সত্যিকারের মিলাদুন্নবী পালন করতে হলে প্রতি সোমবার ‘রোজা’ রাখুন,

সত্যিকারের মিলাদুন্নবী পালন করতে হলে প্রতি সোমবার ‘রোজা’ রাখুন

প্রশ্নগুলোর জবাব ক্লিয়ার হওয়া দরকার।
.
১-
মিলাদুন্নবী (অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ সা: এর জন্ম বা জন্মদিবস) পালনকরার প্রবক্তা যারা, তাদেরকে প্রশ্ন করতে চাই যে, মিলাদুন্নবী (সা) কি পালনকরার বিষয়, নাকি আলোচনা করার বিষয়?
.
২-
যদি মিলাদুন্নবী (সা) পালনকরার বিষয় হয়, তাহলে আমার প্রশ্ন হল, পালনকরার পদ্ধতি কী? ইসলামী শরিয়তের চার দলিল (কুরান, হাদিস, ইজমা এবং ক্বিয়াস)’র কোনো একটি দ্বারা তা সুস্পষ্ট করা হউক।

আর যদি মিলাদুন্নবী আলোচনা করার বিষয় হয়, তাহলে সেটি নিজেদের মনগড়া সিস্টেম অনুসারে করবে, নাকি সাহাবায়ে কেরাম ও সালফে-সালেহীনের প্রদর্শিত সিস্টেম অনুসারে করা হবে?

যদি সাহাবায়ে কেরামের কিংবা সালফে-সালেহীনের প্রদর্শিত সিস্টেম অনুসারে মিলাদুন্নবী (সা)-আমল করতে হয়, তো তখন সহজেই প্রশ্ন আসবে যে, সাহাবায়ে কেরামের প্রদর্শিত মিলাদুন্নবী (সা)-এর আমলটি কেমন ছিল, পদ্ধতি কিভাবে? সহিহ দলিল সহ সুস্পষ্ট করলে মুসলিম বিশ্ব বিনাবাক্যে গ্রহণ করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
.
৩-
বর্তমানে মিলাদুন্নবী নামে যেটি সমাজে প্রচলিত রয়েছে তার সাথে সাহাবায়ে কেরামের প্রদর্শিত খাইরুল কুরূনের সেই মিলাদুন্নবী (সা)’র কোনো সামঞ্জস্যতা রয়েছে কি? সুস্পষ্ট ও সহিহ হাদিস দ্বারা তা প্রমাণ করতে হবে। নতুবা বর্তমান ফেতনার যুগে মিলাদুন্নবী নামে যা প্রচলিত রয়েছে তাকে খাইরুল কুরূনের সেই প্রকৃত মিলাদুন্নবীর সাথে যতভাবেই গুলিয়ে পেলা হউক—উম্মাহ’র কেউ তা গ্রহণ করবেনা, করার যুক্তিকতাও নেই।
.
৪-
মিলাদুন্নবী (সা) উপলক্ষে সহিহ মুসলিম শরিফে এতটুকু পাওয়া যায় যে, নবীপাক (সা) সোমবার রোজা রাখতেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা) তার কারণ জানতে চাওয়ায় নবিজি (সা) এরশাদ করেছেন : “এ দিবসে আমি পৃথিবীতে জন্ম লাভ করেছিলাম এবং পবিত্র কুরান আমার উপর এ দিবসেই নাযিল হয়েছিল।”

অতএব, হাদিসেপাকে মিলাদুন্নবী (সা) উপলক্ষে বিশেষ কিছু করণীয় থাকলে তা হল, বড়জোর সোমবার রোজা রাখা। এর মাধ্যমে নবীপাকের অনুকরণ আর অনুসরণে উনার জন্ম-মুবারকের প্রতি শুকরিয়া প্রকাশ করা হবে।

এ ছাড়া উম্মাহ’র জন্য যখন ইচ্ছে সর্বোত্তম পরিবেশে নবীপাক (সা)-এর জন্মালোচনা করবে এবং বিশুদ্ধ রেওয়ায়েতের মাধ্যমে উনার জন্মদিবসে প্রকাশিত অলৌকিক মু’জিযা সমূহ বর্ণনা করবে। এসব আমল করার দ্বারা যদি মিলাদুন্নবী আদায় না হয়, তাহলে কিভাবে করলে মিলাদুন্নবী আদায় হবে, তার সঠিক ও বিশুদ্ধ পদ্ধতি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণ করতে হবে। গায়ের জোরে কোনো আমল সাব্যস্ত হয়না, হতে পারেনা।
.
নবীপাক (সা) প্রতি সোমবার রোজা রাখার প্রমাণ.

ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﻤﺜﻨﻰ ﻭﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺑﺸﺎﺭ ﻭﺍﻟﻠﻔﻆ ﻻﺑﻦ ﺍﻟﻤﺜﻨﻰ ﻗﺎﻻ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺟﻌﻔﺮ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺷﻌﺒﺔ ﻋﻦ ﻏﻴﻼﻥ ﺑﻦ ﺟﺮﻳﺮ ﺳﻤﻊ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﻌﺒﺪ ﺍﻟﺰﻣﺎﻧﻲ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭﻱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺳﺌﻞ ﻋﻦ ﺻﻮﻡ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻗﺎﻝ ﺫﺍﻙ ﻳﻮﻡ ﻭﻟﺪﺕ ﻓﻴﻪ ﻭﻳﻮﻡ ﺑﻌﺜﺖ ﺃﻭ ﺃﻧﺰﻝ ﻋﻠﻲ ﻓﻴﻪ.

অর্থ সাহাবী হযরত আবু ক্বাতাদা আল-আনছারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবীজি (সাঃ)-কে সোমবারে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলিলেন “এ দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি বা প্রেরিত হয়েছি এবং এ দিনেই আমার ওপর কুরআন নাযিল শুরু হয়েছে।”

[সূত্র : সহিহ মুসলিম শরিফ, সিয়াম অধ্যায়; পৃষ্ঠা নং ৮২০, হাদিস নং ১১৬২; হযরত আবু ক্বাতাদা আল-আনছারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত]।
.
৫-
অনেকে প্রচলিত মিলাদুন্নবীর মৌলিকত্ব খাইরুল কুরূনের সময়ে বিদ্যমান ছিল বলে পবিত্র কুরান আর সহিহ হাদিস থেকে দাবি করতে চায়। অথচ তাদের এ দাবি কিছুতেই গ্রহনযোগ্য হতে পারেনা।

যদি প্রচলিত মিলাদুন্নবীর মৌলিকত্ব খাইরুল কুরূনের সময়ে বিদ্যমান থাকার দলিল কুরান হাদিসে থাকত, তাহলে আল্লামা সুয়ূতী সহ ইমাম হাইছামী, ইমাম সাখাবী ও ইবনে খালদূন প্রমুখ বিদ্যানগণ মিলাদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কেন??

বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও মুফাসসির, তাফসীরে জালালাইন কিতাবের রচয়িতা আল্লামা জালালুদ্দিন আস- সুয়ূতী (রহ) [মৃত ৯১১ হিজরী] “আল-হাভী লিল ফাতাওয়া” নামক কিতাবের অন্তর্গত ‘হুসনুল মাকছাদ ফী আমালিল মওলিদ’ নামক একটি পত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে লিখেছেন :

ﻭ ﺃﻭﻝ ﻣﻦ ﺃﺣﺪﺙ ﻓﻌﻞ ﺫﻟﻚ ﺻﺎﺣﺐ ﺇﺭﺑﻞ ﺍﻟﻤﻠﻚ ﺍﻟﻤﻈﻔﺮ ﺃﺑﻮ ﺳﻌﻴﺪ ﻛﻮﻛﺒﺮﻱ ﺑﻦ ﺯﻳﻦ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺑﻜﺘﻜﻴﻦ ﺃﺣﺪ ﺍﻟﻤﻠﻮﻙ ﺍﻷﻣﺠﺎﺩ ﻭ ﺍﻟﻜﺒﺮﺍﺀ ﺍﻷﺟﻮﺍﺩ ، ﻭ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺀﺍﺛﺎﺭ ﺣﺴﻨﺔ ، ﻭ ﻫﻮ ﺍﻟﺬﻱ ﻋﻤّﺮ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ﺍﻟﻤﻈﻔﺮﻱ ﺑﺴﻔﺢ ﻗﺎﺳﻴﻮﻥ .
.
অর্থাৎ …..সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাঃ পালনের সূচনা করেছেন তিনি ছিলেন ইরবলের বাদশাহ আবু সাঈদ মুজাফফর উদ্দিন কূকবরী ইবনে যাইনুদ্দী ইবনে বুকতকীন (মৃত ৬৩৫ হিজরী) ।তিনি অতিব প্রতাবশালী ও বড় দানবীর। তার সুন্দর সুন্দর কতেক কীর্তিও রয়েছে।
.
সুতরাং প্রমাণ হয়ে গেল, খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীকালের ইরাকি বাদশাহ মুজাফফর উদ্দিন এর পূর্বে মিলাদুন্নবী নামের কোনো আমল বিদ্যমান থাকার দাবি সঠিক নয়। অতএব মিলাদুন্নবী পালনকরা দ্বীনের মধ্যে নব প্রথা বৈ কিছু না।
.
মন্তব্য :

উপরের সবগুলো প্রশ্ন সামনে রাখলে যে কোনো বিবেকবান ব্যক্তি নির্দ্বিধায় বুঝে পেলবেন যে, প্রকৃতপক্ষে মিলাদুন্নবী নামে নতুন কোনো প্রথা বা নীতি-নিয়ম পবিত্র ইসলাম ধর্মে নেই। বর্তমানে যেটা প্রচলিত রয়েছে এটি খয়রাতি মোল্লাদের বানানো তো বটেই, উপরন্তু আগাগোড়াই ভেজালে মিশ্রিত।

ফলে এটি খাইরুল কুরূনের সেই মিলাদুন্নবীর মত থাকেনি। অর্থাৎ মুসলিম শরিফের হাদিস অনুসারে সোমবার দিবসে রোজা রাখা কিংবা যার যখন ইচ্ছে সর্বোত্তম পরিবেশে নবীপাক (সা)-এর জন্মালোচনা করা ও বিশুদ্ধ রেওয়ায়েতের মাধ্যমে উনার জন্মদিবসে প্রকাশিত অলৌকিক মু’জিযা সমূহ বর্ণনা করার মতো সত্যিকারের মিলাদুন্নবী নয় বর্তমান ফেতনার যুগের প্রচলিত মিলাদুন্নবী সিস্টেম। পরন্তু তার অভ্যন্তরে সংযোজিত কিয়ামের ইতিহাস আজ বা নাহি বললাম।

মিলাদুন্নবী পালন করা,

যারা কতিপয় আহলে হক্বের নাম ভেঙ্গে মিলাদুন্নবী পালনের বৈধতা সাব্যস্ত করতে চায়, তাদেরকে এ প্রশ্নগুলো করুন।

যারা মিলাদুন্নবী পালন করা জায়েজ বলে এবং কতিপয় হক্কানী পীর মাশায়েখের উদ্ধৃতি উল্লেখপূর্বক তার বৈধতার পক্ষে দলিল প্রদান করার চেষ্টা চালায়, আপনি তাদেরকে নিচের প্রশ্নগুলো করুন!

আমাদের কতিপয় মীলাদী এবং মীলাদী কিয়াম ওয়ালারা নিজেদের মীলাদী আমলের সাফাই গাইতে গিয়ে পূর্ববর্তী কতেক মান্যগণ্য পীর ফকীরদের নাম ভেঙ্গে প্রচার করে বলে যে, ভাই! উনাদের সম্পর্কে আপনাদের ফতুয়া কী হতে পারে একটু বলবেন কি? তার মানে এই যে, উনারাও তো মিলাদুন্নবীর আমল করেছিলেন!

অতএব মিলাদুন্নবীর আমাল যদি “বিদয়াত” হয় কিংবা মিলাদুন্নবী আমলকারীরা যদি বিদয়াতি হন; তাহলে তো উনারাও বিদয়াতি হবেন, তাই নয় কি?

হাজি এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মাক্কী, শাহ আব্দুর রাহিম দেহলবী ও আল্লামা জালালুদ্দিন আসসুয়ূতী রাহিমাহুমুল্লাহ উক্ত আসলাফদের অন্যতম, যাদের নাম ভেঙ্গে আধুনিক যুগের মীলাদীরা নিজেদের প্রচলিত মিলাদুন্নবী উদযাপন আর মীলাদী কিয়ামের সাফাই গাইতে শুরু করেন এবং উনাদের নাম ব্যবহার করে প্রচলিত ভিত্তিহীন মীলাদী আমলের শেষরক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা চালান।

আগেই জানিয়ে দিচ্ছি যে, নির্দিষ্টভাবে কোনো সময় বা দিবসকে উপলক্ষ করা ব্যতীত, সহীহ আকিদা আর সত্যের মাপকাঠি সাহাবায়ে কেরামের নমুনায় উজ্জীবিত হয়ে নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মালোচনা মুসতাহসান ও অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ এ ব্যাপারে আহলে হক্ব উলামায়ে মক্কী ওয়া মাদানি ওয়া দেওবন্দী সকলেই একমত। দেওবন্দের প্রখ্যাত ফকিহ ও মুজাদ্দিদ আল্লামা আশরাফ আলী থানভী (নাওয়ারাল্লাহ মারক্বাদাহু) উনি কত বড় সুন্নতে রাসূলের মূর্তপ্রতীক ছিলেন, তাঁরই রচনা “মুনাজাতে মাক্ববুল” আর “নশরুত্ত্বীব” ইত্যাদি তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

এখানে আমি সংক্ষেপে আহলে হক্বের নাম ঙেগে আধুনিক মিলাদীদের সেই সব জালিয়াতি মূলত উদ্ধৃতির অসারতা প্রমাণ স্বরূপ (তাদেরই উদ্দেশ্যে) বেশ কিছু প্রশ্ন করব, আশাকরি জবাব দেবেন।

১-
মিলাদুন্নবী মানে কী?

২-
মিলাদুন্নবী মানে যদি “নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম বা জন্মদিন” তাহলে সেটি উদযাপন কিংবা পালনকরার বিষয়, নাকি আলোচনার বিষয়?

৩-
যেসব আকাবীর ও হক্কানী পীর মাশায়েখের নাম ভেঙে মিলাদ কিয়ামের বৈধতার চ্যালেঞ্জ করা হয়ে থাকে, তারা কি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম বা জন্মদিন” উদযাপন কিংবা পালন করতেন, নাকি আলোচনা করতেন?

৪-
মিলাদুন্নবী তথা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম বা জন্মদিন উদযাপকরাকে আরবীতে কী বলে?

৫-
মিলাদুন্নবী তথা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মালোচনাকে আরবীতে কী বলে?

৬-
আহলে হক্ব মাশায়েখগণ নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মালোচনাকে বাদ দিয়ে, বরং জন্ম দিবস পালন করেছিলেন কিংবা জন্মদিবস উদযাপন করেছিলেন কি?

৭-
উনারা রেজভী তথা ভান্ডারী সুন্নীদের ন্যায় নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মুহাব্বত জাহিরের নামে জুলূসী ধুমদাড়াক্কার আয়োজন করেছিলেন কি? র্যলী আর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে “জিন্দা নবীর আগমণ, শুভেচ্ছা স্বাগতম” এ সমস্ত মনগড়া হাঁকড়াক ছেড়ে ছিলেন কি?

৮-

আসলাফের আহলে হক্বের কিতাবে এমন কোনো প্রমাণ আছে কি, যেখানে ১২ ই রবিউল আওয়াল দিবসকে উপলক্ষ করে নির্দিষ্ট দিনটিতে নবীজির জন্মদিন /জন্মদিবস পালন করেছিলেন ; যদি প্রমাণ থাকে তাহলে সহপ্রমাণে উল্লেখ করুন।

৯-
উনাদের কিতাবের ইবারত উল্লেখ করে আরো সুস্পষ্ট করে দিন যে, উনাদের মিলাদুন্নবী তথা নবীজীর জন্মালোচনা কি রকম পদ্ধতিতে ছিল, আর সাম্প্রতিক কালের মিলাদীদের মীলাদী আমলের সাথে উনাদের মিলাদুন্নবী তথা নবীজীর জন্মালোচনা বাহ্যিক ভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ রয়েছে কি?

আমাদের তাহকীক অনুসারে সাম্প্রতিক কালের মিলাদীদের মীলাদী আমলের সাথে উনাদের মিলাদুন্নবী তথা নবীজীর জন্মালোচনা বাহ্যিক ভাবে মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

১০-
আহলে হক্বের আকাবেরদের নামে মীলাদীরা যা প্রচার করে, তা বর্তমানকালের মিলাদ কিয়ামীদের মিলাদ কিয়ামের সাথে শব্দগত, মর্মগত ও আকিদাগত উভয় দিক থেকে আকাশ পাতাল ব্যবধান রয়েছে। এমতাবস্থায় আহলে হক্বের আকাবেরগ্ণ সাম্প্রতিককালের মিলাদীদের মীলাদী দৃষ্টান্ত হইল কেমনে?

১১-
আর যদি উনারা মিলাদুন্নবী উদযাপন কিংবা পালন নাহি করে থাকেন, তাহলে কি উনারা মিলাদুন্নবী তথা নবীজীর জন্মালোচনা করেছিলেন? আর আর যদি উনারা নবীজীর জন্মালোচনাই করে থাকেন, তাহলে এতে কারো কোনো সমস্যা বা দ্বিমত থাকতে পারে কি? আহলে হক্ব উলামায়ে মক্কী ওয়া মাদানি ওয়া দেওবন্দী তারা তো জন্মালোচনার বিষয়ে উম্মাহকে প্রতিনিয়ত আরো বেশি উৎসাহিত করে থাকেন, তা নয় কি?

১২-
হক্কানী পীর মাশায়েখের নিকট হতে যদি জন্মালোচনা ব্যতীত জন্মদিন উদযাপনের কোনো প্রমাণ নাহি থাকে, তাহলে আধুনিক কালের মিলাদীদের মিলাদুন্নবী উদযাপন বা জুলূসী ধুমদাড়াক্কার বৈধতা নিশ্চিত করার অসৎ উদ্দেশ্য পাকাপোক্ত করতে পূর্ববর্তী মাশায়েখের রেফারেন্স টেনে আনার মতলব কী তা কি একটু ব্যাখ্যা দেবেন?

১৩-
পূর্ববর্তী মাশায়েখদের দু একজনের যারাই কিয়াম করেছেন বলে জানা যায়, তাদের কারো কি এ আকিদা ছিল যে, নবীজি (সা) তিনি দরূদ পাঠকালে কিংবা নবীর জন্মালোচনার সময় মজলিসে হাজির বা আগমণ করেন! (নাউযুবিল্লাহ) ।

মজার ব্যাপার হল, হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রহঃ) – উনি নিজে না ছিলেন ফকিহ, না ছিলেন একজন মুজতাহিদ। কাজেই উনার কথা কিংবা কাজ শরীয়তের দৃষ্টিতে দলিল হিসেবে সাব্যস্ত হয় কিভাবে?

এ সম্পর্কে মুজতাহিদ ইমামগণের বক্তব্য :

মুজাদ্দিদে আলফে সানী শায়খ আহমদ সারহেন্দী রহঃ লিখেছেন-
ﻋﻤﻞ ﺻﻮﻓﻴۃ ﺩﺭ ﺣﻞ ﻭ ﺣﺮﻣﺖ ﺳﻨﺪ ﻧﻴﺴﺖ. ﺍﻟﻲ ﻗﻮﻟﻪ ﺍﯾﮟ ﺟﺎ ﻗﻮﻝ ﺍﻣﺎﻡ ﺍﺑﻮ ﺣﻨﯿﻔۃ ﺭﺡ ﻭ ﺍﻣﺎﻡ ﺍﺑﻮ ﯾﻮﺳﻒ ﺭﺡ ﻭ ﺍﻣﺎﻡ ﻣﺤﻤﺪ ﺭﺡ ﻣﻌﺘﺒﺮ ﺳﺖ. ﻧﮧ ﻋﻤﻞ ﺍﺑﻮﺑﮑﺮ ﺷﺒﻠﯽ ﻧﻮﺭﯼ ﺭﺡ .

অনুবাদ, কোনো কাজ হালাল বা হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনো সূফী বুযূর্গের (পীর ফকিরের ব্যক্তিগত) আমল দলীল নয়।বরং এ ক্ষেত্রে হযরত ইমাম আবু হানিফা রহঃ, ইমাম আবু ইউসূফ রহঃ ও ইমাম মুহাম্মদ রহঃ প্রমুখ মুজতাহিদ ইমামগণের কথা দলীল।

প্রখ্যাত সূফী বুযূর্গ আবু বকর শিবলী নূরী রহঃ এর কাজও শরীয়তে দলীল হতে পারেনা। {দেখুন, মাকতুবাত, দপ্তরে আউয়াল পৃষ্ঠা ২৩৫}

জনৈক কবি কতইনা সুন্দর করে বলেছেন- ﮨﮯ ﺗﺒﺎﮨﯽ ﺩﯾﻦ ﮐﯽ ﺍﻥ ﺗﯿﻦ ﺳﮯ. ﭘﯿﺮ ﺟﺎﮨﻞ ﻣﯿﺮ ﻇﺎﻟﻢ ﻋﺎﻟﻢ ﺑﺪ ﺩﯾﻦ ﺳﮯ .

অনুবাদ, তিন শ্রেণির মানুষ ধর্মের সর্বনাশ ডেকে আনে। জালিম বাদশাহ, জাহেল পীর ফকির আর বদদ্বীন মৌলভী।”

ইমাম বুখারীর উস্তাত হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুবারক তিনিও বলেছেন-
ﻭ ﻫﻞ ﺍﻓﺴﺪ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻻ ﺍﻟﻤﻠﻮﻙ. ﻭ ﺍﺣﺒﺎﺭ ﺳﻮﺀ ﻭ ﺭﻫﺒﺎﻧﻬﺎ
.
অনুবাদ, তিন শ্রেণির মানুষ দ্বীনের ক্ষতি করে। বাদশাগণ, বদদ্বীন মৌলভী আর (মূর্খ) পীর ফকিরেরা।”

হাফিজুল হাদিস আল্লামা ইবনে দাকীকুল ঈদ্ রহঃ লিখেছেন-
ﺍﻥ ﺍﻟﻐﺎﻟﺐ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺍﺕ ﺍﻟﺘﻌﺒﺪ ﻭ ﻣﺄﺧﺬﻫﺎ ﺍﻟﺘﻮﻗﻴﻒ . ﻫﻜﺬﺍ ﻗﺎﻝ ﺩﻗﻴﻖ ﺍﻟﻌﻴﺪ

অনুবাদ, ইবাদত সমূহে উদ্দেশ্য হল আল্লাহপাকের বন্দেগী করা। আর এর ভিত্তি হল ওহী নির্ভরতা।” {দেখুন এহকামুল আহকাম ১/৫১}

কাজেই বুঝা গেল, কোন্ কাজ করলে আল্লাহপাক খুশি হবেন, সাওয়াব দিবেন, এটা কোনো পীর ফকিরের যুক্তি বুদ্ধি বা আবেগে সাব্যস্ত হবার বিষয় নয়, এ জন্য ওহী তথা শরীয়তের সুস্পষ্ট ফয়সালা জুরুরী।

আরো মজার কথা হল, নবীজির জন্মালোচনা মুহূর্তে হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রহঃ) – কৃত কথিত কিয়ামের মাকসাদ বা উদ্দেশ্য-মজলিসে নবীজী (সা) হাজির হতেন এরকম কোনো আকিদাই ছিল না; বরং তিনি বলতেন : اور قیام کے وقت بے حد لطف و لذت پاتا ہون (এবং কিয়াম করার সময় অশেষ আনন্দ এবং মজা উপলব্ধি করি)। [হাফত মাসায়েল-৫]

তাছাড়া নবীজির জন্মালোচনা মুহূর্তে হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রহঃ) – কৃত কথিত কিয়াম মাজযূবী হালতে (নবীজির মুহাব্বতে জ্ঞানশূন্য অবস্থায়) ছিল। প্রকৃত ওলীদের মাজযূবী হালতে সংঘটিত অস্বাভাবিক কোনো কাজ অন্যদের জন্য অনুকরণযোগ্য হতে পারেনা।

আর যদি প্রকৃত ওলীদের মাজযূবী হালতে সংঘটিত অস্বাভাবিক কোনো কাজ অন্যদের জন্য অনুকরণযোগ্য হত, তাহলে হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রহঃ)-এর চেয়েও অপেক্ষাকৃত বড় আশেকে রাসূল হযরত ওয়াইসকরণী (রহঃ) এর ন্যায় বর্তমানকালের তথাকথিত কোনো আশেকে রাসূল নিজের দাঁত উপড়ে ফেলা শরয়ী ফয়সালা মতে জায়েজ হবে কি?
অনুরূপ বিশিষ্ট মাজযূব হযরত মানসূর হাল্লাজ (রহঃ)-এর ন্যায় “আনাল হক্ব” (আমিই আল্লাহ) বলা সহীহ হবে কি?

১৪-
যদি মিলাদুন্নবীর আমলকালে নবীজি (সা) মজলিসে হাজিরই হন, যে জন্য (রেজভী বিদয়াতিদের ভাষ্য মতে তাজিমের উদ্দেশ্যে) কিয়াম করা লাগে; তাহলে এ মিলাদুন্নবীর প্রথা ৬০৪ হিজরীতে সর্বপ্রথম যিনি আবিস্কার করে চালু করেছিলেন তিনি কী জন্য কিয়াম করেননি? তারও প্রায় ১০০ বছর পর হতেই তথা ৭০০ হিজরীতে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানে এ অভিনব কিয়ামের নতুন সংযোজন হল কেন?

১৫-
কতিপয় ভান্ডারী সুন্নী ব্যক্তি মিলাদুন্নবী (নবীজির জন্ম/ জন্মদিবস) উদযাপন প্রথাটিকে “বিদয়াতে হাসানাহ” বলে প্রচার করছে, আবার কেউ বা “সুন্নাতে সাহাবা” বলেও আখ্যায়িত করছে। এখন আমার প্রশ্ন, যেটি “সুন্নাতে সাহাবা” সেটি বিদয়াতে হাসানাহ হয় কিভাবে? কারণ, শরীয়তের ভেতর যা “সুন্নাতে সাহাবা” হিসেবে আখ্যায়িত, তা কোনো ভাবেই বিদয়াতে হাসানার পর্যায়ভুক্ত হতে পারেনা। তাহলে এমতাবস্থায় প্রচলিত মিলাদুন্নবী পালনের প্রকৃত শরয়ী বিধানটি কী, একটু বলবেন?

আশাকরি তাদের বিভ্রান্তি কোথায় তা বুঝতে পেরেছেন।

মধু,মধু উপকারিতা, মধু খাওয়ার উপকারিতা, মধু কিভাবে খেতে হয়, মধু ও কালোজিরা, মধু ব্যবহার, রুপচর্চায় মধু, মধু কত দিন ভাল থাকে, মধু খেলে কি হয়,

#একফোঁটা_মধু_মাটিতে_পরে_আছে______!!
পাশ দিয়ে ছোট্ট একটি পিঁপড়া🐜
যাচ্ছিলো।
মধুর ঘ্রান নাকে ঢুকতেই থমকে
দাঁড়ালো।
ভাবলো একটু মধু খেয়ে নেই,তারপর না
হয় সামনে যাবো।এক চুমুক খেলো,,,,,,,,
বাহ্,,,খুব মজাতো,আরেকটু খেয়ে নেই!
আরেক চুমুক খেলো।
তারপর সামনে চলতে লাগলো!
হাটতে হাটতে ঠোঁটে লেগে থাকা মধু
চেটে খাচ্ছিলো।ভাবলো,
এতো মজার মধু আরেকটু খেয়ে নিলে কি
হয়???
আবার পিছনে ফিরলো,পূর্বে নিচে
থেকে খেয়ে ছিলো।ভাবলো,নিচের মধু
এতো মজা উপরের টা হয়তো আরো মজা
হবে।তাই,আস্তে আস্তে বেয়ে বেয়ে
মধুর ফোঁটার উপরে উঠে গেলো।
বসে বসে আরামছে মধু খাচ্ছে।খেতে
খেতে এক পর্যায়ে পেট ফুলে গেলো।
ঐ দিকে পা দুটো নিজের অজান্তে
আস্তে আস্তে মধুর ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে।
তখনই হঠাৎ পায়ের দিকে নজর পড়লো
তার।
কিন্তু ততহ্মনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
মধু থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে
আপ্রান চেষ্টা করতে লাগলো।
কিন্তু নাহ্,,,,,মধুতে তার সমস্ত শরীর
মাখামাখি অবস্থা।অনেক চেষ্টা
করেও নিজেকে আর উদ্ধার করতে সহ্মম
হলো না।।।।
নাকে মুখে মধু ঢুকে দম বন্ধ হয়ে যেতে
লাগলো।
অবশেষে,পিঁপড়াটি🐜মধুর ভিতর আটকে
পড়েই মৃত্যু বরন করল,,,,,,!!
এই বিশাল দুনিয়াটা একফোঁটা মধুর মত।
যে এই মধুর পাশে বসে হালাল ও
অল্পতে তুষ্ট থাকবে সেই বেঁচে গেলো।
আর যে এই স্বাদের মধ্যে ডুব দিতে
গিয়ে হালাল-হারাম,বাচ-বিচার না
করে শুধু খেয়েই গেলো,আরেকটু আরেকটু
করতে করতে একদিন সে এর মায়াজালে
আটকে পড়েই মারা যাবে।
তখন আর কেউ তাকে উদ্ধার করতে
পারবেনা।ধ্বংস অনির্বায।তার দুনিয়া
ও আখেরাতের দু'টোই শেষ।হে আল্লাহ আমাদের সবাইকে দুনিয়ার মায়াজাল থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।।
!!!আমিন!!!!

স্বামী স্ত্রী ,স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা, স্বামী স্ত্রী হাদিস, স্বামী স্ত্রী সম্পর্কিত হাদিস, স্বামী স্ত্রীর কর্তব্য, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত, স্বামী স্ত্রীর কবিতা, স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার কবিতা, স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার এসএমএস,

স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর শোকপালনে বিধান কি?

স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর ইদ্দতকালীন সময় (অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত অন্যথায় ৪ মাস ১০ দিন) সব ধরণের সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব ।
সহীহ বুখারীতে উম্মে হাবীবা রা. থেকে বর্ণিত আছে,

أني سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول : لا يحل لامرأة تؤمن بالله واليوم الآخر أن تحد على ميت فوق ثلاث إلا على زوج فإنها تحد عليه أربعة أشهر وعشرا (صحيح البخاري :2/803- باب حد المرأة على غير زوجها)

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য তার স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি সময় হিদাদ (শোক করা ও সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা) বৈধ নয়। আর স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন হিদাদ পালন করবে।(সহীহ বুখারী ২/৮০৩,হাদীস : ৫১২৮)

উম্মে সালামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عن النبي صلى الله عليه و سلم أنه قال ” المتوفى عنها زوجها لا تلبس المعصفر من الثياب ولا الممشقة ولا الحلي ولا تختضب ولا تكتحل (سنن أبي داود: 1/315 – باب فيما تجتنب المعتدة في عدتها)

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে স্ত্রী লোকের স্বামী মৃত্যুবরণ করে সে যেন ইদ্দতকালীন সময়ে রঙিন এবং কারুকার্যমণ্ডিত কাপড় ও অলংকার পরিধান না করে। আর সে যেন খিযাব ও সুরমা ব্যবহার না করে।(সুনানে আবু দাউদ ১/৩১৫,হাদীস : ২২৯৮)

আল্লামা কুরতুবী রাহ. তার বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘আলজামে লিআহকামিল কুরআন’ও ইদ্দত সংক্রান্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন,

الإحداد : ترك المرأة الزينة كلها من اللباس والطيب والحلي والكحل والخضاب بالحناء ما دامت في عدتها ؛ (الجامع لأحكام القرآن للقرطبي – 3 / 179)

হিদাদ পালনের অর্থ হল, মহিলা তার ইদ্দতকালীন সুগন্ধি, সুরমা, মেহেদি,অলঙ্কারাদিসহ পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে যাবতীয় সাজসজ্জা ত্যাগ করবে। (তাফফীরে কুরতুবী ৩/১৭৯)

সুতরাং কোনো মহিলার স্বামী মারা যাওয়ার পর ৪ মাস ১০ দিন অথবা অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত যে কোনো ধরণের সাজসজ্জা যা উৎসবাদিতে পরা হয় এমন চাকচিক্যপূর্ণ পোশাক পরিধান করা,সুগন্ধি ও অন্যান্য সাজসজ্জার প্রসাধনী ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। তদ্রুপ মেহেদি লাগানো, সুরমা দেওয়া থেকেও বিরত থাকা আবশ্যক। অবশ্য ব্যবহৃত রঙিন কাপড় যদি চাকচিক্যপূর্ণ না হয় তাহলে তা পরিধান করতে কোনো অসুবিধা নেই।
ইদ্দত অবস্থায় সাদা কাপড় পরা আবশ্যক নয়। বরং সাদা কাপড় পরিধান করাকে জরুরি মনে করা ঠিক নয়।
প্রকাশ থাকে যে,ইদ্দত অবস্থায় মহিলার জন্য সাজগোজ ত্যাগ করার বিধান একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ ব্যাপারে হাদীসে অত্যন্ত গুরুত্ব এসেছে। এটি শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সুতরাং একে সামাজিক প্রথা বা কুসংস্কার মনে করা অন্যায়। বরং আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী সকল মুসলমানের উচিত উক্ত বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। নারীদের কর্তব্য উক্ত বিধান পালনে যত্নশীল হওয়া।

ইদ্দত কালীন সময় যে সকল জিনিষ থেকে বিরত থাকবে
• সাজগোজ
• সুগন্ধি ব্যবহার
• রঙিনএবং কারুকার্যমণ্ডিত কাপড় পরিধান
• অলংকার পরিধান
• মেহেদিও আলতাব্যবহার
• খিযাব(কলপ) ও সুরমা ব্যবহার
• নেইল পালিশ, আইলেনার ইত্যাদি সজসজ্জার উপকরণ

প্রামাণ্য গ্রন্থাবলীঃ
১। সহীহ বুখারী ২/৮০৩,হাদীস : ৫১২৮
২। সুনানে আবু দাউদ ১/৩১৫,হাদীস : ২২৯৮
৩। তাফফীরে কুরতুবী ৩/১৭৯
৪। আলমাবসূতলিসসারাখসী ৬/৫৯
৫। আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩০-৫৩২
৬। মিরকাতুল মাফাতীহ ৬/৪৫২
৭। তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/২৩১
৮। বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৩০
৯। আল বাহরুর রায়েক
১০। ফাতহুল বারী ৯/৪০১,৩৯৫।

আল্লাহ তাআলা সহীহ ভাবে আমল করার তৌফিক দান করুন। (আমীন)

ইজতিহাদ, মুজতাহিদ, মাযহাব, তাকলীদ ও মুকাল্লিদ ,

ইজতিহাদ, মুজতাহিদ, মাযহাব, তাকলীদ ও মুকাল্লিদ পরিচিতি।

উপস্থাপনা : সাহাবায়ে কিরামের পবিত্র যামানার পর থেকে ইসলাম ও মুসলিম জাতিকে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে বিদায় করে দেওযার জন্য ভিতর ও বাহিরে চতুর্মুখি ঘৃন্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তখন মুসলিম উম্মাহ দু’ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন।

১-

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণীর সাথে নিজেদের কথা মিশিয়ে ইসলামের ভিত্তিমূলকে নড়বড়ে করে দেয়ার মানসে মুসলিম নামধারী মুনাফিক চক্রের ‘‘জাল হাদীস’’ তৈরির ভয়ানক ষড়যন্ত্র।
২-
ইসলামী রাজ্য সম্প্রসারণের সুবাদে নতুন অঞ্চলের মানুষের জীবন চলার পথে নিত্য নতুন জিজ্ঞাসা ও সমস্যার উদ্ভব হয়। কুরআন-হাদীস মূলনীতি আকারে বর্ণিত হওয়ার দরুণ মানব জীবনের যে সব খুঁটি-নাটি বিষয়ের সমাধান পাওয়া সাধারণ মানুষের জন্য খুবই দুরূহ, এমনকি অসম্ভব হয়ে পড়ে; উক্ত সমস্যার সমাধানকল্পে কুরআন-সুন্নাহর বিজ্ঞ পন্ডিতগণ তথা মুহাদ্দিসীন ও ফুক্বাহা দু’ভাগে দ্বীনি মিশনে লিপ্ত হয়ে যান।
.
মুহাদ্দিসীনে কিরাম প্রিয় নবীজীর বিশুদ্ধ হাদীস সমূহকে মওদ্বূ তথা জাল হাদীস হতে পৃথক করে কিতাবাকারে সংকলন করেন এবং বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য গড়ে তোলেন রিজাল শাস্ত্রের সুবিশাল ভান্ডার।
.
অপর দিকে মুজতাহিদ ফুক্বাহায়ে কেরাম মানব জীবনের উদ্ভূত সমস্যার সমাধানকল্পে কুরআন-হাদীসের মূলনীতির আলোকে গড়ে তুলেন ‘ইলমে ফিক্বহ’র বিশাল ভান্ডার।
.
বিশিষ্ট তাবেয়ী ইমাম আবু হানিফা (র) ছিলেন এ শাস্ত্রের প্রধান ও প্রাণপুরুষ। সে সময় ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (আলাইহিমুর রাহমাহ) ছাড়াও আরো অনেক মুজতাহিদ ইজতিহাদ নীতি অবলম্বন করেন এবং আপন আপন মাযহাবের সূচনা করেন।
.
কিন্তু প্রসিদ্ধ চার ইমামের বাহিরে অন্যান্য মুজতাহিদদের ফতুয়া কিতাবাকারে লিপিবদ্ধ না থাকায় এবং তাদের মতামত সমূহের প্রতিনিধিত্ব করার মতো যোগ্য উত্তরসূরী না থাকায় পরবর্তীতে উনাদের মতামত সমূহ হারিয়ে যায়। যার ফলে পরবর্তীতে চার মাযহাবের অনুসরনের উপর আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের ইজমা সংঘটিত হয়। এরপর থেকে সকল উম্মতে মুহাম্মদী কোনো না কোনো মাযহাবের অনুসরণ করে আসছেন । এমনকি মুসলিম বিশ্বের স্বনামধন্য ও বিশ্ববরেণ্য ওলামায়ে কেরামও নিজ নিজ রুচি ও অঞ্চলভেদে ঐ চার মুজতাহিদ ইমামের কোনো একজনের মাযহাবকে অনুসরণ করেছেন।
.
সিহাহ সিত্তার ইমামগণ সহ ইমাম ত্বাহাবী, ইবনে খুজাইমাহ, ইবনে হিববান, দারা কুতনী, হাকিম নিশাপুরী, আবু বকর জাসসাস, আবূ আব্দিল্লাহ ফখরুদ্দীন রাযী, খতিব বাগদাদী, ইমাম গাজ্জালী, ইমাম নববী, ইবনুল আছীর, ইবনে কুদামা, ইবনে কাছীর, কুরতুবী, বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী, শিহাবুদ্দীন আলূসী, যাইলাঈ, ইমাম যাহাবী, আল্লামা আইনী, ইবনে হাজার আসকালানী, জালালুদ্দীন সুয়ূুতী, এমনকি ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কায়্যিম সহ সকল মুহাদ্দিস ও মুফাসসির মাযহাব মেনে চলেছেন।

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ এর উক্তি

ইজতিহাদের ক্ষমতা নেই এমন ব্যক্তির জন্য মাযহাব বা তাকলিদে শাখছি অবলম্বন করা ওয়াজিব। তবে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) তিনি লিখেছেন ‘জায়েজ’। এখানে জায়েজ বলে ‘অবৈধ নয়’ এরকম বুঝানোই উদ্দেশ্য।

‘মাজমূ ফাতাওয়া’ কিতাবের ২০৩ নং পৃষ্ঠার ভাষ্য হল – التقليد جائز للعاجز عن الاجتهاد  অর্থাৎ ইজতিহাদে অক্ষম ব্যক্তির জন্য তাকলিদ করা জায়েজ বা অবৈধ নয়।

স্কিনকপি –

 লামাযহাবী ভাইদের নিকট ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ)-এর উক্তি তুলনামূলক বেশি গুরুত্ববহন করায় উনার কিতাব থেকে বিষয়টি প্রমাণ করা হল। তাই আজ থেকে মাযহাব বা তাকলিদকে অবজ্ঞা করবেন না!

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রাণী ভিক্টোরিয়া কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ও ইংরেজ আমলে সৃষ্ট আহলে হাদিস নামের দলটি সহিহ হাদিসের চটকদার জিকির তোলে মাযহাবের বিরোধীতা করে চলেছে। ইংরেজ আমলে সৃষ্ট আহলে হাদিস নামের দলটি মাযহাব অনুসরণের এ নিরবিচ্ছন্ন ধারাবাহিকতায় আঘাত হানতে চাচ্ছে। তারা মাযহাব অনুসরণকারীদের কাফির-মুশরিক বলতেও কুন্ঠিত হচ্ছে না।
.
খ্রিষ্টান মিশনারী, কাদিয়ানী এবং চিহ্নিত মাজারপূজারি ফিরকা সমূহের বিরুদ্ধে নিশ্চুপ থেকে এরা আদাজল খেয়ে লেগেছে মাযহাব অনুসরণকারীদের কাফির বানানোর অপচেষ্টায়। নিচের প্রবন্ধে মাযহাব ও তাকলীদ সংক্রান্ত দালিলিক ও মৌলিক আলোচনার প্রয়াস চালাব ইনশা আল্লাহ।

প্রিয় পাঠকবর্গ! মাযহাব সম্পর্কিত পোষ্টগুলো বুঝার জন্য কিছু শব্দের সাথে পরিচিত থাকা চাই। যেমন – ইজতিহাদ, মুজতাহিদ, মাযহাব, তাকলীদ ও মুকাল্লিদ। নিচে সংক্ষেপে এগুলোর পরিচয় তুলে ধরা হলো।
.
ইজতিহাদঃ
.
ইজতিহাদের শাব্দিক অর্থ, উদ্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথাসাধ্য পরিশ্রম করা। ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় ইজতিহাদ অর্থ, কুরআন ও সুন্নায় যে সকল আহকাম ও বিধান প্রচ্ছন্ন রয়েছে সেগুলো চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে আহরণ করা।

মুজতাহিদঃ
.
যিনি ইজতিহাদ করেন তিনি হলেন মুজতাহিদ।
.
মাযহাবঃ

মাজহাব মানে মতামত, বিশ্বাস, ধর্ম, আদর্শ, পন্থা, মতবাদ, উৎস। মাজহাব শব্দের অনেক অর্থ আছে। তার ভিতরে একটি হল মতামত। [মিসবাহুল লুগাত]।

মুজতাহিদ কোরআন ও সুন্নাহ থেকে যে সকল আহকাম ও বিধান আহরণ করেন সেগুলোই হলো মাযহাব।
.
তাকলীদঃ
.
যাদের কোরআন ও সুন্নাহ থেকে চিন্তা ও গবেষনার মাধ্যমে আহকাম ও বিধান আহরণের যোগ্যতা নেই তাদের কাজ হলো মুজতাহিদের আহরিত আহকাম অনুসরণের মাধ্যমে শরীয়তের উপর আমল করা। এটাই হলো তাকলীদ।
.
তাকলীদের সারকথা হলো, কোন বুজুর্গ ও বিজ্ঞ আলেম ব্যক্তির হক্কানিয়্যাতের প্রতি এই আস্থা রেখে যে “তিনি কুরআন ও হাদীস মোতাবেক এ উক্তিটি করেছেন এবং সে মোতাবেক তিনি এ কাজটি করেছেন” তাঁর কথা ও কাজের অনুসরণ করা।
.
আর এই অনুসরণকে সংশ্লিষ্ট কথা ও কাজের দলীল-প্রমাণ জানার উপর ঝুলন্ত না রাখা। কিন্তু তার দলীল- প্রমাণ যদি তখন জানা হয় অথবা পরবর্তীতে জানা যায়, তাহলে এটি তাকলীদের পরিপন্থী নয়।

মোটকথা, তাকলীদে দলীল-প্রমাণ অন্বেষণ অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে দলীল-প্রমাণ জানা এর পরিপন্থী নয়।
.
তাকলীদের প্রকারঃ
.
১. তাকলীদে গায়রে শখসী। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোন ইমামের তাকলীদ না করে যে মাসয়ালায় যে ইমামের তাকলীদ করতে মনে চায় সেটা করা।

২. তাকলীদে শখসী। অর্থাৎ, সবক্ষেত্রে নির্দিষ্ট যে কোন ইমামের তাকলীদ করা। তবে অন্যান্য ইমামকেও সে সম্মানিত ও শ্রদ্ধেয় মনে করবে, তাদের মতকেও সঠিক মনে করবে। কিন্তু বিবিধ দ্বীনী ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য অনুসরণ শুধু একজনেরই করবে।

তাকলীদে শখসীর উপর সাহাবাদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন, হযরত উমর (রা)-এর রায় অনুসারে তারাবি সালাত বিশ রাকাত হওয়ার উপর সকল সাহাবায়ে কেরাম একমত হয়েছেন।

মুকাল্লিদঃ

যারা তাকলীদ করে তারা হলো মুকাল্লিদ।
.
চতুর্থ (হিজরী) শতাব্দির পর চার মাযহাব ছাড়া অন্য কোনো মাযহাব অবশিষ্ট থাকেনি। তাই এ চার মাযহাবের যে কোনো একটির অনুসরণের মাধ্যমে শরীয়তের উপর আমল করতে হবে।

তথ্যসূত্রঃ

√ ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ ।
√ মাযহাব কি ও কেন?

জ্ঞাতব্য : চতুর্থ (হিজরী) শতাব্দির উলামায়ে কেরাম চার ইমামের যেকোন এক জনের মাযহাব অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। গায়রে মুজতাহিদ ব্যক্তিদের জন্য ‘তাকলিদ’ আবশ্যক হওয়ার উপর ইজমাও হয়েছে। যেমন, ইমাম ত্বহাবী (রহ) লিখেছেন :
.
ﻭ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻵﺛﺎﺭ ) ١٥٢- ٥٣( … ” ﻭﻫﺬﻩ ﺍﻟﻄﺎﺋﻔﺔ ﺍﻟﻨﺎﺟﻴﺔ ﻗﺪ ﺍﺟﺘﻤﻌﺖ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﻓﻲ ﻣﺬﺍﻫﺐ ﺍﻻﺭﺑﻌﺔ ﻭ ﻫﻢ ﺍﻟﺤﻨﻔﻴﻮﻥ ﻭﺍﻟﻤﺎﻟﻜﻴﻮﻥ ﻭ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻴﻮﻥ ﻭﺍﻟﺤﻨﺒﻠﻴﻮﻥ ﺭﺣﻤﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻭ ﻣﻦ ﺧﺎﺭﺟﺎ ﻋﻦ ﻫﺬﻩ ﺍﻻﺭﺑﻌﺔ ﻓﻲ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺰﻣﺎﻥ ﻓﻬﻮ ﻣﻦ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﻭﺍﻟﻨﺎﺭ

অর্থাৎ কিতাবুল আছার গ্রন্থে (১৫২-৫৩) লেখা আছে, এ মুক্তিপ্রাপ্ত দলটি বর্তমানে চার মাযহাবে মিশে গেছে। তাঁরা হানাফি, মালেকি, শাফেয়ী এবং হাম্বালী। বর্তমান কালে যারা এ চারটি মাযহাবের বাহিরে তারা বিদয়াতি এবং (বিপথগামী হিসেবে) জাহান্নামি।

সূত্র : শরহে মা’আনিল আছার- ১৫২-৫৩।
.
আল-ইনসাফ-৫২, ৫৭-৫৯।
.
মাদারে হক-৩৪১।
.
ইন্তিসারুল হক ব-জওয়াবে মি’আরে হক্ব-১৫৩।
.
আল-মুআফাকাত-৪/১৪৬ ।
.
আল-মাজমূ শরহুল মুহাজ্জাব-১/৯১।
.
মাযহাবের সংখ্যা :
.
সারা দুনিয়া জুড়ে প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের অনুসারীদের সংখ্যাই বেশি। মাযহাবের মধ্যে প্রসিদ্ধ ও বিশুদ্ধ মাযহাব হলো চারটি।
.
১. ইমাম আবু হানিফা (রাহ.)-এর মাযহাব। (মৃত্যু ১৫০ হিজরী, বাগদাদ কারাগার)।
.
২. ইমাম মালিক (রাহ.)-এর মালেকী মাযহাব। (মৃত্যু ১৭৯ হিজরী, মদীনা) ।
.
৩. ইমাম শাফেয়ী (রাহ.)-এর শাফেয়ী মাযহাব। (মৃত্যু ২০৪ হিজরী, মিশর)।
.
৪. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রাহ.)-এর হাম্বলী মাযহাব। (মৃত্যু ২৪১ হিজরী, বাগদাদ)।
.
এ চার মাযহাবই উৎসারিত হয়েছে কোরআন-সুন্নাহ থেকে। কোরআন এবং হাদিসের মধ্যে যেসব মাসআলা-মাসায়িল সরাসরি উল্লেখ নেই সেগুলোকে মূল ঊসূলের (নীতিমালা) ওপর ভিত্তি করে কোরআন এবং সুন্নাহ থেকে চুলচেরা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন মাযহাবের মুজতাহিদ ইমামগণ।

দুটি প্রশ্নোত্তর

১-
রাসূল (সা) এর যুগে কোনো মাযহাব ছিল কি?

২-
সাহাবায়ে কেরামের যুগে কোনো মাযহাব ছিল কি?

সংক্ষিপ্ত জবাব:
.
রাসূল (সা)-এর যুগে তো নির্দিষ্ট কোনো ধর্মীয় বিশেষজ্ঞের দরকারই ছিলনা। যেহেতু স্বয়ং রাসূল (সা) সাহাবীদের মাঝে জীবিত ও বিদ্যমান ছিলেন। কাজেই একজন সুপার সমাধানদাতা হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বেসর্বা। তবে হ্যাঁ উনার পরবর্তী যুগে সাহাবায়ে কেরামদের অনেকে রেওয়ায়েত আর গবেষণালব্ধ রায়ের মাধ্যমে নানা যুগ-জিজ্ঞাসার সমাধান দিয়েছেন। তার বহু প্রমাণ রয়েছে।
.
নববী যুগের পর শুরু হয় সাহাবীদের যুগ। সে যুগে যখনি কোনো কিছু জানার বা শিখার দরকার পড়ত, সমসাময়িক লোকজন (সাহাবী এবং তাবেয়ী) তাঁদের মধ্যকার বিজ্ঞ ও মুহাক্কিক বিদ্যানদের মতামতের শরণাপন্ন হতেন। অর্থাৎ যারা সর্বস্বাধারণ এবং অযোগ্য, তারা বিশিষ্ট ও যোগ্য বিদ্যানদের কাছ থেকে মতামত জেনে নিতেন এবং তদানুসারে আমল করতেন। তার একটি উদাহরণ হযরত আসওয়াদ বিন ইয়াযিদ (রহ) হতে সহিহ বুখারিতে ( হাদিস নং ৬৭৩৪) উল্লেখ রয়েছে। যথা-
.
রাবি আসওয়াদ বিন ইয়াযিদ (রহ) বর্ণনা করেন যে, হযরত মু’আজ ইবনে জাবাল (রা) একজন গভর্নর হিসেবে ইয়ামানে আগমন করলে আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, জনৈক ব্যক্তি একজন কন্যা এবং একজন বোন জীবিত রেখে মারা গেছেন। এখন তাদের মাঝে সম্পদ বণ্টনের পদ্ধতি কিভাবে হবে? তদুত্তরে তিনি প্রত্যেকের অংশ অর্ধেক বলে সমাধান দেন।”
.
(সূত্র—বুখারি শরিফ : ৮/৩৫১, হাদিস নং ৬৭৩৪)
.
নোট : উক্ত হাদিস হতে আমাদের শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছুই রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হল, উম্মতে মুহাম্মদীর ভেতর যারা কুরআন এবং সহিহ হাদিসের আলোকে কোনো বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করার পূর্ণ যোগ্যতা রাখেনা, সে যে কোনো একজন বিশিষ্ট ও বিজ্ঞ আলেম থেকে মতামত নিয়ে আমল করতে পারবে। উল্লেখ্য, আরবী ভাষায় মাযহাব শব্দের এক অর্থ মতামত।
.
অতএব যারা বলেন, রেওয়ায়েত সিদ্ধ আর তাকলীদ নিষিদ্ধ; তাদের কথা মানতে গেলে আমাদের অনেক কিছুই ছাড়তে হয়। বুখারীর উক্ত হাদিসটিও আমাদের ছাড়তে হচ্ছে। কেননা, সেখানে উক্ত ফতুয়া না রাসূল (সা) দিয়েছেন, না উক্ত সাহাবী থেকে ফতুয়ার স্বপক্ষে কোনো দলিল প্রমাণ চাওয়া হয়েছে। তো তাহলে প্রশ্নকারীগণ রেওয়ায়েতের উপর আমল করলেন, নাকি হযরত মু’আজ ইবনে জাবাল (রা)-এর রায়ের উপর আমল করলেন? জবাব দেবেন কি?
.
অনুরূপ আমরা ইমামদের মুকাল্লিদগণও মুজতাহিদের আহরিত রায় (মাযহাব) অনুসরণের মাধ্যমে শরীয়তের উপর আমল করি। যারা এর বিরুধিতা করে বা বিভ্রান্তি ছড়ায়, তারাই প্রকৃতপক্ষে উম্মাহার মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি কারী।
.
আগেই উল্লেখ করেছি যে, যাদের কোরআন ও সুন্নাহ থেকে চিন্তা ও গবেষনার মাধ্যমে আহকাম ও বিধান আহরণের যোগ্যতা নেই, তাদের কাজ হল মুজতাহিদের আহরিত মতামত অনুসরণের মাধ্যমে শরীয়তের উপর আমল করা। এটাই হলো তাকলীদ।
.
সুতরাং মুজতাহিদের আহরিত মতামত বা মাযহাব মানার প্রচলন আগেও ছিল, ভবিষ্যৎকালেও থাকবে।
.
তবে হ্যাঁ, যে সব ভাগ্যবান বিজ্ঞজনের নিকট ইজতিহাদ করার যোগ্যতা রয়েছে তাদের জন্য অন্য কাহারো তাকলীদ করার কোনোই প্রয়োজন নেই। যেজন্য প্রসিদ্ধ চার মুজতাহিদ ইমামের কোনো মাযহাব ছিলনা। কারণ তাঁরা প্রত্যেকে ছিলেন সুযোগ্য। আশাকরি সবাই বুঝতে পেরেছেন।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে বুঝার তৌফিক দান করুন। (আমীন)

মসজিদ সম্পর্কিত,#আল্লাহর_ঘর_মসজিদ_সম্পর্কিত_সমাজে_বহুল_প্রচলিত_কিছু

#আল্লাহর_ঘর_মসজিদ_সম্পর্কিত_সমাজে_বহুল_প্রচলিত_কিছু_জাল_হাদিস

আমাদের সমাজে দেখা যায়, হাদীস বলে নিম্ম কথাটি বলা হয়-

‘‘মসজিদে কেউ প্রথমবার দুনিয়াবী কথা বললে ফিরিশতারা বলেন, হে আল্লাহর বন্ধু ‘আপনি’ চুপ করুন। আবার দুনিয়াবী কথা বললে ফিরিশতারা বলেন, হে আল্লাহর বান্দা ‘তুমি’ চুপ কর। তৃতীয়বার কথা বললে ফিরিশতারা বলেন, হে আল্লাহর দুশমন ‘তুই’ চুপ কর।’’

এখন জানার বিষয় হলো, এটি হাদীস কি না?

❏ উত্তর : এটি হাদীস নয়; হাদীসের কিতাবসমূহে এটি পাওয়া যায় না।

❖ এ বিষয়ক আরো দুটি ভিত্তিহীন বর্ণনা উল্লেখযোগ্য-
✏ المصنوع في معرفة الحديث الموضوع (ص: 92)
109 - حَدِيثُ الْحَدِيثُ فِي الْمَسْجِدِ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ الْبَهِيمَةُ الْحَشِيشَ لَمْ يُوجَدْ كَذَا فِي الْمُخْتَصَرِ
✏ ০১. মসজিদে (দুনিয়াবী) কথাবার্তা নেকিকে এমনভাবে খতম করে, যেমন চুতষ্পদ প্রাণী তৃণলতাকে শেষ করে দেয়। আল মাসনূ-৯২, হাদীস-১০৯।

মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.-১০১৪) বলেছেন, এভাবে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। এমনি ভাবে মুখতাসার এর মাঝে রয়েছে। আল মাসনূ-৯২, হাদীস-১০৯, আল আসরারুল মারফূয়া-১৮৬, হাদীস-১৭১। আল্লামা ফাত্তানী (রহ.-৯৮৬)  لَمْ يُوجد. এধরনের বর্ণনা পাওয়া যায় না বলে মত ব্যক্ত করেছেন। তাযকেরাতুল মাওযুআত-৩৬। আল্লামা সুবকী (রহ.-৭৭১) একটি অনুচ্ছেদে-هَذَا فصل جمعت فِيهِ جَمِيع مَا فِي كتاب الْإِحْيَاء من الْأَحَادِيث الَّتِي لم أجد لَهَا إِسْنَادًا من كتاب الْعلم ইমাম গাজালী (রহ.) এর রচিত কিতাবুল ইলমে যেই সব হাদীস এর সনদ খুজে পাননি, তার আলোচনা করতে গিয়ে উক্ত বর্ণনাটিকেও উল্লেখ করেছেন। তাবাকাতুশ শাফেইয়্যাতিল কুবরা-৬/২৯৪। শাইখ নাসীর উদ্দীন আলবানী (রহ.-১৪২০)ও উক্ত বর্ণনাটি ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন-
سلسلة الأحاديث الضعيفة والموضوعة وأثرها السيئ في الأمة (1/ 60)
4 - (الحديث فى المسجد يأكل الحسنات كما تأكل البهائم الحشيش) .
لا أصل له.
أورده الغزالي في " الإحياء " (1 / 136) فقال مخرجه الحافظ العراقي: لم أقف له على أصل وبيض له الحافظ في " تخريج الكشاف " (73 / 95 و130 / 176) .
وقال عبد الوهاب بن تقى الدين السبكي في " طبقات الشافعية " (4 / 145 - 147) : لم أجد له إسنادا.
والمشهور على الألسنة: " الكلام المباح في المسجد يأكل الحسنات كما تأكل النار الحطب " وهو هو.
সিলসিলাতুয যয়ীফা....-১/৬০, হাদীস-৪।

✏ الحديث فى المسجد يأكل الحسنات كما تأكل النار الحطب
✏ ০২.  ‘‘মসজিদে (দুনিয়াবী) কথাবার্তা নেকিকে এমনভাবে খতম করে, যেমন আগুন কাঠকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে।’’
এটি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদীস নয়। আল্লামা সাফফারীনী (রহ.) বলেন, এটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা। গিযাউল আলবাব শারহু মানযূমাতিল আদাব-২/২৫৭, আল মাসনূ-৯৩ (টিকা)
হাফেজ ইরাকী (রহ.) বলেছেন যে, তিনি এর কোন ভিত্তি খুঁজে পাননি। আল্লামা যাবীদী (রহ.) হাদীসটির ব্যাপারে হাফেয ইরাকী (রহ.) এর উক্ত অভিমতকে সমর্থন করেছেন। ইতহাফু সাদাতিল মুত্তাকীন-৩/৩১, আলমাসনূ-৯৩ (টিকা)

❖ আল্লাহর ঘর মসজিদ হলো পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট স্থান। মসজিদের ভিত্তিই হল নামাযের জন্য এবং যিকির, তালীম ও অন্যান্য দ্বীনী আমলের জন্য। একে দুনিয়াবি কথাবার্তা ও কাজ-কর্মের স্থান বানানো অথবা এ উদ্দেশ্যে মসজিদে জমায়েত হওয়া হারাম। তবে কোন আরামের জন্যে মসজিদে যাওয়ার পর প্রসঙ্গত্রুমে দুনিয়াবী কোন বৈধ কথাবার্তা বলা জায়েয। তার বৈধতা রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। দ্রষ্টব্য সহীহ বুখারী-১/৬৩, ৬৪ ও ৬৫; মুসাফফা-রদ্দুল মুহতার (শামী) ১/৬৬২; আললুউলুউল মারসূ-৭৮। আরো দেখুন মাসিক আল কাউসার-সেপ্টেম্বর-২০০৫ পৃ.-৩৬।

❖ মনে রাখতে হবে, মসজিদ নামায ও আল্লাহ তাআলার যিকিরের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মসজিদকে দুনিয়াবী কথাবার্তা ও কাজকর্মের স্থান বানানো অথবা এ উদ্দেশ্যে মসজিদে জমায়েত হওয়া নাজায়েয।
 سنن أبي داود ت الأرنؤوط (2/ 306)
1079 - حدثنا مُسَدَد، حدثنا يحيي، عن ابن عَجلانَ، عن عمرِو بن شعيب، عن أبيه عن جدَّه: أن رسولَ الله - صلَّى الله عليه وسلم - نهى عن الشراء والبَيعِ في المسجد، وأن تُنشَدَ فيه ضَالَّةٌ، وأن يُنشَدَ فيه شِعرٌ، ونهى عن التَّحلُّقِ قبلَ الصَلاةِ يومَ الجمعة
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে বেচা-কেনা বা হারানো বস্তু খুঁজে পাওয়ার এলান করতে নিষেধ করেছেন...। (সুনানে আবু দাউদ-২/৩০৬, হাদীস-১০৭৯)। شعَيب الأرنؤوط উক্ত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন (যা প্রমাণযোগ্য)।

❖ আরেক হাদীসে এ বিষয়ে কঠিন ধমকি এসেছে-
 سنن الترمذي ت شاكر (3/ 602)
1321 - حَدَّثَنَا الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الخَلَّالُ قَالَ: حَدَّثَنَا عَارِمٌ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ العَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ قَالَ: أَخْبَرَنَا يَزِيدُ بْنُ خُصَيْفَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ ثَوْبَانَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " إِذَا رَأَيْتُمْ مَنْ يَبِيعُ أَوْ يَبْتَاعُ فِي المَسْجِدِ، فَقُولُوا: لَا أَرْبَحَ اللَّهُ تِجَارَتَكَ، وَإِذَا رَأَيْتُمْ مَنْ يَنْشُدُ فِيهِ ضَالَّةً، فَقُولُوا: لَا رَدَّ اللَّهُ عَلَيْكَ "
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কাউকে মসজিদে বেচা-কেনা করতে দেখলে বল, তোমার বেচা-কেনা লাভজনক না হোক। তেমনিভাবে কাউকে যদি মসজিদে হারানো বস্তুর এলান করতে দেখ তাহলে বল, আল্লাহ তোমার হারানো বস্তু ফিরিয়ে না দিন (অর্থাৎ এ কাজটি  খুবই নিন্দনীয়)। (জামে তিরমিযী-৩/৬০২, হাদীস-১৩২১;  সহীহ ইবনে খুযাইমা-১/৬২৪, হাদীস-১৩০৫)। হাদীসটি সহীহ

✔ অতএব মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহীহ কোরআন সুন্নাহ অনুসারে আমল করে, জাল ও ভিত্তিহীন বর্ণনা পরিহার করার তাওফীক দান করুন। আমীন

বর্তমানে ইসলামের জন্য যা করা দরকার,

ওয়াজ নয়, বর্তমানে ইসলামের জন্য যা করা দরকার
-----------------------------------------------------------------------------
 মাওলানা মুহিউদ্দীন কাসেমী (দা.বা.)

[বিষয়গুলো একান্তই আমার ভাবনা। প্রত্যেকেই নিজ নিজ জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে চিন্তা করে। তাই সহমত ও দ্বিমত স্বাভাবিক। কিন্তু অযাচিত-অনাকাক্সিক্ষত মন্তব্য অনভিপ্রেত।]
.
একজনের খাবার নেই; খাবারের অভাবে জীবন সঙ্কটাপন্ন।  তবে কাপড়চোপড় আছে মোটামুটি। এখন সামাজিক নিয়ম রক্ষার্থে আপনি তার বাড়িতে দামি কাপড় নিয়ে গেলেন। তার তো কাপড়ের চেয়ে হাজার গুণ বেশি খাবারের!
.
শীতকাল আসছে। চারদিকে মধ্যরাত অবধি ওয়াজ মাহফিল হবে। শ্রোতার সংখ্যাও কম নয়। বিষয়টি ইতিবাচক হলেও আমার দৃষ্টিতে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে তেমন উপকারী নয়। সবাই যে টাকাপয়সা বা সুনাম-সুখ্যাতির জন্য ওয়াজ করছে বা করাচ্ছে, ব্যাপারটি তা নয়। কারও কারও ইখলাস না থাকার মানে এই নয় যে, সবারই ইখলাস নেই। তবুও এতবেশি ওয়াজ মাহফিল করার দ্বারা ফায়দা হচ্ছে না।
প্রশ্ন হয় তাহলে ইসলামের সেবায় কী কাজ করা প্রয়োজন?
বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় কয়েকটি কাজ করা আবশ্যক মনে হচ্ছে :
০১. প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক মসজিদে নিয়মিত ইমাম নেই। থাকলেও ইমামের তেলাওয়াত শুদ্ধ নয়। ইমামের বেতনও অনেক কম। তাও কয়েক মাস বাকি! প্রতিটি মসজিদে বিশুদ্ধ তেলাওয়াতের অধিকারী ইমাম নিযুক্ত করে মোটামুটি যথেষ্ট বেতনের ব্যবস্থা করা দরকার। অথচ দেখা যায়, ইমামের বেতনের খবর নাই কিন্তু পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে বক্তা এনে ওয়াজ করায়!
০২. প্রতিটি মসজিদে মক্তব নেই। থাকলেও বিশুদ্ধ তেলাওয়াতের অধিকারী নুরানি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই। মক্তবে কুরআন তেলাওয়াত শিখানোর পাশাপাশি ফরজ আইন পরিমাণ দীনি জ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা আবশ্যক। পঞ্চম শ্রেণীতে ৩০ লাখ ছেলেমেয়ে অংশগ্রহণ করেছে; তাদের কয়জনে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারে? তাদের কুরআন তেলাওয়াত ও দীনি শিক্ষার ব্যবস্থা করা আমাদের দায়িত্ব নয়?
০৩. গ্রামেগঞ্জে ও মহল্লায় মহল্লায় সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের সুব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ইসলামে সুদের ভয়াবহতা সবারই জানা। সুদ হতে এ সমাজকে মুক্ত করার প্রধান উপকরণ হল করজে হাসানা। যে জাতি কোটি কোটি টাকা দান করতে পারে তাদেরকে বুঝালে কোটি কোটি টাকা করজে হাসানা দিতেও প্রস্তুত হবে। আমরা বুঝাতে পারি না, তাই দেয় না। ঋণ দিলে দানের সওয়াব পাওয়া যায়। একটি মাহফিলে লাখ লাখ টাকা খরচ করা হয়। অনেক মানুষ বারবার হজ ওমরা করে। তাদেরকে দীনের এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বুঝালে বুঝবে না? বারবার হজ-ওমরা করা একটি পিকনিকে পরিণত হয়েছে (নাউজুবিল্লাহ; ব্যতিক্রমদের কথা ভিন্ন)।
০৪. যার যার সমাজে ও মহল্লায় মুসুল্লিদের নিয়ে নিয়মিত পরামর্শ করা। দলমত নির্বিশেষে। এলাকায় ইসলামবিরোধী কোনো কাজ হলে বাধা দেওয়া। মহল্লাভিত্তিক সম্প্রীতি বজায় রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা করা।
০৫. ইসলামী সব দল, মত ও পথের লোকজনকে একত্রিত হয়ে ইসলামবিরোধী আইন-কানুন ও শিক্ষানীতির বিরোধিতা করা, প্রতিবাদ করা। কে কোন্ দলের, কোন্ মতের এটা দেখা হবে না। হেফাজত, জামায়াত, আহলে হাদিস, এমনকি আমরা যাদেরকে বিদাতি বলি তাদের সবাইকে নিয়ে বসা দরকার। কমন বিষয়গুলোতে কারও মতানৈক্য থাকার কথা নয়।
ভারতে দেওবন্দি, জামায়াতি, রেজভিসত সকল পথের আলেমদের নিয়ে মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড গঠিত হয়। মাও. কারী তৈয়্যব রহ. ও মাওলানা আবুল হাসান আলী মিয়া রহ. এর নেতৃত্বে।
পাকিস্তানের জামায়াতের আমীর মরহুম হুসাইন সাহেবের জানাযায় প্রথম কাতারে ছিলেন মাও. ফজলুর রহমান।
ভারতের আজমীরে জমিয়তের নেতৃত্বে সব পথ ও মতের আলেমদের নিয়ে বিশ্ব শান্তি সম্মেলন হচ্ছে।
ভারত ও পাকিস্তানের নজির বাংলাদেশে স্থাপন করা যায় না? বিষয়টি না বুঝার কারণে ক্ষতি যা হওয়ার ইতোমধ্যে হয়ে গেছে; তবুও যত দ্রুত বুঝব ক্ষতি ততই হ্রাস পাবে।
০৬. বাংলাদেশে কোনো সময় নিরপেক্ষ ভোটের আয়োজন হলে (যদিও অসম্ভব), সকল ইসলামী দল কেবল নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট করে নির্বাচন করতে পারে। সামান্য মতপার্থক্য সঙ্গে নিয়েই কিছু বিষয়ে একমত হয়ে কাজ করতে হবে। পারস্পরিক মতপার্থক্যগুলো থাকুক। কেয়ামত পর্যন্তই সেগুলো থাকবে।
০৭. মানহাজী ও ইজতেহাদী মতপার্থক্যগুলোর কারণে সমাজে একধরনের অনৈক্য কাজ করছে; যা ইতোপূর্বে কখনোই পরিলক্ষিত হয়নি। যুগযুগ ধরে হানাফী ফিকহ অনুযায়ী এদেশের মানুষ শরিয়াহর ওপর আমল করে আসছে। এর বিপরীত আরেকটি নতুন ধারা প্রবর্তনের কী দরকার? এ ধরনের বিরোধে কার ক্ষতি হয়েছে? নিরপক্ষে দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করা উচিত। এগুলো পরিহার করা উচিত। তবে তাহকীকের জন্যে হলে কোনো সমস্যা নেই।
০৮. প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে নিজে কুরআন-সুন্নাহর ওপর আমল করার চেষ্টা করা দরকার। সাহাবীদের আদর্শের অনুসারী হওয়া চাই। যখন যার ওপর আল্লাহর যে বিধান আবশ্যক হয় তা মেনে চলা আবশ্যক। নিজে ঠিক না হলে অন্যরা ঠিক হবে না। তৎসঙ্গে নিজের পরিবার ও নিকটজনদের দীনের ওপর চলার দাওয়াত দেওয়া। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে : يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَاراً “হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।”
সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা শুধু আলেম-ওলামা ও মুরুব্বিদের সমালোচনা করে বেড়ায়। অমুক দল কেন এটা করল না? অমুক মাওলানা একটা ডাক দিলেই তো বাংলাদেশে ইসলাম কায়েম হয়ে যেত! অমুক হুজুর কেন এ কাজ করল? তারা কেন এই কিতাব পড়ে? তারা কেন এই কাজ করে? ইত্যাদি। অথচ তাদের মুখে দাড়ি নেই, মাঝেমধ্যে নামায পড়ে, পরিবারে পর্দা নেই, কুরআন পড়তে জানে না। এরা অর্বাচীন কিংবা জ্ঞানপাপী।
ব্যক্তি থেকে পরিবার হয়ে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র-- এভাবে সর্বত্র ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিতে হবে।
-------------------------
পুনশ্চ : মসজিদভিত্তিতক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। মহল্লাবাসীর দীনি প্রায় সব প্রয়োজন মসজিদ হতেই পূরণ করা হোক। ঈমান-আমল-আখলাকের বাস্তবিক শিক্ষা হোক মসজিদে মসজিদে। সপ্তাহে কিংবা দুই সপ্তাহে একদিন মসজিদে আমলী মশক করা দরকার। অসংখ্য হাদিসে আছে, সাহাবায়ে কেরাম অজুর পদ্ধতি মুখে না বলে অজুর পানি আনিয়ে সবার সামনে অজু করে বলেছেন, এভাবে রাসুল সা. অজু করেছেন। তদ্রƒপ নামায রোযা হজ যাকাত সব বিষয় মসজিদে শিক্ষা দেওয়া হোক। সাহাবায়ে কেরামের যুগে প্রত্যেকটি মসজিদ এমনই ছিল। স্থানীয় ইমাম/খতিব/আলেমগণ আলোচনা করবেন, শিক্ষা দিবেন। প্রয়োজনে আশপাশের আলেম-ওলামাদের ডাকা যেতে পারে। এটাই ওয়াজ। লাখ লাখ টাকা খরচ করে চুক্তিবাদীদের দ্বারা ওয়াজ করানো বন্ধ হোক।

(Mohiuddin Kasemi)

আবু হানিফা রহ. ও তার অবদান,

আবু হানিফা রহ. ও তার অবদান,

যে মহামনীষীগণ ইসলামের বিধান সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করে তা অন্যান্য মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার জন্য আজীবন আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন তন্মধ্যে ইমাম আবু হানিফা রহ. ছিলেন অন্যতম।

কুরআন হাদিস গবেষণা তথা ইজতিহাদের ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। তাকে সমকালীন যুগে ফকীহদের সর্দার বলে গণ্য করা হত। এছাড়া তিনি ইরাকের কুফা নগরীর ‘মুফতী’ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ইলমী ময়দানে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি হানাফী মাযহাবের প্রবর্তক। আজো তিনি ইমাম আজম নামে প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন এবং প্রসিদ্ধ চার ইমামের মাঝে তাকেই শ্রেষ্ঠ ইমাম হিসেবে অভিহিত করা হয়।

নুমান ইবনে সাবিত ইবনে যূতি ইবনে মারযুবান (৬৯৯ — ৭৬৭ সালে ৮০ — ১৪৮হিজরী) উপনাম আবু হানিফা নামেই অত্যধিক পরিচিত, ছিলেন ফিকহশাস্ত্রের একজন প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ এবং হিজরী প্রথম শতাব্দীর একজন গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ব্যক্তিত্ব। ইসলামী ফিকহের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ও প্রসিদ্ব চারটি মাযহাবের একটি “হানাফী মাযহাব”-এর প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি।

জন্ম, নাম ও বংশধর

ইমাম আবু হানিফা ইরাকের কুফায় ৫ সেপ্টেম্বর ৬৯৯ ইংরেজী মোতাবেক ৮০ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর আসল নাম নুমান ইবনে সাবেত ইবনে যূতি। আবু হানিফা তার কুনিয়্যাত বা ডাকনাম। পরবর্তী যুগে তিনি ইমাম আবু হানিফা নামেই প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। বিশ্ববাসী তাকে আবু হানিফা নামেই বেশী চেনে। (মুসলিম মণীষা, আবদুল মওদুদ, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা)

উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের রাজত্বকালে ইমাম আবু হানিফা ইরাকের কুফা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ছয় বছর বয়সে আবদুল মালিক মৃত্যুবরণ করেন। ষোল বছর বয়সে তিনি পিতার সাথে হজ্জে গিয়েছিলেন তার পিতা সাবিত বিন যুতা কাবুল, আফগানিস্তানের একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তার পিতার বয়স যখন ৪০ বছর তখন আবু হানিফা জন্মগ্রহণ করেন। বংশধরের দিক থেকে তাকে অ-আরবীয় বলে ধরা হয়ে থাকে কারণ তার দাদার নামের শেষে যুতা। প্রখ্যাত মুসলিম ইতিহাসবিদ খতীবে বাগদাদী আবু হানিফার নাতি ইসমাইল বিন হামাদের বক্তব্য থেকে আবু হানিফার বংশ ব্যাখা দেন। অন্য আরেক ইতিহাসবিদ হামাদ আবু হানিফাকে পারসিক বংশ্বদ্ভূত বলে দাবি করেন। আবু হানিফার বংশ নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য মত হলো তিনি কাবুলের পারসিক বংশদ্ভূত।

 শিক্ষা জীবনের সূচনা :

প্রথমত- ইমাম আবু হানিফা রহ. ‘কূফা’ শহরেই ইলমে কালাম ও ইলমে ফিকাহ শিক্ষা করেন। অতঃপর কূফার শীর্ষস্থানীয় ফিকাহ শাস্ত্রবিদ হাম্মাদ রহ.-এর নিকট জ্ঞান আহরণ করতে থাকেন। তিনি দীর্ঘ আঠারো বছর ইমাম হাম্মাদের একান্ত সান্নিধ্যে জ্ঞানার্জনে নিমগ্ন থাকেন। অতঃপর ১২০ হিজরীতে স্বীয় ওস্তাদ ইমাম হাম্মাদের যখন ইন্তেকাল হয়। এ সময় তিনি উস্তাদের স্হলাভিষিক্ত হয়ে তাঁর শিক্ষাকেন্দ্রে কুফার ‘মাদ্রাসাতুর রায়’-এর পূর্ণদায়িত্ব গ্রহণ করেন ৷ এরপর তিনি কুফা শহর থেকে সফর করে দীর্ঘ ছয়টি বছর মক্কা-মাদীনা অবস্থান করে সেখানকার সকল শায়খদের নিকট থেকে ইলম হাসিল করেন।

প্রাথমিক জীবন বা ব্যবসায়িক জীবন :

ইমাম আবু হানিফার রহ. প্রাথমিক জীবন কেমন ছিল এ বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ বেশীকিছু উদ্ধৃত করেননি। তিনি ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ কাপড় ব্যবসায়ী। ইমাম আবু হানিফার পৈত্রিক পেশা ছিল কাপড়ের ব্যবসা। ইরান থেকে শুরু করে ইরাক, সিরিয়া ও হেজায পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলব্যপী বিপুল পরিমণ মুল্যবান রেশমী কাপড়ের আমদানী ও রফতানী হতো। পৈত্রিক এই ব্যবসার সুবাদেই তিনি প্রচুর বিত্তের মালিক ছিলেন। তৎকালীন বিশিষ্ট ওলামাগণের মধ্যে সম্ভবত তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি রাস্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা বা বিত্তবানদের হাদীয়া-তোহফা প্রাপ্তির পরোয়া না করে নিজ উপার্জনের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ, এলেমের সেবা এবং তাঁর নিকট সমবেত গরীব শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ব্যয়ভার নির্বাহ করার ব্যবস্হা করতেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। পিতা ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী । তাঁর মৃত্যুর পর এই ব্যাবসার দায়িত্ব নিতে হয় যুবক ইমাম আবু হানিফাকে। (আল ফিকহুল আকবার, ভূমিকা, ইমাম আবু হানিফার জীবন ও কর্ম, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন)।

তাঁর অসামান্য দক্ষতা ও নিষ্ঠায় ব্যাবসা প্রসারিত করার পাশাপাশি কাপড় তৈরির এক কারখানা স্থাপন করেন। যা কিছু দিনের মধ্যেই অনন্য হয়ে ওঠে। ব্যবসায় তার সততার পরিচয় পেয়ে দিগ্বিদিক থেকে লোকেরা তার দোকানে ভিড় জমাতেন। এভাবে তিনি জন মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত লাভ করলেন। ইমাম শাবী রহ. তাকে ইলমের ব্যাপারে উৎসাহিত করার আগ পর্যন্ত তিনি এ ব্যবসাকেই নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছিলেন। (উসুলুদ্দিন ইনদা আবি হানিফা, পৃষ্ঠা- ৬৬)

 ব্যবসা জীবন থেকে শিক্ষা জীবনে পদার্পণ :

কিশোর বয়স থেকেই ইমাম সাহেব পিতার ব্যবসার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। ব্যবসায়ীক কাজেই তাঁকে বিভিন্ন বাজার ও বাণিজ্য কেন্দ্রে যাতায়াত করতে হতো। ঘটনাচক্রে একদিন ইমাম শাবীর রহ. সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়ে যায়। প্রথম দর্শনেই ইমাম শাবী আবু হনীফার নিষ্পাপ চেহারার মধ্যে প্রতিভার স্ফুরণ লক্ষ করেছিলেন।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে বৎস! তুমি কি কর? এ পথে তোমাকে সব সময় যাতায়াত করতে দেখি? ইমাম সাহেব জবাব দিলেন, আমি ব্যবসা করি। ব্যবসার দায়িত্ব পালনার্থেই ব্যবাসায়ীদের দোকানে দোকানে আমাকে যাওয়া-আসা করতে হয়। ইমাম শাবী রহ. পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, এটা তো তোমার লেখাপড়ার বয়স। কোন আলেমের শিক্ষায়তনেও কি তোমার যাতায়াত আছে? আবু হানিফা সরলভাবেই জবাব দিলেন, সেরূপ সুযোগ আমার খুব কমই হয়। কিছুক্ষণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই ইমাম শাবী আবু হানিফাকে জ্ঞানার্জনে মনোযোগী হওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তুললেন। ইমাম আবু হানিফা বলেন, ইমাম শাবীর রহ সেই আন্তরিকতাপূর্ণ উপদেশবাণী গুলো আমার অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করল এবং এরপর থেকেই আমি বিপনীকেন্দ্রগুলোতে আসা-যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা কেন্দ্রেও যাতায়াত শুরু করলাম। এ সময় আবু হানিফার রহ. বয়স ছিল উনিশ বা বিশ বছর।(আল ফিকহুল আকবার, ভূমিকা, ইমাম আবু হানিফার জীবন ও কর্ম,ইসলামিক ফাউণ্ডেশন)

হাদিসশাস্ত্রের শিক্ষা গ্রহণ :

ফিকাহ অধ্যায়নের এরপর তিনি হাদিস শিক্ষার জন্য তদানিন্তন হাদিস বেত্তাদের খিদমতে হাজির হন এবং শিক্ষা লাভ করেন। তখনও কোন প্রনিধান যোগ্য হাদিস গ্রন্থ সংকলিত হয়নি। কোন একজন মুহাদ্দিস সকল হাদিসের হাফিজ ছিলেন না। প্রথমে তিনি কুফায় অবস্থানরত মুহাদ্দিসদের থেকে হাদিস শেখেন। এরপর তিন বসরা যান। সেখানে হজরত কাতাদাহ রহ.-এর খিদমতে হাজির হন এবং হাদিসের দরস হাসিল করেন। তারপর ইমাম আবু হানিফা রহ. হজরত শুবা রহ.-এর দরসে যোগ দেন। তাঁকে হাদিস শাস্ত্রে ‘আমিরুল মুমিনিন’ বলা হয়। কুফা ও বসরার পর ইমাম আবু হানিফা হারামাইন শরিফাইন এর দিকে দৃষ্টিপাত করেন । প্রথমে তিনি মক্কা গেলেন এবং সেখানে তিনি হাদিসবিদ হজরত আতা ইবনে আবু রিবাহ রহ. -এর দরবারে যান এবং দরসে শামিল হয়ে শিক্ষা অর্জন করেন। ১১৫ হিজরিতে আতা রহ. ইন্তেকাল করলে তিনি মক্কায় চলে আসেন এবং হজরত ইকরামা রহ. -এর কাছ থেকেও হাদিসের সনদ লাভ করেন। (আল ফিকহুল আকবার, ভূমিকা, ইমাম আবু হানিফার জীবন ও কর্ম, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন)

ফিকাহশাস্ত্রে ইমাম আবু হানিফার রহ. অবদান :

যুক্তিবিদ্যাসহ অন্যান্য বিষয়ে অসাধারণ জ্ঞানে গুণান্বিত হওয়ার পাশাপাশি ইমাম আবু হানিফা রহ. ইসলামী শরীয়তের বিধিবিধানের উপর গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। ইমাম শাবী রহ. -এর অনুপ্রেরণায় আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক তাওফিক প্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি ফিক্বহের জগতে পদার্পন করেন। ইলমে দ্বীন শিক্ষার্জনের  মানসে বিভিন্ন মুহাদ্দিস ও ফকীহদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাদের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন। ফিকহের উপর তার এত আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল যে, তিনি হাম্মাদ ইবনে আবি সুলায়মান রহ. এর সান্নিধ্যে সুদীর্ঘ্য ১৮ টি বছর ইলমে দ্বীন শিক্ষার্জনে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। কুরআন হাদিস গবেষণা তথা ইজতিহাদের ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। তাকে সমকালীন যুগে ফকীহদের সর্দার বলে গণ্য করা হত। এছাড়া তিনি ইরাকের কুফা নগরীর ‘মুফতী’ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ইলমী ময়দানে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি হানাফী মাযহাবের প্রবর্তক। আজো তিনি ইমাম আজম নামে প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন এবং প্রসিদ্ধ চার ইমামের মাঝে তাঁকেই শ্রেষ্ঠ ইমাম হিসেবে অভিহিত করা হয়। বর্তমানে ইরাক, চীন, ভারত, পাকিস্তান,বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ নিজেদের জীবনচলার পথে উদ্ভুত সমস্যার সমাধানে ইসলামের দিকনির্দেশনা হিসেবে তার মাজহাবকে মেনে চলেন।এমনকি উসমানী সাম্রাজ্যের অন্তর্গত এলাকাসমুহে আবু হানিফা রহ.-এর মাজহাবকে রাষ্ট্রীয়ভাবে রাষ্ট্রে প্রয়োগ করা হত। (উসুলুদ্দিন ইনদা আবি হানিফা-৯৯)

ইমাম আবু হানিফা রহ. একজন তাবেয়ী ছিলেন :

মূলত সাহাবী আনাস ইবনে মালিক রা. -এর সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার কারনে ইমাম আবু হানিফাকে রহ. তাবেয়ী বলা হয়ে থাকে। তখন পৃথিবীতে অনেক সাহাবী জীবিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রসিদ্ধ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আল হারিছ রা. [মৃত্যু: ৮৫ হিজরি] হজরত ওয়াছিলা ইবনে আল আস কাআ রা. [মৃত্যু: ৯১ হিজরি] হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আওফা রা. [মৃত্যু: ৮৫ হিজরি]; হজরত সাআল ইবনে সায়াদ রা. [মৃত্যু: ৯১ হিজরি] হজরত আনাস ইবনে মালিক রা. [মৃত্যু: ৯৩ হিজরি] হজরত মাহমুদ ইবনে লবিদ আল আশহালি রা. [মৃত্যু: ৯৬ হিজরি] হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ইউছর আল মাজানী রা. [মৃত্যু: ৯৬ হিজরি] হজরত মাহমুদ ইবনে আরবাবি আল আনসারী রা.[মৃত্যু: ৯৯ হিজরি] হজরত আল হারমাম ইবনে জিয়াদ আল বাহিলী রা. [মৃত্যু: ১০২ হিজরি] এবং হজরত আবু আল তোফায়েল আমীর ইবনে ওয়াছিলা আল কিনানী রা. [মৃত্যু: ১০২ হিজরি] ওয়াসেনা ইবনুল আসকা রা. (ওফাত ৮৫ হিজরী)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । ইমাম আবু হানিফা রহ. এদের সকলের না হলেও সাত জনের সাক্ষাত লাভ করেছিলেন এবং তিন জনের কাছে থেকে ইলমে দাহিসের দরস হাসিল করেছিলেন সুতরাং তিনি তাবেয়ী। (আল ফিকহুল আকবার, ভূমিকা, ইমাম আবু হানিফার জীবন ও কর্ম, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন)

ফাতাওয়ার ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফার রহ অনুসৃত নীতি:

যে কোন সমস্যার সমাধান অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফার রহ অনুসৃত নীতি ছিল, প্রথমে কুরআনের শরণাপন্ন হওয়া। কুরআনের পর হাদিস শরীফের আশ্রয় গ্রহণ করা। হাদিসের পর সাহাবায়ে কেরাম গৃহীত নীতির উপর গুরুত্ব দেওয়া। উপরোক্ত তিনটি উৎসের মধ্যে সরাসরি সামাধান পাওয়া না গেলে তিনটি উৎসের আলোকে বিচার-বুদ্ধির (কেয়াসের) প্রয়োগ করা। তাঁর সুস্পস্ট বক্তব্য ছিল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোন ধরনের হাদিস বা সাহাবীগণের অভিমতের সাথে যদি আমার কোন বক্তব্যকে সাংঘর্ষিক মনে হয়, তবে আমার বক্তব্য অবশ্য পরিত্যাজ্য হবে। হাদিস এবং আছারে সাহাবা দ্বারা যা প্রমাণিত সেটাই আমার মাযহাব। (তাফসীরে মাযহারী, খায়রাতুল-হেসান)

ইমাম ইবনে হাযম রহ. বলেন, আবু হানীফার রঃ সকল ছাত্রই এ ব্যাপারে একমত যে, নিতান্ত দূর্বল সনদযুক্ত একখানা হাদিসও তাঁর নিকট কেয়াসের তুলনায় অনেক বেশী মুল্যবান দলিলরূপে বিবেচিত হবে। (খায়রাতুল-হেসান) সম্ভবতঃ এ কারণেই পরবর্তী যুগে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যে সব কালজয়ী প্রতিভার জন্ম হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশ ইমাম আবু হানীফার রহ. মাযহাব অনুসরণ করেছেন। হযরত মোজাদ্দেদ আলফেসানী রঃ বক্তব্য হচ্ছে- এই ফকীরের উপর প্রকাশিত হয়েছে যে, এলমে-কালামের বিতর্কিত বিষয়গুলি মধ্যে হক হানাফী মাযহাবের দিকে এবং ফেকাহর বিতর্কিত মাসআলাগুলির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হক হানাফী মাযহাবের দিকে এবং খুব কম সংখ্যক মাসআলাই সন্দেহযুক্ত। (মাবদা ও মাআদ)
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী রহ. হারামাইন শরীফে কাশফ যুগে যে সব তথ্য অবগত হয়েছেন, সে সবের আলোকে লিখেছেন- হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আমাকে অবগত করেছেনযে, হানাফী মাযহাব একটি সর্বোত্তম তরিকা। ইমাম বুখারীর সময়ে যেসব হাদিস সংকলিত হয়েছে, সেগুলোর তুলনায় আবু হানীফার রহ. সিদ্ধান্তগুলি সুন্নতে-নববীর সাথে অনেক বেশী সামন্জস্যপূর্ণ। (ফুযুলুল-হারামাইন)

সুতরাং যারা এ কথা বলতে চায় যে, হানাফী মাযহাব সহীহ হাদীসের সাথে সামন্জস্যপূর্ণ নয় বা ইমাম আবু হানীফা রঃ বহু ক্ষেত্রে হাদিসের প্রতিকূলে অবস্হান গ্রহণ করেছেন, তাদের বক্তব্য যে নিতান্তই উদ্ভট তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। বরং হানাফী মাযহাব হচ্ছে কুরআন-সুন্নাহর এমন এক যুক্তিগ্রাহ্য ও সুবিন্যস্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ যা সর্বযুগের মানুষের নিকটই সমভাবে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে।

শিক্ষাদান পদ্ধতি:

সে জামানার দরসের হালকা বা শিক্ষাঙ্গনের চিত্র ছিল, উস্তাদ কোন একটি উচ্চ আসনে বসে তকরীর করতেন। ছাত্রগণ চারদিকে হাঁটু গেড়ে বসে নিতান্ত নিবিষ্টতার সাথে তকরীর শ্রবণ করতেন। অনেকেই তকরীর শুনে তা আয়ত্ব করার পাশাপাশি লিপিবদ্ধ করে রাখতেন। এসব তকরীর উস্তাদ কর্তৃক অনুমোদিত হলে যিনি তকরীর করতেন তাঁর নামেই সেগুলো গ্রন্হাকারে প্রকাশিত হতো। হিজরী প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দির সংকলিত হয়েছে। ইমাম আবু হানীফার রঃ শিক্ষাদান কার্যক্রমেও সে পদ্ধতিই অনুসরণ করা হতো। কোন কোন মাসআলায় তর্ক শুরু হয়ে যেত। সে তর্ক কয়েকদিন পর্যন্তও চলতো। শেষ পর্যন্ত কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে যা সাব্যস্ত হতো সেটাই লিপিবদ্ধ হতো। কোন কোন মাসআলায় উস্তাদ ও সাগরেতের মধ্যকার মতভেদ অমীমাংসিতই থেকে যেত। সেই মত পার্থক্যগুলিও স্ব স্ব যুক্তি সহকারেই কিতাব লিপিবদ্ধ করা হতো। এভাবেই হানাফী মাযহাবের মৌলিক গ্রন্হগুলি সংকলিত হয়েছে।

ইমাম সাহেবের দরসগাহ সপ্তাহে দুইদিন ছুটি থাকতো। শুক্রবার ও শনিবার। শনিবার দিনটি তিনি ব্যবসায়িক কাজকর্ম এবং পারিবারিক ব্যস্ততার জন্য নির্দিষ্ট করে রাখতেন। শুক্রবার দিন জুমার প্রস্তুতি এবং জুমাবাদ তার বাসস্হানে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনেরা সমবেত হতেন। এ দিন বিশেষ যত্নের সাথে অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের খানা প্রস্তুত হতো। ইমাম সাহেব সমবেত সবাইকে নিয়ে খানা খেতেন। কর্মদিবস গুলিতে তিনি এশরাক থেকে চাশতের সময় পর্যন্ত ব্যবসায়িক কাজকর্ম করতেন। জোহরের পর থেকে সন্ধা পর্যন্ত শিক্ষাদান কার্যে নিয়োজিত থাকতেন। ফতোয়া দানের জন্যও এ সময়টাই নির্ধারিত ছিল। তবে অবস্হা ভেদে এ সময়সূচীর মধ্যে পরিবর্তনও হতো। দরসের মজলিসে শিক্ষার্থীগণের সাথে অনেক সাধারণ লোকও শরীক হতেন। তর্কচ্ছলে অনেকে আপত্তিকর মন্তব্যও করত। কিন্তু কারো প্রতি বিরক্তি প্রকাশ না করে পরম ধৈর্যের সাথে জবাব দিতেন। চরম ধৃষ্ঠতা প্রদর্শনের মোকাবেলাতেও তাঁর ধৈর্যচ্যুতি ঘটত না। প্রায সময়ই তিনি একটা কবিতাংশ আবৃত্তি করতেন। যা অর্থ ছিলো- ইয়া আল্লাহ ! যাদের অন্তর আমাদের দিক থেকে সংকুচিত হয়ে আছে, আমাদের অন্তর তাদের প্রতি প্রশস্ত করে দাও। (আবু যোহরা)

মুসলিম-বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জ্ঞানতৃষ্ঞা মিটানোর লক্ষ্যে সমবেত শিক্ষার্থীগণের বিচারেও ইমাম আবু হানীফা রঃ ছিলেন তাবেয়ীগণের মধ্যে কুরআন-হাদীস এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞানী এবং তাকওয়া পরহেজগারীতে অনন্য ব্যক্তিত্ব। ইমাম সাহেবের অনুপম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বদৌলতে সে যুগে এমন কিছু সংখ্যক উজ্জল ব্যক্তিত্বের সৃষ্টি হয়েছিল, যাঁরা মুসলিম উম্মাহর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আকাশে এক একজন জ্যোতিষ্ক হয়ে রয়েছেন। ইমাম সাহেবের সরাসরি সাগরেদগণের মধ্যে ২৮ ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে কাজী (বিচারক) এবং শতাধীক ব্যক্তি মুফতীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসালামের ইতিহাসে এক ব্যক্তির প্রচেষ্টায় এত বিপুল সংখ্যক প্রাজ্ঞ ব্যক্তির আবির্ভাব আর কোথাও দেখা যায় না।

 কাজীর পদ প্রত্যাখান

৭৬৩ আব্বাসীয় বংশের আল-মনসুর আবু হানিফাকে রাজ্যের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দেন কিন্তু স্বাধীনভাবে থাকার জন্য তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। তার পরীবর্তে তার ছাত্র আবু ইউসুফকে প্রধান বিচারপতির দ্বায়িত দেওয়া হয়। প্রস্তাব প্রত্যাখানের ব্যাপারে আবু ইউসুফ আল মনসুরকে ব্যাখা দেন তিনি নিজেকে এই পদের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না। আল-মনসুরের এই পদ প্রস্তাব দেওয়ার পেছেনে তার নিজস্ব কারণ ছিল, আবু হানিফা প্রস্তাব প্রত্যাখান করার পর মনসুর তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করেন। এই অভিযোগের ব্যাখ্যায় আবু হানিফা বলেন, “আমি যদি মিথ্যাবাদী হই তাহলে প্রস্তাব প্রত্যাখান করার ব্যাপারে আমার মতামত সঠিক, কারণ কিভাবে আপনি প্রধান বিচারপতির পদে একজন মিথ্যাবাদিকে বসাবেন।” এই ব্যাখার উত্তরে আল-মনসুর আবু হানিফাকে গ্রেফতার করেন ও তাকে নির্যাতন করে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। এমনকি বিচারকরা সিদ্ধান্ত নিতেন কে তার সাথে দেখা করতে পারবে।

 ইন্তেকাল

১৫ রজব ১৫০ হিজরি ৭৬৭ খ্রিস্তাব্দে তিনি কারাগারে ইন্তেকাল করেন। বাগদাদের কাজী হাসান ইবনে আম্মারাহ তাঁর গোসল দেন ও কাফন পরান। জোহরের পর তাঁর প্রথম নামাজে জানাজাহ অনুষ্ঠিত হয়। অগণিত লোক এতে শরিক হয়। পড়ে আসর পর্যন্ত আরও ছয় বার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং আসরের নামাজের পর তাঁর অয়াসিয়ত অনুযায়ী খায়জরান কবরস্থানে দাফন করা হয়। দাফনের পর ২০ দিন পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মানুষ কবরে তাঁর জানাজার নামাজ আদায় করেন। তার মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার নয়। কেউ কেউ বলেন আবু হানিফা আল মনসুরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের চেষ্ঠা করেন এ জন্য তাকে জেলখানর ভেতর মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। পরবর্তীতে, অনেক বছর পর বাগদাদের পাশে আধামিয়াতে আবু হানিফ মসজিদ নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয় আবু হানিফার নামে।

রচনাবলী ২০টি প্রসিদ্ধ গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হলো- ১. আল-ফিকাহুল আকবর। ২. আল-ফিকাহুল আবসাত। ৩. কিতাব আল আলিম অয়াল মুতাআল্লিম। ৪. আল-অসিয়া। ৫. আর-রিসালা। ৬. মুসনাদ আবু হানিফা। ৭. অসিয়া ইলা ইবনিহি হাম্মাদ। ৮. অসিয়া ইলা তিল মিজিহি ইউসুফ ইবনে খালিদ। ৯. অসিয়া ইলা তিল মিজিহি আল কাজী আবি ইউসুফ। ১০. রিসালা ইলা উসমান আল বাত্তি। ১১. আল কাসিদা আল কাফিয়া (আননুমানিয়া)। ১২. মুজাদালা লি আহাদিদ দাহ রিন। ১৩. মারিফাতুল মাজাহিব। ১৪. আল জাওয়াবিত আস সালাসা। ১৫. রিসালা ফিল ফারাইয। ১৬. দুআউ আবি হানিফা। ১৭. মুখাতাবাতু আবি হানিফা মাআ জাফর ইবনে মুহাম্মদ। ১৮. বাআজ ফতোয়া আবি হানিফা। ১৯. কিতাবের মাক সুদ ফিস সারফ। ২০. কিতাবু মাখারিজ ফিল হিয়াল।

ইমাম আবু হানিফা-রহ. এর মর্যাদা সম্পর্কে মনীষীদের অভিমত:

ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর প্রশংসা নিয়ে জগৎবিখ্যাত ওলামায়ে কেরামদের বেশকিছু বক্তব্য পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের বক্তব্য উল্লেখ করা হলো- ১. ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেছেন, ফিক্বহের ব্যাপারে মানবজাতি ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর পরিবারভুক্ত। ২. ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন রহ. বলেন, তিনি হাদীস গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ ব্যক্তি ছিলেন; আমি কাউকে শুনিনি তাকে দুর্বল বলতে। ৩. আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেন, তিনি ইলম, তাকওয়া, যুহদ ও আখিরাতকে অগ্রাধিকার দেয়ায় ছিলেন অতুলনীয়। ৪. তার ইন্তিকালের সংবাদ শুনে শুবা ইবনে হাজ্জাজ আল আতকী রহ. বলেন, ইমাম আবু হানিফা রহ. -এর সাথে কুফার ফিক্বহ চলে গেল। আল্লাহ তায়ালা তার এবং আমাদের উপর রহমত করুন। ৫. ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, যদিও কিছু বিষয়ে লোকেরা ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর বিরোধিতা করে থাকে এবং তার সিদ্ধান্ত দেয়া বিষয়গুলোকে প্রত্যাখ্যান করে তবে, কেউ কখনো তার জ্ঞান-গরিমা, বুঝ শক্তি নিয়ে সন্দেহ করেনি।

মুহাজির সাহাবীঃ ১. হযরত আবু বকর (রাঃ) ২. হযরত উমর ফারুক (রাঃ) ৩. হযরত উসমান (রাঃ) ৪. হযরত আলী মোর্তাজা (রাঃ)

মুহাজির সাহাবীঃ
১. হযরত আবু বকর (রাঃ)
২. হযরত উমর ফারুক (রাঃ)
৩. হযরত উসমান (রাঃ)
৪. হযরত আলী মোর্তাজা (রাঃ)
৫. হযরত হামজা (রাঃ)
৬. হযরত যায়েদ বিন হারেছা (রাঃ)
৭. হযরত আবু কাবশাহ সুলাইম (রাঃ)
৮. হযরত আবু মারছাদ গানাভী (রাঃ)
৯. হযরত মারছাদ বিন আবু মারছাদ(রাঃ)
১০. হযরত উবাইদা বিন হারেছ(রাঃ)
১১. হযরত তোফায়েল বিন হারেছ(রাঃ)
১২. হযরত হুসাইন বিন হারেছ (রাঃ)
১৩. হযরত আউফ বিন উসাসা (রাঃ)
১৪. হযরত আবু হুযায়ফা (রাঃ)
১৫. হযরত ছালেম (রাঃ)
১৬. হযরত সুহইব বিন সিনান (রাঃ)
১৭. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন জাহাশ(রাঃ)
১৮. হযরত উক্বাশা বিন মিহসান(রাঃ)
১৯. হযরত শুজা’ বিন ওহাব (রাঃ)
২০. হযরত ওতবা বিন রবীআহ (রাঃ)
২১. হযরত ইয়াযীদ বিন রুকাইশ (রাঃ)
২২. হযরত আবু সিনান (রাঃ)
২৩. হযরত সিনান বিন আবু সিনান(রাঃ)
২৪. হযরত মুহরিয বিন নাজলা (রাঃ)
২৫. হযরত রবীআ’ বিন আক্সাম (রাঃ)
২৬. হযরত হাতেব বিন আমর (রাঃ)
২৭. হযরত মালেক বিন আমর (রাঃ)
২৮. হযরত মিদ্লাজ বিন আমর (রাঃ)
২৯. হযরত সুওয়ায়েদ ইবনে মাখশী(রাঃ)
৩০. হযরত উৎবা বিন গাযওয়ান (রাঃ)
৩১. হযরত জুবাইর বিন আউওয়াম(রাঃ)
৩২. হযরত হাতেব বিন আবিবালতাআহ(রাঃ)
৩৩. হযরত সা’দ বিন খাওলা (রাঃ)
৩৪. হযরত মুসআব বিন উমায়ের (রাঃ)
৩৫. হযরত মাসউদ বিন সা’দ (রাঃ)
৩৬. হযরত আঃ রহমান বিন আউফ(রাঃ)
৩৭. হযরত সা’দ বিন আবু উবায়দা(রাঃ)
৩৮. হযরত উমায়ের বিনআবিওয়াক্কাস(রাঃ)
৩৯. হযরত মিক্বদাদ বিন আমর (রাঃ)
৪০. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ(রাঃ)
৪১. হযরত মাসউদ বিন রাবীআ (রাঃ)
৪২. হযরত যুশ্ শিমালাইন (রাঃ)
৪৩. হযরত খাব্বাব বিন আরাত (রাঃ)
৪৪. হযরত বিলাল বিন রবাহ্ (রাঃ)
৪৫. হযরত আমের বিন ফুহায়রা (রাঃ)
৪৬. হযরত ছুহাইব বিন সিনান (রাঃ)
৪৭. হযরত তালহা বিন উবাইদুল্লাহ্(রাঃ)
৪৮. হযরত আবু সালমা বিন আব্দুলআসাদ(রাঃ)
৪৯. হযরত শাম্মাস বিন উসমান (রাঃ)
৫০. হযরত আকরাম বিন আবুল আকরাম(রাঃ)
৫১. হযরত আম্মার বিন ইয়াছির (রাঃ)
৫২. হযরত মুআত্তিব বিন আউফ (রাঃ)
৫৩. হযরত যায়েদ ইবনে খাত্তাব(রাঃ)
৫৪. হযরত আমর বিন সুরাকা (রাঃ)
৫৫. হযরত ওয়াকেদ বিন আব্দুল্লাহ্(রাঃ)
৫৬. হযরত খাওলা বিন আবু খাওলা(রাঃ)
৫৭. হযরত আমের বিন রবীআহ (রাঃ)
৫৮. হযরত আমের বিন হারিছ (রাঃ)
৫৯. হযরত আমের বিন আব্দুল্লাহ্(রাঃ)
৬০. হযরত খালেদ বিন বুকাইর (রাঃ)
৬১. হযরত ইয়ায বিন গানাম (রাঃ)
৬২. হযরত সাঈদ বিন যায়েদ (রাঃ)
৬৩. হযরত উসমান বিন মাজউন (রাঃ)
৬৪. হযরত সাইব বিন উসমান (রাঃ)
৬৫. হযরত কুদামা বিন মাজউন (রাঃ)
৬৬. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাজউন(রাঃ)
৬৭. হযরত মা’মার বিন হারেছ (রাঃ)
৬৮. হযরত আবু উবায়দা ইবনুলজাররাহ(রাঃ)
৬৯. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাখ্রামা(রাঃ)
৭০. হযরত খাব্বাব মাওলা উৎবাবিনগযওয়ান(রা)
৭১. হযরত আবুস্ সাইব উসমান বিনমাজউন(রাঃ)
৭২. হযরত আমর বিন আবু সারাহ (রাঃ)
৭৩. হযরত সাকাফ বিন আমর (রাঃ)
৭৪. হযরত মুজায্যার বিন যিয়াদ(রাঃ)
৭৫. হযরত খাব্বাব ইবনুল মুনযির (রাঃ)
৭৬. হযরত উমায়ের বিন আবীওয়াক্কাছ(রাঃ)
৭৭. হযরত মিকদাদ বিন আমর (রাঃ)
৭৮. হযরত নোমান বিন আসার বিনহারেস(রাঃ)
৭৯. হযরত মিহ্জা’ মাওলা উমরফারুক(রাঃ)
৮০. হযরত ওহাব বিন আবী সারাহ(রাঃ)
আনসার সাহাবীঃ
৮১. হযরত সা’দ বিন মুআজ (রাঃ)
৮২. হযরত আমর বিন মুআজ (রাঃ)
৮৩. হযরত হারেস বিন আউস (রাঃ)
৮৪. হযরত হারেস বিন আনাস (রাঃ)
৮৫. হযরত আব্বাদ বিন বিশর (রাঃ)
৮৬. হযরত সালামা বিনসাবেত(রাঃ)
৮৭. হযরত হারেস বিন খাযামা(রাঃ)
৮৮. হযরত মুহাম্মদ বিন মাসলামা(রাঃ)
৮৯. হযরত সালামা বিন আসলাম(রাঃ)
৯০. হযরত উবায়েদ বিন তাইয়িহান(রাঃ)
৯১. হযরত কাতাদা বিন নোমান(রাঃ)
৯২. হযরত উবায়েদ বিন আউস (রাঃ)
৯৩. হযরত নসর বিন হারেস (রাঃ)
৯৪. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন তারেক(রাঃ)
৯৫. হযরত আবু আব্স বিন জব্র (রাঃ)
৯৬. হযরত আবু বুরদাহ্ হানী বিননিয়্যার(রাঃ)
৯৭. হযরত আসেম বিন সাবেত (রাঃ)
৯৮. হযরত মুআত্তিব বিন কুশাইর (রাঃ)
৯৯. হযরত আমর বিন মা’বাদ (রাঃ)
১০০. হযরত সাহল বিন হুনাইফ (রাঃ)
১০১. হযরত মুবাশ্শির বিন আব্দুলমুনযির(রাঃ)
১০২. হযরত রিফাআ বিন আঃ মুনযির(রাঃ)
১০৩. হযরত খুনাইস বিন হুযাফা (রাঃ)
১০৪. হযরত আবু সাবরা কুরাইশী(রাঃ)
১০৫. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সালামা(রাঃ)
১০৬. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সুহাইল(রাঃ)
১০৭. হযরত সা’দ বিন মুআয (রাঃ)
১০৮. হযরত উমায়ের বিন আউফ (রাঃ)
১০৯. হযরত আমের বিন সালামা(রাঃ)
১১০. হযরত ছফওয়ান বিন ওহাব (রাঃ)
১১১. হযরত ইয়ায বিন বুকাইর (রাঃ)
১১২. হযরত সা’দ বিন উবায়েদ (রাঃ)
১১৩. হযরত উওয়াইম বিন সায়েদাহ(রাঃ)
১১৪. হযরত রাফে বিন আনজাদা(রাঃ)
১১৫. হযরত উবায়েদ বিন আবুউবয়েদ (রাঃ)
১১৬. হযরত সা’লাবা বিন হাতেব(রাঃ)
১১৭. হযরত আবু লুবাবাহ আব্দুলমুনযির(রাঃ)
১১৮. হযরত হারেস বিন হাতেব(রাঃ)
১১৯. হযরত আসেম বিন আদী (রাঃ)
১২০.হযরত আনাছ বিন কাতাদা(রাঃ)
১২১. হযরত মাআন বিন আদী (রাঃ)
১২২. হযরত সাবেত বিন আকরাম(রাঃ)
১২৩. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন ছাহল(রাঃ)
১২৪. হযরত যায়েদ বিন আসলাম(রাঃ)
১২৫. হযরত রিব্য়ী বিনরাফে’ (রাঃ)
১২৬. হযরত সা’দ বিন যায়েদ (রাঃ)
১২৭. হযরত সালমা বিন সালামা (রাঃ)
১২৮. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন যায়েদ(রাঃ)
১২৯. হযরত আসেম বিন কায়েস (রাঃ)
১৩০. হযরত আবুস্ সয়্যাহ বিননোমান(রাঃ)
১৩১. হযরত আবু হাব্বাহ বিন আমর (রাঃ)
১৩২. হযরত হারেস বিন নোমান (রাঃ)
১৩৩. হযরত খাওয়াত বিন যুবাইর (রাঃ)
১৩৪. হযরত মুনযির বিন মুহাম্মদ (রাঃ)
১৩৫. হযরত আবু আকীল আব্দুর রহমান (রাঃ)
১৩৬. হযরত আবু দুজানা (রাঃ)
১৩৭. হযরত সা’দ বিন খায়সামা (রাঃ)
১৩৮. হযরত মুনযির বিন কুদামা (রাঃ)
১৩৯. হযরত মালেক বিন কুদামা(রাঃ)
১৪০. হযরত হারেস বিন আরফাজা(রাঃ)
১৪১. হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ(রাঃ)
১৪২. হযরত মালেক বিন নুমায়লা(রাঃ)
১৪৩. হযরত খারেজা বিন যায়েদ(রাঃ)
১৪৪. হযরত সা’দ বিন রবী’ (রাঃ)
১৪৫. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিনরাওয়াহা(রাঃ)
১৪৬. হযরত বশির বিন সা’দ (রাঃ)
১৪৭. হযরত সিমাক বিন সা’দ (রাঃ)
১৪৮. হযরত সুবাঈ বিন কায়েস (রাঃ)
১৪৯. হযরত আব্বাদ বিন কায়েস(রাঃ)
১৫০. হযরত ইয়াযিদ বিন হারেস(রাঃ)
১৫১. হযরত খোবায়ের বিন য়াসাফ(রাঃ)
১৫২. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন কায়েস(রাঃ)
১৫৩. হযরত হারিস বিন যিয়াদ (রাঃ)
১৫৪. হযরত তামীম বিন য়াআর (রাঃ)
১৫৫. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উমায়ের(রাঃ)
১৫৬. হযরত যায়েদ বিন মুযাইন (রাঃ)
১৫৭. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উরফুতাহ্(রাঃ)
১৫৮. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিনরবী’ (রাঃ)
১৫৯. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিনআব্দুল্লাহ্(রাঃ)
১৬০. হযরত আউস বিন খাওলা (রাঃ)
১৬১. হযরত যায়েদ বিন উবায়েদ(রাঃ)
১৬২. হযরত উকবাহ বিন ওহাব (রাঃ)
১৬৩. হযরত রিফাআহ বিন আমর (রাঃ)
১৬৪. হযরত উসায়ের বিন আসর (রাঃ)
১৬৫. হযরত মা’বাদ বিন আব্বাদ(রাঃ)
১৬৬. হযরত আমের বিন বুকাইর (রাঃ)
১৬৭. হযরত নওফল বিন আব্দুল্লাহ্(রাঃ)
১৬৮. হযরত উবাদা বিন সামেত(রাঃ)
১৬৯. হযরত নোমান বিন মালেক(রাঃ)
১৭০. হযরত সাবেত বিন হায্যাল(রাঃ)
১৭১. হযরত মালেক বিন দুখশুম (রাঃ)
১৭২. হযরত রবী’ বিন ইয়াছ (রাঃ)
১৭৩. হযরত ওয়ারাকা বিন ইয়াছ(রাঃ)
১৭৪. হযরত আমর বিন ইয়াছ (রাঃ)
১৭৫. হযরত আমর বিন কয়েস (রাঃ)
১৭৬. হযরত ফাকেহ বিন বিশ্র (রাঃ)
১৭৭. হযরত নওফল বিন সা’লাবা(রাঃ)
১৭৮. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সা’লাবা(রাঃ)
১৭৯. হযরত মুনযির বিন আমর (রাঃ)
১৮০. হযরত আবু উসায়েদ মালেক(রাঃ)
১৮১. হযরত মালেক বিন মাসউদ(রাঃ)
১৮২. হযরত আবদে রাব্বিহি (রাঃ)
১৮৩. হযরত কা’ব বিন জাম্মায (রাঃ)
১৮৪. হযরত জমরাহ বিন আমর (রাঃ)
১৮৫. হযরত যিয়াদ বিন আমর (রাঃ)
১৮৬. হযরত হুবাব বিন মুনযির (রাঃ)
১৮৭. হযরত উমায়ের বিন হারাম(রাঃ)
১৮৮. হযরত উমায়ের বিন হুমাম (রাঃ)
১৮৯. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আমর (রাঃ)
১৯০. হযরত মুআজ বিন আমর (রাঃ)
১৯১. হযরত মুআউওয়াজ বিন আমর (রাঃ)
১৯২. হযরত খাল্লাদ বিন আমর (রাঃ)
১৯৩. হযরত উকবাহ্ বিন আমের (রাঃ)
১৯৪. হযরত সাবেত বিন খালেদ(রাঃ)
১৯৫. হযরত বিশ্র বিন বারা (রাঃ)
১৯৬. হযরত তোফায়েল বিন মালেক(রাঃ)
১৯৭. হযরত তোফায়েল বিন নোমান(রাঃ)
১৯৮. হযরত সিনান বিন সাঈফী(রাঃ)
১৯৯. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন জাদ (রাঃ)
২০০. হযরত উৎবা বিন আব্দুল্লাহ্(রাঃ)
২০১. হযরত জাব্বার বিন সাখর (রাঃ)
২০২. হযরত খারেজা বিন হিময়ার(রাঃ)
২০৩. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিনহুমায়্যির(রাঃ)
২০৪. হযরত ইয়াযিদ বিন মুনযির (রাঃ)
২০৫. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন নোমান(রাঃ)
২০৬. হযরত জহহাক বিন হারেসা(রাঃ)
২০৭. হযরত আসওয়াদ বিন যুরাইক(রাঃ)
২০৮. হযরত মা’বাদ বিন কায়েস(রাঃ)
২০৯. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন কায়েসখালেদ(রাঃ)
২১০. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আব্দেমানাফ্(রাঃ)
২১১. হযরত খালিদ বিন কায়েস(রাঃ)
২১২. হযরত সুলাইম বিন আমর (রাঃ)
২১৩. হযরত কুতবা বিন আমের (রাঃ)
২১৪. হযরত আন্তারা মাওলা বনীসুলাইম(রাঃ)
২১৫. হযরত আব্স বিন আমের (রাঃ)
২১৬. হযরত সা’লাবা বিন আনামা(রাঃ)
২১৭. হযরত আবুল য়াসার বিন আমর(রাঃ)
২১৮. হযরত উবাদা বিন কয়েস (রাঃ)
২১৯. হযরত আমর বিন তাল্ক (রাঃ)
২২০. হযরত মুআজ বিন জাবাল (রাঃ)
২২১. হযরত কয়েস বিন মুহ্সান (রাঃ)
২২২. হযরত হারেস বিন কয়েস (রাঃ)
২২৩. হযরত সা’দ বিন উসমান (রাঃ)
২২৪. হযরত উকবা বিন উসমান (রাঃ)
২২৫. হযরত জাকওয়ান বিন আবদেকয়েস(রাঃ)
২২৬. হযরত মুআজ বিন মায়েস (রাঃ)
২২৭. হযরত আয়েজ বিন মায়েজ(রাঃ)
২২৮. হযরত মাসউদ বিন সা’দ (রাঃ)
২২৯. হযরত রিফাআ বিনরাফে’ (রাঃ)
২৩০. হযরত খাল্লাদ বিনরাফে’ (রাঃ)
২৩১. হযরত উবায়েদ বিন যায়েদ(রাঃ)
২৩২. হযরত যিয়াদ বিন লাবীদ(রাঃ)
২৩৩. হযরত ফারওয়াহ বিন আমর(রাঃ)
২৩৪. হযরত আতিয়্যা বিন নুওয়াইরা(রাঃ)
২৩৫. হযরত খলিফা বিন আদী (রাঃ)
২৩৬. হযরত উমারা বিন হায্ম(রাঃ)
২৩৭. হযরত সুরাকা বিন কা’ব (রাঃ)
২৩৮. হযরত হারেসা বিন নোমান(রাঃ)
২৩৯. হযরত সুলাইম বিন কয়েস (রাঃ)
২৪০. হযরত সুহাইল বিন কয়েস (রাঃ)
২৪১. হযরত আদী বিন আবুয্ যাগ্বা(রাঃ)
২৪২. হযরত মাসউদ বিন আউস (রাঃ)
২৪৩. হযরত আবু খুজাইমাহ্ বিন আউস(রাঃ)
২৪৪. হযরত রাফে’ বিন হারেস(রাঃ)
২৪৫. হযরত মুআওয়াজ বিন হারেস(রাঃ)
২৪৬. হযরত নোমান বিন আমর (রাঃ)
২৪৭. হযরত আমের বিন মুখাল্লাদ(রাঃ)
২৪৮. হযরত উসাইমা আশযায়ী (রাঃ)
২৪৯. হযরত ওদীআহ বিন আমর (রাঃ)
২৫০. হযরত আবুল হামরা মাওলাহারেস(রাঃ)
২৫১. হযরত সা’লাবা বিন আমর (রাঃ)
২৫২. হযরত সুহাইল বিন আতীক (রাঃ)
২৫৩. হযরত হারেস বিন আতীক (রাঃ)
২৫৪. হযরত হারেস বিন ছিম্মাহ(রাঃ)
২৫৫. হযরত উবাই বিন কা’ব (রাঃ)
২৫৬. হযরত আনাস বিন মুআজ (রাঃ)
২৫৭. হযরত আউস বিন সামেত (রাঃ)
২৫৮. হযরত আবু তাল্হা যায়েদ বিনছাহল(রাঃ)
২৫৯. হযরত হারেসা বিন সুরাকা(রাঃ)
২৬০. হযরত আমর বিন সা’লাবা (রাঃ)
২৬১. হযরত সাবেত বিন খানছা(রাঃ)
২৬২. হযরত আমের বিন উমাইয়াহ্(রাঃ)
২৬৩. হযরত মুহ্রিয বিন আমের (রাঃ)
২৬৪. হযরত সাওয়াদ বিনগাযিয়্যাহ(রাঃ)
২৬৫. হযরত আবু যায়েদ কয়েস বিনসাকান(রাঃ)
২৬৬. হযরত আবুল আওয়ার বিনহারেস(রাঃ)
২৬৭. হযরত হারাম বিন মিল্হান(রাঃ)
২৬৮. হযরত কয়েস বিন আবী সা’সা(রাঃ)
২৬৯. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন কা’ব(রাঃ)
২৭০. হযরত উসাইমা আসাদী (রাঃ)
২৭১. হযরত আবু দাউদ উমাইর (রাঃ)
২৭২. হযরত সুরাকা বিন আমর (রাঃ)
২৭৩. হযরত কয়েস বিন মাখলাদ (রাঃ)
২৭৪. হযরত নোমান বিন আব্দে আমর(রাঃ)
২৭৫. হযরত জহ্হাক বিন আব্দে আমর(রাঃ)
২৭৬. হযরত সুলাইম বিন হারেস (রাঃ)
২৭৭. হযরত জাবের বিন খালেদ(রাঃ)
২৭৮. হযরত সা’দ বিন সুহাইল (রাঃ)
২৭৯. হযরত কা’ব বিন যায়েদ (রাঃ)
২৮০. হযরত বুজাইর বিন আবিবুজাইর(রাঃ)
২৮১. হযরত ইৎবান বিন মালেক (রাঃ)
২৮২. হযরত মুলাইল বিন ওবারাহ(রাঃ)
২৮৩. হযরত হেলাল বিন মুআল্লাহ(রাঃ)
২৮৪. হযরত আনাছাহ আল হাবাশী(রাঃ)
২৮৫. হযরত বাহ্হাস বিন সালাবা(রাঃ)
২৮৬. হযরত জাব্র বিন আতীক (রাঃ)
২৮৭. হযরত আবু আয়্যুব আনছারী (রাঃ)
২৮৮. হযরত খিরাশ ইবনুস সিম্মাহ(রাঃ)
২৮৯. হযরত খুরাইম বিন ফাতেক(রাঃ)
২৯০. হযরত খুবাইব বিন ইছাফ (রাঃ)
২৯১. হযরত খুবাইব বিন আদী (রাঃ)
২৯২. হযরত খিদাশ বিন কাতাদা(রাঃ)
২৯৩. হযরত খালেদ বিন সুওয়াইদ(রাঃ)
২৯৪. হযরত রাফে’ বিন আল মুআল্লা(রাঃ)
২৯৫. হযরত রুখায়লা বিন সা’লাবা(রাঃ)
২৯৬. হযরত সাব্রা বিন ফাতেক(রাঃ)
২৯৭. হযরত সুহাইল বিনরাফে’ (রাঃ)
২৯৮. হযরত সুওয়াইবিত বিনহারমালা(রাঃ)
২৯৯. হযরত তুলাইব বিন উমাইর (রাঃ)
৩০০. হযরত উবাদা বিন খাশখাশকুজায়ী(রাঃ)
৩০১. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন জুবাইরবিননোমান (রাঃ)
৩০২. হযরত আবু সালামা বিন আব্দুলআসাদ (রাঃ)
৩০৩. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আব্স (রাঃ)
৩০৪. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উনায়েছ(রাঃ)
৩০৫. হযরত উবাইদ বিন সা’লাবা(রাঃ)
৩০৬. হযরত উমায়ের বিন নিয়ার(রাঃ)
৩০৭. হযরত মালেক বিন আবীখাওলা(রাঃ)
৩০৮. হযরত মালেক বিন কুদামা(রাঃ)
৩০৯. হযরত মুরারা বিনরবী’ (রাঃ)
৩১০. হযরত মাসউদ বিন খাল্দাহ(রাঃ)
৩১১. হযরত মুআজ বিন হারেস (রাঃ)
৩১২. হযরত মা’কিল বিন আলমুনযির(রাঃ)
৩১৩. হযরত নোমান বিন আছার বিনহারেছ (রাঃ)

মুসলিম গভর্নরের পৃথিবি কাপানো নজীর স্হাপন,

মুসলিম গভর্নরের পৃথিবি কাপানো নজীর স্হাপন
-----------------------------------------
খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)- সাহাবী হযরত সাঈদ ইবনে আমির আল-জুমাহী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)- কে হিমসের গভর্নর নিযুক্ত করলেন। কিছুদিন পর হিমস থেকে এক প্রতিনিধি দল মদীনায় খলিফাতুল মুসলিমীনের দরবারে আগমন করলো। খলিফা তাদেরকে হিমসের ফকির-মিসকিনদের একটি তালিকা দেয়ার জন্য বললেন, যাতে বাইতুল মাল থেকে যার যার প্রাপ্যকে দান করতে পারেন।
.
.
প্রতিনিধি দল হিমসের ফকির-মিসকিনদের একটি তালিকা প্রণয়ন করে খলিফার দরবারে প্রেরণ করলো। তালিকাটা পড়ে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)- আশ্চর্য হয়ে গেলেন! হিমসের ফকির-মিসকিনদের তালিকায় স্বয়ং হিমসের গভর্নর সাঈদ বিন আমির আল-জুমাহীর নামও রয়েছে!!! ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)- যারপরনাই আশ্চর্য হয়ে প্রতিনিধি দলকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। তারা উত্তর দিলো- হ্যা, সাঈদ বিন আমির তাঁর বেতন সম্পূর্ণ ফকির-মিসকিনদের মাঝে বন্টন করে দেন। তিনি বলেন- এই বেতন দিয়ে আমি কী করবো, কাল কেয়ামতের ময়দানে এইসব মানুষের ব্যাপারে আমাকে জবাবদিহিতা করতে হবে?!
.
.
ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)- তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করলেন- আপনারা তাঁর মাঝে কোনো খারাপ স্বভাব লক্ষ্য করেন? তাঁরা উত্তর দিলো- হ্যাঁ, আমরা তাঁর মাঝে তিনটি খারাপ স্বভাব লক্ষ্য করি।
১- তিনি চাশতের সময় ব্যতিত ঘর থেকে বের হননা। ২- তাঁকে আমরা কখনও রাতের বেলা দেখতে পাইনা! ৩- সপ্তাহে একদিন তিনি আমাদের থেকে লুকিয়ে থাকেন!
.
.
অতঃপর যখন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)- তাঁকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলেন, তখন সাঈদ বিন আমির (রাযিয়াল্লাহু আনহু)- উত্তরে বললেন- হ্যাঁ, লোকেরা সত্য বলেছে। এইসবগুলোর কারণ হলো-
১- চাশতের আগ পর্যন্ত আমি ঘর থেকে বের না হওয়ার কারণ হলো, চাশত পর্যন্ত আমি আমার পরিবারের প্রয়োজন ও খেদমতে নিয়োজিত থাকি। আমি ব্যতিত আমার পরিবারের আর কোনো খাদেম নাই। আবার আমার স্ত্রী অসুস্থ।
২- রাতের বেলা আমার লুকিয়ে থাকার কারণ হলো, দিনকে আমি মানুষের প্রয়োজন সারার জন্য বরাদ্ধ করে রেখেছি, আর রাতকে আমি আমার প্রভূর ইবাদতের জন্য বরাদ্ধ করে রেখেছি।
৩- সপ্তাহে একদিন লুকিয়ে থাকার কারণ হলো, সপ্তাহে একদিন আমি আমার কাপড় ধুয়ে শুকাতে দেই। কারণ, একটি কাপড় ছাড়া আমার আর কোনো কাপড় নেই!
এইসব শুনে খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু হুহু করে কেঁদে ফেললেন!
.
.
সূত্র- (রিজালুন হাওলার রাসূল, পৃষ্টা- ১৯৩

আর বর্তমান খলীফারা আগে পেট পূর্ণ করে,
হজম করতে  অসুবিধা হলে এরপর জনগণের দিকে নজর দেয়।
আফসোস...

ইসলামের ইতিহাস পড়ুন বার বার আপনি অবাক হবেন ।

আততাওয়াক্কুল ‘আলাল্লাহ।

আততাওয়াক্কুল ‘আলাল্লাহ।

‘তাওহীদ’ শব্দের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত এবং সম্ভবত এর মৌলিক অর্থও আমাদের অজানা নয়। তাওহীদের মৌলিক অর্থ জানার ও বোঝার পর আমাদের বিশ্বাস ও কর্মে এবং সমগ্র ব্যবহারিক জীবনে আকীদায়ে তাওহীদের কী প্রভাব পরিলক্ষিত হওয়া দরকার সে সম্পর্কেও সচেতন হওয়া কর্তব্য। ইসলামের এ মৌলিক আকীদার সুফল ও প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা অর্জন করে সে আলোকে নিজের বিশ্বাস ও কর্মের পরীক্ষা নেওয়া এবং বাস্তব ও প্রায়োগিক জীবনে এ প্রভাবগুলো আনার চেষ্টা করা কর্তব্য। এতে আকীদায়ে তাওহীদের যে বীজ আমাদের হৃদয়ভূমিতে রয়েছে তা অঙ্কুরিত হবে এবং পত্র-পল্লবে বিকশিত হয়ে আমাদের সমগ্র জীবনে ছায়া বিস্তার করবে। এ দিক থেকে তাওহীদ-প্রসঙ্গ অনেক ব্যাপক এবং এর ক্ষেত্রও অনেক বিস্তৃত।
ঈমান ও তাওহীদের বিশ্বাস যখন মজবুত হয় তখন অন্তরের অবস্থায় পরিবর্তন আসে এবং বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য আল্লাহপাক দান করেন। তেমনি বাহ্যিক কাজকর্মেও পরিবর্তন আসে এবং বিশেষ বিশেষ গুণ আল্লাহ পাক দান করে থাকেন।
আজ যে বিষয়টি আলোচনা করব তা হচ্ছে তাওহীদের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ও সুফল ‘তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ’। ‘তাওয়াক্কুল’ আরবী শব্দ। এর অর্থ, ভরসা করা। অর্থাৎ, দুনিয়া-আখেরাতের সকল কাজে, সকল মকসুদ হাসিল করার জন্য এবং সকল বিপদ-মুসীবত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একমাত্র আল্লাহ পাকের উপর ভরসা রাখা। এটা ইসলামের শিক্ষা। ঈমানের শিক্ষা। বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম সাঈদ ইবনে যুবাইর রাহ. বলেন-
التوكل على الله ـ عز وجل ـ جماع الإيمان
অর্থাৎ আল্লাহর উপর ভরসা করা এমন গুণ যা অনেক ঈমানী গুণের ধারক। (আযযুহদ, হান্নাদ ইবনুস সারী ১/৩০৪)
এ শিক্ষার অনেক সুফল এমন আছে যা দুনিয়ার জীবনেই পাওয়া যায়। আল্লাহ পাক যে আমাদের কুরআন-সুন্নাহর বিধান দান করেছেন এ শুধু আখেরাতের সফলতার জন্য নয়, দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানের সফলতার জন্য। তাই কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষা ও বিধান সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে দেখা যাবে, দুনিয়াতে যত অশান্তি, যত অনাচার তার মূলে রয়েছে কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাওয়া। আল্লাহ পাকের বন্দেগী ও আনুগত্য ত্যাগ করা। আমরা যদি আল্লাহ পাকের আনুগত্যের দিকে ফিরে আসি এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষাকে অবলম্বন করি তাহলে আখেরাতের জীবন তো সফল হবেই আমাদের দুনিয়ার জীবনও সুন্দর ও শান্তিময় হবে। এটা ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
তবে ইসলামের শিক্ষা অনুসরণের ক্ষেত্রে দুনিয়ার উপকারিতা লাভ করা মুখ্য উদ্দেশ্য হবে না। আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি পাওয়া এবং আখেরাতের কামিয়াবী অর্জন করা।
কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় তাওয়াক্কুল-প্রসঙ্গ আছে। হাদীস শরীফেও আছে। তাওয়াক্কুল কী, এর উপকারিতা কী, দুনিয়ার উপায়-উপকরণ অবলম্বনের সাথে তা সাংঘর্ষিক কি না এ ধরনের অনেক বিষয়ের সমাধান কুরআন-সুন্নাহয় আছে।
সূরায়ে যুমারে আল্লাহ তাআলার ইরশাদ-
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ
(তরমজা) অর্থাৎ আপনি যদি মক্কার মুশরিকদের জিজ্ঞাসা করেন আসমান ও জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? অবশ্যই তারা বলবে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। (সূরা যুমার : ৩৭)
তারা তো বিভিন্ন দেবদেবীর উপাসনা করে, কারো কাছে জ্ঞান চায় কারো কাছে স্বাস্থ্য চায়, কারো কাছে রিযিক চায়, কারো কাছে সন্তানসন্ততি চায়, কারো কাছে আয় উপার্জন চায়, কারো কাছে বালামুসিবত থেকে আশ্রয় চায় এভাবে অনেক খোদা, অনেক মাবুদ, একেক প্রয়োজনের জন্য একেক মাবুদ বানিয়ে রেখেছে। কিন্তু যখন জিজ্ঞাসা করবেন, ‘আসমান-যমীন কে সৃষ্টি করেছেন’ উত্তরে একথাই বলবে যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ তাদেরও বিশ্বাস ছিল, আসমান যমীনের সৃষ্টিতে এই সকল দেব-দেবীর কোনো হিস্যা নেই এবং আসমান-যমীনে মানুষের জীবনধারণের যত উপকরণ এগুলোও আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সৃষ্টি করেননি। আল্লাহই সকল কিছুর স্রষ্টা। তাহলে এত দেব-দেবীর পূজা তারা কেন করত? তারা মনে করত কিছু কিছু কল্যাণ-অকল্যাণের ক্ষমতা এই সকল দেব-দেবীর আছে, যদিও সে ক্ষমতা স্বয়ংসম্পূর্ণ না, আল্লাহ প্রদত্ত! এজন্য তারা তালবিয়ায় ‘লা শারীকা লাক’ (‘তোমার কোনো শরীক নেই’) বাক্যের সাথে নিজেদের পক্ষ থেকে এ বাক্যটি জুড়ে নিয়েছিল- ‘ইল্লা শারীকান হুয়া লাক্ তামলিকুহূ ওয়ামা মালাক্’ অর্থাৎ, তবে এমন শরীক আছে যার মালিক অবশ্য তুমি আর ওদের যা কিছু ক্ষমতা-কর্তৃত্ব সেগুলোরও মালিক তুমি (নাউযুবিল্লাহ)। এ ছিল তাদের শিরকের ধরন। তারা নাস্তিক ছিল না, মুশরিক ছিল।

সামনে আল্লাহ পাক তাদের এ বিভ্রান্তি সমূলে উৎপাটন করে তাঁর রাসূলকে বলছেন, ‘‘হে রাসূল, আপনি তাদের প্রশ্ন করুন, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের কাছে প্রার্থনা কর, বল তো, আল্লাহ যদি আমার ব্যাপারে কোনো অকল্যাণের ইচ্ছা করেন তোমাদের এই দেবদেবী কি আমাকে ঐ অকল্যাণ থেকে রক্ষা করতে পারবে? তেমনি আল্লাহ যদি আমার ব্যাপারে কোনো কল্যাণের ফায়সালা করেন সমস্ত দেবদেবী মিলেও কি তা প্রতিরোধ করতে পারবে?’’ অর্থাৎ আমি তো এই সমস্ত মূর্তি ও দেব-দেবীর সবচেয়ে বড় শত্রু। এদের বিরুদ্ধেই তো আমার দাওয়াত। এরা কি পারবে আমার কোনো ক্ষতি করতে কিংবা পারবে কোনো উপকার করতে? পারবে না। আমার কল্যাণ-অকল্যাণ সবই হবে একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছায়। এদের ইচ্ছায় নয়। তাহলে তোমাদেরও কোনো কল্যাণ-অকল্যাণের ক্ষমতা এদের নেই। যখন নেই তখন হে রাসূল আপনি বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট আর আল্লাহর উপরেই প্রত্যেক ভরসাকারীর ভরসা করা উচিত।
কার উপর তাওয়াক্কুল?
মানুষকে দুনিয়ার জীবনে ভরসা করতে হয়। কোথাও না কোথাও তাকে আত্মসমর্পন করতেই হয়। সব দুঃখ বেদনা কোথাও না কোথাও বলতেই হয়। সেই স্থানটা কোনটা? যারা ঈমান থেকে বঞ্চিত, ঈমানের শিক্ষা থেকে মাহরূম, তারা সেই স্থান এমন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে বানিয়ে নেয় বাস্তবে যাদের কল্যাণ-অকল্যাণের কোনোই ক্ষমতা নেই। পক্ষান্তরে আল্লাহ যাদেরকে ঈমান দান করেছেন, তাওহীদের আলোয় আলোকিত করেছেন তারা তাদের সকল বেদনা, সকল প্রার্থনা এমন একজনের কাছে পেশ করে যিনি বাস্তবেই মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক। আর যিনি সৃষ্টির প্রতি পরম দয়ালু।
ইরশাদ হয়েছে
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ
 ‘ভরসা কর পরাক্রমশালী করুণাময়ের উপর।’ (সূরা শুআরা : ২১৭)
আরো ইরশাদ -
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ
ভরসা কর চিরঞ্জীবের উপর, যার মৃত্যু নেই। (সূরা ফুরকান : ৫৮)
তো সূরা যুমারের এ আয়াতে পরিষ্কার হয়ে গেল, তাওয়াক্কুলের হাকীকত কী, বা কাকে বলে তাওয়াক্কুল। তাওয়াক্কুল হচ্ছে ভরসা করা, জীবনের সকল বিষয়ে, কল্যাণ লাভের ক্ষেত্রেও, অকল্যাণ থেকে মুক্তি পাবার ক্ষেত্রেও। আর তা এমন সত্ত্বার উপরই হতে পারে যিনি সকল বস্ত্তর স্রষ্টা। বস্ত্তর গুণ ও বৈশিষ্ট্যের স্রষ্টা। যিনি গোটা জাহানের পালনকর্তা এবং যিনি দুনিয়া-আখিরাতের সকল কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক, এমন সত্ত্বার উপরই ভরসা করা যায়। তাঁর পরিবর্তে মানুষ যদি অন্য কারো উপর ভরসা করে তাহলে তা হবে তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী।
তাওয়াক্কুলহীনতার বিভিন্ন পর্যায়
এখানে একটি বিষয় ভালোভাবে বুঝে নেওয়া দরকার। তা এই যে, ভালোর যেমন স্তরভেদ আছে তেমনি মন্দেরও আছে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপর ভরসা করারও বিভিন্ন স্তর ও পর্যায় আছে। ভরসা করা অন্তরের কাজ। এটা আল্লাহর প্রতিই থাকতে হবে। একারণে অন্য কারো উপর ভরসা করলে তা নিঃসন্দেহে তাওয়াক্কুল পরিপন্থী ও মাসিয়াত। এখন যদি এর সাথে শিরকী কোনো আকীদা যুক্ত হয় যেমন গায়রুল্লাহকে অলৌকিক ক্ষমতার মালিক মনে করে তার উপর ভরসা করে তাহলে তা সরাসরি শিরক। আর যদি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বিশ্বাস করে নয়; বরং পার্থিব অর্থ, সম্পদ, ক্ষমতার কারণে ভরসা করে তবে তা সরাসরি শিরকে আকবর না হলেও মা’ছিয়াত ও তাওয়াক্কুল বিরোধী। এটা প্রকৃতপক্ষে পার্থিব উপায়-উপকরণের উপর ভরসা, যা নিষেধ। ভরসা একমাত্র আল্লাহর উপরই করতে হবে।
কর্মহীনতা তাওয়াক্কুল নয়
তদ্রূপ আরো একটি বিষয় পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন। আর তা হচ্ছে ভরসা ও ব্যবহারের পার্থক্য। উপায়-উপকরণের উপর ভরসা করা যাবে না অর্থ এই নয় যে, তা ব্যবহারও করা যাবে না। বৈধ উপকরণ বৈধ পন্থায় ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু ভরসা রাখতে হবে আল্লাহর উপর।
তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসা করার অর্থ দুনিয়ায় কাজকর্ম পরিত্যাগ করা নয়। ভরসা করা অন্তরের বিষয়। মুমিন অন্তর থেকে বিশ্বাস করে আমার সকল ভালো-মন্দ আল্লাহ পাকের হাতে, তবে দুনিয়ার জীবনের এবং আখিরাতের জীবনের সফলতা অর্জনের জন্য আল্লাহ পাক কিছু পথ ও পন্থা নির্ধারিত করেছেন। তা আমাকে অবলম্বন করতে হবে। ভালো-মন্দ আল্লাহর হাতে, কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে সেই ভালো  পাওয়ার জন্য এবং সেই মন্দ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ যে পথে চলার আদেশ করেছেন সে পথেই আমাকে চলতে হবে। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় ক্ষেত্রেই একথা সত্য। কর্মহীন বসে থাকার কথা আল্লাহ পাক দুনিয়ার ব্যাপারেও বলেননি, আখিরাতের ব্যাপারেও বলেননি। প্রথমে আখিরাতের বিষয়টি দেখুন। ইসলামে তো বলা হয়নি যে, আখিরাতে যেহেতু আল্লাহই নাজাত দিবেন তাই কোনো আমল করতে হবে না- নামায পড়তে হবে না, রোযা রাখতে হবে না, পর্দা করতে হবে না, হালাল মোতাবেক চলতে হবে না, হারাম থেকে বেঁচে থাকতে হবে না। এ কথা তো ইসলাম বলেনি; বরং গুরুত্বের সাথে এসব হুকুম-আহকামের পাবন্দী করতে বলেছে।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে আল্লাহ পাকের উপর অধিক ভরসাকারী আর কে হতে পারেন? তিনিই তো সবচেয়ে বড় ভরসাকারী। তাঁর পর সাহাবায়ে কেরাম সবচেয়ে বড় ভরসাকারী। কিন্তু তাঁরা আখেরাতের মুক্তি ও সফলতা অর্জনের জন্য পুরা জীবন আল্লাহ পাকের বিধান মোতাবেক চলেছেন। নামায পড়েছেন, রোযা রেখেছেন, যাকাত দিয়েছেন, হজ্ব করেছেন, দান-খয়রাত করেছেন এবং আল্লাহ পাক যত বিধান ও আহকাম দান করেছেন তা পালন করেছেন। তবে এই আহকাম পালন করতে গিয়েও তাঁদের বিশ্বাস ছিল, আমি দ্বীনের যে কাজগুলো করছি, আখিরাতের যে কাজগুলো করছি- এগুলোই আমাকে মুক্তি দিবে না। মুক্তি দিবেন আল্লাহ তাআলা। তাঁর রহমতের উপরই আমাদের ভরসা। তবে মুক্তির যে পথ তিনি নির্ধারণ করেছেন আমি সে পথে চলতে চেষ্টা করছি। এই চেষ্টা তাঁরই আনুগত্য, তাঁর নিকট থেকে মুক্তি লাভের আকুতি। আর এই যে তা করতে পারছি -এটাই আশার বিষয় যে, আল্লাহ পাক আমাকে নাজাত দান করবেন। তিনি হয়তো আমার নাজাতেরই ফয়সালা লিখে রেখেছেন। ঠিক এমনিভাবে দুনিয়ার বিষয়েও, মুমিনের ভরসা থাকবে আল্লাহর উপর। কিন্তু এর অর্থ কর্ম পরিত্যাগ করা নয়। সূরা জুমুআর প্রসিদ্ধ আয়াত আমাদের সবার জানা।
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ
(তরজমা) সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে। ... (সূরা জুমুআ ৬২ : ১০)
তাহলে আল্লাহ তাআলাই আদেশ করেছেন তাওয়াক্কুল করার, আল্লাহর উপর ভরসা রাখার, আবার তিনিই আদেশ করেছেন, নামায শেষে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ার, আল্লাহর ফযল অন্বেষণ করার। এর তাৎপর্য হল মানুষ তার সাধ্য অনুযায়ী কাজ করবে, কিন্তু ঈমান থাকবে আল্লাহর ফয়সালার উপর। আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্ম ও উপকরণের মাঝে, কিন্তু অন্তর আল্লাহর সাথে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে কর্ম করছি আর অন্তরে ভরসা আল্লাহর উপর পোষণ করছি।
হাদীস শরীফে আছে-
الكيس من دان نفسه وعمل لما بعد الموت، والعاجز من اتبع نفسه هواها وتمنى على الله.
বিচক্ষণ ঐ ব্যক্তি যে নিজের কর্মের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পরের জন্য আমল করে। পক্ষান্তরে অক্ষম ঐ ব্যক্তি যে নিজেকে প্রবৃত্তির অনুসারী করে আর আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে অলীক আশা পোষণ করে। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৪৫৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪২৬০)
যেমন কেউ ধারণা করল, ‘আল্লাহ তো গাফূরুর রাহীম, তিনি আমাকে মাফ করে দিবেন। সুতরাং আমল না করলেও কোনো অসুবিধা নেই।’ এই ব্যক্তি মুতাওয়াক্কিল নয়। সে হচ্ছে অক্ষম নির্বোধ। তেমনি দুনিয়ার ব্যাপারেও যারা অলস ও কর্মবিমুখ, সাধ্যের ভিতরে এবং শরীয়তে যা বৈধ তা থেকেও বিমুখ, কিন্তু মুখে বলে, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করি। এরাও প্রকৃতপক্ষে মুতাওয়াক্কিল নয়। এরাও আজিয-অক্ষম। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ ‘ফাতহুল বারীতে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর একটি উক্তি বর্ণিত হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কেউ যদি ঘরে বা মসজিদে এই বলে বসে থাকে যে, আমি কোনো কাজ করব না। আমার নির্ধারিত রিযক আমার কাছে এসে পড়বে। তার হুকুম কী? ইমাম আহমদ রাহ. জবাব দিলেন,هذا رجل جهل العلم ‘এ লোক প্রকৃত ইলম থেকে বঞ্চিত।’ এরপর বলেন, ‘স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ, ‘আল্লাহ আমার রিযক রেখেছেন আমার বর্শার ছায়ায়’। তিনি আরো বলেছেন, ‘তোমরা যদি আল্লাহর উপর যথোপযুক্ত তাওয়াক্কুল করতে তাহলে তিনি তোমাদের সেভাবেই রিযিক দিতেন যেভাবে পাখিদের দিয়ে থাকেন। তারা সকালে ক্ষুধার্ত বের হয় আর সন্ধ্যায় তৃপ্ত ফেরে।’ এ হাদীসে রিযকের খোঁজে নীড় থেকে বের হওয়ার কথা আছে। একইভাবে সাহাবীগণ ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন, ক্ষেত-খামারে কাজ করতেন। আর والقدوة بهم  তারাই তো অনুসরণীয়।’ আবার অনেকের অবস্থা এমন যে, তাওক্কুলের ব্যাখ্যা ‘উপায়-উপকরণ বর্জন’ করেও উপায়-উপকরণে ডুবে থাকেন। একদিকে চাকুরি-বাকুরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্ষেত-খামার সবকিছুতেই লিপ্ত অন্যদিকে সম্পূর্ণরূপে উপায়-উপকরণ অস্বীকার; এক আশ্চর্য স্ববিরোধী অবস্থা! বস্ত্তত এ স্ববিরোধিতার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তাওয়াক্কুলের সঠিক অর্থ না জানার কারণে। এ ধরনের মানসিক অবস্থা পোষণকারীরা একে তো নিজ কর্মপন্থা সম্পর্কেও অস্থিরতায় ভোগেন অন্যদিকে অন্যদের জন্যও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ান। হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জনকারীদের ব্যাপারেও তাদের মনে থাকে অশ্রদ্ধা এবং এরা এদেরকে ‘দুনিয়াদার’ মনে করেন। আরো বড় বিপদ হচ্ছে, তাওয়াক্কুলের এ অশুদ্ধ ব্যাখ্যাকারীদের অনেকেই জীবিকা উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল-হারাম পার্থক্য করার প্রেরণা হারিয়ে ফেলেন। জীবিকা উপার্জনের সকল উপায়ই যেহেতু তাদের দৃষ্টিতে নিরঙ্কুশ দুনিয়াদারী তাই জীবিকার হালাল উপায়টির প্রতিও তাদের মনে আলাদা কোনো শ্রদ্ধাবোধ থাকে না।
সব ঘটনা সহজ নয়
এ প্রসঙ্গে আরো একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার। আর তা হচ্ছে বুযুর্গানে দ্বীনের কোনো কোনো ঘটনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপায়-উপকরণ ত্যাগের বিষয়টি পাওয়া যায়। এ ঘটনাগুলো সঠিকভাবে বোঝা উচিত। সাধারণত ঘটনা ও কাহিনীকে সহজ মনে করা হয়। সব ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে একথা সঠিক নয়। অনেক ঘটনা এমন আছে যা সঠিকভাবে না বোঝার কারণে নানা ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়, যা ব্যক্তির কর্ম ও বিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। আপাতত এ মূলনীতি মনে রাখা যায় যে, যে ঘটনাই দ্বীনের সহজ-স্বাভাবিক শিক্ষার ব্যতিক্রম তা থেকে নিজে নিজে কোনো নীতি উদ্ভাবনের পরিবর্তে প্রাজ্ঞ আহলে ইলমের কাছ থেকে বুঝে নেওয়া উচিত যে, এখানে শরীয়তের শিক্ষা কী আর এ ঘটনা থেকে শিক্ষণীয় কী।
তো তাওয়াক্কুলের মূল কথা অন্তরের ভরসা। দুনিয়া-আখিরাতের সকল কাজ সাধ্যমত করছি, কিন্তু বিশ্বাস রাখছি যে, সফলতা একমাত্র আল্লাহ তাআলার হাতে। তাঁরই উপর আমি ভরসা রাখি।
সতর্কতা অবলম্বন তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়
হযরত ইয়াকুব আ.-এর একটি ঘটনা সূরা ইউসুফে বর্ণিত হয়েছে। চারদিকে দুর্ভিক্ষ। ইয়াকুব আ.-এর সন্তানেরা খাদ্য-শস্য সংগ্রহের জন্য মিসরে যাচ্ছেন। তারা ছিলেন বারো ভাই। ইয়াকুব আ. বললেন, তোমরা যখন শহরে প্রবেশ করবে তো বারো ভাই এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। কারণ, সবাই তো ইউসুফ আ.-এর ভাই। রূপ-সৌন্দর্যে তাঁর মতো না হলেও কিছু মিল তো থাকবে। এ করকম বারোজন যুবক যদি একসাথে এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে তাহলে মানুষের বদনজর লেগে যেতে পারে। ইয়াকুব আ. বললেন, তোমরা এক দরজা দিয়ে প্রবেশ না করে বিভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। এই কথাটা আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে উল্লেখ করেছেন। এটা হচ্ছে সতর্কতা। এ উপায় বাতলে দেওয়ার পর ইয়াকুব আ. একথাও বললেন যে, ‘‘তবে এর দ্বারা আমি আল্লাহর ফয়সালাকে রদ করতে পারব না। আমি তো একটি উপায় নির্দেশ করলাম। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যদি তোমাদের তাকদীরে কোনো ক্ষতি লিখে রাখেন তাহলে উপায় অবলম্বন করে সেই ক্ষতি থেকে তোমরা বাঁচতে পারবে না। ফয়সালা তো একমাত্র আল্লাহ তাআলারই। তিনি যার সম্পর্কে ইচ্ছা কল্যাণের ফায়সালা করেন, যার সম্পর্কে ইচ্ছা অকল্যাণের ফায়সালা করেন। তার ফায়সালাকে কেউ কোনোভাবেই রদ করতে পারবে না। এজন্য আমি তার উপরই ভরসা করছি এবং তাওয়াক্কুলকারীদের তার উপরই তাওয়াক্কুল করা উচিত।’’  তো আল্লাহর নবী আলাইহিস সালাম উপায় অবলম্বন করেছেন এবং আল্লাহর উপরে ভরসা করেছেন।
এমনিভাবে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ
(তরজমা) (হে নবী! এসব ঘটনার পর) এ আল্লাহর রহমতই ছিল, যার  কারণে আপনি তাদের সাথে কোমল আচরণ করেছেন। আপনি যদি রূঢ় প্রকৃতির ও কঠোর হৃদয় হতেন তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যেত। সুতরাং তাদের ক্ষমা করুন, তাদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করুন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ করতে থাকুন। অতপর আপনি যখন কোনো বিষয়ে মতস্থির করে সংকল্পবদ্ধ হবেন তখন আল্লাহর উপর ভরসা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান ৩ : ১৫৯)
এটা অহুদ যুদ্ধের পরের ঘটনা। যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি আদেশ অমান্য করার কারণে বিপর্যয় নেমে এসেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও আহত হয়েছেন। বহু সাহাবী শহীদ হয়েছেন। সাহাবায়ে কেরাম অনুতপ্ত ও দুঃখিত। আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করেছেন এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঐ আদেশ করেছেন।
তো এখানে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নম্রস্বভাবের সুফল আর রুক্ষ স্বভাবের কুফল সম্পর্কে জানিয়েছেন। অথচ এ-ও তো একটি সবব বা উপায়। মানুষকে একতাবদ্ধ রাখা, না রাখা এটাও তো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই হাতে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এখানে কোমল স্বভাব ও রুক্ষস্বভাবকে একটি ‘সবব’ বা কার্যকারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এরপর মশোয়ারা করতে বলেছেন এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে বলেছেন। এরও অর্থ এই যে, মানুষকে তার সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে, এরপর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে হবে।

তাওয়াক্কুলের সুফল
এই ঈমান ও তাওয়াক্কুলের সুফল অনেক। তাওয়াক্কুল যত শক্তিশালী হবে সুফলও তত বেশি পরিলক্ষিত হবে। এক সুফল এই যে, এই বান্দা হালাল উপায় ছেড়ে হারাম উপায়ের দিকে যাবে না। আমার ভরসা যেহেতু আল্লাহ পাকের উপর তাহলে হারাম উপায়ের দিকে কেন আমি যাব? আমি যেহেতু আল্লাহর আদেশের আনুগত্য করে এবং পৃথিবীতে আল্লাহর ব্যবস্থার অধীন হয়েই উপায় অবলম্বন করেছি তাই সেই উপায়ই অবলম্বন করব যা হালাল। এর মাধ্যমেই আল্লাহ আমাকে রিযক দিবেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিষ্কার ইরশাদ-
لَنْ تَمُوتَ نَفْسٌ حَتَّى تَسْتَوْفِيَ رِزْقَهَا فَاتَّقُوا اللهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ
কোনো প্রাণ তার রিযক পূর্ণ না করে মৃত্যু বরণ করবে না। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর এবং উত্তম পন্থায় অন্বেষণ কর।-শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৯৮৯১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২১৪৪
বান্দা যখন আল্লাহর উপর ভরসা করে তো এর বিনিময়ে সে কী পায়? এর বিনিময়ে সে আল্লার ভালবাসা পায়। আল্লাহর নৈকট্য পায়
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ
‘যারা ভরসা করে আল্লাহ তাদের ভালবাসেন।’ (আলে ইমরান ৩ : ১৫৯)
আল্লাহ তার অন্তরে শান্তি ও প্রশান্তি দান করেন এবং আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।
وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সূরা ত্বলাক ৬৫ : ৩) 


স্ত্রীর বডি ‘হট’ করা।

বডি হিটার।

মানে যা শরীরকে গরম করে।
উত্তাপ দেয়। উষ্ণ করে।
স্ত্রীর ভূমিকা কী, বডি হিটিং, স্বামীর শরীর গরম করা?
সোজাসাপটা উত্তর দিতে গেলে, অবলীলায় বলতে হবে:
= জ্বি, স্ত্রীর অন্যতম একটা কাজ হলো, স্বামীকে গরম করা।
তবে উল্টোটাও সত্যি। স্বামীর একটা ভূমিকাও তাই।
স্ত্রীর বডি ‘হট’ করা।
দু’জনের মধ্যেই আল্লাহ হিটিং সিস্টেম ফিট করে দিয়েছেন।
উঁহু! এটা আমার কথা নয়।
-কার কথা?
-স্বয়ং আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) এর কথা। তাও যার তার সম্পর্কে নয়, খোদ নবীজি (সাঃ) সম্পর্কে।
আপনি কোথাকার এত ‘রুচিবাগীশ’ চলে এসেছেন!
ওরে আমার লাজুক শর্মিলী রে!
সুন্নাতের আলোচনায় শরম?
সুন্নাত পালনে শরম?
.
একটা গল্প শোনা যাক!
গল্পটা সবার জানা।
তারপরও আরেকবার হলে ক্ষতি নেই!
= হুযুর ওয়াজ করতে গিয়েছেন। গ্রামে। ধানী ফসল উঠেছে।
মানুষের মনে সুখ। পকেটে সুখ।
সুখের চোটে কেউ ওয়াজ-মাহফিল দিচ্ছে।
কেউ যাত্রাপালার আয়োজন করছে।
এবার ফসল মাশাআল্লাহ ভালোই হয়েছে।
আল্লাহ-খোদার নাম না নিলে কেমন দেখায় না!
তাই মধুপুরবাসীর ইচ্ছে হলো, একটা ওয়াজের আয়োজন করবে!
সুরেলা একজন ওয়ায়েজ দাওয়াত দেয়া হলো।
সদ্য পাশ দেয়া কচি বয়েসের আলেম। রক্ত গরম। গলা গরম।
মাথা গরম। ইলম গরম।
আরো অনেক কিছুই গরম। হুযুর মাইক পেয়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না।
দীর্ঘ এক ওয়াজ দিলেন।
ওয়াজের এক পর্যায়ে হুযুর বললেন:
-আপনারা পাক-পবিত্রতার দিকে নযর রাখবেন।
গ্রামের মানুষজন এদিকটাতে ভীষণ উদাসীন।
তারা মা-বোনদের শাড়ি দিয়ে সেলাই করা ‘কাঁথা’ গায়ে দেয়।
ছিঃ ছিঃ ছিঃ! এমন কাঁথা কিভাবে গায়ে দেন? ঘেন্না লাগে না?
এ-ধরনের কাঁথা না ধুয়ে গায়ে দেয়া যাবে না।
.
ওয়াজ শেষ।
গ্রামের মানুষেরা খাবারের আয়োজনে কমতি করে নি।
রান্নাটাও হয়েছে মন্দ না।
বেশ জমিয়ে খাওয়া গেছে।
কাতলা মাছের মুড়োটা!
আহ! মোরগের রানটা? লা জওয়াব!
মুগ ডালের চচ্চরি?
ওহ! এখনো জিভে লেগে আছে উমম।
শেষে গামছাপাতা দৈ?
কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠছে!
পেটে আর জায়গা ছিল না বলে।
তা এত কষ্টের মধ্যেও সুখ, একটা পদও ‘অনাঘ্রাত’ ছিল না।
ঢেঁকুরের মধ্যে কী রকম খোশবাই ছড়াচ্ছে!
আল্লাহ মালুম!
অন্যকিছুও বোধ হয় সুবাসিত হয়ে গেছে!
.
এবার শোয়ার পালা।
কী নরম আর তুলতুলে বিছানা।
শুলেই ঘুম চলে আসবে।
এ কি! গায়ে দেয়ার যে কিছু নেই?
কেমন বেত্তমিজি!
রাজভোগের পর শরীফ মেজাজটাই খাট্টা হয়ে গেলো।
-সভাপতি সাহেব!
-জ্বি হুযুর!
-আমি মাঘ মাসের এই কনকনে শীতে কি মারা পড়ব?
-কেন হুযুর কী হয়েছে?
-আমি গায়ে দেবো কী?
-ইয়ে মানে, হুযুর ওয়াজে বলেছিলেন, মেয়েছেলেদের শাড়ী দিয়ে সেলাই করা কাঁথা গায়ে দেয়া পুরুষের জন্যে হারাম! তাই........!
(সবাই গল্পটার শুধু এটুকুই জানে।
বাকীটা অনেকেরই জানা নেই।
তাহলে গল্পের বাকী অংশ? ..... চলবে)
.
আচ্ছা, হিটিং সিস্টেম নিয়ে আলোচনাটা আপাতত ‘ফ্রিজ’ করে রাখা যাক।
তার আগে শিরোনামের প্রথম অংশকে ‘হিট’ করা যাক।
.
কুরআন কারীমে একটু পরপরই কিছু বাক্য পাওয়া যায়।
এগুলো অনেকটা ‘ইউনিভার্সাল ট্রুথ’-এর মতো।
চিরন্তন সত্য।
সর্বকালের জন্যে প্রযোজ্য।
তার মানে এই নয়, অন্য অংশগুলো ব্যতিক্রম।
কুরআন কারীম অতি অল্পকথায় অনেক বড় বড় বক্তব্য প্রকাশ করে।
দুয়েক শব্দেই বিরাট বিরাট মূলনীতি দাঁড় করিয়ে দেয়।
তেমনি দু’টি বাক্য হলোঃ
➜ হুন্না লিবাসু-ল্লাকুম। তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের জন্যে পোষাক। আবরণস্বরূপ।
➜ আনতুম লিবাসু-ল্লাহুন্না।
তোমরা (স্বামীরা) তাদের জন্যে পোষাক। আবরণস্বরূপ।
মাত্র কয়েকটা শব্দে কুরআন কারীম পুরো দাম্পত্যজীবনকে জীবন্ত করে দিয়েছে। সব সমস্যার সমাধান দিয়ে দিয়েছে।
সমস্ত সুখের আকরকে রক্তমাংসময় করে দিয়েছে। কিভাবে?

(এক) একে অপরের জন্যে আসলেই আবরণস্বরূপ। সুরক্ষা।
পোশাক পরলে, বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
স্বামী বা স্ত্রী থাকলে, হারাম থেকে বেঁচে থাকা যায়। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়। চারিত্রিক বিচ্যুতি থেকে বেঁচে থাকা যায়। পদস্খলন থেকে বেঁচে থাকা যায়।

(দুই) পোশাক পরলে, বাইরের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রোদের উত্তাপ থেকে। শীতের প্রকোপ থেকে। সাপ-বিচ্ছু থেকে। পোকা-মাকড়ের দংশন থেকে।
স্বামীও তার স্ত্রীকে সেভাবে সব ধরনের বাহ্যিক অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেন।
বদলোকের লোলুপতা থেকে হেফাযত করেন।

(তিন) পোশাক সতর ঢেকে রাখে। লজ্জাস্থান ঢেকে রাখে।
মান-সম্ভ্রম রক্ষা করে।
শালীনতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
শরীরের দোষ-ত্রুটি-খুঁত লুকিয়ে রাখে। স্বামী-স্ত্রীও একে অপরের দুর্বলতাগুলো অন্যদের থেকে আড়াল করে রাখে। আচ্ছাদন দিয়ে রাখে।

(চার) পোশাক পরলে মানুষ প্রশান্তি অনুভব করে। আরাম পায়। স্বস্তি পায়। নিরাপত্তাবোধ করে। নিশ্চিন্ত হয়। উসখুসভাব থাকে না।
খুঁত-খুঁতানিও থাকে না।
স্বামী-স্ত্রী পাশে থাকলেও জীবনে পরম ‘স্থিতি’ আসে। থিতুভাব আসে।

(পাঁচ) জ্ঞানী ব্যক্তি মাত্রেই নিজের জন্যে উপযুক্ত পোষাক বেছে নেয়।
কোন পোষাকটা নিজের জন্যে বেশি উপযুক্ত হবে, চিন্তা-ভাবনা করে। পরামর্শ করে। মার্কেটে যাওয়ার সময় সাথী-সঙ্গীদের নিয়ে যায়।
যেন উপযুক্ত রঙটা কেনা যায়। সঠিক কাপড়টা পাওয়া যায়।
স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপারটাও এমনি।
উপযুক্ত মানুষটাকেই বেছে নিতে হয়। তাহলেই শান্তি।

(ছয়) পোষাক মানুষকে পরিপূর্ণতা দেয়। অসম্পূর্ণতাগুলোকে ভরাট করে দেয়। স্বামী-স্ত্রীও একে অপরের অসম্পূর্ণতাগুলো দূর করে।
যৌথ প্রচেষ্টায় দু’জনের খামতিগুলো দূর হয়। সংসারে নানা অসঙ্গতি থাকলেও, ঢেকেঢুকে রাখে।
ঘরের কথা পরে জানে না।

(সাত) সবাই নিজের জন্যে সুন্দরতম পোষাক বেছে নিতে চায়।
ঝলমলে পোষাক চায়।
নিখুঁত ডিজাইনের সেটটা সংগ্রহ করতে চায়।
নিজের ব্যক্তিত্বের সাথে খাপ খায় এমন পোশাকটার জন্যে হন্যে হয়ে ফেরে।
এ-দোকান সে-দোকান করতে করতে পা ফুলিয়ে ফেলে।
স্বামী বা স্ত্রীও তেমন ‘খাপ খাওয়ানো’ হওয়া উচিত।

(আট) পোশাক আর শরীরের মাঝে একটা সম্পর্ক থাকে।
একটা আরেকটার সাথে অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে থাকে। অপরিহার্য্যভাবে। অবিচ্ছেদ্যরূপে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্কও তেমনি। আত্মিক। শারীরিক। আবেগের। অনুভূতির।

(নয়) পোশাক আঁটসাঁট হয়ে গেলে, অনেক সময় সেটা পরেই চলাফেরা করতে হয়। প্রথম প্রথম কোনও কোনও পোশাক একটু আঁটো লাগে।
বাধো বাধো ঠেকে। পরে আস্তে আস্তে সয়ে যায়।
সহনীয় হয়ে আসে। স্ত্রী-স্বামীও এমনি।
সহ্য করে নিতে হয়। হজম করতে হয়।
কষ্ট হলেও জোর করে থাকতে হয়।
আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে আসে।

(দশ) পোশাক আর শরীর এক হয়ে থাকে। দোঁহে মিলে। যেন দু’টো মিলে এক সত্তা। এক প্রাণ। এক দেহ। স্বামী-স্ত্রীও তেমন। দু’জন হলেও, থাকতে হয় একদেহের মতো।
একাকার হয়ে। একীভূত হয়ে। একে অপরের মধ্যে লীন হয়ে।

(এগার) পোশাক পরলে এক ধরনের প্রশান্তি নেমে আসে। মনে ও তনে।
আরাম আরাম বোধ হতে থাকে।
স্বামী-স্ত্রীও তেমনি।
কাছে গেলেই ভাল লাগা শুরু হয়। আরামবোধ হতে শুরু করে। (ﺳَﻜَﻦٌ ) সাকান শান্তিবোধ হতে থাকে।
কাতাদা রহ. বলেছেনঃ
লিবাস অর্থ: সাকান। শান্তি।

(বারো) পোশাক তৈরী করার পর, ডিজাইন বা সেলাই পছন্দ না হলে, পরিবর্তন করা হয়।
নতুন করে সেলাই করা হয়।
কুঁচি, ফুল, ভাঁজ নতুন করে দেয়া হয়। স্বামী-স্ত্রীও তেমন।
সাংসারিক জীবনে একসাথে থাকতে গেলে, উভয়ের মাঝেই কিছু অভ্যেস-আচরন ধরা পড়ে।
যৌথ জিন্দেগীর জন্যে এসব অভ্যেস ক্ষতিকর।
তাই এসব ‘খাসিয়ত-খাসলত’ পরিবর্তন করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। নিজেকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

(তেরো) বিপদের সময়, শীত-গ্রীষ্মে পোশাকই মানুষকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
প্রচন্ড ঠান্ডার প্রকোপ, তীব্র গরমের ঝাপটা থেকে বাঁচতে মানুষ পোশাকের আশ্রয় নেয়।
জীননের নানা ঘাত-প্রতিঘাতেও স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছে আশ্রয় খোঁজে। সান্তনা খোঁজে।

(চৌদ্দ) তোমার জন্যে পোশাকস্বরূপ।
তার মানে এটাই তোমার জন্যে নির্দিষ্ট।
অন্য কারো চিন্তা করো না।
অন্য কারো দিকে তাকিও না।
অন্য কারো দিকে উঁকি দিও না।
অন্য কারো প্রতি প্রলুব্ধ হয়ো না।
অন্য কারো প্রেমে পড়ো না।

(পনের) লিবাস মানে? বৈবাহিক সম্পর্ক। অর্থাৎ: পারস্পরিক বোঝাপড়া। পারস্পরিক একাত্মতা।
পারস্পরিক সৌহার্দ্য।
পারস্পরিক সম্প্রীতি।
পারস্পরিক নির্ভরতা।
পারস্পরিক সহযোগিতা।
কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ীঃ
পারস্পরিক (ﻣَﻮَﺩَّﺓٌ )-মাওয়াদ্দাহ।
প্রগাঢ় ভালোবাসা।
পারস্পরিক (ﺭَﺣَﻤَﺔٌ )-রহমত। হৃদ্যত।

(ষোল) রবী বিন আনাস (রহঃ) বলেছেন: লিবাস মানে লিহাফ। লেপ।
শীতের সময় যেমন লেপ গায়ে দেয়, স্বামী-স্ত্রীও একে অপরকে গায়ে দিবে।
উষ্ণতা বিলাবে।

(সতের) পোশাক মাঝে মধ্যে খুলে রাখতে হয়।
শরীর থেকে আলগা করতে হয়। দু’জনের মাঝেও কখনো কখনো বাঁধন আলগা হয়ে আসে। দূরত্ব সৃষ্টি হয়। বৈরিতা তৈরী হয়।
সম্পর্কটাকে ঝালাই করার প্রয়োজনেই, সংকটের সময় দু’জন কিছুটা সময় আলাদা-অন্তরালে থাকা জরুরী।
নতুন করে শুরুর জন্যে এটা বেশ উপযোগী।

(আঠার) লিবাস শব্দটাকে রূপকার্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
বাস্তবে তো স্বামী-স্ত্রী লিবাস নয়।
লিবাস বলে, পোশাক যেমন শরীরের সাথে লেপ্টে থাকে, দু’জনকেও এভাবে আজীবন লেপ্টে থাকার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।

(উনিশ) আরবী অলংকার-শাস্ত্র অনুযায়ী, লিবাস শব্দটা ‘একবচন’।
দু’জনের ক্ষেত্রেই একবচনই ব্যবহার করা হয়েছে। এবং লিবাস শব্দটার কোনও বিশেষণ ব্যবহার করা হয়নি।
অর্থাৎ কোনও বাড়তি কথা নেই। অতিরিক্ত প্রটোকল নেই। অপ্রয়োজনীয় আড় নেই। সরাসরি।
স্বামী-স্ত্রীর মাঝেও কোনও আড়াল থাকবে না। প্রটোকল থাকবে না।
আড়ম্বর থাকবে না।
যা কিছু হবে, সব সরাসরি।
ডিরেক্ট একশন।

(বিশ) একে অপরের জন্যে ‘লিবাস’। এখানে দু’জনের সম্পর্ককে লিবাস ও শরীরের সম্পর্কের সাথে ‘তুলনা’ করা হয়েছে।
উপমা দুই ধরনের হয়ঃ-
➝ ক: হিসসি। স্পর্শজাত। ধরা যায়। ছোঁয়া যায়। অর্থাৎ পোশাক যেমন শরীরকে চারদিক থেকে বেষ্টন করে রাখে, আগলে রাখে, স্বামী-স্ত্রীও একে অপরকে এভাবে আগলে রাখবে।
➝ খ: আকলী। বুদ্ধিবৃত্তিক। অনুভূতিজাত। পোশাক শুধু বাহ্যিকভাবেই নিরাপত্ত দেয় না।
মানসিকভাবেও দেয়। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে মাঠে নামা আর শুধু আটপৌরে পোশাক পরে মাঠে নামার মধ্যে নিশ্চই আকাশ-পাতাল তফাত হবে। দু’জনের মানসিক স্থিতি-অস্থিতির মাত্রায় অনেক ফারাক হবে।
স্বামী-স্ত্রী শুধু একে অপরের জন্যে বাহ্যিক ‘আবরন’ হবে না। দু’জন দু’জনকে মানসিক ‘সাপোটর্’ও দেবে।

(একুশ) প্রথমে স্বামীকে বলা হয়েছে: স্ত্রীরা তোমাদের জন্যে আবরণস্বরূপ।
স্ত্রীদেরকে প্রথমে তাদের স্বামীর কথা বলা হয়নি।
তার মানে, একজন স্ত্রীর জন্যে স্বামী যতটা প্রয়োজন, একজন স্বামীর জন্যে স্ত্রীর প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি।
বুড়ো বয়েসের কথা চিন্তা করলে ব্যাপারটা খোলাসা হয়ে যাবে।
বুড়ো মারা গেলে, বুড়ি বাকি জীবন পার করে দিতে পারে।
অতবেশি সমস্যা হয় না।
কিন্তু বুড়ি মরে গেলে, বুড়োর সবদিক আঁধার হয়ে যায়। স্ত্রী ঘরে থাকে।
তার পাপের আশংকা কম।
পাপের সুযোগ কম। স্বামী বাইরে বাইরে থাকে।
তার পাপের সুযোগ বেশি।
তাই তার স্ত্রীরও প্রয়োজন বেশি।
আবার এটাও বলা যায়, সংসারে স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর ভূমিকাই বেশি প্রভাবশালী। সন্তান লালনপালনের দিকটা লক্ষ্য করলে, পরিষ্কার হয়ে যাবে বিষয়টা।

(বাইশ) বৈবাহিক সম্পর্কটা শুধু বাহ্যিক রুসুম-রেওয়াজ নয়।
একজন আরেকজনের পোশাক বলে, বোঝানো হয়েছে, একা একা থাকা নয়।
যৌথভাবে থাকাই কাম্য।
তাহলে পারিবারিক বন্ধন অটুট থাকবে।
অফিসিয়াল সম্পর্ক নয়।
কৃত্রিম হাই-হ্যালোর সম্পর্ক নয়।
আলাদা সত্তা, ব্যক্তি স্বাধীনতার চর্চা নয়। দু’জনকে থাকতে হবে এক হয়ে।
এটাই পোশাকের দাবি।
লিবাসের নিগূঢ় মিনিং।

(তেইশ) পোশাককে সুন্দর রাখতে হয়। পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। দু’জনের সম্পর্ককেও তরতাজা রাখতে হয়।
জীবন্ত প্রাণবন্ত রাখতে হয়।
পোশাকে ময়লা আর্বজনা যাতে না লাগে,সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়। দু’জনের সম্পর্ককেও যেন আবিলতা না লাগে, সেদিকে চৌকান্না থাকতে হয়।

(চব্বিশ) পোশাককে গ্রহনযোগ্য করার জন্যে সুবাস ব্যবহার করতে হয়।
সুন্দর বোতাম লাগাতে হয়।
দু’জনের সম্পর্ককে সুন্দর করতে হলে, টেকসই করতে হলে, গ্রহনযোগ্য করতে হলেও এমন কিছু করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সুন্দর কথা।
ভদ্র ও সৌজন্যমূলক আচরণ দিয়ে। উপহার কিনে দিয়ে।
কোথাও বেড়াতে নিয়ে গিয়ে।
আদর দিয়ে। সোহাগ দিয়ে।
হাসি-কৌতুক দিয়ে। আনন্দ দিয়ে। চাঁদনি রাতে দৌড় প্রতিযোগিতা করে এবং......।

(পঁচিশ) পোশাককে ধোয়া প্রয়োজন। মাঝেমধ্যে বেশি ময়লা হয়ে গেলে, ধোপার কাছেও দেয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সংসারেও ময়লা জমে।
কিছু ময়লা নিজেরাই ধুয়ে ফেলা যায়।
কিছু ময়লা ধুতে তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
তখন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়াই যুক্তিযুক্ত।

(ছাব্বিশ) পোশাককে অতি যত্নের সাথে ব্যবহার করতে হয়। দু’জনকে একে অপরের সাথে কোমল আচরণ করতে হয়।

(সাতাশ) মেয়ের শোকাতুর বাবা-মাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
মেয়ে তোমাদের কাছ থেকে আরেক ঘরে গেলেও, স্বামী তাকে পোশাকের মতোই যত্ন করে রাখবে।

(আঠাশ) একটা চ্যালেঞ্জ এখানে দেয়া যায়, সমস্ত জ্বিন-মানব একসাথ হলেও, এমন একটা ব্যাপক অর্থবহ বাক্য বানানো সম্ভব হবে কি?
দাম্পত্যজীবনের সবদিককে ধারন করতে পারে এমন?

(উনত্রিশ) পোশাক পরা মানে, পোশাকের মধ্যে ঢুকে পড়া।
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পোশাক মানে?
একজন আরেকজনের মধ্যে ঢুকে পড়া। ভালোবাসায়। মহব্বতে। অনুরাগে। বোঝাপড়ায়। সমঝোতায়। গভীর আবেশে।

(ত্রিশ) পোশাক শরীরকে তাপ দেয়।
স্বামী-স্ত্রীও একে অপরকে তাপ দেয়।
কিভাবে?
ইমাম বুখারী (রহঃ) এর গুরুস্থানীয় ব্যক্তি হলেন ‘ইবনে শায়বা’ (রহঃ) তিনি তার বিখ্যাত কিতাব ‘মুসান্নাফে একটা অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন: গোসলের পর পুরুষ তার স্ত্রী থেকে উত্তাপ গ্রহণ।
ইমাম তিরমিযী (রহঃ)ও তার বিখ্যাত কিতাবে এমন শিরোনাম দিয়েছেন।
এ-বিষয়ক হাদীস সংগ্রহ করেছেন।
কিছু পড়ে নেয়া যাকঃ
➨ ১: আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) বলেছেন: আল্লাহর রাসূল ফরজ গোসল করার পর, আমাকে জড়িয়ে ধরে ‘উত্তাপ’ গ্রহণ করতেন।
আমিও তাকে আমার সাথে জড়িয়ে নিতাম।
আমার গোসল তখনো বাকী ছিল,
এ-অবস্থাতে।
(তিরমিযী)।
➨ ২. উমার (রাঃ) ইবনে উমার (রাঃ) আবু দারদা (রাঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও এমন মজার ও সুখকর আমল করেছেন বলে হাদীসে আছে।
➨ ৩. ইবনে বলেছেন: আমি ফরয গোসল করে, স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরি।
সে গোসল করার আগেই।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন: শীতকালে কুরাইশ পুরুষদের এটাই ছিল জীবনরীতি।
➨ ৪. ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন: আমি স্ত্রী থেকে শীতে উষ্ণতা গ্রহণ করি।
গ্রীষ্মে শীতলতা গ্রহণ করি।
☰ কাপড় পরা থাকলে, উত্তাপ ভালোভাবে আসবে না।
আর আম্মাজান শব্দ ব্যবহার করেছেন: (ﺍﺳﺘﺪﻓﺎﺀ) ইস্তেদফা‘।
উষ্ণতা লাভ করা।
এটা কাপড় থাকলে জোরালো হয় না।
চামড়ার সাথে চামড়া লাগলে যতোটা হয়। হাদীসের ব্যখ্যাগ্রন্থগু
লোতে এমনটাই বলা হয়েছে।
.
এবার আসা যাক ওয়াজের বাকী অংশেঃ……………
.
হুযুর এমনিতে গরম।
সভাপতির কথা শুনে আরো গরম হয়ে গেলেন,
-আপনাদের আয়োজন দেখে তো আমি ভেবেছিলাম আপনারা বুদ্ধিমান। এখন ধারনা পুরোপুরি উল্টে গেলো!
-কেন হুযুর! আমরা বোকামীর কী করলাম?
-আমি কি শুধু কাঁথার ওয়াজ করেছি!
এত টাকা দিয়ে ওয়াজের এন্তেজাম করেছেন!
নিজেরাই যদি মনোযোগ দিয়ে ওয়াজ না শুনবেন, তাহলে এত পরিশ্রমের কী মূল্য রইল!
-হুযুর ভুল হয়ে গেছে! একটু যদি ধরিয়ে দিতেন!
-আমি অবিবাহিতদের বিয়ে করিয়ে দেয়ার কথা বলিনি?
স্বামী-স্ত্রী কিভাবে সুন্নাত তরীকায় থাকবে, সে ওয়াজ করিনি!
শীতকালে নবীজি কিভাবে আম্মাজানের কাছ থেকে উত্তাপ গ্রহণ করতেন সেটা খুলে বলিনি!
খালি কাঁথার কথাটা মনে রাখলেন?
-সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর লাখ লাখ শোকর! হুযুরের ওয়াজ শুনে গিন্নি এত খুশি হয়েছে, আর বলার নয়। গিন্নি একটা আবদারও জুড়েছে!
-আবার কী আবদার!
-হুযুর যদি রাজি থাকেন! আমাদের ‘মা’ রাবিয়াকে আপনার হাতে তুলে দেবার কথা বলেছে! মেয়ের মায়ের দুশ্চিন্তা, ইতিমধ্যে অারো কয়েকজনও এ-বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেছে!
-ইন্নালিল্লাহ! ছিঃ ছিঃ আব্বাজান! আমি এতক্ষণ আপনার সাথে কত বেয়াদবিই না করে ফেলেছি। মাফ করে দিন!
-তাহলে কি......!
-জ্বি জ্বি! শুভ কাজে দেরী কেন!
মাসয়ালা হলো, বিয়ের বয়েস হওয়ার পর, বিয়ে ঠিক হযে যাওয়ার পর দেরী করতে নেই!
-এত রাতে?
-তবে কি অামি কি এই দীর্ঘ শীতের রাতে হি হি করে মরবো?

Popular Posts

একটু চিন্তা করুন ।

                      أعوذ بالله من الشيطان الرجيم                           بسم الله الرحمن الرحيم                 সকল মুসলিম ভাই বোন ক...

Search This Blog

Followers