হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের থেকে হঠাৎ করে ইলম উঠিয়ে নিবেন না; বরং ইলম উঠিয়ে নিবেন উলামাদেরকে উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে। একপর্যায়ে যখন একজন হক্কানী আলেমও থাকবে না, তখন লোকেরা মূর্খদেরকে তাদের নেতা (মুফতী) হিসাবে গ্রহণ করবে। অতঃপর এই মূর্খরা ধর্মীয় বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হলে অজ্ঞতা স্বত্বেও ফাতাওয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরা গোমরাহ হবে এবং অন্যদেরকেও গোমরাহ করবে।’ (বুখারী শরীফ হা.নং ১০০)
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামাতের আলামত এর মধ্য থেকে কয়েকটি হলো, ইলম উঠিয়ে নেওয়া এবং মূর্খতা বৃদ্ধি পাওয়া, মদ পান করা এবং ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়া’। (বুখারী শরীফ হা.নং ৮০)
ইলম উঠে যাওয়ার পিছনে উলামায়েকেরাম জড়িত। কেননা ইলমের হিফাজত ও ইশাআত মূলত উলামায়েকেরামের দায়িত্ব। সুতরাং তাদের দূরদর্শিতার অভাবে বা গলত সিদ্ধান্তের কারণে কিংবা ইলমের উপর কোনো হামলা এলে তা প্রতিহত না করার কারণে ইলম দুনিয়া থেকে উঠে যেতে থাকবে এবং শেষ পর্যন্ত ইলম বিদায় নিয়ে মদীনায় চলে যাবে এবং সেখান থেকে কোনো এক সময় সম্পূর্ণভাবে উঠিয়ে নেওয়া হবে।
উলামায়ে কেরামের অবহেলার কারণেই মূলত দুনিয়া থেকে ইলম উঠে যাবে। তাই দ্বীনের ধারক-বাহক উলামায়েকেরামদের চিন্তা-ভাবনা করে দেখতে হবে যে, তাঁদের দ্বারা ইলম উঠে যাওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে কি না? ভেবে দেখার জন্য উলামা-তুলাবাদের খেদমতে ইলম উঠে যাওয়ার কয়েকটি কারণ পেশ করা হলো। আপনারা এর সাথে একমত হলে নিজেদের থেকে এই কারণগুলি দূর করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং ইলম পৃথিবীর বুকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রাণান্ত মেহনত করবেন বলে আশা করি। তাই আসুন আমরা ইলমকে হিফাজতের জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করে দায়মুক্ত হই এবং আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দীন ও ইলম টিকিয়ে রাখতে সাধ্যের সবটুকু ব্যয় করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক নসীব করুন। আমীন।
এক. ইলম উঠে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ ছেলেদের শর্ট কোর্স-মুখী হওয়াঃ
শর্ট কোর্স শুরু করা হয়েছিল ইংরেজী শিক্ষিত লোকদের জন্য। তারা যেন ৫/৬ বছর মেহনত করে নিজে কুরআন-সুন্নাহ বুঝার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। এই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলে এতে আপত্তির কিছু ছিল না। কিন্তু এখন অল্প বয়সী অনেক ছেলেরাও অল্প সময়ে আলেম হওয়ার জন্য এই নেসাবে পড়া-শুনা করছে। অথচ এদের দেওবন্দী নেসাব অনুযায়ী পড়া-শুনা করতে কোনো অসুবিধা ছিল না। এইসব বাচ্চাদের শর্ট কোর্সে পড়া-শুনা করা দশ দিক দিয়ে ইলম উঠে যাওয়ার সাথে সম্পর্ক রাখে।
১. কুরআনের ব্যাখ্যায় বা তাফসীরে পারদর্শী হওয়ার জন্য পনের বিষয়ের ইলমের প্রয়োজন হয়। (আল ইতকান ২/৪৬৪ দারুল হাদীস, কায়রো) দেওবন্দী নেসাবে এসব বিষয় দীর্ঘ সময় নিয়ে পড়ানো হয়ে থাকে। যার কারণে ছাত্ররা উক্ত পনেরো বিষয়ে পারদর্শী হয়ে গড়ে উঠে।
পক্ষান্তরে শর্ট কোর্সে সময় কম হওয়ায় উক্ত পনেরো বিষয়ের সবগুলি বিষয় পড়ানো সম্ভব হয় না এবং অনেক জরুরী বিষয় বাদ পড়ে যায়। যার ফলে তাফসীরের বড় বড় কিতাব থেকে ফায়দা হাসিল করার যোগ্যতা তাদের মধ্যে তৈরি হয় না আর তারা পরিপূর্ণভাবে কুরআন বুঝার যোগ্যতা থেকে মাহরূম থেকে যাচ্ছে, অথচ কুরআন-সুন্নাহ বুঝতে পারাই ইলমের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য।
২. ইলমে নাহবের প্রসিদ্ধ কিতাব শরহে জামী, ইলমে ফিকাহ এর প্রসিদ্ধ কিতাব কানযুদ্দাকায়েক এবং মানতেকের প্রয়োজনীয় কিতাব শর্ট কোর্সে না থাকায় সেখানের ছাত্রদের মধ্যে কঠিন মাসআলা-মাসায়েল বুঝার যোগ্যতা সৃষ্টি হচ্ছে না। যার কারণে তারা ইমাম বুখারী রহ. এর ইস্থিম্বাতী মাসায়েল অর্থাৎ তারজামাতুল বাব সঠিকভাবে বুঝতে পারছে না এবং কঠিন কঠিন ফাতাওয়ার কিতাব বুঝা থেকেও মাহরূম হচ্ছে।
৩. ফার্সী ভাষায় লিখিত আকাবিরদের উলূম ও মা’আরিফ, শে‘র-আশ‘আর ও বিভিন্ন ফুনূনাত শেখানো হচ্ছে না। ফলে তারা রূহানিয়্যাত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
৪. নিকট অতীতের দেওবন্দী আকাবিরদের অধিকাংশ উলূম ও মা’আরিফ উর্দূ ভাষায় লিখিত যা ইলমের শুধু ভান্ডার নয় সমুদ্রও বটে। শর্ট কোর্সের ছাত্রদের উর্দু ভাষায় দক্ষতা অর্জন না হওয়ার কারণে ইলমের এই বিরাট ভান্ডার থেকে ব্যাপকভাবে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।
৫. শর্ট কোর্সের ছাত্ররা উর্দূ ভাষায় কাঁচা থাকায় উর্দূ ভাষাভাষী যে-সব আকাবির আমাদের দেশে আসেন তাদের তাকরীর তথা বয়ান তারা বুঝতে পারে না। এমনকি অনেক মি’য়ারী মাদরাসা যেখানে উর্দূতে তাকরীর হয় সেসব মাদরাসা থেকে তারা ইস্থিফাদা করতে পারছে না।
৬. দেওবন্দী নেসাবের মাদরাসার মধ্যে ছাত্রদেরকে বহুমুখী যোগ্যতা অর্জনের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে দাওয়াত, তা‘লীম, তাযকিয়াহ এই তিন বিষয়ের যেকোনো বিষয়ে তারা খেদমত করার যোগ্যতা রাখে। পক্ষান্তরে শর্ট কোর্সের মাধ্যমে বহুমুখী যোগ্যতা অর্জন না হওয়ায় তারা দ্বীনের যথাযথ খিদমত করতে পারছে না এবং তারা সমাজের দ্বীনী চাহিদা পূরণে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।
৭. শর্ট কোর্সের ছাত্ররা যদিও মেশকাত দাওরা দেওবন্দী নেসাবের কোনো মাদরাসায় পড়ে (অবশ্য আজকাল অনেক শর্ট কোর্স মাদরাসায় মেশকাত ও দাওরা খোলা হয়েছে) কিন্তু ফারেগ হওয়ার পর শিক্ষা হিসাবে পড়ানোর জন্য যখন তাদেরকে কোনো দেওবন্দী নেসাবের মাদরাসায় পাঠানো হয়, তখন তারা বিভিন্ন কিতাব পড়া না থাকার কারণে সার্বিক খেদমত আঞ্জাম দিতে পারে না; বরং অনেক মি’য়ারী কিতাব তাদেরকে পড়াতে দিলে বলে উঠে, আমি এই কিতাব পড়িনি ঐ কিতাব পড়িনি অতএব, এসব কিতাব আমাকে পড়াতে দিবেন না।
৮. তার অযোগ্যতার দরুন যে বড় মাদরাসা থেকে সে ফারেগ হয়েছে ঐ মাদরাসার ও মাদরাসার আসাতিজার এই বদনাম হয় যে, ঐ মাদরাসার ভালো ছাত্ররাও কিতাব পড়াতে অক্ষম। ত্রুটি করলো একজন, অথচ এর দায় গ্রহণ করতে হচ্ছে আরেক জনকে।
৯. শর্ট কোর্সের এই মাদরাসাগুলি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজের নওজোয়ানরা এর পরিণাম না বুঝে অল্প সময়ে আলেম হওয়ার জন্য ঐসব মাদরাসার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তাদের আছর দেওবন্দী নেসাবের মাদরাসাগুলিতে পড়ছে। যার পরিণতিতে দেওবন্দী নেসাবের মাদরাসাগুলি থেকে কঠিন কিতাবগুলি একের পর এক উঠে যাচ্ছে এবং কোথাও কাফিয়া ও শরহে জামী একবছরে পড়ানোর কারণে দু’টির কোনোটিই পড়া হচ্ছে না। শুধু নামকে ওয়াস্তে উভয় কিতাবকে নেসাবের মধ্যে দেখানো হচ্ছে। এর পরিণতি এই হবে যে, ভবিষ্যতে কোনো এক সময়ে দেওবন্দী নেসাবের অস্থিত্ব বিলুপ্ত হবে, সব মাদরাসাগুলি শর্ট কোর্সে পরিণত হবে। তারপর এই দেশ থেকে ইলম বিদায় নিবে।
১০. শর্ট কোর্সে পড়ুয়াদের মধ্যে পর্যাপ্ত ইলমের অভাবে আমল এবং আদবের কমতি ব্যাপকহারে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পুরোপুরি সুন্নাত তরীকার ইবাদত-বন্দেগী থেকে তারা মাহরূম হচ্ছে।
বিশেষভাবে লক্ষণীয় এই যে, এদের অধিকাংশ কিছু আরবী সাহিত্য শিখে দুনিয়া প্রেমী হয়ে উঠছে, আরবী বলতে পড়ার জোরে বিদেশ চলে যাচ্ছে। আর ইলমের গভীরতা না থাকায় বিদেশে গিয়ে বিভিন্ন মাযহাবের অনুসারী হয়ে যাচ্ছে।
দুই. বোর্ডে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়াকে লক্ষ্য বানানোঃ
ছাত্ররা সম্পূর্ণ কিতাব হল করার পর যদি মেধা তালিকায় স্থান পায় এবং এর কারণে তাদের মধ্যে অহংকার সৃষ্টি না হয়, তাহলে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়াতে কোনো দোষ নেই। কিন্তু মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ার দ্বারা মাদরাসার সুনাম হওয়া, কালেকশন বৃদ্ধি পাওয়া, এজাতীয় পার্থিব ফায়দাকে সামনে রেখে কোনো মাদরাসা কর্তৃপক্ষ যদি মেধা তালিকায় স্থান পাওয়াকেই উদ্দেশ্য বানায়, তাহলে এতে একদিক থেকে তাদের রিয়া করার গুনাহ হবে, দ্বিতীয়ত ছাত্ররা সম্পূর্ণ কিতাব না পড়ে নোট বা গাইডের আশ্রয় নিয়ে শুধু পরীক্ষায় আসার মতো স্থানগুলি পড়বে, সম্পূর্ণ কিতাব পড়বে না। ফলে তারা কিতাব বোঝার যোগ্যতা থেকে মাহরূম হবে। যার পরিণামে শিক্ষকতার জীবনে সে অকৃতকার্য হয়। ছাত্ররা তার থেকে কিতাব বুঝতে পারে না, সেও বুঝাতে পারে না। একপর্যায়ে শিক্ষকতার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে সে ইমামতি বা অন্য কোনো দুনিয়াবী পেশা গ্রহণ করে। এভাবে চিরতরে ইলমের খিদমত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।
তিন. সুন্নাত মুতাবেক আমলের ব্যাপারে দ্বীনী মাদরাসার ছাত্রদের নেগরানী না হওয়াঃ
এই সমস্যা বর্তমানে অনেক মাদরাসায় দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। এটাও ইলম উঠে যাওয়ার অন্যতম কারণ। কেননা সুন্নাত মুতাবেক আমল ছাড়া ইলম টিকে থাকতে পারে না। তাই আমলের নেগরানী না হলে ছাত্রদের অন্তরে ইলম টিকবে না। বে-আমল আলেম ও তালেবে ইলম দ্বারা কুরআন সুন্নাহ এর ইলম ধরে রাখা সম্ভব নয়। কারণ হাদীসেপাকে আলেমের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, তারা নিজের ইলম অনুযায়ী আমল করে। (মেশকাত হা.নং ২৬৬)
সুতরাং যারা ইলম অনুযায়ী আমল করে না তাদের কিতাবী ইলম যত বেশি হোকনা কেন শরীয়ত তাদেরকে আলেম বলে স্বীকৃতি দেয় না। বিধর্মীদের কাছে আমাদের চেয়ে বেশি কিতাব ও মা‘লূমাত আছে। কিন্তু তা স্বত্বেও তারা আলেম নয়। অতএব বুঝা গেল, শুধু মা‘লূমাত আলেম হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বরং আলেম হওয়ার জন্য মা‘লূমাত অনুযায়ী আমল করা জরুরী। (তথ্যসূত্রঃ মাসিক আল আবরার, অক্টোবর ২০১২)
চার. ছাত্র রাজনীতিঃ
ছাত্ররা যখন রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে, তখন ইলম অর্জনের জন্য ছাত্রদের মাঝে যে অধ্যবসায় ও একাগ্রতা থাকার প্রয়োজন তা আর থাকে না। ফলে তা‘লীম ও তারবিয়াত এর মধ্যে ভাটা পড়ে। যার দরুন স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রদের ইস্থি‘দাদ দুর্বল হয়ে যায়। বর্তমানে ইলম উঠে যাওয়ার বড় একটি কারণ হলো, ছাত্রদের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া। প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িত ছাত্রদের ইলমী ইনহিতাত হচ্ছে, এছাড়া তারা অহংকার, যশ-খ্যাতি ও এজাতীয় আত্মিক মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। যশ ও খ্যাতি অর্জনের পিছনে পড়ে অনেকে ইলমে দ্বীন থেকে মাহরূম হচ্ছে। তাই যারা ছাত্রদেরকে রাজনীতিতে জড়াচ্ছেন তারা যেন ভেবে দেখেন যে, রাজনীতিতে ছাত্রদেরকে জড়ানোর কারণে ছাত্রদের ইলমী ও আমলী ইনহিতাত হচ্ছে কিনা? যদি হয় তাহলে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা তাদের দায়িত্ব। অন্যথায় ইলম উঠে যাওয়ার জন্য তারা দায়ী হবেন। বর্তমানে যারা ইলমী ময়দানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা যদি ছাত্র যামানায় রাজনীতি করতেন, তাহলে বর্তমানে তারা ইলমী ময়দানে নেতৃত্ব দিতে পারতেন না। আমরা যদি আমাদের ছাত্রদেরকে রাজনীতিতে জড়াই, তাহলে এর অর্থ কি এই দাঁড়ায় না যে, আমরা আমাদের ছাত্রদেরকে যোগ্য আলেম হতে দিতে চাচ্ছি না?
হ্যাঁ, ইসলামী রাজনীতির প্রয়োজন আমি অস্বীকার করি না। ইসলামী রাজনৈতিক দলের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। কোনো আলেম রাজনীতি করতে চাইলে তার জন্য আমাদের আকাবিরদের পথ অনুসরণ করা উচিত। শাইখুল হিন্দ মাহমূদ হাসান দেওবন্দী রহ. যখন পূর্ণাঙ্গরূপে ইংরেজ খেদাও আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন, তখন তিনি দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে ইস্থিফা নিয়েছিলেন। এমনিভাবে মুফতী শফী রহ. এবং আল্লামা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহ. যখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন, তখন তাঁরাও দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে ইস্থিফা নিয়ে ছিলেন। অতএব আমরাও যারা রাজনীতি করতে চাই তারা মাদরাসা থেকে ইস্থিফা নিয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে রাজনীতি করবো। তাহলে আমরা ছাত্রদেরকে ইলম থেকে মাহরূম করার কারণ হবো না। আর ইলম উঠে যাওয়ার জন্য দায়ী হবো না।
পাঁচ. ছাত্রদের মোবাইল ফোন ব্যবহারঃ
বর্তমানে ইলম উঠে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ হলো, ছাত্রদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করা। প্রত্যেক কওমী মাদরাসায়ই মোবাইল ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকে, কিন্তু বাস্তবে ছাত্ররা এই নিষেধাজ্ঞা মানে না। লুকিয়ে-ছাপিয়ে যেভাবেই হোক তারা মোবাইল ব্যবহার করে। অথচ মোবাইল ব্যবহারের অর্থই হলো, গুনাহের সমস্ত আসবাব নিজের হাতের মুঠোয় রাখা। হাতের মুঠোয় গুনাহের আসবাব প্রস্তুত রেখে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন ব্যাপার। যারা গুনাহের সাথে জড়িত থাকে, তারা প্রকৃত ইলম কখনোই পেতে পারে না। ছাত্র ভাইয়েরা! তোমরা যদি প্রকৃত আলেম হতে চাও, দ্বীনের সৈনিক হতে চাও, তাহলে ছাত্র যামানায় মোবাইল ব্যবহার করো না। আল্লাহ তা‘আলা তাওফিক দান করুন। আমীন।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে ও আমাদের ছাত্রদেরকে মুত্তাকী, পরহেযগার ও সুগভীর ইলমওয়ালা আলেম হওয়ার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের দেশের সকল কওমী মাদরাসাকে সহীহ দ্বীনী তা‘লীমের মারকায হিসেবে কিয়ামত পর্যন্ত কায়েম রাখুন। আমাদেরকে ইলম উঠে যাওয়ার কারণসমূহ খতিয়ে দেখে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
No comments:
Post a Comment