Showing posts with label famous sculpture of Bangladesh. Show all posts
Showing posts with label famous sculpture of Bangladesh. Show all posts

গোঁড়ামি : মূর্তিপ্রেম,

ব্যাপক দাবি ও বিক্ষোভের মুখে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত মূর্তিটি সরানো হয়েছে। না, একেবারে সরানো হয়নি, স্থানান্তরিত করা হয়েছে। হাইকোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে তুলে এনে অ্যানেক্স ভবনের সামনে স্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোনোভাবেই হোক মূর্তিটিকে রাখতেই হবে। এই ব্যাপারটিকে কি স্বাভাবিক বলা যায়? এই অস্বাভাবিক মূর্তিপ্রীতি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে হাজার বছর আগের সেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন পৌত্তলিক সম্প্রদায়ের কথাই, যারা হাতে-গড়া মূর্তি রক্ষার জন্য রক্তপাত, হানাহানি, সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা তছনছ করে দিতেও দ্বিধা করত না।
কুরআন মাজীদে হযরত ইবরাহীম আ. ও তাঁর কওমের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। আল্লাহর নবী হযরত ইবরাহীম আ. কতভাবে মূর্তির অসারতা তার কওমকে বুঝিয়েছেন, এই কুসংস্কারের স্বরূপ ও কুফল তুলে ধরেছেন, যুক্তি তর্কের দ্বারা লা-জবাব করেছেন, কিন্তু ঐ অন্ধকারাচ্ছন্ন জাতি মূর্তির মোহ ত্যাগ করতে পারেনি, তারা বরং জাতির শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান, আলোকিত মানুষটিকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করে হত্যা করতে চেয়েছে। তাদের মদমত্ত ঘোষণা ছিল- ‘ওকে আগুনে পুড়িয়ে দাও আর তোমাদের উপাস্যদের সাহায্য কর, যদি তোমাদের কিছু করার থাকে।’
কী অদ্ভুত ব্যাপার! উপাসক রক্ষা করছে উপাস্যকে! এক নিষ্প্রাণ মূর্তির জন্য হত্যা করতে চাইছে জাতির শ্রেষ্ঠ প্রাণবান ব্যক্তিটিকে! অথচ যেই প্রস্তর মূর্তি নিয়ে এত কা- সে আগের মতোই নীরব নির্জীব! চিন্তা করে দেখুন, শয়তান কীভাবে আদম-সন্তানকে তার ভৃত্যে পরিণত করে! তার কর্মশক্তি ও সংগ্রাম সাধনার স্পৃহাকে কীভাবে বিপথগামী করে! অফুরন্ত সম্ভাবনার অধিকারী মানুষের সকল স্পৃহা ও প্রেরণা মাটির মূর্তির পেছনেই মাটি হয়ে যায়। পরিতাপের ব্যাপার এই যে, হাজার হাজার বছর আগের মূর্খ পৌত্তলিক সমাজ যে গোঁড়ামি, সংকীর্ণতা ও হিংস্রতার পরিচয় দিয়েছিল আজকের তথাকথিত সভ্য ও প্রগতিশীল সমাজও তারই পরিচয় দিচ্ছে। এমনকি মুসলিম সমাজেরও কিছু মানুষ যারা মূর্তিপূজাকে ভিন্নধর্ম ও ভিন্নসংস্কৃতির বিষয় মনে করেন তারাও মূর্তির বিষয়ে বিভ্রান্তির শিকার। এমনকি এদের অনেকেরই অবস্থা এই যে, মূর্তির বিষয়ে শুধু পূজা-অর্চনাটুকু ছাড়া আর কিছুই যেন বাদ থাকছে না।
এক মূর্তির জন্য এরা কী না করছে, কী না করতে পারছে? এই যদি হয় অবস্থা তাহলে জ্ঞান, সভ্যতা ও প্রগতির দাবি পরিত্যাগ করা উচিত নয় কি?
এখনও কি এই সমাজ এতটুকু পরিণত হয়নি যে, হাতে-গড়া পুতুলের সৌন্দর্যে বিভোর থাকার পরিবর্তে সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় এবং নীতি-নৈতিকতার মতো প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর চর্চা করতে পারে? আশ্চর্যের বিষয় এই যে, হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে মূর্তিটির স্থানান্তরকেও দেশের কোনো কোনো দৈনিক এত বড় করে উপস্থাপন করেছে যে, তা যেন একটি জাতীয় বিপর্যয়ের ঘটনা। ব্যক্তি ও সমাজের বাস্তব কল্যাণ কি মূর্তি নির্মাণে ও মূর্তি প্রতিষ্ঠায়, না সদগুণাবলীর চর্চা ও বিকাশে। আসলে স্থূল মূর্তির চর্চা যত সোজা, সদগুণাবলীর চর্চা তত সোজা নয়। কোনো বিচারালয়ের প্রাঙ্গণে ন্যায়বিচারের কোনো কল্পিত স্মারক প্রতিষ্ঠা করা যত সোজা বাস্তবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা তত সোজা না। এই কঠিন কাজটাই তো একটি পরিণত সমাজের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। ইসলাম মানবসমাজকে এই শিক্ষাটিই দান করে। মুসলিম হিসেবে আমাদের কর্তব্য এইসব মূর্তি-ফুর্তি বর্জন করা। সাম্প্রদায়িক কূপম-ুকেরা যদি এসব নিয়ে মত্ত থাকতে চায় থাকুক, কিন্তু যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ঈমানের আলোক দান করেছেন তাদের পক্ষে তো কোনোভাবেই শোভা পায় না। কাল্পনিক প্রতিক বা স্মারক নয়, বাস্তবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ব্রতী ও মনোযোগী হওয়াই আমাদের আদর্শ।
হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে এই মূর্তিটি যখন স্থাপিত হয়েছিল তখন ব্যাপকভাবে এই প্রচারণাও হয়েছিল যে, এটা মূর্তি নয়, ভাস্কর্য! আমরা আগেও লিখেছি, এই সব কথা নিতান্তই প্রতারণামূলক। সম্প্রতি মূর্তির পক্ষের এক ‘মহিয়সী’র সদম্ভ উক্তি- ‘দেশে মূর্তি না থাকলে মসজিদও থাকবে না!’ ছি! এভাবে কেউ নিজেকে বসনমুক্ত করে? এতদিন বলে এলেন ওটা মূর্তি নয়, ভাস্কর্য; এখন বলেই ফেললেন, মূর্তি না থাকলে মসজিদও থাকবে না। এতে কি স্বীকার করে নেয়া হল না যে, এতদিন যা বলেছেন অসত্য বলেছেন। আর এখন স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, হাইকোর্টের সামনের ঐ বস্তুটা একটা নির্জীব মূর্তি। শুধু মূর্তিই নয়, বিশেষ এক সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিক। আর এ কারণেই মুসলমানের মসজিদের সাথে এর সংঘর্ষ হয়ে যাচ্ছে!!
ফার্সীতে একটা প্রবাদ আছে-
دروغ گو را  حافظہ نہ باشد
‘মিথ্যুকের স্মৃতিশক্তি থাকে না।’ এক সময় এক কথা বলে, অন্য সময় অন্য কথা বলে। ফলে তার এক কথা অপর কথাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে। এই প্রাচীন প্রবাদের এক নতুন উদাহরণ ঐ মূর্তিপ্রেমীর বক্তব্যে পাওয়া গেল। আরেকটি কথা এই যে, মূর্তিটি অপসারণ করা হয়নি, স্থানান্তরিত করা হয়েছে মাত্র। অথচ করণীয় ছিল তা সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করা। এই করণীয় সম্পন্ন করা ছাড়া দায়িত্বশীলেরা কীভাবে জাতির পক্ষ থেকে মোবারকবাদ পেতে পারেন? এ প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের আমীর  আল্লামা আহমদ শফী সাহেবের যে বক্তব্য কোনো কোনো মিডিয়ায় এসেছে তা খুবই যথার্থ। মূর্তিটি অপসারিত হতে হবে, শুধু স্থান বদলে কী হয়?
যাই হোক, আমরা মনে করি, মানবতার কল্যাণ মূর্তিপ্রেমের মধ্যে নয়, মানবতার কল্যাণ মানবীয় গুণাবলীর চর্র্চা ও বিকাশের মধ্যে। সত্যনিষ্ঠা, উদারতা, সহিষ্ণুতা ও ন্যায় বিচার প্রভৃতির মতো অমূল্য গুণাবলীরই চর্চা ও বিকাশ জরুরি। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন।

Popular Posts

একটু চিন্তা করুন ।

                      أعوذ بالله من الشيطان الرجيم                           بسم الله الرحمن الرحيم                 সকল মুসলিম ভাই বোন ক...

Search This Blog

Followers