Showing posts with label pap insurance definition. Show all posts
Showing posts with label pap insurance definition. Show all posts

ইসতিগফার

হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস রা. থেকে বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
سَيِّدُ الِاسْتِغْفَارِ أَنْ تَقُولَ: اللّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ. قَالَ: وَمَنْ قَالَهَا مِنَ النَّهَارِ مُوقِنًا بِهَا، فَمَاتَ مِنْ يَوْمِهِ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ، فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ، وَمَنْ قَالَهَا مِنَ اللَّيْلِ وَهُوَ مُوقِنٌ بِهَا، فَمَاتَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ، فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ .
সাইয়িদুল ইসতিগফার হচ্ছে এইরূপ বলা-
اللّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ.
ইয়া আল্লাহ! আপনি আমার রব। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমাকে আপনি সৃষ্টি করেছেনআমি আপনার বান্দা। আমি যথাসাধ্য মেনে চলব আপনার বিধান ও ফরমান।
আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি নিজ কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে। স্বীকার করছি আমাকে প্রদত্ত আপনার সকল দান আর স্বীকার করছি আমার পাপ। কাজেই আমাকে ক্ষমা করুন। আপনি ছাড়া আর কেউ নেইযে গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারে।
তিনি বলেনযে এই কথাগুলো দিনের বেলা মন থেকে বলে আর ঐ দিন সন্ধ্যার আগে মারা যায়সে জান্নাতীদের শামিল হবে। তেমনি যে তা রাতের বেলায় মন থেকে বলে আর ভোর হওয়ার আগেই মারা যায় সে জান্নাতীদের শামিল হবে। -সহীহ বুখারীহাদীস ৬৩০৬৬৩২৩ 
সূত্র-আলোচনা এই হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস ইবনে ছাবিত রা. একজন আনসারী খাযরাজী সাহাবী। বিখ্যাত শায়ের সাহাবী হযরত হাসসান ইবনে ছাবিত রা.-এর ভাতিজা। তাঁর বাবা আওস ইবনে ছাবিত রা. বদরের যুদ্ধে শামিল ছিলেন। আর অহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রা. থেকে বর্ণিততিনি বলেছেন-
شداد بن أوس من الذين أوتوا العلمَ والحلم، ومن الناس من أوتي أحدهما.
শাদ্দাদ ইবনে আওস ঐসব ব্যক্তিদের একজনযাদের ইল্ম’ ও হিল্ম’ (জ্ঞান ও সহনশীলতা) দুটোই দেয়া হয়েছে। অথচ অনেক মানুষ আছে যারা শুধু একটি প্রাপ্ত হয়েছেন।
তাঁর সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে-
فضل شداد بن أوس الأنصارَ بخصلتين : ببيان إذا نطق، وبكظم إذا غضب.
আনসারীদের মাঝে শাদ্দাদ ইবনে আওস শ্রেষ্ঠ দুটি স্বভাব দ্বারা : এক. স্পষ্ট বক্তব্যে আর দুই. ক্রোধ সংবরণে।
ইমাম তবারানী রাহ. স্বীয় সনদে তাঁর জীবনের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন যেএকবার শাদ্দাদ ইবনে আওস রা. মরণাপন্ন হয়ে পড়েন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে ছিলেন। জিজ্ঞাসা করলেনما لك يا شداد؟ শাদ্দাদ! তোমার কী হয়েছেতিনি বললেনضاقت بي الدنيا পৃথিবী আমার জন্য সংকুচিত হয়ে গেছে! আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
ليس عليك، إنّ الشّام سيفتح، وبيت المقدس سيفتح، وتكون أنت وولدك من بعدك أئمّة فيهم إن شاء اللَّه تعالى.
না তোমার কিছু হবে না। শাম বিজিত হবে। বাইতুল মাকদিস বিজিত হবে। আর তুমি ও তোমার পরে তোমার সন্তানেরা সেখানে নেতৃস্থানীয় হবে ইনশাআল্লাহ!
পরে তিনি শামে চলে যান। এক ক্বওল অনুসারে ৫৮ হিজরীতে ৭৫ বছর বয়সে ফিলিস্তীনে ইন্তিকাল করেন।
(আল ইসাবা ফী তাময়ীযিস সাহাবাইবনে হাজার আসকালানী ৩/২৫৮)
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেনসহীহ বুখারীতে তাঁর সূত্রে এই একটি হাদীসই বর্ণিত হয়েছে। -ফাতহুল বারী ১১/৯৯
এই মহান সাহাবীর সূত্রে এই হাদীস ইমাম বুখারী রাহ. ছাড়াও ইমাম ইবনে আবী শাইবাইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলইমাম ইবনে হিব্বানইমাম নাসায়ী প্রমুখ স্ব স্ব সনদে বর্ণনা করেছেন। (দ্র. আলমুসান্নাফইবনে আবী শাইবাহাদীস ৩০০৫২ ও টীকা শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ামা)
সহীহ বুখারীর কিতাবুদ দাআওয়াত’-এর দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে এই হাদীসটি (৬৩০৬) রয়েছে। পরিচ্ছেদের শিরোনাম বাবু আফযালিল ইসতিগফার আফযালুল ইসতিগফার মানে শ্রেষ্ঠ ইসতিগফার। সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. (৮৫২হি.) বলেছেন-
وَتَرْجَمَ بِالْأَفْضَلِيَّةِ وَوَقَعَ الْحَدِيثُ بِلَفْظِ السِّيَادَةِ وَكَأَنَّهُ أَشَارَ إِلَى أَنَّ الْمُرَادَ بِالسِّيَادَةِ الْأَفْضَلِيَّةُ وَمَعْنَاهَا الْأَكْثَرُ نَفْعًا لِمُسْتَعْمِلِهِঅর্থাৎ ইমাম বুখারী রাহ. আফযাল’ শব্দের দ্বারা শিরোনাম গঠন করেছেন। তিনি সম্ভবত এর দ্বারা হাদীসের সাইয়িদ’ শব্দের ব্যাখ্যা করেছেন। অর্থাৎ সাইয়িদুল ইসতিগফার অর্থ আফযালুল ইস্তিগফার বা শ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার। আর এর শ্রেষ্ঠত্বের তাৎপর্য হচ্ছেপাঠকারীর পক্ষে সর্বাধিক উপকারী হওয়া। -ফতহুল বারী ১১/১০১
কাজেই আমরা যদি ইসতিগফারের উপরোক্ত মাছূর’ পাঠটি মুখস্থ করে ফেলি এবং ভাব ও মর্ম উপলদ্ধি করে সকাল-সন্ধ্যায় মন থেকে তা পাঠ করি তাহলে অনেক খায়ের ও বরকতের ব্যাপার হবে। ভাব ও মর্ম আলোচনা কুরআন-সুন্নাহর শেখানো যিকির ও দুআর কালেমাগুলোর এক অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছেএগুলো ঈমান ও ঈমানিয়াতে পরিপূর্ণ। কাজেই ঈমান শেখার ও ঈমানকে সতেজ ও সজীব করার এক বড় উপায়অর্থ ও মর্ম অনুধাবন করে তা নিয়মিত আমলে রাখা। উপরের ইসতিগফারের বাক্যমালায় আছে ঈমানিয়াতের অনেক বিষয়। আর তা থাকাই তো স্বাভাবিক। যখন হাদীস শরীফের বর্ণনা অনুসারে স্বয়ং সাইয়িদুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে সাইয়িদুল ইসতিগফার’ বলে অভিহিত করেছেন এবং এর ফযীলত বর্ণনা করে বলেছেনযে বান্দা দিবসে তা মন থেকে পড়ে সন্ধ্যার আগে তার মৃত্যু ঘটলে সে জান্নাতী হবে। আর যে তা রাতে মন থেকে পড়ে ভোরের আগে মৃত্যু হলে সে-ও জান্নাতী হবে।
নিশ্চয়ই এতে আছে ঐ সকল কথাযা আল্লাহর অতি প্রিয় এবং যার দ্বারা আল্লাহর বান্দা হয়ে যায় আল্লাহর প্রিয়পাত্র। চলুন তবে এই সত্য-সুন্দর বাণীর ভাব ও মর্মের ভুবনে। اللّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ ইয়া আল্লাহ! আপনি আমার রব। নেই কোনো ইলাহ আপনি ছাড়া। রব’ মানে প্রভু ও পরওয়ারদেগার আর ইলাহ’ মানে উপাস্য ও মাবুদ। আল্লাহর বান্দা প্রথমেই স্মরণ করছে এবং স্বীকার করছে যেআল্লাহই তার রবতার প্রভু ও পরওয়ারদেগার এবং একমাত্র ইলাহ ও মাবুদ। خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেনআমি আপনার বান্দা। আল্লাহই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে প্রতিপালন করছেন। মানুষের জীবন ও জীবনোপকরণতার মেধা ও শক্তি তাঁর দান। সৃজন ও প্রতিপালনে আল্লাহর কোনো শরীক নেই। কাজেই নিরঙ্কুশ ইবাদত ও চূড়ান্ত আনুগত্য একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য। কুরআন মাজীদের ইরশাদ-
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِیْ خَلَقَكُمْ وَ الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ الَّذِیْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ فِرَاشًا وَّ السَّمَآءَ بِنَآءً  وَّ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرٰتِ رِزْقًا لَّكُمْ  فَلَا تَجْعَلُوْا لِلهِ اَنْدَادًا وَّ اَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.
হে মানুষ! যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেনতোমাদের সেই রবের ইবাদত কর। যাতে আত্মরক্ষা করতে পার।
যিনি তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিছানা এবং আকাশকে ছাদ। আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তা দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য উৎপন্ন করেছেন ফলমূল  কাজেই জেনেশুনে আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করো না। -সূরা বাকারা (২) : ২১-২২
মানুষ একমাত্র আল্লাহরই বান্দা আর আল্লাহই তার রব ও ইলাহ। ইস্তিগফারের এই বাক্যগুলোতে আছে বান্দার সাথে আল্লাহর এই সম্পর্কেরই স্মরণ ও স্বীকারোক্তি।
وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ  
আমি যথাসাধ্য মেনে চলব আপনার বিধান ও ফরমান।
এটি উপরোক্ত সম্পর্কেরই দাবি।
আরবী ভাষায় عهد শব্দের এক অর্থ আদেশ-নিষেধবিধি-বিধান। আরবী ভাষার ব্যবহারে عهد إليه অর্থ তাকে আদেশ করলনিষেধ করল। এই ব্যবহার অনুসারেই উপরোক্ত বাক্যের তরজমা করা হয়েছে।
এ শব্দের আরেক অর্থ অঙ্গিকারচুক্তি ইত্যাদি। সেই ব্যবহার অনুসারে তরজমা হবে, ‘আমি আপনার সাথে কৃত অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলব।
আল্লাহর যে বিধান ও ফরমান পালনে বান্দা আল্লাহর সাথে অঙ্গিকারাবদ্ধ এবং যার বিনিময়ে বান্দার জন্য রয়েছে মহান রবের মহা প্রতিশ্রুতিতা হচ্ছে ঈমান ও ইতাআত তথা বিশ্বাস ও আনুগত্যের ফরমান।
বান্দা একমাত্র আল্লাহরই উপাসনা করবে এবং আল্লাহর আদেশকেই চূড়ান্তরূপে শিরোধার্য করবে। তাঁর আদেশের উপর আর কারো আদেশকে প্রাধান্য দিবে না।
কারণনিরঙ্কুশ উপাসনা ও চূড়ান্ত আনুগত্যের একমাত্র হকদার আল্লাহ তাআলা।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে বুদ্ধি-বিবেক দান করেছেন এবং প্রকৃতিতে তাঁর রুবুবিয়্যাত ও উলুহিয়্যাতের অসংখ্য নিদর্শন স্থাপন করেছেন। এই বুদ্ধি ও বিবেক ব্যবহার করে আল্লাহর পরিচয় লাভ করা মানুষের কর্তব্য।
এরপর যুগে যুগে নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন এবং আসমানী কিতাবসমূহ নাযিল করেছেন। এর মাধ্যমে তাঁর বিধান ও ফরমান সুস্পষ্টভাবে মানব জাতিকে দান করেছেন।
তো আকল ও নকল তথা বুদ্ধি ও বর্ণনা উভয় দিক থেকে তাঁর রুবূবিয়্যাত’ ও উলুহিয়্যাত’ মানবজাতির সামনে সাব্যস্ত হয়েছে। কাজেই আল্লাহর ফরমান স্পষ্ট এবং মানুষের সর্বসত্তা আল্লাহ তাআলাকে রব ও ইলাহ মেনে নেয়ার বিষয়ে অঙ্গিকারাবদ্ধ।
এরপর আল্লাহ যাকে ঈমানের তাওফীক দান করেছেন ঈমানের শাহাদতের মাধ্যমে সে আল্লাহর ফরমানকে শিরোধার্য করেছে এবং আল্লাহর সাথে তার অঙ্গিকারকে আরো দৃঢ় ও শক্তিশালী করেছে। এই দুআয় আছে সেই অঙ্গিকারেরই স্মরণ ও নবায়ন।
ঈমানী শাহাদাতের মাধ্যমে মুমিন ঐ সত্যের সাক্ষ্য প্রদান করেছেযা অস্বীকার করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। প্রতিটি মানুষ- সে ঈমান আনুক বা না আনুকমুখে স্বীকার করুক বা না করুকসে আল্লাহরই সৃষ্টিআল্লাহর দানেই সে ধনী। দিনরাত সে ভোগ করে চলেছে আল্লাহর নিআমত। যে মুখে স্বীকার করছে না তারও সর্বসত্তা সর্বদা এই সাক্ষ্যই দিচ্ছে যেআল্লাহ তার সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা। আর সে আল্লাহর সৃষ্টি ও প্রতিপালিত।
মুমিনের সৌভাগ্য যেঈমানের শাহাদাতের মাধ্যমে সে এই সত্য স্বীকার করেছে এবং বিদ্রোহ ও অস্বীকারের হীনতা ও মহাশাস্তি থেকে মুক্তির উপায় গ্রহণ করেছে। এটাই তো পরিচয় শুভবুদ্ধির 
কুরআনে কারীম উলুল আলবাব’ ও শুভবুদ্ধির অধিকারী মানুষের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলছে-
الَّذِیْنَ یُوْفُوْنَ بِعَهْدِ اللهِ وَ لَا یَنْقُضُوْنَ الْمِیْثَاقَ
যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গিকার রক্ষা করে এবং প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে না। -সূরা রাদ (১৩) : ২০
এদেরই জন্য মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি-
اُولٰٓىِٕكَ لَهُمْ عُقْبَی الدَّارِ جَنّٰتُ عَدْنٍ یَّدْخُلُوْنَهَا وَ مَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَآىِٕهِمْ وَ اَزْوَاجِهِمْ وَ ذُرِّیّٰتِهِمْ وَ الْمَلٰٓىِٕكَةُ یَدْخُلُوْنَ عَلَیْهِمْ مِّنْ كُلِّ بَابٍ سَلٰمٌ عَلَیْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَی الدَّارِ.
এদেরই জন্য শুভ পরিণাম- স্থায়ী জান্নাততাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের বাবামাস্বামীস্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও। আর ফেরেশতাগণ প্রত্যেক দরজা দিয়ে তাদের নিকট উপস্থিত হবে এবং বলবেতোমাদের প্রতি শান্তিকারণ তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিলে। কত ভালো এই পরিমাণ। -সূরা রাদ (১৩) : ২২-২৪
পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গিকার ভঙ্গ করেছে তাদের সম্পর্কে ঘোষণা-
وَ الَّذِیْنَ یَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْۢ بَعْدِ مِیْثَاقِهٖ وَ یَقْطَعُوْنَ مَاۤ اَمَرَ اللهُ بِهٖۤ اَنْ یُّوْصَلَ وَ یُفْسِدُوْنَ فِی الْاَرْضِ  اُولٰٓىِٕكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَ لَهُمْ سُوْٓءُ الدَّارِ.
যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গিকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করেযে সম্পর্ক অক্ষুণœ রাখতে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তার করে তাদের জন্য আছে লানত এবং তাদের জন্য আছে মন্দ আবাস। -সূরা রাদ (১৩) : ২৫
বস্তুত আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গিকার স্বীকার করা এবং তাঁর ফরমান শিরোধার্য করাই শুভ বুদ্ধির পরিচয় এবং এটিই পথ বুদ্ধিমান ও সৌভাগ্যবানদের।
ما استطعت ‘যথাসাধ্য’ কথাটির উদ্দেশ্যআপন দুর্বলতা স্বীকার করা। একে তো আল্লাহর শান মোতাবেক হক আদায় বান্দার সাধ্যেরই অতীত। আর এ কারণে আল্লাহ আপন করুণায় বান্দার উপর তার সাধ্য অনুযায়ী ভার দিয়েছেনকিন্তু সেই বিধান পালনেও হয়ে যায় বান্দার নিজের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতাজনিত নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি। কাজেই করুণাময় প্রভুর সাথে আনুগত্যের চুক্তি নবায়নের সাথে সাথে আপন দুর্বলতা নিবেদনও এই বাক্যের উদ্দেশ্য।
৪. أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ
আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি নিজ কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে।
আপন কৃতকর্মের অনিষ্ট ও অশুভ পরিণামই তো ভয়ের বড় কারণ। দুনিয়া ও আখিরাতে যে যে কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তন্মধ্যে নিজের কর্মভুলই তো সবচেয়ে বড় কারণ। আখিরাতের শাস্তি ও আযাবের পুরোটাই মানুষের নিজের কর্মের ফল। দুনিয়ার অশান্তি ও অস্থিরতার মূলেও তার নিজের কর্ম। তাহলে সবার আগে তো নজর ফেরানো উচিত নিজের দিকেই। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ অনিষ্টের কারণ অন্যত্র খুঁজে বেড়ায় এবং অন্যকে দোষারোপ করে। নাকষ্ট ও অনিষ্টের কারণ আমার নিজেরই কর্ম। উপরের বাক্যে আছে এই সত্যের শিক্ষা ও উপলদ্ধিআছে একমাত্র আশ্রয়স্থল আল্লাহরই কাছে আশ্রয় প্রার্থনা।
শাক্ল ইবনে হুমাইদ রা. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন সাহাবী। তিনি বলেনআমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম এবং আরজ করলামআমাকে আশ্রয় প্রার্থনার একটি দুআ শিখিয়ে দিন। তিনি আমার কাঁধে হাত রাখলেন এবং বললেনতুমি (এই কথাগুলো) বলবে-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي، وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي، وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي، وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي، وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّي.
ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি আমার কানের অনিষ্ট থেকেআমার চোখের অনিষ্ট থেকেআমার জিহ্বার অনিষ্ট থেকেআমার অন্তকরণের অনিষ্ট থেকে এবং আমার বীর্যের (লজ্জাস্থানের) অনিষ্ট থেকে। -সুনানে আবু দাউদহাদীস ১৫৫১জামে তিরমিযীহাদীস ৩৪৯২
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. থেকে বর্ণিততিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেনইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে একটি দুআ শিক্ষা দিনযা আমি সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনআবু বকর! তুমি বলবে-
اللّهُمَّ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ عَالِمَ الغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيكَه، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي، وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِه، وَأَنْ أَقْتَرِفَ عَلَى نَفْسِي سُوءًا أَوْ أَجُرَّهُ إِلى مُسْلِمٍ.
ইয়া আল্লাহ! আকাশম-লী ও পৃথিবীর ¯্রষ্টা! সকল বস্তুর প্রভু ও অধিপতি! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি আমার নিজের অনিষ্ট থেকে। আর আশ্রয় নিচ্ছি নিজের উপর বা কোনো মুসলিমের উপর কোনো প্রকার অনিষ্ট টেনে আনা থেকে। -জামে তিরমিযীহাদীস  ৩৫২৯সুনানে আবু দাউদহাদীস ৫০৬৭
হযরত ফারওয়া ইবনে নাওফিল আল আশজায়ী রা. বলেনআমি আয়েশা রা.-কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী দুআ করতেন জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনতিনি বলতেন-
اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ، وَمَنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ.
ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি যা আমি করেছি তার অনিষ্ট থেকে এবং যা করিনি তারও অনিষ্ট থেকে। -সহীহ মুসলিমহাদীস ২৭১৬
৫. أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي
স্বীকার করছি আমাকে প্রদত্ত আপনার সকল দান আর স্বীকার করছি আমার পাপ।
হায়! একদিকে আল্লাহর প্রভূত দানঅন্যদিকে বান্দার নাফরমানী! এটাই তো সত্য ও বাস্তবতা। তবে এই সত্যের উপলদ্ধিও তাদের মনেই জাগেযাদের আল্লাহ ক্ষমা করতে চান। দেখুনএক বেদুঈন কাবার গিলাফ ধরে কীভাবে কাকুতি মিনতি করছে-
اللَّهُمَّ إن استغفاري مع إصراري لؤمٌ، وإنَّ تركي الاستغفارَ مع علمي بسعةِ عفوكَ لعجزٌ، فكم تَتَحَبَّبُ إليَّ بالنعم مع غِناكَ عني، وكم أتبغَّضُ إليك بالمعاصي مع فقري إليك، يا مَن إذا وعدَ وفَّى، وإذا توعَّدَ تجاوز وعفا، أدخلْ عظيمَ جُرمي في عظيمِ عفوكَ، يا أرحم الراحمين.
ইয়া আল্লাহ! পাপ-মগ্নতার সাথে আমার ক্ষমা চাওয়া তো হীনতাকিন্তুতোমার প্রশস্ত ক্ষমার সংবাদ জেনেও ক্ষমা না চাওয়া তো নির্বুদ্ধিতা। তুমি তোমার দয়া ও করুণার দ্বারা কতই না আমার প্রীতি অন্বেষণ করছ। অথচ আমার কাছে তোমার কোনোই প্রয়োজন নেই। আর আমি পাপ ও নাফরমানীর মাধ্যমে কতই না তোমার ক্রোধ আকর্ষণ করে চলেছি। অথচ তোমার কাছেই আমার সকল প্রয়োজন!
হে সকল দয়ালুর বড় দয়ালু! যিনি প্রতিশ্রুতি দিলে পূরণ করেনআর শাস্তির ধমক দিলেও ক্ষমা করেন ও উপেক্ষা করেন আমার মহা পাপকে ডুবিয়ে দাও তোমার করুণার মহা সিন্ধুতে! (কিতাবুল আজকারইমাম নববীবর্ণনা ১২৩০-এর অধীনে)
সুবহানাল্লাহ! বাস্তবতার এই উপলদ্ধি আর নিবেদনের এই ভাষা আল্লাহ যাকে দান করেন তাকে তো ক্ষমা করার জন্যই দান করেন। কবি সত্য বলেছেন-
لو لم ترد نيل ما أرجو وأطلبه + من جود كفيك ما علمتني الطلبا
তুমি যদি না চাইতে দুহাতের দানে আমার আচলখানি ভরে দিতেতাহলে তো প্রভু! এই প্রার্থনাই শেখাতে না আমাকে।
৬. فَاغْفِرْ لِي
কাজেই’... হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেনবোঝা যাচ্ছেযে আল্লাহর কাছে অপরাধ স্বীকার করেআল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। ইফকের দীর্ঘ হাদীসে তা স্পষ্টভাবে এসেছে।
তাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
العَبْدُ إِذَا اعْتَرَفَ بِذَنْبِهِ، ثُمَّ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ.
বান্দা যখন পাপ স্বীকার করে ও তওবা করেআল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। -সহীহ বুখারীহাদীস ২৬৬১ফাতহুল বারী ১১/১০৩
কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
فَمَنْ تَابَ مِنْۢ بَعْدِ ظُلْمِهٖ وَ اَصْلَحَ فَاِنَّ اللهَ یَتُوْبُ عَلَیْهِ ؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.
কিন্তু সীমালংঘন করার পর কেউ তওবা করলে ও সংশোধন করলে অবশ্যই আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেনআল্লাহ তো ক্ষমাশীলপরম দয়ালু। -সূরা মাইদা (৫) : ৩৯
৭. فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ.
আপনি ছাড়া আর কেউ নেইযে গুনাহসমূহ মাফ করে।
গুনাহ মাফকারী তো একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বান্দার গুনাহ মাফ করতে পারে না।
কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَ مَنْ یَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اللهُ
আল্লাহ ছাড়া কে আছে পাপ ক্ষমা করে-সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৩৫
আরো ইরশাদ হয়েছে-
وَ هُوَ الَّذِیْ یَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهٖ وَ یَعْفُوْا عَنِ السَّیِّاٰتِ وَ یَعْلَمُ مَا تَفْعَلُوْنَ.
তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও পাপ মোচন করেন এবং তোমরা যা কর তিনি তা জানেন। -সূরাতুশ শূরা (৪২) : ২৫
হাদীসের এই দুআয় সহজ সরল ভাষায় যে গভীর সত্য ও অনুপম ভাবের প্রকাশ ঘটেছে তা থেকেও বোঝা যায়- কেন এই দুআ সাইয়িদুল ইসতিগফার বিশেষণে ভূষিত। এতে যেমন আছে আল্লাহর একমাত্র মাবুদ হওয়ার সাক্ষ্য তেমনি আছে বান্দার বান্দা হওয়ার স্বীকারোক্তি। এতে যেমন আছে খালিককে খালিক বলে স্বীকার করা তেমনি আছে তাঁর সকল বিধান ও ফরমানকে শিরোধার্য করা। এতে যেমন আছে প্রকৃত দাতার দান স্বীকারতেমনি আছে আপন কৃতকর্মের স্বীকারোক্তি। এতে যেমন আছে গুনাহ দ্বারা নিজের ক্ষতির উপলদ্ধিতেমনি আছে এই মহা সত্যের সাক্ষ্য যেএকমাত্র আল্লাহই বান্দার গুনাহ মাফকারী।

Popular Posts

একটু চিন্তা করুন ।

                      أعوذ بالله من الشيطان الرجيم                           بسم الله الرحمن الرحيم                 সকল মুসলিম ভাই বোন ক...

Search This Blog

Followers