সত্যিকারের মিলাদুন্নবী পালন করতে হলে প্রতি সোমবার ‘রোজা’ রাখুন
প্রশ্নগুলোর জবাব ক্লিয়ার হওয়া দরকার।
.
১-
মিলাদুন্নবী (অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ সা: এর জন্ম বা জন্মদিবস) পালনকরার প্রবক্তা যারা, তাদেরকে প্রশ্ন করতে চাই যে, মিলাদুন্নবী (সা) কি পালনকরার বিষয়, নাকি আলোচনা করার বিষয়?
.
২-
যদি মিলাদুন্নবী (সা) পালনকরার বিষয় হয়, তাহলে আমার প্রশ্ন হল, পালনকরার পদ্ধতি কী? ইসলামী শরিয়তের চার দলিল (কুরান, হাদিস, ইজমা এবং ক্বিয়াস)’র কোনো একটি দ্বারা তা সুস্পষ্ট করা হউক।
আর যদি মিলাদুন্নবী আলোচনা করার বিষয় হয়, তাহলে সেটি নিজেদের মনগড়া সিস্টেম অনুসারে করবে, নাকি সাহাবায়ে কেরাম ও সালফে-সালেহীনের প্রদর্শিত সিস্টেম অনুসারে করা হবে?
যদি সাহাবায়ে কেরামের কিংবা সালফে-সালেহীনের প্রদর্শিত সিস্টেম অনুসারে মিলাদুন্নবী (সা)-আমল করতে হয়, তো তখন সহজেই প্রশ্ন আসবে যে, সাহাবায়ে কেরামের প্রদর্শিত মিলাদুন্নবী (সা)-এর আমলটি কেমন ছিল, পদ্ধতি কিভাবে? সহিহ দলিল সহ সুস্পষ্ট করলে মুসলিম বিশ্ব বিনাবাক্যে গ্রহণ করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
.
৩-
বর্তমানে মিলাদুন্নবী নামে যেটি সমাজে প্রচলিত রয়েছে তার সাথে সাহাবায়ে কেরামের প্রদর্শিত খাইরুল কুরূনের সেই মিলাদুন্নবী (সা)’র কোনো সামঞ্জস্যতা রয়েছে কি? সুস্পষ্ট ও সহিহ হাদিস দ্বারা তা প্রমাণ করতে হবে। নতুবা বর্তমান ফেতনার যুগে মিলাদুন্নবী নামে যা প্রচলিত রয়েছে তাকে খাইরুল কুরূনের সেই প্রকৃত মিলাদুন্নবীর সাথে যতভাবেই গুলিয়ে পেলা হউক—উম্মাহ’র কেউ তা গ্রহণ করবেনা, করার যুক্তিকতাও নেই।
.
৪-
মিলাদুন্নবী (সা) উপলক্ষে সহিহ মুসলিম শরিফে এতটুকু পাওয়া যায় যে, নবীপাক (সা) সোমবার রোজা রাখতেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা) তার কারণ জানতে চাওয়ায় নবিজি (সা) এরশাদ করেছেন : “এ দিবসে আমি পৃথিবীতে জন্ম লাভ করেছিলাম এবং পবিত্র কুরান আমার উপর এ দিবসেই নাযিল হয়েছিল।”
অতএব, হাদিসেপাকে মিলাদুন্নবী (সা) উপলক্ষে বিশেষ কিছু করণীয় থাকলে তা হল, বড়জোর সোমবার রোজা রাখা। এর মাধ্যমে নবীপাকের অনুকরণ আর অনুসরণে উনার জন্ম-মুবারকের প্রতি শুকরিয়া প্রকাশ করা হবে।
এ ছাড়া উম্মাহ’র জন্য যখন ইচ্ছে সর্বোত্তম পরিবেশে নবীপাক (সা)-এর জন্মালোচনা করবে এবং বিশুদ্ধ রেওয়ায়েতের মাধ্যমে উনার জন্মদিবসে প্রকাশিত অলৌকিক মু’জিযা সমূহ বর্ণনা করবে। এসব আমল করার দ্বারা যদি মিলাদুন্নবী আদায় না হয়, তাহলে কিভাবে করলে মিলাদুন্নবী আদায় হবে, তার সঠিক ও বিশুদ্ধ পদ্ধতি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণ করতে হবে। গায়ের জোরে কোনো আমল সাব্যস্ত হয়না, হতে পারেনা।
.
নবীপাক (সা) প্রতি সোমবার রোজা রাখার প্রমাণ.
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﻤﺜﻨﻰ ﻭﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺑﺸﺎﺭ ﻭﺍﻟﻠﻔﻆ ﻻﺑﻦ ﺍﻟﻤﺜﻨﻰ ﻗﺎﻻ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺟﻌﻔﺮ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺷﻌﺒﺔ ﻋﻦ ﻏﻴﻼﻥ ﺑﻦ ﺟﺮﻳﺮ ﺳﻤﻊ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﻌﺒﺪ ﺍﻟﺰﻣﺎﻧﻲ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭﻱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺳﺌﻞ ﻋﻦ ﺻﻮﻡ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻗﺎﻝ ﺫﺍﻙ ﻳﻮﻡ ﻭﻟﺪﺕ ﻓﻴﻪ ﻭﻳﻮﻡ ﺑﻌﺜﺖ ﺃﻭ ﺃﻧﺰﻝ ﻋﻠﻲ ﻓﻴﻪ.
অর্থ সাহাবী হযরত আবু ক্বাতাদা আল-আনছারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবীজি (সাঃ)-কে সোমবারে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলিলেন “এ দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি বা প্রেরিত হয়েছি এবং এ দিনেই আমার ওপর কুরআন নাযিল শুরু হয়েছে।”
[সূত্র : সহিহ মুসলিম শরিফ, সিয়াম অধ্যায়; পৃষ্ঠা নং ৮২০, হাদিস নং ১১৬২; হযরত আবু ক্বাতাদা আল-আনছারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত]।
.
৫-
অনেকে প্রচলিত মিলাদুন্নবীর মৌলিকত্ব খাইরুল কুরূনের সময়ে বিদ্যমান ছিল বলে পবিত্র কুরান আর সহিহ হাদিস থেকে দাবি করতে চায়। অথচ তাদের এ দাবি কিছুতেই গ্রহনযোগ্য হতে পারেনা।
যদি প্রচলিত মিলাদুন্নবীর মৌলিকত্ব খাইরুল কুরূনের সময়ে বিদ্যমান থাকার দলিল কুরান হাদিসে থাকত, তাহলে আল্লামা সুয়ূতী সহ ইমাম হাইছামী, ইমাম সাখাবী ও ইবনে খালদূন প্রমুখ বিদ্যানগণ মিলাদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কেন??
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও মুফাসসির, তাফসীরে জালালাইন কিতাবের রচয়িতা আল্লামা জালালুদ্দিন আস- সুয়ূতী (রহ) [মৃত ৯১১ হিজরী] “আল-হাভী লিল ফাতাওয়া” নামক কিতাবের অন্তর্গত ‘হুসনুল মাকছাদ ফী আমালিল মওলিদ’ নামক একটি পত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে লিখেছেন :
ﻭ ﺃﻭﻝ ﻣﻦ ﺃﺣﺪﺙ ﻓﻌﻞ ﺫﻟﻚ ﺻﺎﺣﺐ ﺇﺭﺑﻞ ﺍﻟﻤﻠﻚ ﺍﻟﻤﻈﻔﺮ ﺃﺑﻮ ﺳﻌﻴﺪ ﻛﻮﻛﺒﺮﻱ ﺑﻦ ﺯﻳﻦ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺑﻜﺘﻜﻴﻦ ﺃﺣﺪ ﺍﻟﻤﻠﻮﻙ ﺍﻷﻣﺠﺎﺩ ﻭ ﺍﻟﻜﺒﺮﺍﺀ ﺍﻷﺟﻮﺍﺩ ، ﻭ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺀﺍﺛﺎﺭ ﺣﺴﻨﺔ ، ﻭ ﻫﻮ ﺍﻟﺬﻱ ﻋﻤّﺮ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ﺍﻟﻤﻈﻔﺮﻱ ﺑﺴﻔﺢ ﻗﺎﺳﻴﻮﻥ .
.
অর্থাৎ …..সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাঃ পালনের সূচনা করেছেন তিনি ছিলেন ইরবলের বাদশাহ আবু সাঈদ মুজাফফর উদ্দিন কূকবরী ইবনে যাইনুদ্দী ইবনে বুকতকীন (মৃত ৬৩৫ হিজরী) ।তিনি অতিব প্রতাবশালী ও বড় দানবীর। তার সুন্দর সুন্দর কতেক কীর্তিও রয়েছে।
.
সুতরাং প্রমাণ হয়ে গেল, খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীকালের ইরাকি বাদশাহ মুজাফফর উদ্দিন এর পূর্বে মিলাদুন্নবী নামের কোনো আমল বিদ্যমান থাকার দাবি সঠিক নয়। অতএব মিলাদুন্নবী পালনকরা দ্বীনের মধ্যে নব প্রথা বৈ কিছু না।
.
মন্তব্য :
উপরের সবগুলো প্রশ্ন সামনে রাখলে যে কোনো বিবেকবান ব্যক্তি নির্দ্বিধায় বুঝে পেলবেন যে, প্রকৃতপক্ষে মিলাদুন্নবী নামে নতুন কোনো প্রথা বা নীতি-নিয়ম পবিত্র ইসলাম ধর্মে নেই। বর্তমানে যেটা প্রচলিত রয়েছে এটি খয়রাতি মোল্লাদের বানানো তো বটেই, উপরন্তু আগাগোড়াই ভেজালে মিশ্রিত।
ফলে এটি খাইরুল কুরূনের সেই মিলাদুন্নবীর মত থাকেনি। অর্থাৎ মুসলিম শরিফের হাদিস অনুসারে সোমবার দিবসে রোজা রাখা কিংবা যার যখন ইচ্ছে সর্বোত্তম পরিবেশে নবীপাক (সা)-এর জন্মালোচনা করা ও বিশুদ্ধ রেওয়ায়েতের মাধ্যমে উনার জন্মদিবসে প্রকাশিত অলৌকিক মু’জিযা সমূহ বর্ণনা করার মতো সত্যিকারের মিলাদুন্নবী নয় বর্তমান ফেতনার যুগের প্রচলিত মিলাদুন্নবী সিস্টেম। পরন্তু তার অভ্যন্তরে সংযোজিত কিয়ামের ইতিহাস আজ বা নাহি বললাম।
প্রশ্নগুলোর জবাব ক্লিয়ার হওয়া দরকার।
.
১-
মিলাদুন্নবী (অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ সা: এর জন্ম বা জন্মদিবস) পালনকরার প্রবক্তা যারা, তাদেরকে প্রশ্ন করতে চাই যে, মিলাদুন্নবী (সা) কি পালনকরার বিষয়, নাকি আলোচনা করার বিষয়?
.
২-
যদি মিলাদুন্নবী (সা) পালনকরার বিষয় হয়, তাহলে আমার প্রশ্ন হল, পালনকরার পদ্ধতি কী? ইসলামী শরিয়তের চার দলিল (কুরান, হাদিস, ইজমা এবং ক্বিয়াস)’র কোনো একটি দ্বারা তা সুস্পষ্ট করা হউক।
আর যদি মিলাদুন্নবী আলোচনা করার বিষয় হয়, তাহলে সেটি নিজেদের মনগড়া সিস্টেম অনুসারে করবে, নাকি সাহাবায়ে কেরাম ও সালফে-সালেহীনের প্রদর্শিত সিস্টেম অনুসারে করা হবে?
যদি সাহাবায়ে কেরামের কিংবা সালফে-সালেহীনের প্রদর্শিত সিস্টেম অনুসারে মিলাদুন্নবী (সা)-আমল করতে হয়, তো তখন সহজেই প্রশ্ন আসবে যে, সাহাবায়ে কেরামের প্রদর্শিত মিলাদুন্নবী (সা)-এর আমলটি কেমন ছিল, পদ্ধতি কিভাবে? সহিহ দলিল সহ সুস্পষ্ট করলে মুসলিম বিশ্ব বিনাবাক্যে গ্রহণ করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
.
৩-
বর্তমানে মিলাদুন্নবী নামে যেটি সমাজে প্রচলিত রয়েছে তার সাথে সাহাবায়ে কেরামের প্রদর্শিত খাইরুল কুরূনের সেই মিলাদুন্নবী (সা)’র কোনো সামঞ্জস্যতা রয়েছে কি? সুস্পষ্ট ও সহিহ হাদিস দ্বারা তা প্রমাণ করতে হবে। নতুবা বর্তমান ফেতনার যুগে মিলাদুন্নবী নামে যা প্রচলিত রয়েছে তাকে খাইরুল কুরূনের সেই প্রকৃত মিলাদুন্নবীর সাথে যতভাবেই গুলিয়ে পেলা হউক—উম্মাহ’র কেউ তা গ্রহণ করবেনা, করার যুক্তিকতাও নেই।
.
৪-
মিলাদুন্নবী (সা) উপলক্ষে সহিহ মুসলিম শরিফে এতটুকু পাওয়া যায় যে, নবীপাক (সা) সোমবার রোজা রাখতেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা) তার কারণ জানতে চাওয়ায় নবিজি (সা) এরশাদ করেছেন : “এ দিবসে আমি পৃথিবীতে জন্ম লাভ করেছিলাম এবং পবিত্র কুরান আমার উপর এ দিবসেই নাযিল হয়েছিল।”
অতএব, হাদিসেপাকে মিলাদুন্নবী (সা) উপলক্ষে বিশেষ কিছু করণীয় থাকলে তা হল, বড়জোর সোমবার রোজা রাখা। এর মাধ্যমে নবীপাকের অনুকরণ আর অনুসরণে উনার জন্ম-মুবারকের প্রতি শুকরিয়া প্রকাশ করা হবে।
এ ছাড়া উম্মাহ’র জন্য যখন ইচ্ছে সর্বোত্তম পরিবেশে নবীপাক (সা)-এর জন্মালোচনা করবে এবং বিশুদ্ধ রেওয়ায়েতের মাধ্যমে উনার জন্মদিবসে প্রকাশিত অলৌকিক মু’জিযা সমূহ বর্ণনা করবে। এসব আমল করার দ্বারা যদি মিলাদুন্নবী আদায় না হয়, তাহলে কিভাবে করলে মিলাদুন্নবী আদায় হবে, তার সঠিক ও বিশুদ্ধ পদ্ধতি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণ করতে হবে। গায়ের জোরে কোনো আমল সাব্যস্ত হয়না, হতে পারেনা।
.
নবীপাক (সা) প্রতি সোমবার রোজা রাখার প্রমাণ.
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﻤﺜﻨﻰ ﻭﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺑﺸﺎﺭ ﻭﺍﻟﻠﻔﻆ ﻻﺑﻦ ﺍﻟﻤﺜﻨﻰ ﻗﺎﻻ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺟﻌﻔﺮ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺷﻌﺒﺔ ﻋﻦ ﻏﻴﻼﻥ ﺑﻦ ﺟﺮﻳﺮ ﺳﻤﻊ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﻌﺒﺪ ﺍﻟﺰﻣﺎﻧﻲ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭﻱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺳﺌﻞ ﻋﻦ ﺻﻮﻡ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻗﺎﻝ ﺫﺍﻙ ﻳﻮﻡ ﻭﻟﺪﺕ ﻓﻴﻪ ﻭﻳﻮﻡ ﺑﻌﺜﺖ ﺃﻭ ﺃﻧﺰﻝ ﻋﻠﻲ ﻓﻴﻪ.
অর্থ সাহাবী হযরত আবু ক্বাতাদা আল-আনছারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবীজি (সাঃ)-কে সোমবারে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলিলেন “এ দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি বা প্রেরিত হয়েছি এবং এ দিনেই আমার ওপর কুরআন নাযিল শুরু হয়েছে।”
[সূত্র : সহিহ মুসলিম শরিফ, সিয়াম অধ্যায়; পৃষ্ঠা নং ৮২০, হাদিস নং ১১৬২; হযরত আবু ক্বাতাদা আল-আনছারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত]।
.
৫-
অনেকে প্রচলিত মিলাদুন্নবীর মৌলিকত্ব খাইরুল কুরূনের সময়ে বিদ্যমান ছিল বলে পবিত্র কুরান আর সহিহ হাদিস থেকে দাবি করতে চায়। অথচ তাদের এ দাবি কিছুতেই গ্রহনযোগ্য হতে পারেনা।
যদি প্রচলিত মিলাদুন্নবীর মৌলিকত্ব খাইরুল কুরূনের সময়ে বিদ্যমান থাকার দলিল কুরান হাদিসে থাকত, তাহলে আল্লামা সুয়ূতী সহ ইমাম হাইছামী, ইমাম সাখাবী ও ইবনে খালদূন প্রমুখ বিদ্যানগণ মিলাদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কেন??
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও মুফাসসির, তাফসীরে জালালাইন কিতাবের রচয়িতা আল্লামা জালালুদ্দিন আস- সুয়ূতী (রহ) [মৃত ৯১১ হিজরী] “আল-হাভী লিল ফাতাওয়া” নামক কিতাবের অন্তর্গত ‘হুসনুল মাকছাদ ফী আমালিল মওলিদ’ নামক একটি পত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে লিখেছেন :
ﻭ ﺃﻭﻝ ﻣﻦ ﺃﺣﺪﺙ ﻓﻌﻞ ﺫﻟﻚ ﺻﺎﺣﺐ ﺇﺭﺑﻞ ﺍﻟﻤﻠﻚ ﺍﻟﻤﻈﻔﺮ ﺃﺑﻮ ﺳﻌﻴﺪ ﻛﻮﻛﺒﺮﻱ ﺑﻦ ﺯﻳﻦ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺑﻜﺘﻜﻴﻦ ﺃﺣﺪ ﺍﻟﻤﻠﻮﻙ ﺍﻷﻣﺠﺎﺩ ﻭ ﺍﻟﻜﺒﺮﺍﺀ ﺍﻷﺟﻮﺍﺩ ، ﻭ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺀﺍﺛﺎﺭ ﺣﺴﻨﺔ ، ﻭ ﻫﻮ ﺍﻟﺬﻱ ﻋﻤّﺮ ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ﺍﻟﻤﻈﻔﺮﻱ ﺑﺴﻔﺢ ﻗﺎﺳﻴﻮﻥ .
.
অর্থাৎ …..সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাঃ পালনের সূচনা করেছেন তিনি ছিলেন ইরবলের বাদশাহ আবু সাঈদ মুজাফফর উদ্দিন কূকবরী ইবনে যাইনুদ্দী ইবনে বুকতকীন (মৃত ৬৩৫ হিজরী) ।তিনি অতিব প্রতাবশালী ও বড় দানবীর। তার সুন্দর সুন্দর কতেক কীর্তিও রয়েছে।
.
সুতরাং প্রমাণ হয়ে গেল, খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীকালের ইরাকি বাদশাহ মুজাফফর উদ্দিন এর পূর্বে মিলাদুন্নবী নামের কোনো আমল বিদ্যমান থাকার দাবি সঠিক নয়। অতএব মিলাদুন্নবী পালনকরা দ্বীনের মধ্যে নব প্রথা বৈ কিছু না।
.
মন্তব্য :
উপরের সবগুলো প্রশ্ন সামনে রাখলে যে কোনো বিবেকবান ব্যক্তি নির্দ্বিধায় বুঝে পেলবেন যে, প্রকৃতপক্ষে মিলাদুন্নবী নামে নতুন কোনো প্রথা বা নীতি-নিয়ম পবিত্র ইসলাম ধর্মে নেই। বর্তমানে যেটা প্রচলিত রয়েছে এটি খয়রাতি মোল্লাদের বানানো তো বটেই, উপরন্তু আগাগোড়াই ভেজালে মিশ্রিত।
ফলে এটি খাইরুল কুরূনের সেই মিলাদুন্নবীর মত থাকেনি। অর্থাৎ মুসলিম শরিফের হাদিস অনুসারে সোমবার দিবসে রোজা রাখা কিংবা যার যখন ইচ্ছে সর্বোত্তম পরিবেশে নবীপাক (সা)-এর জন্মালোচনা করা ও বিশুদ্ধ রেওয়ায়েতের মাধ্যমে উনার জন্মদিবসে প্রকাশিত অলৌকিক মু’জিযা সমূহ বর্ণনা করার মতো সত্যিকারের মিলাদুন্নবী নয় বর্তমান ফেতনার যুগের প্রচলিত মিলাদুন্নবী সিস্টেম। পরন্তু তার অভ্যন্তরে সংযোজিত কিয়ামের ইতিহাস আজ বা নাহি বললাম।