সূরা,সূরা আত তাগ্বাবুন হারজিত

সূরা আত তাগ্বাবুন
হারজিত

1
আসমানসমূহ ও যমীনের যাহা কিছু আছে তা সবই আল্লাহ তা'য়ালার পবিত্রতা ঘোষণা করছে,যাবতীয় সার্বভৌমত্ব যেমন তাঁর জন্যে, তেমনি যাবতীয় প্রশংসাও তাঁর জন্যে, তিনি সকল কিছুর উপর প্রবল ক্ষমতাবান ।

2
তিনি তোমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন, এরপর তোমাদের কিছু লোক হলো,আসমানসমূহে ও যমীনে যো সৃষ্টি মু'মিন আবার কিছু লোক কাফির থেকে গেলো, আসলে তোমরা যাহা কিছু করো আল্লাহ তা'য়ালা সব কিছুই দেখছেন ।

3
তিনি আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীকে সঠিকভাবে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের তিনি মানুষের আকৃতি দিয়েছেন তাও আবার অতি সুন্দর করে তিনি তোমাদের বানিয়েছেন, তাঁর কাছেই তোমাদের আবার ফিরে যেতে হবে ।

4
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তা তিনি জানেন, তিনি জানেন, তোমরা যা কিছু গোপন করো , আর যা প্রকাশ করো । আল্লাহ তা'য়ালা মনের কথাও জানেন ।

5
তোমাদের কাছে কি সে সব লোকদের খোঁজ খবর কিছুই পৌঁছায়নি , যারা এর আগে বিভিন্ন নাবীর সময়ে কুফরী করেছিলো , অতঃপর তারা নিজেদের কর্মফল ভোগ করে নিয়েছে , পরকালেও তাদের জন্যে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক আযাব রয়েছে ।

6
এটা এ কারণে যে , তাদের কাছে সুস্পষ্ট দলিল প্রমাণ নিয়ে যখনি আল্লাহ তা'য়ালার কোন রসূল আসতো , তখনি তারা বলতো যে , মানুষই কি আমাদের পথের সন্ধান দেবে ? তারা সত্যকে প্রত্যাখান করলো এবং ঈমানের পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো , অবশ্য আল্লাহ তা'য়ালাও কারোরই মুখাপেক্ষী নন, তিনি প্রশংসিত ।

7
এই কাফিররা ধারণা করে নিয়েছে যে , একবার মরে গেলে কখনো তাদের পুনরুত্থান করা হবে না , তুমি বলো ( নবিজী সঃ ) না , তা কখনো হবার নয়। আমার মালিকের শপথ , মৃত্যুর পর তোমাদের সবাইকে আবার (কবর থেকে ) উঠানো হবে এবং তোমাদের বলে দেয়া হবে তোমরা কি কাজ করে এসেছো , আর আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষে এটা অত্যন্ত সহজ কাজ ।

8
তোমরা আল্লাহ তা'য়ালা , তার রসূল এবং আমি যে নূর তোমাদের দিয়েছি সেই  কুরআনের উপর ঈমান আনো, তোমরা এখানে যা কিছুই করো না কেন আল্লাহ তা'য়ালা তা ভালো করেই জানেন ।

9
যেদিন তোমাদের আগে পরে সমস্ত মানুষ ও জীন কে একত্রিত করা হবে, একত্রিত করা হবে সে মহান সমাবেশের দিনটির জন্য । বলা হবে হে মানুষ ও জীন , আজকের দিনটিই হচ্ছে তোমাদের লাভ লোকসানের দিন । লাভের দিন ঐ ব্যক্তির  জন্যে যে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তিনি তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন, তাকে তিনি এমন এক শান্তির দেশে প্রবেশ করাবেন (জান্নাতের কথা বলা হচ্ছে ) যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে,তারা সেখানে অন্তত কাল অবস্থান করবে , আর এটাই হচ্ছে চরম সাফল্য ।

10
লোকসানের দিন তাহার জন্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'য়ালা অস্বীকার করেছে এবং আমার আয়াত সমূহকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করেছে , এদের ব্যাপারে আল্লাহর সিদ্ধান্ত হচ্ছে যে , এরা সবাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে , কতই না  নিকৃষ্ট সেই আবাসস্থল ।

11
আল্লাহ তা'য়ালার অনুমতি ব্যতীত কোন বিপদ আসে না , যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'য়ালার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে,আল্লাহ তা'য়ালা তার অন্তরেকে সুপথে পরিচালিত করেন , আর আল্লাহ তা'য়ালাই সব বিষয়েই  সম্মক অবগত রয়েছেন ।

12
তোমরা আল্লাহ তা'য়ালার অনুগত্য করো , অনুগত্য করো তাঁর রাসূলের, তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে জেনে রেখো আমার রাসূলের দ্বায়িত্ব হচ্ছে কথাগুলোকে সুস্পষ্ট ভাবে পৌঁছে দেওয়া ।

13
আল্লাহ তা'য়ালা মহান সত্তা , তিনি ছাড়া কোনোই মা'বুধ নাই, অতএব প্রতিটি ঈমানদার বান্দার উচিত তাঁর ওপরেই সর্ব বিষয়ে নির্ভর করা ।

14
হে ঈমানদারগণ , অবশ্যই তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান সন্ততিদের মাঝে তোমাদের কিছু কিছু দুশমন রয়েছে।অতএব তাদের ব্যাপারে তোমরা সতর্ক থেকো,অবশ্য তোমরা যদি তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দাও,তাদের দোষ ক্রটি উপেক্ষা করো এবং তাদের মাফ করার নীতি অবলম্বন করো আল্লাহ তা'য়ালা পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু ।

15
তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি হচ্ছে তোমাদের জন্যে একটি পরীক্ষা মাত্র, আর এই পরীক্ষায় কামিয়াব হতে পারলে অবশ্যই আল্লাহ তা'য়ালার নিকট মহা পুরুষ্কার রয়েছে ।

16
অতএব তোমরা সাধ্য মোতাবেক আল্লাহ তা'য়ালা কে ভয় করো,তোমরা রাসূলের আদেশ শুনো এবং তাঁর কথামতো চলো । আল্লাহ তা'য়ালার দেয়া ধন সম্পদ থেকে তারই উদ্দেশ্যে খরচ করো, এতে তোমাদের নিজেদের জন্যেই কল্যাণ রয়েছে, যে ব্যক্তিকে তার মনের লোভ লালসা থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে, সে এবং তার মতো লোকেরাই সত্যিকার অর্থে সফলকাম ।

17
যদি তোমরা আল্লাহ তা'য়ালা কে ঋণ দাও উত্তম ঋণ,তাহলে কিয়ামতের দিন তিনি তাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিবেন এবং তিনি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন । আল্লাহ তা'য়ালা বড়োই গুণগ্রাহী ও পরম ধৈর্যশীল।

18
দেখা - অদেখা সব কিছুই তিনি জানেন, তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় ।

কুরআন পড়ুন কুরআন বুঝুন অনুধাবন করুন ও সিদ্ধান্ত নিন ।
💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝।

সুন্নাত,★ খানা খাওয়ার সুন্নাত সমূহ ★

★ খানা খাওয়ার সুন্নাত সমূহ ★
১. উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া। (আবু দাউদ,
হাদীস নং- ৩৭৬১)
২. দস্তরখানা বিছিয়ে খানা খাওয়া।
(বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৩৮৬)
বি.দ্র.(ক) প্রথমে খানা তথা আল্লাহর
নেয়ামতের দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে বসা,
তারপর দস্তরখানা বিছানো। (বুখারী
শরীফ, হাদীস নং- ৫৩৮৫, ৫৩৯৯)
(খ) দস্তরখানা খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছ
ন্ন রাখা
উচিত। এর উপর ঝুটা (উচ্ছিষ্ট খাবার) হাড্ডি
ইত্যাদি না ফেলা বা তাতে পা না রাখা
উচিত। (মুসলিম হাদীস নং- ২০৩৩)
৩. (উঁচু স্বরে) বিসমিল্লাহ পড়া।(বুখারী
শরীফ, হাদীস নং- ৫৩৭৬)
৪. ডান হাত দিয়ে খাওয়া। (বুখারী, হাদীস
নং- ৫৩৭৬/ মুসলিম, হাদীস নং- ২০২০)
৫. খানার মজলিসে বয়সের দিক দিয়ে
যিনি বড় এবং বুযুর্গ, তাঁর দ্বারা খানা শুরু
করানো। (মুসলিম, হাদীস নং- ২০১৭)
৬. খাদ্য এক ধরনের হলে নিজের সম্মুখ হতে
খাওয়া।(বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৩৭৬)
৭.খাদ্যের কোন অংশ পড়ে গেলে
উঠিয়ে (প্রয়োজনে পরিষ্কার করে)
খাওয়া।(মুসলিম, হাদীস নং- ২০৩৩)
৮. হেলান দিয়ে বসে না খাওয়া।(বুখারী
শরীফ, হাদীস নং- ৫৩৯৮)
৯. খাদ্যের ত্রুটি বের না করা।(বুখারী
শরীফ, হাদীস নং- ৫৪০৯)
১০. জুতা পরিহিত থাকলে জুতা খুলে খানা
খাওয়া।(মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-
৭১২৯)
১১. খানার সময় তিনভাবে বসা যায়।
ক. উভয় হাঁটু উঠিয়ে এবং পদ যুগলে ভর করে।
(মুসলিম, হাদীস নং- ২০৪৪)
খ. এক হাঁটু উঠিয়ে এবং অপর হাঁটু বিছিয়ে।
(শরহুস্ সুন্নাহ, হাদীস নং- ৩৫৭৭)
গ. উভয় হাঁটু বিছিয়ে অর্থাৎ নামাযে বসার
ন্যায় বসে সামান্য সম্মুখ পানে ঝুঁকে
আহার করা। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩৭৭৩)
বি.দ্র. উযরের কারণে আসন দিয়ে বসারও
অনুমতি আছে।(সূরা নূর, আয়াত-৬১/ আল
ইতহাফ, ৫ : ৪৮০)
১২. আহার গ্রহণ শেষে খানার পাত্রসমূহ
আঙ্গুল দ্বারা ভালভাবে চেটে পরিস্কার
করে খাওয়া। এতে খাবারের পাত্রসমূহ
আহারকারীর জন্য মাগফিরাত কামনায় মহান
আল্লাহর দরবারে দু‘আ করে। হাতের
আঙ্গুলসমূহ যথাক্রমে মধ্যমা, শাহাদাত, বৃদ্ধা
চেটে খাওয়া।(মুসলিম, হাদীস নং- ২০৩৩/
তিরমিযী, হাদীস নং- ১৮০৪/ তাবরানী
আউসাত, হাদীস নং- ১৬৪৯)
১৩. খানা শেষে এই দু‘আ পড়াঃ
ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻯ ﺃَﻃْﻌَﻤَﻨَﺎ ﻭَﺳَﻘَﺎﻧَﺎ ﻭَﺟَﻌَﻠَﻨَﺎ ﻣُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ .
(আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৮৫০)
১৪. খানা শেষে আগে দস্তরখানা উঠিয়ে
তারপর নিজে উঠা। (ইবনে মাজাহ, হাদীস
নং- ৩২৯৫)
১৫. দস্তরখানা ও অবশিষ্ট খানা উঠানোর
সময় এই দু‘আ পড়াঃ
ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺣَﻤْﺪًﺍ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻃَﻴِّﺒًﺎ ﻣُﺒَﺎﺭَﻛًﺎ ﻓِﻴﻪِ ﻏَﻴْﺮَ ﻣَﻜْﻔِﻰٍّ ﻭَﻻَ
ﻣُﻮَﺩَّﻉٍ ﻭَﻻَ ﻣُﺴْﺘَﻐْﻨًﻰ ﻋَﻨْﻪُ ﺭَﺑَّﻨَﺎ .
(বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৪৫৮)
১৬. খানা খেয়ে উভয় হাত ধোয়া।
(তিরমিযী, হাদীস নং- ১৮৪৬)
১৭. কুলি করে মুখ পরিষ্কার করা।(বুখারী
শরীফ, হাদীস নং- ৫৪৫৫)
১৮. খানার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে
গেলে স্মরণ হওয়ার পর খানার মাঝে এই
দু‘আ পড়াঃ
ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺍَﻭَّﻟَﻪُ ﻭَﺁﺧِﺮَﻩْ
(আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩৭৬৭)
১৯. কারো মেহমান হয়ে খানা খেলে
প্রথমে আল্লাহর শুকর আদায়ে ১৩নং এ
বর্ণিত দু‘আ পড়ার পর মেযবানের শুকরিয়া
আদায়ে এই দু‘আ পড়াঃ (মুসলিম, হাদীস
নং- ২০৫৫)
ﺍَﻟﻠّﻬُﻢَّ ﺍَﻃْﻌِﻢْ ﻣَﻦْ ﺍَﻃْﻌَﻤَﻨِﻲْ ﻭَﺇﺳْﻖِ ﻣَﻦْ ﺳَﻘَﺎﻧِﻲْ .
হাদীসে মেযবানকে শুনিয়ে এ দু‘আটি
পড়তেও উৎসাহিত করা হয়েছেঃ
ﺃَﻛَﻞَ ﻃَﻌَﺎﻣَﻜُﻢُ ﺍﻷَﺑْﺮَﺍﺭُ ، ﻭَﺻَﻠَّﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔُ ، ﻭَﺃَﻓْﻄَﺮَ
ﻋِﻨْﺪَﻛُﻢُ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻤُﻮْﻥْ .
(আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩৮৫৪)
২০. খানা খাওয়ার সময় একেবারে চুপ থাকা
মাকরূহ। এজন্য খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে
পরস্পরে ভাল কথা আলোচনা করা। কিন্তু
যে ধরনের কথা বা সংবাদে দুশ্চিন্তা বা
ঘৃণার উদ্রেক হতে পারে, তা খানার সময়
বলা অনুচিত।(বুখারী শরীফ, হাদীস নং-
৫৩৭৬)

আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সকলকে কবুল করুন ।
                     আমীন আমীন আমীন

আলকুরআন ও আলহাদীছে,আলকুরআন ও আলহাদীছে♥ আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের সত্তা,

আলকুরআন ও আলহাদীছে♥  আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের সত্তা, গুণাবলী, কুদরাত ও অধিকার সম্পর্কে অনেক কথা ছড়িয়ে আছে। সেই কথাগুলোর নিরিখে অতি সংক্ষেপে মহান আল্লাহর পরিচয় তুলে ♥

♣ ধরার উদ্দেশ্যে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।♣

♦♦ আল্লাহর পরিচয় ♦♦

আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়।
আল্লাহর আব্বা নেই, আম্মা নেই।
আল্লাহর স্ত্রী নেই, পুত্র নেই, কন্যা নেই।
আল্লাহ তখনো ছিলেন যখন আর কেউ ছিলো না, আর কিছু ছিলো না।।
আল্লাহ তখনো থাকবেন যখন আর কেউ থাকবে না, আর কিছু থাকবে না।
অর্থাৎ আল্লাহ চিরকাল ছিলেন, চিরকাল আছেন, চিরকাল থাকবেন।
আল্লাহ ধ্বংসের ঊর্ধ্বে।
আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল।
আল্লাহর ক্ষুধা নেই, পিপাসা নেই।
আল্লাহ কিছু খান না।
আল্লাহ কিছু পান করেন না।
আল্লাহর তন্দ্রা নেই, নিদ্রা নেই।
আল্লাহ অন্যমনস্ক হন না।
আল্লাহ কিছু ভুলে যান না।
আল্লাহকে কোন সৃষ্টি দেখতে পায় না।
কিন্তু সকল কিছু তাঁর দৃষ্টির অধীন।
আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে কোন কিছুই থাকা সম্ভব নয়।
আল্লাহ একই সময়ে মহাবিশ্বের সকল প্রাণী, বস্তু ও শক্তি (energy) দেখতে পান।
আল্লাহ সব কিছুই শুনেন।
মহাবিশ্বের সর্বত্র উচ্চারিত প্রতিটি কথা ও উত্থিত প্রতিটি আওয়াজ তিনি একই সময়ে শুনতে পান।
আল্লাহ একচ্ছত্র সম্রাট।
মহাবিশ্ব আল্লাহর সাম্রাজ্য।
এই সাম্রাজ্যের মালিকানায় ও পরিচালনায় তাঁর কোন অংশীদার নেই।
আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন।
প্রতিটি প্রাণী, বস্তু ও শক্তি (বহবৎমু) অস্তিত্ব লাভের জন্য ও টিকে থাকার জন্য তাঁর মুখাপেক্ষী।
আল্লাহ সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
মহাবিশ্বের সর্বত্র তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত।
আল্লাহ মহাজ্ঞানী।
আল্লাহর জ্ঞান সীমাহীন।
আল্লাহ সর্ব শক্তিমান।
আল্লাহর শক্তি সীমাহীন।
আল্লাহ সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা।
আল্লাহর সৃষ্টি-ক্ষমতার শেষ নেই।
আল্লাহ জীবন দেন।
আল্লাহ মৃত্যু দেন।
আল্লাহ জীবিত থেকে মৃতকে এবং মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন।
আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো ওপর বিপদ-মুছীবাত আসতে পারে না।
আল্লাহর ক্ষমতা অ-প্রতিরোধ্য।
আল্লাহ যদি কারো কল্যাণ করতে চান তাতে বাধ সাধবার শক্তি কারো নেই।
আল্লাহ যদি কারো অ-কল্যাণ করতে চান তা প্রতিরোধ করার শক্তি কারো নেই।
আল্লাহ সর্ব-বিজয়ী, মহা পরাক্রমশালী।
আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী।
আল্লাহ মহাবিজ্ঞ।
আল্লাহ পরম দয়ালু, করুণাময়।
আল্লাহ শাস্তি দাতাও।
আল্লাহর পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন।
আল্লাহ সার্বভৌম সত্তা।
আদেশ-নিষেধের সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত ক্ষমতা একমাত্র তাঁর।
আল্লাহর বিধানই চূড়ান্ত আইন।
আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন।
আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করতে পারেন, করেন।
আল্লাহ কোন কিছু সৃষ্টি করতে চাইলে বলেন “হও”, আর অমনি তা হয়ে যায়।
আল্লাহ শূন্য থেকে বা অনস্তিত্ব থেকে সৃষ্টি করতে পারেন।
আল্লাহ যা করেন তার জন্য কারো কাছে জওয়াবদিহি করতে হয় না।
অন্য সবাইকে তাঁর নিকট জওয়াবদিহি করতে হয়।
আল্লাহ সকল মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ সকল যৌগিক পদার্থ সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ মহাবিশ্বের প্রতিটি অণু-পরমাণুর স্রষ্টা।
তিনি শ্রেণী মতো পরমাণুগুলোকে সংযুক্ত কিংবা সংমিশ্রিত করে বিভিন্ন
বস্তুসত্তার অস্তিত্ব গড়ে তোলেন।
আল্লাহ প্রথমে আসমান ও পৃথিবীকে যুক্ত অবস্থায় সৃষ্টি করেন, পরে এইগুলোকে পৃথক করে দেন।
আল্লাহ সময়ের ছয়টি অধ্যায়ে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে আরশে সমাসীন হয়েছেন।
আল্লাহ মহাবিশ্বকে সাতটি স্তর বা অঞ্চলে বিন্যস্ত করেছেন।
আল্লাহর নির্দেশেই আসমান ও পৃথিবী সু-প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
আল্লাহ মহাকর্ষ বল (Gravitation) সৃষ্টি করে এর দ্বারা মহাবিশ্বের সকল কিছুকেই একটি ভারসাম্যপূর্ণ সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছেন।
আল্লাহ মহাবিশ্বের সকল কিছুর আকার, আয়তন ও গতিপথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
আল্লাহ প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি করে প্রত্যেকটিকে তার করণীয় জানিয়ে দিয়েছেন।
আসমান ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর ফরমানের অধীন।
আল্লাহ সূর্য ও চাঁদকে এমন নিয়মের অধীন করে রেখেছেন যার ফলে পৃথিবীতে একের পর এক বিভিন্ন ঋতুর আবির্ভাব ঘটে, রাত দিনের আবর্তন ঘটে এবং মানুষ মাস ও বছরের হিসাব রাখতে

পারে।
আল্লাহ আলো সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ আঁধার সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ ছায়া সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ পৃথিবী-পৃষ্ঠে পাহাড়-পর্বত গেড়ে দিয়েছেন যাতে পৃথিবী আপন পথে চলতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে হেলে দুলে না পড়ে।
আল্লাহ ভূ-পৃষ্ঠকে বাসোপযোগী ও আবাদযোগ্য বানিয়েছেন।
আল্লাহ পৃথিবীর চারদিকে বায়ুর একটি পুরু বেষ্টনী সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ ঘনীভূত অক্সিজেনময় ওজোন (ozone) স্তর সৃষ্টি করে তেজষ্ক্রিয় মহাজাগতিক রশ্মিকে ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছতে বাধাগ্রস্ত করেছেন।
আল্লাহ পৃথিবীকে মাটি সম্পদ, বন-সম্পদ, ঘাস-সম্পদ, উদ্ভিদ সম্পদ, লতা-গুল্ম সম্পদ, পানি সম্পদ, সামুদ্রিক উদ্ভিদ সম্পদ, মাছ সম্পদ, পাখি সম্পদ, পশু সম্পদ, তাপ-বিদ্যুৎ সম্পদ, খনিজ

সম্পদ ইত্যাদি সম্পদে ভরপুর করেছেন।
আল্লাহ মাটির গভীরে সোনা, রূপা, হীরা, লোহা, তামা, কয়লা, পেট্রোল, গ্যাস ইত্যাদি সম্পদ মওজুদ করে রেখেছেন।
আল্লাহ ভূ-পৃষ্ঠে গাছ-গাছালির খাদ্য হবার উপযোগী বহু জৈবিক উপাদান মওজুদ করে রেখেছেন।
আল্লাহ পৃথিবীর মাটিকে শস্য ফলানো, শাক-সবজি ফলানো, গাছ জন্মানো ও নানা প্রকারের গাছে নানা আকারের নানা রঙের নানা স্বাদের ফল ফলানোর উপযোগী বানিয়েছেন।
আল্লাহ পৃথিবীর বুকে নদ-নদী ও সাগর-মহাসাগর সৃষ্টি করে সেইগুলোকে পানির রিজার্ভারে পরিণত করেছেন।
আল্লাহ নদ-নদী ও সাগর-মহাসাগরকে অফুরন্ত মাছ সম্পদে পরিপূর্ণ করেছেন।
আল্লাহ সাগর-মহাসাগরের গভীরে বিচিত্র ধরনের প্রাণী, মণি-মুক্তা, সৌন্দর্য-শোভার অন্যান্য উপকরণ ও সামুদ্রিক উদ্ভিদ মওজুদ করে রেখেছেন।
আল্লাহ পানি সৃষ্টি করেছেন এবং এটিকে যমীনকে সিক্ত করা, প্রাণীর পিপাসা মেটানো ও দানা-বীজকে অংকুরিত করার গুণ দান করেছেন।
আল্লাহ আগুন সৃষ্টি করেছেন এবং এটিকে তাপ ও আলো বিতরণের গুণ দান করেছেন।
আল্লাহ বিদ্যুৎ শক্তি সৃষ্টি করেছেন এবং এটিকে বিভিন্ন যন্ত্র চালানো ও বালবের ভেতর সঞ্চালিত হয়ে আলো ছড়ানোর গুণ দান করেছেন।
আল্লাহ পানি থেকে বাষ্প, বাষ্প থেকে মেঘ ও মেঘ থেকে বৃষ্টি সৃষ্টি করেন।
আল্লাহর নির্দেশে বায়ু প্রবাহিত হয়, বায়ুতে ভর করে মেঘ দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে ও মেঘ থেকে বৃষ্টি নামে।
আল্লাহ খাদ্য দ্রব্যে মানুষের দেহ পুষ্ট করার গুণ দান করেছেন।
আল্লাহ মধুসহ বিভিন্ন দ্রব্যে রোগ নিরাময়ের গুণ দান করেছেন।
আল্লাহ নূর থেকে ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে তাঁর অবাধ্যতা করার ক্ষমতা দেননি।
ফেরেশতারা আল্লাহর বিশ্বস্ত অনুগত কর্মচারী।
আল্লাহ আগুন থেকে জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ জিনদেরকে তাঁর আনুগত্য করার কিংবা অবাধ্যতা করার ক্ষমতা দিয়েছেন।
আল্লাহ মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ মানুষদেরকে তাঁর আনুগত্য করার কিংবা অবাধ্যতা করার ক্ষমতা দিয়েছেন।
আল্লাহ জিন ও মানুষদেরকে তাঁর আনুগত্য করার পুরস্কার ও অবাধ্যতা করার শাস্তি সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ মানুষ, বিভিন্ন প্রাণী, উদ্ভিদ ও বিদ্যুৎ কণা ইত্যাদির জুড়ি সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ প্রথম মানুষ আদম (আ) ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া (রা) থেকে মানুষের বংশধারা চালু করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে পুরুষ ও নারী রূপে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরম প্রশান্তি লাভ করতে পারে এবং সমাজ-সভ্যতা-সংস্কৃতির আসল দুর্গ পরিবার সংগঠন গড়ে

তুলতে পারে।
আল্লাহ পুরুষকে দুর্ধর্ষতা, সাহসিকতা, ক্ষিপ্রতা ও কঠোরতার আধিক্য দান করেছেন।
আল্লাহ নারীকে নম্রতা, মায়া-মমতা ও সৌন্দর্যানুভূতির আধিক্য দান করেছেন।
আল্লাহ নির্দিষ্ট সংখ্যায় মানুষ ও নির্দিষ্ট পরিমাণে সম্পদ সৃষ্টি করে থাকেন।
আল্লাহ সকল মানুষ ও অন্যান্য সকল প্রাণীর রিয্কের ব্যবস্থা করে থাকেন।
আল্লাহ মানুষকে অভাবের আশংকায় সন্তান হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ মানুষের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যা যা প্রয়োজন সবই সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ পৃথিবীর সম্পদ-সম্ভার মানুষের ভোগ-ব্যবহারের জন্যই সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহর সৃষ্ট নিয়ামাতগুলো গণনা করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
আল্লাহ কাউকে বেশি অর্থ-সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন।
আল্লাহ কাউকে কম অর্থ-সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন।
আল্লাহই মানুষের আকৃতি, গায়ের রঙ, ভাষা, কণ্ঠস্বর, চলনভংগি ইত্যাদির পার্থক্য সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ জীবকুলের মধ্যে মানুষকে সবচে’ বেশি জ্ঞান দান করেছেন। তবে জ্ঞানময় আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় এই জ্ঞান খুবই সামান্য।
আল্লাহ মানুষকে রূহ দান করেছেন।
আল্লাহ যদ্দিন রূহকে মানুষের মাঝে অবস্থান করতে দেন তদ্দিনই মানুষ জীবিত থাকে।
আল্লাহ মানুষকে মস্তিষ্ক দান করেছেন।
আল্লাহ এটিকে চিন্তা-ভাবনা করা, পঞ্চেন্দ্রিয়লব্ধ অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করা, বিভিন্ন বিষয়ে পরিকল্পনা তৈরি করা ও বহু কিছু উদ্ভাবন করার যোগ্যতা দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে হৃদপিণ্ড দান করেছেন।
আল্লাহর নির্দেশে এটি ছন্দবদ্ধভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে দেহের সর্বত্র রক্ত-সঞ্চালনের কর্তব্য পালন করে।
আল্লাহ মানুষকে ফুসফুস দান করেছেন।
আল্লাহর নির্দেশে এটি ছন্দময় প্রক্রিয়ায় রক্তে অক্সিজেন ঢুকানো ও রক্ত থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সরানোর কর্তব্য পালন করে।
আল্লাহ মানুষকে একজোড়া কিডনি দান করেছেন। এরা পানিকে পরিস্রুত করে রক্ত-রসে পরিণত করা ও অ-প্রয়োজনীয় পানিকে বের করে দেয়ার কর্তব্য পালন করে।
আল্লাহ মানুষকে পাকস্থলি দান করেছেন।
এটি আহার্য দ্রব্য হজম করে দেহ পরিপোষণের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে।
আল্লাহ যকৃত (লিভার) দান করেছেন। এটি পিত্ত ক্ষরণ করে পিত্তথলিতে জমা রাখে ও বিশেষ বিশেষ খাদ্যকে পরিপাকের পর রক্ত স্রোতে পাঠানোর কর্তব্য পালন করে।
আল্লাহ গোটা দেহে বহু সংখ্যক হাড়, পেশী, কোষ, কলা, অন্ত্র, ঝিল্লি, গ্রন্থি ইত্যাদি দান করেছেন যেইগুলো দেহকে সজীব, সুস্থ, সবল রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মে বায়ু পাখিদেরকে উড়তে ও মানুষকে প্লেনে চড়ে  দ্রুত দেশ-বিদেশে পৌঁছতে সাহায্য করে।
আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মে নদ-নদী ও সাগর-মহাসাগরের পানি জাহাজগুলোকে ভাসিয়ে রাখে যাতে মানুষ দূর দূর স্থানে পৌঁছতে ও মালসামগ্রী আমদানী-রফতানী করতে পারে।
আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মে বাষ্প বিভিন্ন মেশিনে শক্তি সঞ্চালন করে যাতে বিভিন্ন যানে চড়ে মানুষ দ্রুত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারে।
আল্লাহ মানুষকে চিন্তাশক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে দেখার শক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে লেখার শক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে কথা বলার শক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে শুনার শক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে ধরার শক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে চলার শক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে বংশবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনের শক্তি দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা ও কর্ম-প্রচেষ্টার স্বাধীনতা দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে অসংখ্য সৃষ্টির ওপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা দান করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে তাঁর ইবাদাতের (উপাসনা-দাসত্ব-আদেশানুবর্তিতার) জন্য
সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ একমাত্র মানুষকেই তাঁর খালীফা বা প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে খিলাফাত (আল্লাহর প্রতিনিধিত্বশীল শাসন) কায়েম করে পূর্ণাংগ ইবাদাতের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব দিয়েছেন।
আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান ইসলাম।
আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান নির্ভুল, পূর্ণাংগ, ভারসাম্যপূর্ণ ও কল্যাণময়।
আল্লাহ ছাড়া আর কারো পক্ষে এমন জীবন বিধান রচনা করা সম্ভব নয়।
আল্লাহ নবী-রাসূলদের মাধ্যমে ইসলামের শিক্ষা মানুষের নিকট পেশ করেছেন।
আল্লাহ প্রথম মানুষ আদমকে (আ) প্রথম নবী বানিয়েছেন।
আল্লাহ যুগে যুগে বহু নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন যাতে তাঁরা মানুষকে আল্লাহর ইবাদাত (উপাসনা-দাসত্ব-আদেশানুবর্তিতা) এবং তাগুতের (আল্লাহদ্রোহী শক্তির) বিরোধিতা করার শিক্ষা দেন।
আল্লাহ সর্বশেষে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি সর্বশেষ আসমানী কিতাব আলকুরআন নাযিল করেছেন।
আল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলকুরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার দায়িত্ব দিয়েছেন।
আল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলকুরআনের প্রায়োগিক রূপ শিক্ষা দেবার দায়িত্ব দিয়েছেন।
আল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুসরণকে তাঁর ভালোবাসা পাওয়ার শর্ত বানিয়েছেন।
আল্লাহ মানুষকে খালীফার (প্রতিনিধির) মর্যাদা দেয়ায় হিংসা-কাতর ইবলীস ও তার অনুসারীরা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা চালাবার শপথ নেয়।
আল্লাহ ঘোষণা করেন যে যারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর আনুগত্য করে চলবে ইবলীস ও তার অনুসারীরা তাদের ওপর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।
আল্লাহ অলৌকিকভাবে কোন ভূ-খণ্ডে তাঁর জীবন বিধান চালু করেন না।
আল্লাহ জোর করে তাঁর জীবন বিধান কোন জনগোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দেন না।
আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না যদি তারা তাদের চিন্তাধারা ও কর্মধারা পরিবর্তন না করে।
আল্লাহ চান, মানুষ স্বেচ্ছায় তাঁর দেয়া জীবন বিধান তাদের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন ও আন্তর্জাতিক জীবনে কায়েম করুক।
আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধিত্বশীল শাসন কায়েম করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ শূরা বা পরামর্শ ভিত্তিক শাসন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ যেই কোন মূল্যে সুবিচার নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের প্রতিরোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ অর্থ-সম্পদের অবাধ আবর্তন, সুষম বণ্টন ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য সুদমুক্ত ও যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ ছালাত বা নামায কায়েমের নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ ছাউম বা রোযা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ বিত্তবানকে যাকাত দেবার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ বিত্তবানকে হাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তাঁর পথে অকাতরে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ আব্বা-আম্মা, স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও অপরাপর মানুষের সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ ওয়াদা-প্রতিশ্র“তি রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ আত্মহত্যা করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ আইনের দাবি ব্যতিরেকে কাউকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ অন্যের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ আমানাতের খিয়ানাত করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ মাপ ও ওজনে ঠকাতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ সুদ, ঘুষ, জুয়া ও মওজুদদারী নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ চুরি-ডাকাতি নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ অপব্যয়-অপচয় নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ যুল্ম-অত্যাচার নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ অহংকার নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ রিয়া নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ গীবাত নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ অপবাদ নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ মিথ্যা কথা বলা নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ গান-বাজনা নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ প্রাণীর ছবি আঁকা নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ সকল প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীল কাজ নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ প্রবৃত্তির আনুগত্য নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ আম্মা, দুধ মা, খালা, ফুফু, বোন, দুধ বোন, কন্যা, স্ত্রীর পূর্ব স্বামীর ঔরশজাত কন্যা, ভাতিঝি, ভাগিনী, শ্বাশুড়ী, পুত্রবধূ, একত্রে দুই বোন, একত্রে ফুফু-ভাইঝি এবং একত্রে

খালা-বোনঝিকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ মুশরিক নারীকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ সামাজিক পবিত্রতা ও সুস্থতার জন্য আল হিজাব বা পর্দার বিধান নাযিল করেছেন।
আল্লাহ মদ ও মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ শর নিক্ষেপ করে ভাগ্য গণনা নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ গণকের কথায় বিশ্বাস স্থাপন নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ মরা পশুর গোশত, শূকরের গোশত, রক্ত, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যবাইকৃত পশু, কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে আহত হয়ে ওপর থেকে পড়ে মৃত পশু, হিংস্র জন্তু কর্তৃক নিহত পশু এবং কোন

বেদীতে উৎসর্গীকৃত পশুর গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ নখরযুক্ত ও হিংস্র জন্তু খাওয়া নিষিদ্ধ করেছেন।
আল্লাহ জ্ঞান অর্জন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ আলকুরআনের আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ মহাবিশ্বকে নিয়ে চিন্তা-গবেষণার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ হালাল জীবিকা অন্বেষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ একমাত্র তাঁকে ভয় করে চলার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ একমাত্র তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ সকল নেক কাজ একমাত্র তাঁর সন্তোষ হাছিলের অভিপ্রায়ে (নিয়াতে) সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ একনিষ্ঠভাবে তাঁর নির্দেশগুলো মেনে চলবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজগুলো পরিহার করবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষের সকল ত্যাগ-কুরবানী একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত হবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষের মাথা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে নত হবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ একমাত্র আল্লাহর ওপরই ভরসা করবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ একমাত্র আল্লাহর নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ আল্লাহর আনুগত্যের সাথে সাংঘর্ষিক কোন আনুগত্য মেনে নেবে না।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ আল্লাহকেই সবচে’ বেশি ভালোবাসবে।
এটা আল্লাহর অধিকার যে মানুষ তার প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের জন্যই করবে।
যেই জনগোষ্ঠী স্বেচ্ছায় আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানের নিরিখে তাদের গোটা সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলে আল্লাহ তাদের জন্য আসমান ও পৃথিবীর বারাকাতের দুয়ার খুলে দেন।
অর্থাৎ আল্লাহ তাদেরকে প্রভূত কল্যাণ, উন্নতি ও সমৃদ্ধি দান করেন।
আল্লাহ তাঁর অনুগত বান্দাদেরকে উত্তম রিয্ক দান করেন।
আল্লাহ তাঁর না-ফরমান বান্দাদেরকে পেরেশানী-যুক্ত জীবিকা দেন।
আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা ও কর্ম-প্রচেষ্টার স্বাধীনতা দিয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন।
যেই ব্যক্তি আল্লাহর আদেশানুবর্তী জীবন যাপন করে সে কামিয়াব।
যেই ব্যক্তি স্বেচ্ছাচারী জীবন যাপন করে সে ব্যর্থ।
আল্লাহ নিজেই সকল মানুষের কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করছেন।
আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তির সংগে দুইজন ফেরেশতাকে সংশ্লিষ্ট করে দিয়েছেন।
আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা অবিরাম মানুষের সকল তৎপরতার বিবরণ লিপিবদ্ধ করে চলছেন।
আল্লাহ মানুষকে দুর্বল রূপে সৃষ্টি করেন, যৌবনে তাকে শক্তিমান করেন, বার্ধক্যে আবার তাকে দুর্বলতার শিকারে পরিণত করেন।
আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যুক্ষণ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। সেই নির্দিষ্ট ক্ষণেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়।
দুর্ভেদ্য দুর্গের ভেতর লুকিয়েও মৃত্যু থেকে রেহাই পাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
আল্লাহ বর্তমান মহাবিশ্বকে অনন্তকালের জন্য সৃষ্টি করেন নি।
আল্লাহ বর্তমান বিশ্ব-ব্যবস্থাকে ভেংগে দেয়ার জন্য একটি দিন-ক্ষণ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।
আল্লাহর নির্দেশে সেই দিন অন্যতম ফেরেশতা ইসরাফীল (আ) তাঁর বিশাল শিংগায় ফুঁ দেবেন।
শিংগার আওয়াজ উত্থিত হওয়ার সংগে সংগে আসমান ও পৃথিবী থরথর করে কেঁপে উঠবে।
আল্লাহ যেই মহাকর্ষ বলের (Gravitation) দ্বারা মহাবিশ্বের সব কিছুকেই পরস্পর সম্পর্কিত রেখেছেন তা ছিন্ন করে দেবেন।
কোটি কোটি তারকা, গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু ইত্যাদি সব কিছু ছিটকে পড়বে। পাহাড়-পর্বত টুকরো টুকরো হয়ে উড়তে থাকবে। সাগরগুলো উৎক্ষেপিত হবে।
আসমান, পৃথিবী ও এদের মধ্যকার সব কিছু ভেংগে চুরমার হয়ে যাবে।
সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।
একমাত্র আল্লাহই বিদ্যমান থাকবেন।
অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে নতুন আকারে, নতুন বিন্যাসে মহাবিশ্ব অস্তিত
লাভ করবে।
আল্লাহর নির্দেশে বড়ো আকারে নতুন পৃথিবী গড়ে উঠবে।
নতুন পৃথিবী হবে এক বিশাল, সমতল, ধূসর প্রান্তর। ‘আলকাউসার’ নামে একটি জলাধার ছাড়া আর কিছু থাকবে না সেই সুবিস্তৃত ময়দানে।
আল্লাহর অনুগ্রহে আলকাউসারের পানি হবে দুধের মতো সাদা ও মিসকের চেয়েও বেশি সুগন্ধযুক্ত।
আল্লাহ প্রতিটি গলিত লাশের পরমাণুগুলোর কোনটি কোথায় অবস্থান করে একটি কিতাবে তার বিবরণ সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করেছেন।
আল্লাহ মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ মাটিতেই মানুষকে ফিরিয়ে নেন।
আল্লাহ এই মাটি থেকেই মানুষকে জীবিত করে উঠাবেন।
আল্লাহর নির্দেশে ইসরাফীল (আ) আবার শিংগায় ফুঁ দেবেন।
আল্লাহর নির্দেশে সকল মানুষ জীবিত হয়ে উঠে দাঁড়াবে এবং বিস্ময়ভরা চোখে এদিক ওদিক তাকাতে থাকবে।
আল্লাহর নূর পৃথিবীময় ঝলমল করতে থাকবে।
প্রচণ্ড উত্তাপে ও আতংকে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়বে।
আল্লাহর অনুগত বান্দারা ‘আলকাউসারের’ সুমিষ্ট ও শীতল পানি পান করে পিপাসা দূর করবে। যারা দুনিয়ায় আল্লাহর অবাধ্যতা করেছে তাদেরকে আলকাউসারের’ কাছে ঘেঁষতে দেয়া হবে

না।
আল্লাহর আদালতে সারিবদ্ধভাবে মানুষ দাঁড়িয়ে যাবে।
একদিকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাবেন ফেরেশতারা।
আল্লাহর নির্দেশে যেইসব ফেরেশতা মানুষের তৎপরতার বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁরা তা পেশ করবেন।
আল্লাহর নির্দেশে প্রত্যেকের হাতে প্রত্যেকের আমলনামা তুলে দেয়া হবে।
আল্লাহর অনুগত বান্দারা ডান হাতে তাদের আমলনামা গ্রহণ করবে।
আল্লাহর অবাধ্য বান্দারা হাত পেছনে নিয়ে গেলেও আমলনামা হাতে নিতে
বাধ্য হবে।
আল্লাহ ঘোষণা করবেন : ‘তোমার আমলনামা পড়’।
প্রত্যেক ব্যক্তি দেখতে পাবে তার কৃত প্রতিটি কাজের বিবরণ নিখুঁতভাবে নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
আল্লাহ মানুষকে তার জীবনকাল সে কিভাবে কাটিয়েছে সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আল্লাহ মানুষকে তার দেহসত্তায় যেইসব শক্তি দান করেছেন সেইগুলোর ব্যবহার (ঁংব) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আল্লাহ মানুষকে যেই জ্ঞান দান করেছেন তার ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আল্লাহ মানুষকে যেইসব অর্থ-সম্পদ দান করেছেন তার ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আল্লাহ মানুষকে যেইসব ক্ষমতা-ইখতিয়ার দিয়েছেন সেইগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আল্লাহ মানুষকে যেইসব আদেশ-নিষেধ করেছেন সেইগুলোর পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আল্লাহ মানুষকে অপরাপর মানুষের তত্ত্বাবধান করার যেই দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আল্লাহর নির্দেশে মানুষের হাত ও পা সাক্ষ্য দেবে তাদেরকে কোন্ কোন্ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।
আল্লাহর নির্দেশে মানুষের জিহ্বা, কান, চোখ ও ত্বক সাক্ষ্য দেবে তাদেরকে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে।
আল্লাহর নির্দেশে মানুষের অন্তর সাক্ষ্য দেবে কখন কোন্ চিন্তা তার মাঝে লালিত হয়েছে।
মানুষের দুনিয়ার জীবনের সকল কর্মকাণ্ডের চুলচেরা বিশ্লেষণের পর আল্লাহ যাদেরকে শাস্তি দেবার সিদ্ধান্ত নেবেন তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেবেন।
আল্লাহ যাদেরকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেবেন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করার নির্দেশ দেবেন।
আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ তাঁর কাছে কারো মুক্তির জন্য শাফাআত বা সুপারিশ করতে পারবেন না।
আল্লাহ যাঁকে শাফাআত করার অনুমতি দেবেন তিনি কেবল ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে শাফাআত করতে পারবেন যার জন্য শাফাআত করার অনুমতি দেয়া হবে।
আল্লাহর অনুমতিক্রমে নবী-রাসূল, শহীদ ও তাঁর অন্যান্য প্রিয় বান্দারা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য শাফাআত করলে আল্লাহ অনুগ্রহ করে তা কবুল করবেন এবং তাদের মুক্তির নির্দেশ দেবেন।
এক পর্যায়ে জাহান্নামীরা প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী আদমের (আ) নিকট জড়ো হয়ে তাদের মুক্তির জন্য শাফাআত করার অনুরোধ জানাবে। তিনি অপারগতা প্রকাশ করবেন।
তারা ছুটে যাবে নূহের (আ) কাছে। তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন।
তারা ছুটে যাবে ইবরাহীমের (আ) কাছে। তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন।
তারা ছুটে যাবে মূসা ইবনু ইমরানের (আ) কাছে। তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন।
তারা ছুটে যাবে ঈসা ইবনু মারইয়ামের (আ) কাছে। তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন।
তারা ছুটে যাবে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে।
তিনি সাজদায় পড়ে আল্লাহর তাসবীহ করতে থাকবেন।
আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন ততক্ষণ তিনি সাজদারত থাকবেন।
আল্লাহর অনুমতিক্রমে তিনি একদল লোকের নাজাতের জন্য শাফাআত করবেন।
আল্লাহ অনুগ্রহ করে তাঁর শাফাআত কবুল করবেন।
আল্লাহর নির্দেশে তিনি নির্দিষ্ট ব্যক্তিদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো কিছু লোকের জন্য শাফাআত করার অনুমতি লাভের জন্য আবার সাজদায় লুটিয়ে পড়বেন।
আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন ততক্ষণ তিনি সাজদায় থাকবেন।
আল্লাহর অনুমতিক্রমে তিনি আরো একদল লোকের জন্য শাফাআত করবেন।
আল্লাহ অনুগ্রহ করে তাঁর শাফাআত কবুল করবেন।
আল্লাহর নির্দেশে তিনি সেই লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন।
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারবার সাজদারত হয়ে শাফাআতের অনুমতি চাইতে থাকবেন। আল্লাহ অনুগ্রহ করে তাঁকে একের পর এক বহু সংখ্যক মানুষকে

জাহান্নাম থেকে বের করে আনার অনুমতি দেবেন।
আল্লাহ সর্বশেষে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাদের অন্তরে সরিষার বীজের পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনার অনুমতি দেবেন।
জাহান্নামীরা জাহান্নামে ও জান্নাতীরা জান্নাতে অবস্থান গ্রহণের পর একজন  ফেরেশতা মধ্যবর্তী স্থান থেকে ঘোষণা করবেন : ‘ওহে জাহান্নামীরা, আর মৃত্যু নেই। ওহে জান্নাতীরা, আর মৃত্যু

নেই। সামনে অনন্ত জীবন।’
জাহান্নাম কঠিন শাস্তির স্থান।
আল্লাহ ভয়ংকর আকৃতির ফেরেশতাদেরকে জাহান্নামীদের শাস্তির জন্য নিযুক্ত করে রেখেছেন।
আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা অপরাধীদেরকে গলায় বেড়ি ও দেহে লোহার শিকল পেঁচিয়ে টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে।
জাহান্নামীদেরকে আলকাতরার পোশাক পরানো হবে।
আল্লাহ দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি তেজযুক্ত আগুন দিয়ে জাহান্নাম ভরে রেখেছেন।
ঘন শ্বাসরুদ্ধকর ঝাঁঝালো কষ্টদায়ক ধোঁয়া জাহান্নামে আবর্তিত হতে থাকবে।
আল্লাহ জাহান্নামের বিভিন্ন অংশ বিশাল আকৃতির ভয়ংকর বিষধর সাপ দিয়ে ভর্তি করে রেখেছেন।
আল্লাহ জাহান্নামীদের দেহকে বিশাল আকৃতি দেবেন।
ফেরেশতারা ভারী গুর্জ দিয়ে আঘাত হেনে জাহান্নামীদের দেহ ক্ষত-বিক্ষত করতে থাকবেন।
জাহান্নামীরা ভীষণ চিৎকার করতে থাকবে।
আগুনের উত্তাপে ও পিপাসায় তারা হাঁপাতে থাকবে।
জাহান্নামীদেরকে তাদের দেহ-নির্গত রক্ত-পুঁজ পান করতে দেয়া হবে।
টগবগ করে ফুটছে এমন পানি তাদেরকে পান করতে দেয়া হবে।
উত্তপ্ত তেলের গাদ তাদেরকে পান করানো হবে।
জাহান্নামীদেরকে কাঁটাযুক্ত, তিক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত যাক্কুম গাছ গিলতে বাধ্য করা হবে।
জাহান্নামীদের গায়ের চামড়া পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে, নতুন চামড়া জন্মাবে ও নতুনভাবে পুড়তে থাকবে।
আল্লাহ জাহান্নামে আরো বহুবিধ শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন।
জাহান্নামে সবচে’ কম শাস্তি যাকে দেয়া হবে তাকে আগুনের ফিতাযুক্ত একজোড়া জুতা পরানো হবে। এতে তার মাথার মগজ চুলার ওপর হাঁড়ির পানির মতো টগবগ করে ফুটতে থাকবে।
জান্নাত অনাবিল সুখ-শান্তির স্থান।
আল্লাহ তাঁর আদেশানুবর্তী বান্দাদেরকে মেহমানের মর্যাদা দেবেন।
আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা তাঁদেরকে সাদর-সম্ভাষণ জানিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাবেন।
আল্লাহ সবচে’ কম মর্যাদাবান জান্নাতীকে বর্তমান পৃথিবীর চেয়ে দশগুণ বেশি স্থান দান করবেন।
আল্লাহ জান্নাতকে নয়নাভিরাম বাগানময় করে রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতের বাগানগুলোকে পাখ-পাখালিতে পূর্ণ করে রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতকে ফুলে ফুলে পরিপূর্ণ করে রেখেছেন।
আল্লাহর নির্দেশে জান্নাতে সুপেয় পানির ঝর্ণা, সুস্বাদু দুধের ঝর্ণা, স্বচ্ছ মধুর ঝর্ণা ও অন্যান্য উন্নত মানের পানীয়র ঝর্ণা অবিরাম প্রবাহিত হচ্ছে।
আল্লাহ জান্নাতে অতি সুস্বাদু মাছ, গোশত, রকমারি খাদ্য ও ফলের সমারোহ ঘটিয়েছেন।
আল্লাহ জান্নাতে অনুপম উপদানে তৈরি সুউচ্চ, সুবিস্তৃত ও সুদৃশ্য প্রাসাদ সারি সজ্জিত করে রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতের প্রাসাদগুলোর মেঝেকে অতি উচ্চমানের পুরু কার্পেটে সজ্জিত করেছেন।
আল্লাহ জান্নাতীদের জন্য অতীব সুন্দর ও অতীব আরামদায়ক পোশাক মওজুদ করে রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতীদের জন্য অতীব আরামদায়ক আসন ও শয্যার ব্যবস্থা করেছেন।
আল্লাহ জান্নাতকে আলো-ঝলমল করে রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতকে অগণিত সৌন্দর্য-শোভার উপকরণে সজ্জিত করে রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতের প্রতিটি বস্তুকে তুলনাহীন সুঘ্রাণ যুক্ত করে রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতকে উত্তাপ ও শীতের প্রকোপ মুক্ত করে গড়েছেন।
আল্লাহ জান্নাতের সব কিছু জান্নাতীদের নাগালের মধ্যেই রেখেছেন।
আল্লাহ জান্নাতীদের খিদমাতের জন্য গিলমান (চির বালকদল) মুতায়েন করে রেখেছেন।
স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে জান্নাতী হলে আল্লাহ তাঁদেরকে জান্নাতেও অনন্তকালের জন্য জীবন-সাথী বানিয়ে দেবেন।
আল্লাহ জান্নাতে পুরুষদেরকে হুরও দেবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে ষাট হাত দৈর্ঘ্য দান করবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে চির যুবক ও চির যুবতী বানাবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে কখনো বুড়ো হতে দেবেন না।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে চিরকাল রোগমুক্ত রাখবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে যাবতীয় দৈহিক ও মানসিক অশান্তি মুক্ত রাখবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে অসাধারণ দৈহিক সৌন্দর্য দান করবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে অসাধারণ সুঘ্রাণযুক্ত করবেন।
আল্লাহ জান্নাতে এক বিশাল মার্কেট বানিয়ে রেখেছেন যেখানে প্রতি জুমাবার জান্নাতী পুরুষেরা একত্রিত হবেন।
সেখানে প্রবাহিত হাওয়ার ছোঁয়ায় তাঁদের রূপ-সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে এবং তাঁদের পোশাক থেকে নতুন সুগন্ধ বের হতে থাকবে।
তাঁরা তাঁদের প্রাসাদে ফিরে তাঁদের স্ত্রীদেরকেও পূর্বের চেয়ে আরো বেশি রূপ-লাবণ্যে ভরা দেখতে পাবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে এমন ক্ষমতা দেবেন যে হাজারো মাইল দূরে অবস্থিত ব্যক্তিকে তাঁরা দেখতে চাইলে দেখতে পাবেন এবং কথা বলতে চাইলে বলতে পারবেন।
আল্লাহ এমন এমন বৃক্ষ তৈরি করে রেখেছেন যার একটির শাখা-প্রশাখার নিচে একজন অশ্বারোহী একশত বছর অশ্ব চালনা করেও তার সীমানা অতিক্রম করতে পারবেন না।
আল্লাহ জান্নাতীদের জন্য এমন বাহন মওজুদ করে রেখেছেন যাতে আরোহণ করে তাঁরা গোটা বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারবেন।
[সম্ভবত জাহান্নামের অংশটুকু ছাড়া মহাবিশ্বের বাকি অংশকে জান্নাতে রূপান্তরিত করা হবে।]
আল্লাহ পৃথিবীটাকেও জান্নাতের অংশ বানিয়ে দেবেন।
একজন জান্নাতী যা চাইবেন তা-ই পাবেন।
আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে আরো অনেক কিছু দেবেন।
আল্লাহ জান্নাতে এমন সব নিয়ামাত মওজুদ করে রেখেছেন যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, যার কথা কোন কান কখনো শুনেনি এবং যার ধারণা কোন হৃদয়ে কখনো উদিত হয়নি।
আল্লাহ নতুন নতুন নিয়ামাত সৃষ্টি করে জান্নাতীদেরকে উপহার দিতে থাকবেন।
আল্লাহ জান্নাতীদেরকে তাঁর দর্শন দান করে ধন্য করবেন।
আল্লাহর দর্শনই হবে জান্নাতীদের নিকট সবচে’ বেশি আনন্দের বিষয়।
আল্লাহ মহাশিল্পী।
আল্লাহ মহাবিজ্ঞানী।
আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্য তুলনাহীন।
আল্লাহর কোন খুঁত নেই।
আল্লাহর কোন ত্র“টি নেই।
আল্লাহর কোন অপূর্ণত্ব নেই।
আল্লাহর কোন অপারগতা নেই।
পৃথিবীর সবগুলো গাছ দিয়ে যদি কলম বানানো হয়, সমুদ্রগুলোর পানির সাথে আরো সাত সমুদ্রের পানি মিলিয়ে যদি কালি বানানো হয়, তবুও আল্লাহর কথা লিখে শেষ করা যাবে না।
আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।
আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা।
আল্লাহর জন্যই সব সম্মান।


সূরা আল হাদীদ,সূরা আল হাদীদ লৌহ/ইস্পাত

সূরা আল হাদীদ
লৌহ/ইস্পাত

1
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার সব কিছুই আল্লাহ তা'য়ালার পবিত্রতা ও মাহাত্ম্য ঘোষণা করছে, তিনি মহাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় ।

2
আসমানসমূহ ও যমীনের বাদশাহীর মালিকানা শুধু তারই জন্য, তিনি জীবন দান করেন তিনিই মৃত্যু ঘটান,তিনি সব কিছুর উপর চুড়ান্ত ক্ষমতাবান ।

3
তিনি আদি , তিনি অনন্ত , তিনি প্রকাশ্য , তিনি গোপন এবং তিনি সর্ব বিষয়ে সম্যক অবগত ।

4
তিনি হচ্ছেন সেই মহান সত্তা , যিনি ছয় দিনে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন , অতঃপর তিনি তার আরশে সমাসীন হন , তিনি জানেন - যা কিছু এই ভূমির ভেতরে প্রবেশ করে , আবার যা কিছু ভূমি থেকে বেরিয়ে আসে , আসমান থেকে যা বর্ষিত হয় তা যেমন তিনি জানেন - আবার আসমানের দিকে বাষ্প আকারে যা কিছু উঠে আসে তাও তিনি অবগত আছেন, তোমরা যেখানে থাকোনা কেন তিনি তোমাদের সাথেই আছেন, তোমরা যা কিছু করছো আল্লাহ তা'য়ালা তার সব কিছুই দেখছেন ।

5
আসমানসমূহ ও যমীনের সার্বভৌমত্ব তার জন্যই কারণ প্রতিটি বিষয়কে তার দিকেই ফিরিয়ে নেয়া হবে ।

6
তিনি রাতকে মিশিয়ে দেন দিনের সাথে , আবার দিনকে মিশিয়ে দেন রাতের সাথে। তিনি মনের যে কোন লুকিয়ে থাকা বিষয় সম্পর্কেও সম্যক অবগত রয়েছেন।

7
হে মানুষ তোমরা ঈমান আনো আল্লাহ তা'য়ালার উপর ও তাঁর রাসূলের উপর ।
আল্লাহ তা'য়ালা তোমাদের যে সম্পদের উপর অধিকারী বানিয়েছেন তা থেকে তারই পথে তোমরা ব্যয় করো , অতঃপর তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনবে এবং আল্লাহ্‌র নির্ধারিত পথে অর্থ ব্যয় করবে জেনে রেখো তাদের জন্য রয়েছে এক মহা পুরুষ্কার ।

8
তোমাদের এ কী হলো । তোমারা কেন আল্লাহ তা'য়ালার উপর ঈমান আনছোনা ? বিশেষ করে যখন স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালার রসূল তোমাদের ডাক দিয়ে বলেছেন - তোমরা তোমাদের মালিকের উপর ঈমান আনো এবং তিনি তো এই মর্মে তোমাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতিও আদায় করে নিয়েছেন , যদি তোমরা সত্যিই ঈমানদার হও তাহলে সেই প্রতিশ্রুতি স্মরণ করো ।

9
তিনিই সে মহান সত্তা , যিনি তাঁর বান্দার উপর সুস্পষ্ট আয়াত নাজিল করেছেন, যেন তিনি তোমাদের জাহিলিয়াতের অন্ধকার থেকে ঈমানের আলোর দিকে বের করে আনতে পারেন, আল্লাহ তা'য়ালা সত্যিই প্রতি পরম দয়ালু ও একান্ত করুণাময় ।

10
তোমাদের এ কি হলো তোমরা কেন আল্লাহ তা'য়ালার পথে অর্থ ব্যয় করতে চাওনা - অথচ আসমানসমূহ ও যমীনের সব কিছুর মালিকানা এক আল্লাহ তা'য়ালার জন্যই । তোমাদের মধ্যে তারা কখনো একই মর্যাদার অধিকারী হবে না, যারা বিজয় সাধিত হওয়ার আগে আল্লাহ তা'য়ালার পথে ব্যয় করেছে এবং ময়দানে সংগ্রাম করেছে , তাদের মর্যাদা তাদের তুলনায় অনেক বেশী , যারা বিজয় সাধিত হবার পর আল্লাহ তা'য়ালার পথে অর্থ ব্যয় করেছে এবং জিহাদে অংশ গ্রহণ  করেছে । অবশ্য আল্লাহ তা'য়ালা এদের সবাইকেই উত্তম পুরুষ্কার প্রদানের ওয়াদা দিয়েছেন, মূলত তোমরা যা কিছুই করো আল্লাহ তা'য়ালা সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞাত রয়েছেন ।

11
কে আছে যে ব্যক্তি আল্লাহকে ঋণ দেবে - এমন উত্তম ঋণ , যার বিনিময়ে আল্লাহ তা'য়ালা পরকালে তাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিবেন , তার জন্যে থাকবে আরো বড়ো ধরনের পুরুষ্কার।

12
যেদিন তুমি দেখতে পাবে ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার মহিলারা এগিয়ে চলেছে , তাদের সামনে দিয়ে এবং তাদের ডান পাশ দিয়ে নূরের এক জ্যোতিও সাথে সাথে এগিয়ে চলেছে , তাদের উদ্দেশ্যে বলা হবে আজ সুসংবাদ তোমাদের জন্য আর সে সুসংবাদ হচ্ছে জান্নাতের, যার পাদদেশ দিয়ে সুপ্রিয় ঝর্ণাধারা বইতে থাকবে । সেখানে তোমরা অবস্থান করবে অনন্তকাল ধরে , আর এটাই হচ্ছে চরম সাফল্য ।

13
সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীরা ঈমানদারদের বলবে তোমরা আমাদের দিকে একটু তাকাও। যাতে করে আমরাও তোমাদের নূর থেকে কিছুটা হলেও আলো গ্রহণ করতে পারি, তাদের বলা হবে , তোমরা আজ পিছনে সরে দাঁড়াও এবং পারলে সেখানে গিয়ে আলোর সন্ধান করো , অতঃপর এদের উভয়ের মাঝখানে একটি প্রাচীর দাঁড় করিয়ে দেয়া হবে এতে একটি দরজাও থাকবে যার ভেতরের  অংশে থাকবে আল্লাহ তা'য়ালার রহমত , আর বাহিরের দিকে থাকবে ভয়াবহ আযাব ।

14
তখন মুনাফিকদের দল ঈমানদারদের ডেকে বলবে , আমরা কি দুনিয়ার জিবনে তোমাদের সাথী ছিলাম না , তারা বলবে , হ্যাঁ অবশ্যই ছিলে তবে তোমরা নিজেরাই নিজেদের গোমরাহির বিপদে বিপদগ্রস্থ করে দিয়ে ছিলে , তোমরা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে নানা রকমের সন্দেহ পোষণ করতে , আসলে দুনিয়ার মোহ তোমাদের সব সময় প্রতারিত করে আসছিলো , আর এভাবে একদিন তোমাদের ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে মৃত্যুর ফয়সালা এসে হাজির হলো এবং প্রতারক শয়তান তোমাদের আল্লাহ তা'য়ালা সম্পর্কেও ধোঁকায় ফেলে রেখেছিলো ।

15
আজ আযাব থেকে বাঁচানোর জন্য তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রকার মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে না । যারা আল্লাহ তা'য়ালা ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে, তাদের কাছ থেকেও কোন প্রকার বিনিময় উসুল করে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে না । আজ তোমাদের উভয়ের ঠিকানা হবে জাহান্নামের আগুন, আর এই আগুনই হবে এখানে তোমাদের একমাত্র সাথী , কতো নিকৃষ্ট তোমাদের এই পরিনাম ।

16
ঈমানদারদের জন্য এখনো কি সেই ক্ষনটি এসে পৌঁছুইনি যে আল্লাহর আযাবের স্মরণে তাদের অন্তরকরণসমূহ বিগলিত হয়ে যাবে এবং আল্লাহ তা'য়ালা যা কিছু নাজিম করেছেন তার সামনে তারা আনুগত্যের মাথা নত করে দেবে । তারা কখনোই তাদের মত হবে না , যাদের কাছে এর আগে আল্লাহ তা'য়ালার কিতাব নাজিল করা হয়েছিল, অতঃপর তাদের উপর এক দীর্ঘ কাল অতিবাহিত হয়ে গেলো যার ফলে তাদের মনও কঠিন হয়ে গেলো , এদের মধ্যে এক বিরাট অংশ না-ফরমানই থেকে গেলো ।

17
তোমরা জেনে রেখো যে আল্লাহ তা'য়ালাই এই ভূমিকে তার মৃত্যুর পর পুনরায় জীবন দান করেন । অবশ্যই আমি আমার যাবতীয় নিদর্শনকে তোমাদের জন্য খুলে খুলে বর্ণনা করেছি , যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পারো ।

18
যে সব পুরুষ ও নারী অকাতরে আল্লাহ তা'য়ালার পথে দান করে এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করে , তাদের সে ঋণকে আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে , উপরন্তু তাদের জন্য থাকবে আরো সম্মানজনক পুরুষ্কার।

19
আর যারা আল্লাহ্‌র উপর ঈমান এনেছে - ঈমান এনেছে তার রাসূলের উপর, তারাই হচ্ছে যথার্থ সত্যবাদী, তারা তাদের মালিকের সামনেও এ সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করবে , তাদের সবার জন্য  রয়েছে তাদের মালিকের পক্ষ থেকে পুরুষ্কার এবং তাদের নিজেদের নূর- ও তাদের সাফল্যের প্রমাণ বহন করবে , অপরদিকে যারা আমাকে অস্বীকার করেছে এবং আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে তারা হবে জাহান্নামের বাসিন্দা ।

20
তোমরা জেনে রেখো, এ পার্থিব জীবন্ত খেলাধূলা, জাঁকজমক প্রদর্শন, পরস্পর অহংকার প্রদর্শনের প্রতিযোগীতা , ধন সম্পদ ও সন্তান সন্তুতি বাড়ানোর চেষ্টা সাধন ছাড়া আর কিছুই নয় - এ যেন আকাশ থেকে বর্ষিত এক পশলা বৃষ্টি, যার উৎপাদিত ফসলের সমাহার কৃষকের মনকে খুশিতে ভরে দেয় , অতঃপর ঘরে তোলার উপযোগী হলে একদিন তা শুকিয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে তুমি দেখতে পাও যে , তার হলুদ রং ধারণ করতে শুরু করেছে, অতঃপর তা অর্থহীন খড় কুটায় পরিনত হয়ে যায় , কাফিরদের জন্যে পার্থিব জীবনের চেষ্টা সাধনা এমনি এক অর্থহীন কর্মকান্ড ছাড়া কিছুই নয়,আর পরকালের জীবনে তাদের জন্য থাকবে কঠোর আযাব এবং ঈমানদারদের জন্যে থাকবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার ক্ষমা ও সন্তুষ্টি । সত্যি কথা হচ্ছে এই জীবন কতিপয় ধোঁকা প্রতারণার সামগ্রী বৈ কিছুই নয় ।

21
অতএব, এ সব অর্থহীন প্রতিযোগীতা বাদ দিয়ে তোমরা তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে সেই প্রতিশ্রুত ক্ষমা ও চিরন্তন জান্নাত পাওয়ার জন্যে একে অন্যের সাথে প্রতিযোগীতা করো,এমন জান্নাত যার আয়তন আসমান যমীনের সমান প্রশস্ত, তাকে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে সে সব মানুষদের জন্যে -যারা আল্লাহ তা'য়ালা ও তাঁর পাঠানো রাসূলের উপর ঈমান এনেছে, মূলত এ হচ্ছে আল্লাহ তা'য়ালার এক অনুগ্রহ, যাকে তিনি চান তাকেই তিনি এই অনুগ্রহ প্রদান করেন, আর আল্লাহ তা'য়ালা হচ্ছেন মহা অনুগ্রহশীল।

22
সামগ্রিকভাবে সারা বিশ্বের উপর কিংবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের কারো উপর যখনি কোন বিপর্যয় আসে তখন তোমাদের জানা উচিত যে , তাকে আবার সংঘটিত করার বহু আগেই তার বিবরণ একটি গ্রন্থ লিখে রাখা হয়েছে , আর আল্লাহ তা'য়ালার জন্যে এই কাজটি অত্যন্ত সহজ ।

23
এজন্যে যাতে করে তোমাদের কাছ থেকে যা কিছু সুযোগ সুবিধে হারিয়ে গেছে তার জন্যে তোমরা আফসোস না করো আল্লাহ তা'য়ালা তোমাদের যা কিছু দিয়েছেন তাতেও যেন তোমরা আত্মহারা না হও । আল্লাহ তা'য়ালা এমন সব লোকদের ভালোবাসেন না যারা উদ্ধত্য ও অহংকার প্রদর্শন করে ।

24
আল্লাহ তা'য়ালা তাদেরও ভালোবাসেন না যারা নিজেরা কার্পণ্য করে , আবার অন্যদেরও কার্পণ্য করার আদেশ দেয় । যে ব্যক্তি জেনে বুঝে আল্লাহ তা'য়ালার হুকুম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার জানা উচিত আল্লাহ তা'য়ালা কাহারো মুখাপেক্ষী নন এবং তিনি মহান প্রশংসায় প্রশংসিত ।

25
আমি অবশ্যই আমার রাসূলদের কতিপয় সুস্পষ্ট নিদর্শন সহ মানুষদের কাছে পাঠিয়েছি । আমি তাদের সাথে কিতাব পাঠিয়েছি - আরো পাঠিয়েছি আমার পক্ষ থেকে এক ন্যায় দন্ড, যাতে করে মানুষ এর মাধ্যমে ইনসাফের উপর কায়েম হতে পারে, তাদের জন্যে আমি লোহা নাজিল করেছি যার মধ্যে একদিকে যেমন রয়েছে শক্তি - অন্য দিকে রয়েছে মানুষের বহুবিধ উপকার । এসব কিছুর উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর মাধ্যমে আল্লাহ তা'য়ালা জেনে নিতে চান যে , কে আল্লাহ তা'য়ালা ও তাঁর রাসূলকে না দেখেও সাহায্য করতে এগিয়ে আসে । বস্তুত আল্লাহ তা'য়ালা প্রচন্ড শক্তিমান ও মহা পরাক্রমশালী ।

26
আমি নূহ ও ইবরাহীমকে আমার রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছি এবং তাদের উভয়ের বংশধরদের মাঝে আমি নবুওত ও কিতাব প্রেরণের ব্যবস্থা করে রেখেছি , অতঃপর তাদের মাঝে কিছু কিছু লোক সঠিক পথ অবলম্বন করেছে, অবশ্য তাদের অধিকাংশ লোকই ছিলো না-ফরমান ।

27
অতঃপর তাদের বংশে একের পর এক আমি অনেক রাসূলই প্রেরণ করেছি , পরে আমি মারইয়াম পুত্র ঈসাকে রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছি , তাকে আমি হেদায়েত এর গ্রন্থ ইন্জিল দান করেছিলাম, যারা তার আনুগত্য করেছে তাদের মনে তার প্রতি দয়া ও করুণা দান করেছিলাম। তার অনুসারীদের অনুসৃত সন্যাসবাদ। আসলে তারা নিজেরাই এর উদ্ভব ঘটিয়েছে , আমি কখনো একে তাদের জন্য নির্ধারণ করিনি , আমি তাদের শুধু বলেছিলাম আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে নাবীর আনুগত্য করতে , অতঃপর তারা এর যথাযথ হক্ব আদায় করেনি। অবশ্য তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে, তাদের আমি যথার্থ পুরুষ্কারই দিয়েছি , কিন্তু তাদের অধিকাংশই ছিল না-ফরমান ।

28
হে ঈমানদার বান্দারা , তোমরা আল্লাহ তা'য়ালাকেই ভয় করো এবং তার প্রেরিত রাসূলের উপর ঈমান আনো , এর ফলে আল্লাহ তা'য়ালা তোমাদের তার দ্বিগুণ অনুগ্রহে ভূষিত করবেন, তিনি তোমাদের জন্যে স্থাপন করবেন সেই আলো , যার সাহায্যে তোমরা পথ চলতে সক্ষম হবে , তিনি তোমাদের যাবতীয় গুনাহ খতা মাফ করে দিবেন , আল্লাহ তা'য়ালা অবশ্যই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু ।

29
আহলে কিতাবরা যেন একথাটা ভালো করে জেনে নিতে পারে যে , আল্লাহ তায়ালার সামান্যতম অনুগ্রহের ওপরও তাদের কোন অধিকার নেই । যাবতীয় অনুগ্রহ তো আল্লাহ তা'য়ালার হাতেই , তিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই এই অনুগ্রহ দান করেন, মূলত আল্লাহ তা'য়ালাই মহান অনুগ্রহশীল।

ভাবতে থাকুন, বুঝার চেষ্টা করুন ।
💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝।

Popular Posts

একটু চিন্তা করুন ।

                      أعوذ بالله من الشيطان الرجيم                           بسم الله الرحمن الرحيم                 সকল মুসলিম ভাই বোন ক...

Search This Blog

Followers