস্ত হাদীস এবং এ বিষয়ের আরো কিছু রেওয়ায়েত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে থেকে বর্ণিত হয়েছে। এই হাদীসগুলোর ভিত্তিতে পরিষ্কার প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর নামাযের কিছু পার্থক্য নিদের্শ করেছেন।

এরপর রয়েছে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধান
عليكم بسنتي و سنة الخلفاء الراشدين “তোমরা আমার সুন্নাহকে ধারণ কর এবং খোলফায়ে রাশিদীনের সুন্নাহকে ধারণ কর”। আলোচ্য বিষয়ে খলীফায়ে রাশেদ হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রা.-এর আছর সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। ‘মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক’, ‘মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ’হাদীসের দুই বিখ্যাত ও মূল্যবান কিতাব। ইমাম আব্দুর রাযযাক, ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ হলেন ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের উস্তায। এই দুই কিতাবে আলী ইবনে আবী তালিব রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, سئل عن صلاة المرأة নারীর নামায সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন,
إذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذيها ببطنها
“নারী যখন সিজদা করবে তখন যেন সে জড়সড় হয়ে সিজদা করে এবং তার দুই উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে।”-মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক ৫০৭২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, ২৭৭৭
আর এ শুধু সিজদার ক্ষেত্রে বিধান নয়, গোটা নামাযের বিধান। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বায় আছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে নারীর নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি দুটো শব্দ বললেন, تجتمع و تحتفز “নারী এক অঙ্গকে আরেক অঙ্গের সাথে মিলিয়ে জড়সড় হয়ে নামায পড়বে।”
তো রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা এবং বিখ্যাত মুজতাহিদ সাহাবীগণের নির্দেশনা এবং এরপর যদি আরো দেখত চান, তাহলে তাবেঈ যুগের বিখ্যাত সব ইমাম, আতা ইবনে আবী রাবাহ রাহ., মুজাহিদ ইবনে জাবর রাহ., ইবরাহীম আন নাখায়ী রাহ., এরকম বিভিন্ন অঞ্চলের বড় বড় মুজতাহিদ ইমামের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এই সবগুলো দলীল হাওয়ালাসহ দেখতে চাইলে উস্তাযে মুহতারাম হযরত মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেবের মূল্যবান প্রবন্ধটি দেখতে পারেন, যা মাকতাবাতুল আশরাফ কর্তৃক প্রকাশিত ‘নবীজীর নামাজ’বইখানির পরিশিষ্ট অংশে ছাপা হয়েছে।
এখানেও তাবেয়ীনদের ফতোয়া দিয়ে দেওয়া হল।

★★সাহাবায়ে কিরামের ফতোয়া

5072 –عبد الرزاق عن إسرائيل عن أبي إسحاق عن الحارث عن علي قال اذا سجدت المرأة فلتحتفز و لتلصق فخذيها ببطنها (مصنف عبد الرزاق،كتاب الصلاة،باب تكبير المرأة بيديها و قيام المرأة و ركوعها و سجودها،رقم الحيث-5072)
হযরত আলী রা. বলেছেন-মহিলা যখন সেজদা করে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৮, হাদিস নং-৫০৭২, মুসান্নাফে ইবনে শাইবা-২/৩০৮, হাদিস নং-২৭৯৩, সুনানে কুবরা বায়হাকী-২/২২২)

حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمُقْرِئ،عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي أَيُّوبَ،عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ،عَنْ بُكَيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الأَشَجِّ،عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ؛أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ صَلاَةِ الْمَرْأَةِ؟فَقَالَ : تَجْتَمِعُ وَتَحْتَفِزُ. (مصنف ابن ابى شيبة،كتاب الصلاة،في المرأة كَيْفَ تَجْلِسُ فِي الصَّلاَةِ،رقم الحديث-2794)
হযরত ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করা হল-মহিলারা কিভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন-“খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৪)
উপরে মহিলাদের নামায সম্পর্কে দু’জন সাহাবীর যে মত বর্ণিত হল, আমাদের জানা মতে কোন হাদীসগন্থের কোথাও একজন সাহাবী থেকেও এর বিপরীত কিছু বিদ্যমান নেই।
রাসূল সা. থেকে সাহাবায়ে কিরাম যে, দ্বীন শিখেছেন তাদের কাছ থেকে তা শিখেছেন তাবেয়ীগণ। তাঁদের ফাতওয়া থেকেও এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে,”মহিলাদের নামায পুরুষের নামায থেকে ভিন্ন। নিম্নে তাঁদের মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকজনের ফাতওয়া উল্লেখ করা হবে।

★★তাবেয়ীগনের ফতোয়া
১/
2486- حدثنا هشيم،قال : أخبرنا شيخ لنا،قال : سمعت عطاء؛سئل عن المرأة كيف ترفع يديها في الصلاة؟قال : حذوثدييها(مصنف ابن ابى شيبه،كتاب الصلاة،باب من كانيت مالتكبير و لاينقصه في كل رفع وخفض،)
হযরত আতা বিন আবী রাবাহ কে জিজ্ঞেস করা হল-“নামাযে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে?” তিনি বললেন-“বুক বরাবর”। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,-১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৬)
২/
2489- حدثنا محمد بن بكر،عن ابن جريج،قال : قلت لعطاء : تشير المرأة بيديها بالتكبير كالرجل؟قال : لا ترفع بذلك يديها كالرجل،و أشارف خفض يديه جدا،وجمعهما إليه جدا،وقال : إن للمرأة هيئة ليستل لرجل،وإن تركت ذلك فلاحرج.
হযরত ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন-“আমি আতা বিন আবী রাবাহকে জিজ্ঞেস করলাম-“মহিলা তাকবীরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবে?” তিনি বললেন-“মহিলা পুরুষের মত হাত তুলবেনা। এরপর তিনি তার উভয় হাত (পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথ খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন-মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন। তবে এমন না করলেও অসুবিধা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৯, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদিস নং-৫০৬৬,৬২৫১)
৩/
2796- حدثنا جرير،عن ليث،عن مجاهد؛أنه كان يكره أن يضع الرجل بطنه على فخذيه إذا سجد كماتصنع المرأة.
হযরত মুজাহিদ বিন জাবর রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি পুরুষের জন্য মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৮৯৬)
৪/
2487- حدثنا رواد بن جراح،عن الأوزاعي،عن الزهري،قال : ترفع يديهاحذ ومنكبيها.
হযরত যুহরী রহ. বলেন-“মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদীস নং-২৪৮৭)

৫/
5068 –عبد الرزاق عن معمر عن الحسن و قتادة قالا إذا سجدت المرأة فإنها تنضم مااستطاع تولا تتجاف ىلكيلاترفع عجيزتها
হযরত হাসান বসরী ও কাতাদা রহ. বলেন-“মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দিবেনা যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে”। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৬৮, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩)
৬/
2795- حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِِ،عَنْ مُغِيرَةَ،عَنْ إبْرَاهِيمَ،قَالَ : إذَا سَجَدَتِ الْمَرْأَةُ فَلْتَضُمَّ فَخِذَيْهَا،وَلْتَضَعْ بَطْنَهَاعَلَيْهِمَا.(مصنف ابن ابى شيبة،كتاب الصلاة،في المرأة كَيْفَ تَجْلِسُ فِي الصَّلاَةِ،رقم الحديث-2795)
হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন-মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৫)
৭/
5071 –عبد الرزاق عن معمر و الثور يعنمنصورعن إبراهيمرقال كانت تؤمرالمرأة أن تضع ذراعها و بطنها على فخذيها إذا سجد تولا تتجافى كما يتجافى الرجل لكيلا ترفع عجيزتها
হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. আরো বলেন-“মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখে। যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৭১)

৮/
2799- حَدَّثَنَا إسْمَاعِيلُابْنُ عُلَيَّةَ،عَنْ مُحَمَّدِبْنِ إِسْحَاقَ،عَنْ زُرْعَةَبْنْ إِبْرَاهِيمَ،عَن خَالِدِ بْنِ اللَّجْلاَجِ،قَالَ : كُنَّ النِّسَاءُ يُؤْمَرْنَ أَنْ يَتَرَبَّعْنَ إذَا جَلَسْنَ فِي الصَّلاَةِ،وَ لاَ يَجْلِسْنَ جُلُوسَ الرِّجَالِ عَلَى أَوْرَاكِهِنَّ،يُتَّقي ذَلِكَ عَلَى الْمَرْأَةِ،مَخَافَةَ أَنْ يَكُونَ مِنْهَاالشَّيءُ.
হযরত খালেদ বিন লাজ্জাজ রহ. বলেন-“মহিলাদেরকে আদেশ করা হত যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে। আবরণযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনি করতে হয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩, হাদিস নং-২৭৯৯)
উল্লেখিত বর্ণনাগুলি ছাড়াও আয়িম্মায়ে তাবেয়ীনের আরো কিছু বর্ণনা এমন আছে যা মহিলা-পুরুষের নামাযের পার্থক্য নির্দেশ করে। পক্ষান্তরে একজন তাবেয়ী থেকেও এর বিপরীত বক্তব্য প্রমাণিত নয়।

★★চার ইমামের ফিক্বহের আলোকেঃ
ফিক্বহে ইসলামীর চারটি সংকলন মুসলিম উম্মাহর মাঝে প্রচলিত। যথা-
১-ফিক্বহে হানাফী
২-ফিক্বহে শাফেয়ী
৩-ফিক্বহে মালেকী
৪-ফিক্বহে হাম্বলী
এবার দেখুন এই চার ফিক্বহের ইমামদের মতামত।
★১-ফ্বিকহে হানাফী
*****************
احب الينا ان تجمع رجليها من جانب و لا تنتصب انتصاب الرجل، (كتاب الآثار-1/609)
ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর অন্যতম সাগরীদ ইমাম মুহাম্মদ রহঃ বলেন-“ আমাদের নিকট পছন্দনীয় হল, মহিলারা নামাযে উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবে। পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেনা। {কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মদ রহঃ-১/৬০৯}
روى امامنا الأعظم عن نافع عن ابن عمر رضى الله عنهما أنه سئل كيف كان النساء يصلين على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم؟قال كنيترب عنأمرنأنيحتفزن،
أخرجه أبو محمد الحارثىوالأشنانى و ابن خسر و من طريقه عن سفيان الثورى عنه،راجع جامع الماسانيد-1/400،وهذاأقوىواحسنماروىفىهذاالباب،ولذااحتجبهامامناوجعلهمذهبهوأخذبه،
আমাদের ইমামে আজম আবু হানীফা রঃ নাফে রহঃ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-“হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ কে জিজ্ঞেস করা হল-“রাসূল সাঃ এর যুগে মহিলারা কিভাবে নামায পড়তেন?” তিনি বললেন-“আগে তারা চারজানু হয়ে বসতেন, পরে তাদেরকে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে”। {জামেউল মাসানিদ-১/৪০০}
উক্ত হাদিসটি এ বিষয়ে বর্ণিত সবকিছুর চেয়ে শক্তিশালী। এ কারণেই আমাদের ইমাম এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। এ অনুযায়ী আমল করেছেন। এবং এটিকে নিজের মাযহাব বানিয়েছেন। {কিতাবুল আসার এর টিকা-১/৬০৭}
মহিলাদের ক্ষেত্রে পার্থক্যের বর্ণনা হানাফী ফিক্বহের কিতাবে দেখুন-
১-বাদায়িউস সানায়ে-১/৪৬৬
২-হেদায়া-১/১০০-১১০
৩-আল মাবসূত লিস সারাখসী-১/৪৬৬
৪-ফাতওয়ায়ে শামী-১/৫০৪
৫-ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৭৩-৭৫

★২-ফিক্বহে শাফেয়ী
----------------
( قال الشافعي ) و قد أدب الله تعالى النساء بالاستتار و أدبهن بذلك رسوله صلى الله عليه و سلم و أحب للمرأة في السجود أن تضم بعضها إلى بعض و تلصق بطنها بفخذيها و تسجد كأستر ما يكون لها و هكذا أحب لها في الركوع و الجلوس و جميع الصلاة أن تكون فيها كأستر ما يكون لها (كتاب الأم،باب الذكر في السجود)
ইমাম শাফেয়ী রহঃ বলেন-“আল্লাহ পাক মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তার রাসূল সাঃ ও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দীয় হল-সেজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গ মিলিয়ে রাখবে। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। আর সেজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের চূড়ান্ত হেফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবে যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাযত হয়। {কিতাবুল উম্ম-১/১৩৮}

★৩-ফিক্বহে মালেকী
---------------
মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফক্বীহ ইমাম আবুল আব্বাস আল কারাফী রঃ ইমাম মালিক রহঃ এর মত উল্লেখ করেন-
و أما مساواة النساء للرجال ففي النوادر عن مالكتضعف خذهاال يمنىع لى اليسىوتنضم قدر طاقتها و لاتفرج في ركوع و لاسجود و لاجلوس بخلاف الرجل
নামাযে মহিলা পুরুষের মত কিনা? এ বিষয়ে ইমাম মালিক রহঃ থেকে বর্ণিত। মহিলা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে। রুকু সেজদা ও বৈঠকে কোন সময়ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবেনা। পক্ষান্তরে পুরুষের পদ্ধতি হল ভিন্ন। {আয যাখীরা-২/১৯৩}

★৪-ফিক্বহে হাম্বলী
---------------
ইমাম আহমদ রহঃ এর ফাতওয়া উল্লেখ আছে ইমাম ইবনে কুদামা রহঃ এর আল মুগীনী কিতাবে।
فأما المرأة فذكر القاضي فيها روايتين عن أحمدإحداهماترفع لماروىالخلال بإسناده عن أم الدرداء و حفصة بنت سيرين أنهما كانتا ترفع ان أيديهما و هو قول طاوس ولأن منشرع في حقه التكبير شرع في حقه. الرفع كالرجل فعلى هذا ترفع قليلا قال أحمد رفع دون الرفع و الثانية لايشرع لأنه فيمعن ىالتجافي ولايشرع ذلك لهابلتجع نفسهافي الركوع و السجود و سائر صلاتها
তাকবীরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে কি উঠাবে না? এ বিষয়ে কাজী [আবু ইয়াজ] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ থেকে দু’টি মত উল্লেখ করেছেন। প্রথম মত হল হাত উঠাবে। কেননা খাল্লাল হযরত উম্মে দারদা এবং হযরত হাফসা বিন সীরীন থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন যে, তারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউসের বক্তব্যও তাই। উপরন্তু যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে হাত উঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে। এ হিসেবে মহিলারাও হাত উঠাবে। তবে সামান্য। আহমাদ রহঃ বলেন-“তুলনামূলক কম উঠাবে”।
দ্বিতীয় মত হল-“মহিলাদের জন্য হাত উঠানোরই হুকুম নাই। কেননা হাত উঠালে কোন অঙ্গকে ফাঁক করতেই হয়, অথচ মহিলাদের জন্য এর বিধান দেওয়া হয়নি। বরং তাদের জন্য নিয়ম হল রুকু সেজদাসহ পুরো নামাযে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবে। {আল মুগনী-২/১৩৯}

আলোচনার এই পর্যায়ে হাদীস, আসারে সাহাবা, তাবেয়ীন ও চার মাযহাবের ইমামদের ঐক্যমত্যের প্রমাণ পেশ করার পর আমরা দেখবো আমাদের যে গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা মহিলাদের নামাযের ভিন্ন বিষয়টিকে উপেক্ষা করেন এবং পুরুষ ও মহিলার নামাযের অভিন্ন পদ্ধতির পক্ষে কথা বলেন, তাদের আলেমগণ এ বিষয়ে কি বলেন? তারা কি ফাতওয়া দিয়েছেন?
গায়রে মুকাল্লিদ আলেমগণের ফাতওয়া
মহিলাদের নামাযের পদ্ধতিতে ইতোপূর্বে যা কিছু উল্লেখ করা হল তথা হাদিস, আসারে সাহাবা, তাবেয়ীনদের ইজমা, এবং চার ইমামের ঐক্যমত্বের আলোকে যুগ যুগ ধরে অবিচ্ছন্ন সূত্র পরম্পরায় যেই পার্থক্যের আমল চলে আসছে, সেটাকে গায়রে মুকাল্লিদদের নেতৃস্থানীয় আলেমগণও স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং সেই আলোকে ফাতওয়া দিয়েছেন।
# মাওলানা মুহাম্মদ দাউদ গযনবী রঃ এর পিতা আল্লামা আব্দুল জাব্বার গযনবী রহঃ কে যখন জিজ্ঞেস করা হল-“মহিলাদের নামাযে জড়সড় হয়ে থাকা কি উচিত?” জবাবে তিনি একটি হাদিস উল্লেখ করার পর লেখেন-“এর উপরই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের চার মাযহাব ও অন্যান্যের মাঝে আমল চলে আসছে”।
এরপর তিনি চার মাযহাবের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করার পর লিখেন-“মোটকথা মহিলাদের জড়সড় হয়ে নামায পড়ার বিষয়টি হাদীস ও চার মাযহাবের ইমামগণ ও অন্যান্যের সর্বসম্মত আমলের আলোকে প্রমাণিত। এর অস্বিকারকারী হাদীসের কিতাবসমূহ ও উম্মতে মুসলিমার সর্বসম্মত আমল সম্পর্কে বেখবর ও অজ্ঞ”। (ফাতওয়ায়ে গযনবীয়্যা-২৭-২৮, ফাতওয়ায়ে ওলামায়ে আহলে হাদিস—৩/১৪৮-১৪৯, মাযমুয়ায়ে রাসায়েল-মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর-১-৩১০-৩১১)
মাওলানা আলী মুহাম্মদ সাঈদ সাহেব “ফাতওয়ায়ে ওলামায়ে আহলে হাদিস” এ এই পার্থক্যের কথা স্বীকার করেছেন। (মাজমুয়ায়ে রাসায়েল-১/৩০৫)

মহিলাদের নামাযের পার্থক্য সংক্ষেপে।

 ১. তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠানো।

 (তাবারানী কাবীর ২২ : ১৯)

 ২. হাত কাপড়ের ভিতর হতে বের না করা।

(তিরমিযী, হাঃ নং ১১৭৩)

 ৩. হাত বুকের উপর রাখা।

(শামী, ১ : ৪৮৭)

 ৪. আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের উপর স্বাভাবিকভাবে রাখা। পুরুষদের মত বাম হাতের কব্জি না ধরা।

 (ফাতাওয়া রাহীমিয়া, ৭ : ২২২)

 ৫. রুকুতে পুরুষদের তুলনায় কম ঝুঁকা।

 (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাঃ নং ৫০৬৯)

 ৬. রুকুতে উভয় বাহু পাঁজরের সঙ্গে পরিপূর্ণ মিলিয়ে রাখা।

 (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাঃ নং ৫০৬৯)

 ৭. রুকুতে উভয় হাত হাঁটুর উপর স্বাভাবিক রাখা এবং হাতের আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে রাখা। পুরুষদের ন্যায় আঙ্গুল ছড়িয়ে হাঁটু না ধরা।

 (ত্বাহত্বাবী, ২১৫)

 ৮. রুকুতে উভয় পায়ের গোড়ালী পরিপূর্ণ মিলিয়ে রাখা।

(শামী, ১ঃ ৫০৪)

 ৯. অত্যন্ত জড়সড় ও সংকুচিত হয়ে সিজদা করা।

 (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাঃ নং ৫০৬৯)

 ১০. সিজদায় পুরুষদের ন্যায় কনুইদ্বয় খোলা ও ছড়িয়ে না রাখা।

 (মারাসীলে আবী দাউদ, হাঃ নং ৮৭)

 ১১. উভয় রানের সঙ্গে পেট মিলিয়ে রাখা।

 (মারাসীলে আবী দাউদ, হাঃ নং ৮৭)

 ১২. বাহুদ্বয় সাধ্যানুযায়ী পাঁজরের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা।

 (মারাসীলে আবী দাউদ, হাঃ নং ৮৭)

 ১৩. উভয় কনুই সাধ্যমত মাটিতে মিলিয়ে রাখা।

 (মারাসীলে আবী দাউদ, হাঃ নং ৮৭)

 ১৪. সিজদায় উভয় পা খাড়া না রাখা, বরং ডান দিক দিয়ে উভয় পা বের করে মাটিতে বিছিয়ে রাখা এবং উভয় পায়ের আঙ্গুলসমূহ যথাসম্ভব কিবলামুখী করে রাখা।

(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাঃ নং ২৭৮১, ২৭৯২)

 ১৫. বৈঠকের সময় বাম নিতম্বের উপর বসা।

 (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৩ : ১৩৯)

 ১৬. এবং উভয় পা ডান দিকে দিয়ে বের করে কিবলামুখী করে মাটিতে বিছিয়ে রাখা।

(আল ইস্তিযকার, ১ঃ ৪৮০)

 ১৭. বৈঠকের সময় হাতের আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে হাঁটু বরাবর রাখা।

 (মুসানাফে ইবনে আবী শাইবা, হাঃ নং ২৭৮৫)

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে লা মাযহাবিদের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার ও হক বুঝার তাওফিক দিন, আমীন।

মাল্টিলেভেল_মার্কেটিং,

#মাল্টিলেভেল_মার্কেটিং_এর_শর‌য়ী_বিধান


এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং নামে পরিচিত ব্যবসা পদ্ধতিটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে বিদ্যমান। অবশ্য দেশ ও এলাকাভিত্তিক এ পদ্ধতিকে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হয়। যেমনঃ কেউ কেউ বলে ডাইরেক্ট মার্কেটিং সিস্টেম, আবার কেউ কেউ বলে টিমওয়ার্ক মার্কেটিং সিস্টেম, কেউ বা ফ্রিডম এন্টারপ্রাইজ, কেউ বলে হোম বেইজ মার্কেটিং, কেউ বলে হলিডে বিজনেস ইত্যাদি ইত্যাদি।

এমএলএম এর আবিস্কার

১৯৪০ সালে আমেরিকার একজন কেমিস্ট ডাঃ কার্ল রেইন বোর্গ কর্তৃক সর্বপ্রথম প্রবর্তিত হয় এ পদ্ধতিটি। তার কোম্পানীর নাম ছিল ক্যালিফোর্নিয়া ভিটামিন কোম্পানী। ১৯৪০ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১২৫টিরও বেশি দেশে প্রায় ১২৫০০ এর বেশি কোম্পানীর অধীনে প্রায় ৩০ কোটিরও বেশি ডিষ্ট্রিবিউটর কাজ করছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে এমএলএম পদ্ধতিতে পরিচালিত বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমনঃ ডেসটিনি-২০০০ লিঃ, সেপ প্রাঃ লিঃ, ড্রিম বাংলা, নিউওয়ে বাংলাদেশ, আল-ফালাহ কমিউনিকেশন বিজনেস, ডটকম শ্যাকলী, ট্যাংচং এফ.আই.সি, আয়্যমওয়ে কর্পোরেশন, জিজি এন, মডার্ণ হারবাল ফুডস প্রাঃ লিঃ, মেরিকে কসমেটিক ইত্যাদি। তন্মধ্যে ডেসটিনি-২০০০ লিঃ ও এফ.আই.সি. উল্লেখযোগ্য।

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ইসলামের দৃষ্টিতে কতটুকু বৈধতার দাবি রাখে এ নিয়ে ইতোমধ্যে পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন প্রকার প্রবন্ধ-নিবন্ধ, বই-পুস্তক প্রকাশ ও যুক্তি-তর্ক শুরু হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় ইসলামের দৃষ্টিতে এমএলএম পদ্ধতি ব্যবসাটির বিধান সম্পর্কে কিছু লেখা সময়ের দাবি বলে মনে করি। প্রথমে বুঝা যাক এমএলএম ব্যবসাটির ধরণ বা পদ্ধতি কি? ও এমএলএম বা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কাকে বলে?

এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) এর রূপরেখা

এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) পদ্ধতি সম্পর্কে লেখা বিভিন্ন বইপত্র, কোম্পানীগুলোর নীতিমালা, ফরম ও পণ্য তালিকা, তাদের সেমিনারের বক্তব্য এবং সংশ্লিষ্ট লোকদের ব্যাখ্যাসমূহ থেকে এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) এর যে পরিচয় পাওয়া যায় তা হলোঃ-

১. এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং)পদ্ধতির প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের মাধ্যমে পরিবেশক নিয়োগ করে থাকে।

২. পরিবেশক হতে হলে তাদের থেকে তাদের নির্ধারিত মূল্যে পণ্য খরিদ করতে হয়।

৩. পণ্য খরিদ করা ছাড়া যেহেতু তাদের ডিষ্ট্রিবিউটর (পরিবেশক) হওয়া যায় না, এজন্য তাদের কর্মীবাহিনীর উপাধি হল ক্রেতা-পরিবেশক।

৪. কোম্পানীর পরিবেশক হওয়ার পর সে যদি কোম্পানীর নিয়মে দু’জনকে ক্রেতা-পরিবেশক বানায় তাহলে এর বিনিময়ে সে কোম্পানী হতে কমিশনের নামে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পায়। এরপর এ দু’ব্যক্তি যদি আরো চারজনকে ক্রেতা-পরিবেশক বানায় তাহলে এ দু’ব্যক্তি ও প্রথমোক্ত ব্যক্তি কমিশন পাবে। এভাবে দু’দিকের নেটওয়ার্ক যতই দীর্ঘ হবে ততই উপরের লোকদের কমিশন বাড়তে থাকবে।

৫. চার নম্বরে বর্ণিত নেট সিস্টেমটিই হল এমএলএম এর মূল বৈশিষ্ট। পুঁজি ছাড়া রুজী এর উপরই তাদের প্রচারণার ভিত্তি। এ শ্রম ছাড়া বিনিময়ের আশায় লোকজন তাদের সাথে যোগ দেয়।

৬. মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতির মূল বৈশিষ্টে সব কোম্পানী একমত। তবে কোম্পানী ভেদে প্রত্যেকের নিয়মাবলী, কমিশন বন্টনের পদ্ধতি ও কমিশনের পরিমাণ ভিন্ন রকম।

৭. ডান ও বাম উভয় পার্শ্বের নেট না চললে কোন ব্যক্তি কমিশন পাবে না। যেমন কেউ যদি শুধু একজন ক্রেতা-পরিবেশক বানায় তাহলে সেও কমিশন পাবে না, তার উপরের স্তরের ব্যক্তিগণও কমিশন পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে না।

ডেসটিনি-২০০০ লিঃ কর্তৃক প্রকাশিত “বিক্রয় ও বিপণন পদ্ধতি” পুস্তিকা থেকে এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) এর পদ্ধতি নিম্নে তুলে ধরা ধরছি। উক্ত পুস্তিকার ১০ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ
মূল ধারণাটি হচ্ছে এ রকম, (ধরুণ আপনি) একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের পণ্য (৫০০-১০০০) পয়েন্ট ডেসটিনি-২০০০ লিঃ থেকে ক্রয়ের মাধ্যমে কোম্পানীর একজন সক্রিয় ক্রেতা-পরিবেশক হলেন। প্রাথমিকভাবে দু’জন ক্রেতা-পরিবেশক সৃষ্টির মাধ্যমে নিজস্ব সেলস টিম তৈরির প্রক্রিয়ায় কাজ করতে পারে। এরপর পরবর্তী ক্রেতা-পরিবেশকদ্বয়কে একইভাবে তাদের ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের ব্যাপারে সর্বাত্নক সহযোগিতা করতে পারবেন। এভাবে ১২ থেকে ১৩টি ধাপে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং টিম তৈরির কাজ করার পর ঐ সমস্ত ক্রেতা-পরিবেশকদের অধীনে গড়ে বাত্তসরিক ৪০০০ ক্রেতা-পরিবেশক সৃষ্টি করা সম্ভব।

উপরোক্ত পুস্তিকার ৯ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে-

যিনি ইচ্ছে করবেন তিনিই এ প্রতিষ্ঠানের একজন ক্রেতা-পরিবেশক হয়ে পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে এবং দলের অভ্যন্তরে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে পণ্য বিপণনে অংশগ্রহণ করে বিক্রিত লভ্যাংশের অংশীদার হতে পারবেন। অন্তত একবার পণ্য ক্রয় করা ছাড়া কিংবা অন্য ডিষ্ট্রিবিউটর থেকে তার ডিলারশীপ যোগ্যতা ক্রয় বা হস্তান্তর করা ছাড়া আপনার পক্ষে এখানকার ডিষ্ট্রিবিউটর হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

সহজ করে বুঝার জন্য বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত “ইসলামের দৃষ্টিতে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ব্যবসা” বই হতে ছক আকারে বিষয়টি তুলে ধরা হল।

----------------------------------------A
১ম লেভেল ----------B----------------------------------C
২য় লেভেল ---D-----------E-------------------F-------------G
৩য় লেভেল --H-I---------J-K-----------------L-M----------N-O
৪র্থ লেভেল PQ-RS--TU-VW--XY-Z AB-- BC CD-- DE EF

পূর্বের ছকটির আলোকে ধরা যাক, একটি কোম্পানী নির্ধারিত পণ্য বিক্রয়ের উপর নিম্ন হারে কমিশন দিয়ে থাকে।A নামক এক ব্যক্তি যখন B ও C নামের দু’ব্যক্তিকে ক্রেতা-পরিবেশক বানাল তখন সে পেল ৬০০ টাকা। এরপর ২য় লেভেলের ৪ জন যোগ হওয়ায় প্রথম ব্যক্তি (A) পেল ১২০০ টাকা। আর B ও C প্রত্যেকে পেল ৬০০ টাকা করে ১২০০ টাকা। এরপর ৩য় লেভেলের ৮ জন (২য় লেভেলের ব্যক্তিদের মাধ্যমে) কোম্পানীর ক্রেতা-পরিবেশক হওয়ায় প্রথম ব্যক্তি পেল আরো ৩৬০০ টাকা এবং ২য় (১ম লেভেল-B ও C ) ২ জনের প্রত্যেকে পেল ১২০০ টাকা করে ২৪০০ টাকা। আর ২য় লেভেলের ৪ জনের প্রত্যেকে পেল ৬০০ টাকা করে ২৪০০ টাকা। এরপর ৪র্থ লেভেলের ১৬ জন (৩য় লেভেলের লোকদের মাধ্যমে) ক্রেতা-পরিবেশক হওয়ায় ১ম ব্যক্তি A পাবে ৭২০০ টাকা, ২য় ২ জনের (১ম লেভেলের B ও C) প্রত্যেকে পাবে ৩৬০০ টাকা করে ৭২০০ টাকা, ২য় লেভেলের ৪ জনের প্রত্যেকে পাবে ৬০০ টাকা করে ২৪০০ টাকা, ৩য় লেভেলের ৮ জনের প্রত্যেকে পাবে ৬০০ টাকা করে ৪৮০০ টাকা।
(উল্লেখ্য এখানে টাকার অংক উদাহরণস্বরূপ দেখানো হয়েছে যা প্রতিষ্ঠানভেদে ব্যতিক্রম হতে পারে)। সূত্র- বেফাক।

এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা হারাম ও নাজায়েজ

এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) কারবারে শরীয়ত নিষিদ্ধ অনেকগুলো বিষয় যুক্ত হওয়ার কারণে উক্ত পদ্ধতির ব্যবসাটি সম্পূর্ণরূপে নাজায়েজ ও হারাম। যেমন এতে রয়েছেঃ-
১. শর্তসহ ইজারা চুক্তি
২. শর্তসহ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি
৩. ধোকা বা গারার
৪. শ্রমবিহীন বিনিময়
৫. বিনিময়বিহীন শ্রম
৬. জুয়া বা কেমার
৭. সুদের সন্দেহ
৮. বিদেশী পণ্য দ্বারা বাজার প্রভাবিতকরণ।

উক্ত বিষয়গুলো শরীয়ত নিষিদ্ধ। নিম্নে এক একটি করে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হল।

শর্তসহ ইজারা চুক্তি

উল্লিখিত বর্ণনা ও উদ্ধৃতি দ্বারা বুঝা গেল কোম্পানী শুধু পণ্য বিক্রি করছে না, সাথে সাথে ক্রেতা-পরিবেশকও হয়ে যাচ্ছ। অপরদিকে কেউ যদি পরিবেশক বা ডিলার হতে চায় তাহলে সে ডিলার হতে পারছে না। ডিলার হওয়ার জন্য পণ্য কিনা শর্ত। তাদের ভাষায় ডিলার/পরিবেশক/ডিষ্ট্রিবিউটর বা অন্য কোন নাম হলেও ফিকাহ শাস্ত্রের ভাষায় মূলত ঐ ব্যক্তি আজির বা দালাল এর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরণের ডিষ্ট্রিবিউটর নিয়োগকে ইসলামী ফিকাহর ভাষায় “আকদে ইজারা” বা ইজারা চুক্তি বলা হয়। ইজারা চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য পণ্য ক্রয় (عقد بيع) শর্ত করা হল। এখানে এক চুক্তির মাধ্যমে দুই চুক্তি হয়ে গেল। যাকে হাদীস ও ফেকাহ শাস্ত্রের ভাষায় صفقتان في صفقة“ এক চুক্তির মাঝে দুই চুক্তি” বলা হয়। এই ধরণের কারবার হাদীসের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত হওয়ার কারণে নাজায়েজ। নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস অনুবাদসহ উল্লেখ করা হল।

نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن صفقتين في صفقة واحدة. رواه أحمد في مسنده ج1 ص398 ، وقال الهيثمي في مجمع الزوائد ج4 ص48 رجال أحمد ثقات.
একই চুক্তিতে দুটি চুক্তি করা থেকে নবীজী (সাঃ) নিষেধ করেছেন। মুসনাদে আহমদ, খন্ড১, পৃঃ৩৯৮।

ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে আরেকটি হাদীসে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী (সাঃ) ইরশাদ করেন-
لا تحل صفقتان في صفقة. رواه الطبراني في المعجم الأوسط ج1 ص32 وابن خزيمة في صحيحه برقم 176
একই আকদে দুই আকদ করা হালাল নয়। তাবারানী খন্ড১, পৃঃ৩২, ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ১৭৬।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন-
صفقتان في صفقة ربا. أخرجه ابن أبي شيبة ج8 ص192 ، وإسناده صحيح. إرواء الغليل ج5 ص148
একই আকদে দু’টি আকদ করা এক প্রকার সুদ। ইবনে আবী শায়বা, খন্ড৮, পৃঃ১৯২।

تفسد الإجارة بالشروط المخالفة لمقتضى العقد ، فكل ما أفسد البيع مما مر يفسدها. الدر المختار ج3 ص46
আকদে ইজারার প্রাসঙ্গিক নয় এমন শর্তারোপে ইজারা ফাসিদ হয়। তাই পূর্বে বিবৃত যে সব বিষয় বেচাকেনা চুক্তি তথা আকদে বাইকে ফাসিদ করে দেয় সেগুলো ইজারা চুক্তিকেও ফাসিদ করে দেয়। (দুররুল মোখতার, খন্ড৩ পৃঃ৪৬)।

একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোম্পানী কর্তৃক ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটর তথা দালাল নিযুক্তির সাথে কোম্পানী থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য ক্রয়ের শর্তারোপ সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক একটি শর্ত। তাছাড়া এতে রয়েছে বিক্রেতা পক্ষ বা কোম্পানীর স্বার্থ। তাই এ শর্তের কারণে ইজারা চুক্তিটি ইসলামী শরীয়ার দৃষ্টিতে ফাসিদ বলে গণ্য হবে। এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।

শর্তসহ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি

মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে যেমন রয়েছে শরীয়ত নিষিদ্ধ শর্তসহ ইজারা চুক্তি (إجارة مع العقد) তেমনি রয়েছে শর্তসহ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি (بيع مع الشرط)।

ক্রয়-বিক্রয়ের মূলনীতি হল, ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে যদি ক্রয়-বিক্রয় প্রসঙ্গ নয় এমন কোন শর্ত লাগানো হয় যাতে ক্রেতা বা বিক্রেতার স্বার্থ জড়িত থাকে তা বিক্রিত পণ্যের (তা প্রাণী জাতীয় হলে) স্বার্থ জড়িত থাকে তাহলে ক্রয়-বিক্রয় ফাসিদ হয়ে যায়। যেমন হেদায়া গ্রন্থ প্রণেতা এ মর্মে লিখেন-
كل شرط لا يقتضيه العقد وفيه منفعة لأحد المتعاقدين أو للمعقود عليه وهو من أهل الاستحقاق يفسده. الهداية ج3 ص34
যে শর্ত ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তির প্রাসঙ্গিক নয়, অথচ এতে ক্রেতা-বিক্রেতা কোন একজনের বা বিক্রিত পণ্যের (জীবজন্তু হওয়ার ক্ষেত্রে) স্বার্থ জড়িত থাকে তাহলে এরূপ শর্ত আকদে বাইকে (ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি) ফাসিদ করে দেয়। হেদায়া, খন্ড৩, পৃঃ৩৪।

এ মর্মে আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে-
نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن بيع وشرط. رواه الطبراني في المعجم الأوسط والحاكم في علوم الحديث كذا في نصب الراية ج4 ص17.
রাসূলুল্লাহ (সঃ) শর্তারোপ করে বেচা-কেনা থেকে নিষেধ করেছেন। তাবারানী আলমুজামুল আওসাত ও হাকিম উলুমুল হাদিস গ্রন্থে। নাসবুর রায়াহ গ্রন্থেও এরূপ বর্ণিত আছে। খন্ড৪ পৃঃ১৭।

মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর প্রচলিত ব্যবসা পদ্ধতিতে বিক্রেতার পক্ষ থেকে ডিলারশীপ পাওয়ার শর্তটি অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার সাথে সাথে ক্রেতার জন্য লাভজনক একটি শর্ত। তাই এ শর্তারোপের দরুণ ক্রয়-বিক্রয়টি অবশ্যই ফাসিদ, অবৈধ ক্রয়-বিক্রয় বলে গণ্য হবে।

ধোকা বা গারার

এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা নাজায়েজ হওয়ার আরেকটি কারণ হল ধোকা যার আরবী শব্দ গারার। হাদীস নিষিদ্ধ ধোকা বা গারার সম্বলিত হওয়ার কারণে এ পদ্ধতির ব্যবসা নাজায়েজ। ধোকা বা গারার এর সংজ্ঞা নিম্নে দেয়া হল।

ইমাম সারাখসী (রঃ) বলেন-
الغرر ما يكون مستور العاقبة
যার পরিণাম লুকায়িত (অস্পষ্ট) তাই গারার। কিতাবুল মাবসুত, খন্ড১২ পৃঃ১৯৪।

ইমাম কাসানী (রঃ) বলেন-
الغرر هو الخطر الذي استوى فيه طرف الوجود والعدم بمنزلة الشك
গারার হচ্ছে এমন একটি অনিশ্চয়তা যাতে হওয়া এবং না হওয়া উভয় দিকই সন্দেহের সাথে বিদ্যমান থাকে। বাদায়েউস সানায়ে, খন্ড৪, পৃঃ৩৬৬।

ইমাম সীরাজী (রঃ) বলেন-
الغرر من انطوى عنه أمره وخفي عليه عاقبته
পরিণাম অজানা থাকাই গারার। শরহুল মুহাযযাব, খন্ড৯ পৃঃ৩১০।

ইমাম ইবনুল আসীর জাযারী (রঃ) বলেন-
الغرر ما له ظاهر تؤثره وباطن تكرهه ، فظاهره يغر المشتري ، وباطنه مجهول.
যার এমন একটি প্রকাশ্য রূপ রয়েছে যা দ্বারা মানুষ এর প্রতি আকৃষ্ট হয়, কিন্তু এর মধ্যে এমন অদৃশ্য কারণ রয়েছে যে কারণে তা অস্পষ্ট। অতএব এর প্রকাশ্য রূপ ক্রেতাকে ধোকায় ফেলে। আর এক ভিতরের রূপ অজানা। জামেউল উসুল, খন্ড১ পৃঃ৫২৭।

ইমাম ইবনুল কাইয়ুম জাওযী (রঃ) বলেন-
بيع الغرر هو بيع ما لم يعلم حصوله أو لا يقدر على تسليمه أو لا يعرف حقيقة مقداره
বায়উল গারার ঐ কারবারকে বলা হয় যাতে পণ্য বা সেবা পাওয়া যাবে কিনা তা অনিশ্চিত অথবা চুক্তিভুক্ত ব্যক্তি নিজে তা যোগান দিয়ে অক্ষম অথবা যার পরিমাণ অজানা। যাদুল মাআদ, খন্ড৫ পৃঃ৭২৫।

উল্লেখিত সংজ্ঞাগুলো দ্বারা বুঝা যায়, হওয়া বা না হওয়ার অনিশ্চয়তার নামই হল ধোকা বা গারার। আর এটি যে কারবারে বিদ্যমান থাকবে সে কারবারই হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী নিষিদ্ধ হবে।

এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসানীতিতেও ধোকা বা গারার রয়েছে। কারণ তাদের নীতিমালা অনুযায়ী প্রথম ডিষ্ট্রিবিউটর লোকটি তার ডাউন লেভেল থেকে কমিশন লাভ করতে থাকবে। অথচ তার নিজের বানানো দু’ব্যক্তি ব্যতিত অন্যদের বিষয়টি সম্পূর্ণই অনিশ্চিত এবং অন্যের কাজের উপর নির্ভরশীল। কারণ তার নিচের নেটগুলোর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অগ্রসর না করলে লোকটি কমিশন পাবে না, যে কমিশনকে কেন্দ্র করে সে কোম্পানীর সাথে যুক্ত হয়েছে।

نقل أبراهيم الحربي أنه سئل عن الرجل يكتري الديك ليوقظه لوقت الصلاة ، لا يجوز ، لأن ذلك يقف على فعل الديك ، ولا يمكن استخراج ذلك منه بضرب ولا غيره ، وقد يصيح ، وقد لا يصيح ، وربما صاح بعد الوقت ، نقله الإمام شمس الدين بن قدامة المقدسي في الشرح الكبير على متن المغني ج3 ص319 (باب الإجارة)
ইবরাহীম হারবী (রঃ) বর্ণনা করেন, তাকে প্রশ্ন করা হলো ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে একটি মোরগ ভাড়া করে তাকে নামাযের সময় ঘুম থেকে সজাগ করার জন্য। তিনি উত্তর দিলেন- জায়েজ হবে না। কারণ এটা মোরগের মরজির ওপর নির্ভরশীল। তার থেকে মারপিট বা অন্য কোন পন্থায় আওয়াজ বের করা সম্ভব না। কোন সময় আওয়াজ করবে, আবার কখনো কখনো করবে না, কখনো বা নামাজের সময়ের পরে আওয়াজ করবে। শারহুল কাবীর, খন্ড৩ পৃঃ৩১৯।

সুতরাং এখানে যেমন মোরগ থেকে উপর্কৃত হওয়া অনিশ্চিত হওয়ার কারণে ইজারা চুক্তিটি নাজায়েজ হয়েছে, এমএলএম কারবারেও নীচের লেভেলের মাধ্যমে কমিশন পাওয়া অনিশ্চিত হওয়ার কারণে ইজারা চুক্তিটি নাজায়েজ হবে।

শ্রমবিহীন বিনিময়

এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) পদ্ধতির ব্যবসাটি নাজায়েজ হওয়ার আরেকটি কারণ হল এতে রয়েছে শ্রমবিহীন বিনিময় ও বিনিময়হীন শ্রম যা শরীয়ত সমর্থন করে না।

এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) পদ্ধতির নীতিমালায় রয়েছে যে, কোন ব্যক্তি নির্ধারিত মূল্যের পণ্য খরিদ করে ক্রেতা-পরিবেশক হওয়ার পর সে যদি দু’জন ক্রেতা কোম্পানীর জন্য নিয়ে আসে এবং তারা প্রত্যেকে আরো চারজঙ্কে এবং এ চারজন আরো আটজনকে কোম্পানীর সাথে যুক্ত করে তবে প্রথম ব্যক্তি এবং দ্বিতীয় লেভেলের দুই ব্যক্তি নিম্ন লেভেলের আট ব্যক্তি ক্রেতা-পরিবেশকের সুবাদেও কোম্পানী থেকে কমিশন পেয়ে থাকে।

অথচ এ আটজনের কাউকেই তারা (প্রথম ব্যক্তি এবং ২য় স্তরের দু’জন) কোম্পানীর সাথে যুক্ত করেনি, বরং সংশ্লিষ্ট কোম্পানীগুলোর আইন অনুযায়ী এরা কোম্পানীর সাথে যুক্ত হয়েছে এবং নির্ধারিত হারে কমিশন পাচ্ছে। বুঝা গেল এমএলএম কারবারে শ্রমবিহীন বিনিময় বিদ্যমান।

বিনিময়হীন শ্রম

এমনিভাবে এতে রয়েছে বিনিময়হীন শ্রম। কেননা, কোম্পানীর নীতিমালা অনুযায়ী কেউ যদি নির্ধারিত পয়েন্টের একজন ক্রেতা জোগাড় করে। কিন্তু আরেকজন জোগাড় করতে না পারে অর্থাৎ ডান ও বাম উভয় দিকের নেট না চলে, সে কমিশন পায় না। এমনিভাবে কেউ যদি দু’জন ক্রেতাও কোম্পানীকে এনে দেয়, কিন্তু তারা কোম্পানীর নির্ধারিত পয়েন্ট থেকে কম পয়েন্টের মালামাল খরিদ করে তাও ঐ ব্যক্তি কমিশন পায় না। যেমন ডেসটিনি-২০০০ লিঃ এবং সেপ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের নিয়ম অনুযায়ী একজন ব্যক্তিকে তার ডান এবং বাম উভয় পাশে দু’জনের নিকট নূয়নতম ৫০০ করে ১০০০ পয়েন্টের পণ্যের ক্রেতা আনতে হয়। যদি কেউ একজন ক্রেতার নিকট ৫০০ পয়েন্টের পণ্য বিক্রি করাল কিন্তু অন্যজন আনতে ব্যর্থ হল তবে এর জন্য লোকটি কোন কমিশন পাবে না। এমনিভাবে যদি কোন ক্রেতা-পরিবেশক উভয় পাশে ১০০ পয়েন্ট করে ২০০ পয়েন্ট পরিমাণ পণ্যের ২জন ক্রেতা কোম্পানীকে এনে দেয় তবে ঐ ২০০ পয়েন্ট বিক্রির জন্য লোকটি কোম্পানী থেকে কমিশন পাবে না। কিন্তু ঐ দু’জন কোম্পানীর (অন্তর্বর্তীকালীন) পরিবেশক হিসাবে যুক্ত হয়ে তাদের নেট অগ্রসর করার সুযোগ পেয়ে যায়। সুতরাং এ কারবারে রয়েছে বিনিময়হীন শ্রম।

শ্রমবিহীন বিনিময় ও বিনিময়হীন শ্রম এ দু’টিই বাতিল পন্থায় উপার্জন। কেননা, আকদে ইজারার দু’টি মৌলিক দিক রয়েছে।
১ শ্রম
২ বিনিময়
এই দু’টি বিষয় সুস্পষ্ট থাকা এই আকদের অপরিহার্য শর্ত। দু’টির একটিও যদি পাওয়া না যায় তাহলে তা ফাসেদ হয়ে নিষিদ্ধ তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন
ولا تأكلوا أموالكم بينكم بالباطل
তোমরা বাতিল পন্থায় একে অন্যের সম্পদ খেয়ো না। সূরা বাকারা ১৮৮, সূরা নিসা ২৯।

বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং প্রখ্যাত তাবেঈ হযরত হাসান বসরী (রঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন
أن يأكله بغير عوض অর্থাৎ (বিনিময়ের শর্তযুক্ত আকদে) বিনিময়হীন উপার্জনই হল বাতিল পন্থায় উপার্জন। আহকামুল কুরআন, জাসসাসঃ ২/১৭২।

এমএলএম কারবার জুয়ার এক প্রকার

এমএলএম কারবার নাজায়েজ হওয়ার আরেকটি কারণ হলো এ পদ্ধতির ব্যবসাও এক প্রকার জুয়া। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রঃ) গারার এর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন-
الغرر هو مجهول العاقبة ، فإن بيعه من الميسر الذي هو القمار
যে কারবারের পরিণাম অজানা সে কারবার জুয়ার শামিল। তাকে কেমার বা মাইসির (জুয়া)ও বলা হয়। কুরআন পাকে আল্লাহতায়ালা জুয়াকে হারাম করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে-
إنما الخمر والميسر والأنصاب والأزلام رجس من عمل الشيطان فاجتنبوه
অর্থাৎ মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্রকার্য বৈ তো আর কিছু নয়। সুতরাং এগুলো থেকে বেঁচে থাক।
এমএলএম কারবারে যে ক্রেতা-পরিবেশক হবেন তিনি কোম্পানীর নীতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্যের দু’জন ক্রেতা যোগাড় করতে পারবেন কিনা? পরিণাম অনিশ্চিত, তাই জুয়ার সাদৃশ্য হয়ে হারাম হবে।

বাজার প্রভাবিতকরণ

এমএলএম নাজায়েজ হওয়ার আরেকটি কারণ বহির্শক্তি দ্বারা বাজার প্রভাবিতকরণ। এ ধরণের ব্যবসাগুলোর মূল উদ্দেশ্য পণ্য কেনা-বেচা নয়। আসল উদ্দেশ্য হলো কোম্পানীর ডিস্ট্রিবিউটর সেজে কোম্পানী থেকে সুযোগ-সুবিধা লাভ করা। অর্থাৎ কমিশন অর্জন করা। এ ধরণের কোম্পানীর নিকট পণ্যের গুণগতমান বিবেচ্য নয়। এবং এ নিয়ে তাদের প্রতিযোগিতায়ও পড়তে হয় না। বরং কমিশনের লোভ দেখিয়ে গুণগত বিষয় থেকে পার পেয়ে যায়। তাদের এ পদ্ধতি সহজেই বাজারের সাধারণ গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। এবং ক্রেতাগণ টাকার লোভে তাদের দিকে ঝুকে পড়ে। আর সাধারণ পদ্ধতিতে একজন ক্রেতা পণ্যের গুনাগুণ যাচাই করার সুযোগ পায় বিধায় পণ্য বিক্রেতাকে পণ্যের গুণাগুণের প্রতিযোগিতায় পড়তে হয়। এমএলএম পদ্ধতি এর বিপরীত। এ পদ্ধতিতে কমিশনের কারণে বাজার একপেশে হয়ে যায়। এবং পণ্যের গুণগতমান এবং ক্রেতার স্বাধীন যাচাই বাছাইয়ের সুবিধা হ্রাস পায় যা ইসলাম পছন্দ করে না। কারণ ক্রয়-বিক্রয় ও যাবতীয় চুক্তির ক্ষেত্রে ইসলামী নীতি হলো- বাজার নিয়ন্ত্রিত হবে পণ্যের গুণগতমান ও ক্রেতা-বিক্রেতার সরাসরি উপস্থিতিতে। অন্য কোন পন্থায় বাজার প্রভাবিত করা শরীয়তে নিষিদ্ধ। এ জন্যেই তো বাজারে প্রবেশের আগেই রাস্তায় গিয়ে বিক্রেতা থেকে পণ্য কিনে এনে বাজারে বিক্রয় করাকে এবং গ্রাম্য ব্যক্তির পক্ষ হয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করাকে শরীয়ত নিষেধ করেছে। হুজুর (সাঃ) ইরশাদ করেন-
أن النبي صلى الله عليه وسلم نهى أن يبيع حاضر لباد
হুজুর (সাঃ) শহুরে ব্যক্তিকে গ্রাম্য ব্যক্তির উকিল হয়ে বেচাকেনা করতে নিষেধ করেছেন। মুসলিম

نهى النبي صلى الله عليه وسلم أن يتلقى الجلب
হুজুর (সাঃ) কোন কাফেলা মালামাল নিয়ে শহরে প্রবেশ করার আগেই সেই মাল কেনার থেকে নিষেধ করেছেন। মুসলিম

সুদের সন্দেহ ও সাদৃশ্য

এমএলএম পদ্ধতি কারবার নাজায়েজ হওয়ার আরেকটি কারণ হল এতে শরীয়তে নিষিদ্ধ شبهة الربا বা সুদের সন্দেহ এবং সাদৃশ্য রয়েছে। অথচ এমন কারবার বর্জন করার সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে শরীয়তে। খলীফায়ে রাশেদ হযরত উমর (রাঃ) বলেন دعوا الربا والريبة তোমরা সুদ বর্জন কর এবং এমন জিনিসও বর্জন কর যাতে সুদের সন্দেহ রয়েছে। মুসনাদে ইমাম আহমদ ১/৩৬,৫০ হাদীস ২৪৬, ৩৫০। সুনানে ইবনে মাজা ২/৭৬৪ হাদীস ২২৭৪। এই উক্তি এবং শরীয়তের অন্যান্য দলীলের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম এমন বহু কারবারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন যেগুলোতে সুদের সন্দেহ ও সাদৃশ্য রয়েছে।

এমএলএম এ শুবহাতুর রিবা বা সুদের সাদৃশ্য

আলোচিত মাল্টিলেভেল বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতিতে শরীয়তে নিষিদ্ধ সুদের সন্দেহ ও সাদৃশ্য পরিস্কারভাবে বিদ্যমান যার দরুণ এ কারবার নাজায়েজ ও বর্জনীয়।

একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বুঝা যাক। মনে করি জাকের নামের এক ব্যক্তি ডেসটিনি-২০০০ লিঃ থেকে ১০,০০০ টাকা দিয়ে একটি পণ্য নিল (যার পয়েন্ট ৫০০) এবং নিয়ম অনুযায়ী সে ডিস্ট্রিবিউটরশীপ পেল এবং সে আরো দু’জন ক্রেতা জোগাড় করার মাধ্যমে কমিশন পেল ৬০০ টাকা। এরপর এ দু’জনের বানানো চার ব্যক্তির কারণে আরো পেল ১২০০ টাকা।(এরপর তো কমিশন ও বোনাস চালু থাকছেই)। বলা বাহুল্য, এ সকল সুবিধাই জাকেরকে উদবুদ্ধ করেছে এ কোম্পানীর পণ্য কিনতে। তাহলে দেখা যাচ্ছে সে ১০,০০০ টাকা শুধু ঐ পণ্যটির জন্য দেয়নি বরং তা দেওয়ার পিছনে তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ঐ কমিশন বা বোনাসগুলো পাওয়া। আর স্বভাবতই তা (পণ্য ও কমিশন) লোকটির দেওয়া টাকা থেকে বেশি যা পরিস্কারভাবেই সুদের সন্দেহ সৃষ্টি করে।

তাছাড়া এমএলএম প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতি ও বক্তব্য বিষয়টিকে আরো পরিস্কার করে তোলে। কোন একটি কোম্পানীর পণ্য তালিকা হাতে নিলেই দেখা যাবে তাতে পণ্যের নাম ও মূল্যের পাশাপাশি আরেকটি সংখ্যাও উল্লেখ রয়েছে যার নাম দেয়া হয়েছে পয়েন্ট। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি নির্ধারিত মূল্য প্রদান করলে সে শুধু পণ্যই পাচ্ছে না, পাচ্ছে নির্ধারিত সংখ্যার পয়েন্টও; যা তাকে পরবর্তীতে কমিশন পেতে সাহায্য করবে। এবং তার উপরের লেভেলের ব্যক্তিদেরকে প্রদান করবে নির্ধারিত কমিশন।

এখন যদি কেউ নেট চলার কারণে কমিশন পায় তাহলে বোঝা যাবে, নির্ধারিত টাকার মোকাবেলায় নেওয়া পণ্যের সাথে যে পরিবেশক স্বত্বটি সে পেয়েছে এটির ফলেই সে কমিশন পাচ্ছে, যা সুস্পষ্ট সুদ সাদৃশ্য। অন্যদিকে যদি কারো নেট একেবারেই অগ্রসর না হয় তবে সে ক্ষেত্রেও সুদের সন্দেহ থাকছেই। কারণ, সে তো টাকা দিয়েছিল দু’টি উদ্দেশ্যে।
১ পণ্যের জন্য
২ পরিবেশক হয়ে কমিশন পাওয়ার জন্য।
অথচ ২য়টির কোন সুবিধাই সে পায়নি। অর্থাৎ কিছু টাকা বিনিময়ের অতিরিক্ত থেকেই যাচ্ছে যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সন্দেহমূলক সুদ এর আওয়াভুক্ত হয়ে অবশ্যই নাজায়েজ ও বর্জনীয়।
উল্লেখ্য যে, কোন কোন এমএলএম কোম্পানী তাদের সদস্য হওয়ার জন্য পণ্য খরিদের পাশাপাশি নির্ধারিত সংখ্যক নগদ টাকা প্রদানেরও শর্ত করে থাকে। (যেমনঃ নিউওয়ে, ড্রিম বাংলা)। আর এ ক্ষেত্রে ঐ কারবারে সুদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। - সূত্র বেফাক।

কয়েকটি সন্দেহের নিরসন

আমাদের দেশের কতিপয় আলেম এমএলএম এর ব্যবসাকে বিভিন্ন বিষয়ের সাথে তুলনা করে জায়েজ বানানোর অপচেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্য কী? হয়তো তারা এর সাথে জড়িত হয়ে অনেক লাভবান হচ্ছেন, না হয় অন্যদের জড়িয়ে দিয়ে দেশের মানুষকে সাবলম্বি করে দেশকে দারিদ্রমুক্ত(!) করতে চাচ্ছেন, নয়তো বা শ্রমবিহীন রুজির প্রতি আকৃষ্ট কতে জংগণকে বেকারত্বের দিকে ঠেলে দেয়ার হীন চক্রান্তে লিপ্ত আছেন। তারাই ভাল বলতে পারবেন তাদের উদ্দেশ্যের কথা। আমার মনে হয়, যেখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় মুফতিয়ানে কেরাম এ পদ্ধতির ব্যবসাকে হারাম ফতোয়া দিচ্ছেন, সেখানে কিছু সংখ্যক স্বঘোষিত নামধারী মুফতীর এমএলএম এর ব্যবসাকে বৈধ বানানোর চেষ্টা তাদের দুনিয়াবী লিপ্সা ও ব্যক্তিগত স্বার্থ বৈ কিছুই নয়।

হাদীসে বর্ণিত ঝাড়ফুঁকের ঘটনার সাথে তুলনা

কেউ কেউ বিনাশ্রমে ইনকাম বা মুনাফার অংশিদার হওয়া বৈধতা প্রমাণ করতে গিয়ে বোখারী শরীফের কিতাবুল ইজারা থেকে একটি হাদীস পেশ করেন যে, সাহাবীদের একদল কোন এক সফরে ছিলেন। এক জায়গায় তাবু টানিয়েছেন। সেখানকার এক সরদারকে বিচ্ছু দংশন করেছিল। সরদারের লোকেরা সাহাবীদের জামাতের নিকট এসে বিষয়টি জানাল। এক সাহাবী সূরা ফাতিহা পড়ে ঝাড়ফুঁক করে একপাল বকরি অর্জন করল। সাহাবীদের কেউ কেউ বললেন, এগুলো বন্টন করো। কিন্তু যিনি ঝাড়ফুঁক করেছিলেন তিনি বললেন, এটি করব না যে পর্যন্ত না আমরা নবী (সাঃ) এর নিকট এ ঘটনা জানাই এবং লক্ষ করি তিনি আমাদেরকে কি হুকুম দেন। তারা এসে রাসূল (সাঃ) এর কাছে ঘটনা বর্ণনা করলেন। হুজুর (সাঃ) বললেন, তুমি কিভাবে জানলে যে সূরা ফাতিহাটি দোয়া? এরপর বললেন, তোমরা ঠিকই করেছ। বন্টন করো এবং তোমাদের সাথে আমার জন্য একটি অংশ রেখো।

উল্লেখিত ঘটনায় দেখা যায় একজন ঝাড়ফুঁক করলো আর সবাই মুনাফার অংশ নিল। এমনকি খোদ হুজুর (সাঃ) নিজেই তা নিয়ে দেখিয়ে দিলেন। সুতরাং শ্রম ছাড়া বিনিময় জায়েজ হওয়ার এটাই উজ্জল প্রমাণ।
উল্লেখিত যুক্তি একেবারেই নিরর্থক। এমএলএম এর কমিশনের সাথে বর্ণিত ঘটনার কোন রকম সাদৃশ্যতা নেই। কারণ, হাদীসের ঘটনায় একজনই ঝাড়ফুঁক করেছিল। যে ছাগপাল পেল সেগুলোর মালিক ঐ সাহাবীই। তিনি শ্রম দিয়েই তা অর্জন করেছেন।

এখানে একটু চুক্তিই হয়েছে। তা হলো চিকিত্তসার বিনিময়ে ছাগপাল। সবাই একসাথে ছিল বিধায় তাদেরকে খুশি করার জন্য ঐ সাহাবী ছাগপালগুলো সবার মধ্যে বন্টন করেছেন। আর কোরআনের আয়াত দ্বারা ঝাড়ফুঁক করে বিনিময় অর্জন করা জায়েজ প্রমাণ করার জন্য হুজুর (সাঃ) নিজেকে দেয়ার কথা বলেছেন। পক্ষান্তরে এমএলএম পদ্ধতির কারবারে কোম্পানীর নীতিমালার মধ্যে ইজারা চুক্তি সম্পাদন করার জন্য বিক্রি চুক্তিকে শর্ত রাখা হয়েছে। সুতরাং এমএলএম এর কমিশনের সাথে হাদীসের ঘটনার কোন প্রকার সামঞ্জস্য নেই।

কোন নির্দিষ্ট কাজের পুরস্কারের সাথে তুলনা

কেউ কেউ আবার কোরআনের আয়াত দ্বারাও এমএলএম এর কারবারকে বৈধ করার চেষ্টা করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে-
قالوا نفقد صواع الملك ولمن جاء به حمل بعير وأنا به زعيم
তারা বলল, আমরা বাদশাহর পানপাত্র হারিয়েছি এবং যে কেউ এনে দেবে সে এক উটের বোঝা পরিমাণ মাল পাবে এবং আমি এর জামিনদার হলাম।
সূরা ইউসুফ-৭২।

এ আয়াত দ্বারা এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, কোন নির্দিষ্ট কাজের মজুরী কিংবা পুরস্কার নির্ধারণ করে যদি এই মর্মে ঘোষণা দেয়া হয়, যে ব্যক্তি এ কাজ করে দেবে সে এই পরিমাণ মজুরী বা পুরস্কার পাবে। তবে তা জায়েজ হবে। যেমন অপরাধীদেরকে ধরার জন্য কিংবা হারানো বস্তু ফেরত দেয়ার জন্য এ ধরণের পুরস্কার সাধারণত প্রচলিত আছে।

والله اعلم بالصواب

Popular Posts

একটু চিন্তা করুন ।

                      أعوذ بالله من الشيطان الرجيم                           بسم الله الرحمن الرحيم                 সকল মুসলিম ভাই বোন ক...

Search This Blog

Followers