Showing posts with label anna singer. Show all posts
Showing posts with label anna singer. Show all posts

ঐতিহ্য : অন্নদান,

অন্নহীনকে অন্ন দেয়া অতি বড় পুণ্যকর্ম। সহানুভূতি ও মানবিকতার এক বড় পরিচয়। বিবেকবান মানুষমাত্রই তা উপলব্ধি করেন। তবে আরো দশটা ভালো কাজের মতো এ কাজটিও অবহেলিত থাকে ইচ্ছা ও সংকল্পের অভাবে। এটি এমন একটি পুণ্যকর্ম, যার দ্বারা আল্লাহর দয়া ও করুণার পাত্র হওয়া যায় এবং বান্দার উপর আল্লাহর রিযকের দরজা খোলে। সুখের বিষয় হচ্ছে, সাধারণভাবে অবহেলিত এইসব ভালো কাজেরও এমন সব দৃষ্টান্ত কখনো কখনো দেখা যায় যে, মন আনন্দে ভরে ওঠে আর ইচ্ছা জাগে, এই রকমের দৃষ্টান্ত যদি আরো বেশি বেশি দেখা যেত।
গত ৩০ জুলাই দৈনিক নয়াদিগন্তের ‘অবকাশ’ পাতায় একটি সুন্দর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদের শিরোনাম ছিল- ‘গরিব মিসকিনদের ঠিকানা হোটেল আকবরিয়া’।
শিরোনাম থেকেই বিষয়বস্তু অনেকটা বোঝা যাচ্ছে। ভেতরের লম্বা বৃত্তান্তের সারসংক্ষেপ হল, বগুড়া শহরের থানা রোডে অবস্থিত আকবরিয়া গ্র্যান্ড হোটেলটি নিয়মিত গরিব-মিসকিনকে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করে থাকে। এই ধারা অনেক পুরানো। হোটেলটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আকবর আলী এই ধারার সূচনা করেন। তিনি অতি সাধারণ অবস্থা থেকে উঠে আসা একজন মানুষ। তাই আল্লাহর শোকরগোযারির জন্য হোটেলের আয়ের একটি অংশ দিয়ে প্রতিদিন রাত্রে ফকির-মিসকিনদের এক বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে মৃত্যুর আগে ছেলেদের নিদের্শ করে যান, তাঁরাও যেন মুসাফির, গরিব-মিসকিনদের খাওয়ানোর ধারাটি অব্যাহত রাখে। বাবার আদেশ মতো ছেলেরা তা ধরে রেখেছেন। প্রতিদিন রাত ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত গরীবদের মাঝে টাটকা খাবার বিতরণ করা হয়। তিন থেকে সাড়ে তিন শ অভাবী মানুষ এক বেলা পেটভরে খাবার খান।
নিঃসন্দেহে এটি একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত। গরিব-মিসকিনদের জন্য নিয়মিত টাটকা খাবারের আয়োজন অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। এটি অনেক বড় ছওয়াবের কাজ। হাদীস শরীফে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে তৃপ্তির সাথে আহার করানোকে ‘শ্রেষ্ঠ সদাকা’ বলা হয়েছে।
أَفْضَلُ الصّدَقَةِ أَنْ تُشْبِعَ كَبِدًا جَائِعًا
সর্বোত্তম সদাকা- ক্ষুধার্তকে আহার করানো। -শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৩০৯৫
বুখারী ও মুসলিমে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন- أَيّ الْإِسْلَامِ خَيْرٌ؟
ইসলামের কোন্ কাজটি শ্রেষ্ঠ?
তিনি বললেন-
تُطْعِمُ الطّعَامَ، وَتَقْرَأُ السّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ.
খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপরিচিত প্রত্যেককে সালাম দেওয়া। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৯
বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম-
يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي إِذَا رَأَيْتُكَ طَابَتْ نَفْسِي وَقَرّتْ عَيْنِي، فَأَنْبِئْنِي عَنْ كُلِّ شَيْءٍ.
আল্লাহর রাসূল! আপনাকে যখন দেখি তখন আমার মন ভরে যায় ও চোখ জুড়িয়ে যায়। আমাকে বলবেন কি সকল বস্তুর (সূচনা) সম্পর্কে?
তিনি বললেন-
كُلّ شَيْءٍ خُلِقَ مِنْ مَاءٍ
সকল বস্তু পানি থেকে সৃজিত।
আমি বললাম-
أَخْبِرْنِي بِشَيْءٍ إِذَا عَمِلْتُ بِهِ دَخَلْتُ الْجَنّةَ
আমাকে এমন একটি কাজ সম্পর্কে বলুন, যা পালন করলে আমি জান্নাতে যাব।
তিনি বললেন-
أَطْعِمِ الطّعَامَ، وَأَفْشِ السّلَامَ، وَصِلِ الْأَرْحَامَ، وَقُمْ بِاللّيْلِ وَالناسُ نِيَامٌ، تَدْخُلِ الْجَنّةَ بِسَلَامٍ.
খাবার দাও, সালামের বিস্তার ঘটাও, রক্ত-সম্পর্ক রক্ষা কর আর রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে ঐ সময় নামায পড়, নিরাপদে জান্নাতে যেতে পারবে। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২৫৫০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৯৩২
কাজেই ইসলামী শিক্ষায় খাবার খাওয়ানো হচ্ছে এক শ্রেষ্ঠ ছওয়াবের কাজ, যে কাজের দ্বারা মানুষ জান্নাতের পথে এগিয়ে যায়।
এ হাদীসে সালাম দেওয়া, খাবার খাওয়ানো, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা এবং গভীর রাতে নামায পড়া- এই চারটি বিষয়ের উল্লেখ হয়েছে। সালাম দেয়া বিনয় ও সৌজন্য প্রকাশক, খাবার খাওয়ানো বদান্যতা ও সহানুভূতির পরিচায়ক, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা উত্তম আখলাকের  প্রমাণ, আর গভীর রাতে যে নামায পড়ে সে তো অন্যান্য ইবাদতও যথাযথভাবে আদায় করবে। একজন মুসলিমের এইসকল গুণের অধিকারী হওয়া কাম্য।
ইসলামের একেবারে শুরু থেকেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের এই শিক্ষা দান করেছেন। বিখ্যাত ইহুদী পণ্ডিত যিনি পরে ইসলাম কবুল করে মনীষী সাহাবীদের কাতারে শামিল হয়েছেন সেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রা. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাঁর প্রথম সাক্ষাতের বৃত্তান্ত এভাবে বয়ান করেছেন-
لَمّا قَدِمَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الْمَدِينَةَ، انْجَفَلَ الناسُ قِبَلَهُ، وَقِيلَ: قَدْ قَدِمَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، قَدْ قَدِمَ رَسُولُ اللّهِ، قَدْ قَدِمَ رَسُولُ اللّهِ ثَلَاثًا، فَجِئْتُ فِي النّاسِ، لِأَنْظُرَ، فَلَمّا تَبَيّنْتُ وَجْهَهُ، عَرَفْتُ أَنّ وَجْهَهُ لَيْسَ بِوَجْهِ كَذابٍ، فَكَانَ أَوّلُ شَيْءٍ سَمِعْتُهُ تَكَلَّمَ بِهِ، أَنْ قَالَ: يَا أَيّهَا النّاسُ أَفْشُوا السّلَامَ، وَأَطْعِمُوا الطّعَامَ، وَصِلُوا الْأَرْحَامَ، وَصَلّوا بِاللّيْلِ، وَالناسُ نِيَامٌ، تَدْخُلُوا الْجَنّةَ بِسَلَامٍ
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় এলেন লোকেরা দলে দলে সেদিক চলল। আর শোর উঠল রাসূলুল্লাহ এসে পড়েছেন! রাসূলুল্লাহ এসে পড়েছেন! রাসূলুল্লাহ এসে পড়েছেন! আমিও সকলের সাথে তাঁকে দেখার জন্য হাজির হলাম। তো তাঁর মুখম-ল গভীরভাবে নিরীক্ষণ করে আমার প্রত্যয় জন্মে গেল যে, এই (মোবারক) চেহারা কোনো মিথ্যুকের চেহারা হতে পারে না। এ সময় প্রথম যে কথাটি তাঁর মুখে শুনি তা এই-
‘লোকসকল! সালামের বিস্তার ঘটাও, খাবার খাওয়াও আর রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়, তাহলে নিরাপদে জান্নাতে যেতে পারবে। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩২৫১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৭৮৪; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৮৩৭৫;
কাজেই খাবার খাওয়ানো ইসলামের দ্বীনী আদর্শ ও ধর্মীয় ঐতিহ্য। শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এই সুন্নাহ্র অনুসরণ কাম্য।
লেখাটির শুরুতে যে দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হয়েছে এরকমের ব্যবস্থা আরো কিছু হোটেলেও কি হতে পারে না? আয়ের একটি অংশ যদি গরীব-মিসকিনদের আহার যোগানোর ক্ষেত্রে ব্যয় করা হয় তাহলে তা হতে পারে দুনিয়া আখিরাতে অনেক- কল্যাণ ও বরকতের ব্যাপার। হোটেল ছাড়াও সামাজিক যে সকল অনুষ্ঠান হয়ে থাকে তাতেও গরীব-মিসকিনদের জন্য ব্যবস্থা থাকতে পারে। এখন তো সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একদিকে খাবারের অপচয় আর অন্য দিকে গরীব-দুঃখীকে দাওয়াত না করাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। অনুষ্ঠানগুলোতে এত পরিমাণ খাবারের অপচয় হয় যে, তা না হলে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের সমসংখ্যক গরীব-দুঃখীকেও আপ্যায়ন করা যেত। এখানে ‘আপ্যায়ন’ শব্দটি সচেতনভাবেই ব্যবহার করেছি। গরীব-দুঃখী বলে তাকে খাবার দেওয়ার রূপটা অসুন্দর হতে হবে- এমন কথা নেই। এখন তো মিসকিনকে কিছু দেয়ার রূপটিও নিতান্তই হয়ে থাকে ‘মিসকিন’ । এমনভাবে দেয়া হয়, যেন সে মানবেতর কোনো প্রাণী। তো গরীবকেও ‘আমন্ত্রণ’ করা যায় এবং ‘আপ্যায়ন’ করা যায়। আর তা হলে গরীবেরও রুচির উন্নতি ঘটে, ধনীরও মানসিকতা উন্নত হয়, দু’পক্ষের জন্যই যা অতি প্রয়োজন।
আরেকটি কথা, গরীব-দুঃখীকে খাবার খাওয়ানোর বড়সড় আয়োজন হয়তো সবার পক্ষে সবসময় সম্ভব নয়, কিন্তু ছোট আয়োজন তো সম্ভব। প্রায় সকল সচ্ছল পরিবারেই যে দু-একজন গরীব ‘লোক’ থাকে- কাজের ছেলে-মেয়ে, বুয়া, দারোয়ান... এদের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা তো কঠিন নয়। শুধু মানসিকতা প্রয়োজন। এ তো আরো গুরুত্বপূর্ণ। পরিশেষে আমাদের ইতিহাসের একটি ছোট্ট ঘটনার উল্লেখ করে এই লেখাটি শেষ করছি।
ইসলামী শাসনামলে মুসলিম জাহানের সর্বত্রই ছিল মানসম্মত চিকিৎসাকেন্দ্র। এমনই একটি  চিকিৎসাকেন্দ্র হচ্ছে দামেশকের ‘বীমারিস্তান-আন নূরী’। মুসলিম-অমুসলিম, মুকীম-মুসাফীর সবার জন্যই তা উন্মুক্ত ছিল। এখানে যে খাবার সরবারহ করা হত তা-ও ছিল খুব উন্নত মানের। ঐতিহাসিক ইবনে শাহীন একটি ঘটনা বয়ান করেন, যার সার-সংক্ষেপ হচ্ছে, বীমারিস্তান নূরীর সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণ পেয়ে এক লোক ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন এবং বীমারিস্তানে ভর্তি হয়ে যান।
তিন দিন পর কতৃপক্ষ তাকে ‘রিলিজ’ করে দেন। রিলিজের ভাষা ছিল এই রকম ‘প্রিয় রোগী! আমরা প্রথম দিনই আপনার ‘রোগটা’ ধরতে পারি। মেহমানদারির মেয়াদ যেহেতু তিন দিন আর তিন দিন সমাপ্ত হয়েছে তাই আপনাকে ‘রিলিজ’ করা হচ্ছে। এখন আপনি সহীহ-সালামে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।’

Popular Posts

একটু চিন্তা করুন ।

                      أعوذ بالله من الشيطان الرجيم                           بسم الله الرحمن الرحيم                 সকল মুসলিম ভাই বোন ক...

Search This Blog

Followers